বাচ্য পরিবর্তন :– বাক্যের অর্থ অপরিবর্তিত রেখে এক বাচ্যের বাক্যকে অন্য বাচ্যে রূপান্তরিত করাকে বাচ্য পরিবর্তন বলে।
কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তন :- (১) কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়া কে অবশ্যই সকর্মক হতে হবে নাহলে কর্মবাচ্যে রূপান্তর করা যাবে না । কর্তৃবাচ্যের কর্তা অকর্মক হলে ভাববাচ্যে রূপান্তর করা যায় না।
(২) কর্তৃবাচ্যের কর্তার সঙ্গে র , এর বিভক্তি যুক্ত হয়।
(৩) কর্তৃবাচ্যের কর্তার সঙ্গে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক অনুসর্গ যুক্ত হয় ।
(৪) কর্তৃবাচ্যের কর্ম কর্মবাচ্যের উদ্দেশ্য পদ হয় । কর্মকে বিভক্তি শূন্য করতে হয় ।
(৫) কর্তৃবাচ্যের বিধেয় ক্রিয়া দ্বিকর্মক হলে কর্মবাচ্যে মুখ্যকর্ম কর্তা হয়, গৌণ কর্মের পরিবর্তন হয় না ।
(৬) কর্তৃবাচ্যের ক্রিয়ার যে ধাতু তার সঙ্গে আ, আন , তে ,ইতে প্রত্যয় যুক্ত হয়।
উদাহরণ :- রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি রচনা করেন । > রবীন্দ্রনাথের দ্বারা গীতাঞ্জলি রচনা করা হয় ।
কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন :- (১) বিভক্তি বা অনুসর্গ যুক্ত ক্রিয়ার কর্তৃপদকে উদ্দেশ্য পদ রূপে প্রয়োগ করতে হয় এক্ষেত্রে বিভক্তি ও অনুসর্গ কে বাদ দিতে হয় ।
(২) কর্মবাচ্যের সমাপিকা ক্রিয়া বাদ দিয়ে কৃদন্ত পদের মূল ধাতু থেকে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করতে হয় ।
(৩) যুক্ত ক্রিয়ার কর্মবাচ্যে প্রথম পদটি প্রত্যয়হীন হবে এর সঙ্গে কর্তা অনুযায়ী সমাপিকা ক্রিয়া হবে ।
উদাহরণ :- আমার দ্বারা ব্যঙ্গ করা হয় নাই (কর্মবাচ্য) > আমি ব্যঙ্গ করি নাই (কর্তৃবাচ্য) ।
গফুরের দ্বারা শুধু চাহিয়া থাকা হইল (কর্মবাচ্য) > গফুর শুধু চাহিয়া রহিল (কর্তৃবাচ্য) ।
কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্যে পরিবর্তন :- (১) ভাববাচ্যে অনেক সময় কর্তা উহ্য থাকতে পারে ।
(২) কর্তৃবাচ্যের কর্তার সঙ্গে র , এর , কে বিভক্তি যোগ করতে হয় ।
(৩) কর্তৃবাচ্যের সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে আ, অন, আনো কৃৎপ্রত্যয় যোগ করে কৃদন্ত পদ গঠন করতে হয়।
(৪) ‘হ’ বা ‘যা’ ধাতু থেকে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করতে হয় ।
উদাহরণ :- আমি যাব (কর্তৃবাচ্য) > আমাকে যেতে হবে (ভাববাচ্য)।
আপনি কোথায় থাকেন (কর্তৃবাচ্য) > আপনার কোথায় থাকা হয় (ভাববাচ্য)।
আপনি কোথা থেকে আসছেন (কর্তৃবাচ্য) > আপনার কোথা থেকে আসা হচ্ছে (ভাববাচ্য)।
ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তন :- (১) ভাববাচ্যের কর্তা কে বিভক্তি শূন্য করতে হয় ।
(২) ভাববাচ্যের ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কর্মকে পৃথক করতে হয় ।
(৩) ভাববাচ্যের বহুপদী ক্রিয়া বিলুপ্ত হয় তার পরিবর্তে একপদী ক্রিয়া করতে হয় । ( দেখা আছে > দেখেছে )
(৪) ‘হ’ ধাতু নিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়াটি লুপ্ত হয় । যুক্ত ধাতুর মূল ধাতু থেকে কর্তা অনুযায়ী ক্রিয়া করতে হয় ।
উদাহরণ :- মহাশয়ের বসা হোক (ভাববাচ্য) > মহাশয় বসুন (কর্তৃবাচ্য)।
আকাশে ক্ষীণ চাঁদটির ওঠা হয়(ভাববাচ্য)> আকাশে ক্ষীণ চাঁদটি ওঠে(কর্তৃবাচ্য)।
বাচ্য চেনার উপায় :- (১) ক্রিয়াপদ যদি কর্তার পুরুষ ধরে হয়, তাহলে অবশ্যই কর্তৃবাচ্য হবে। মনে রাখবে, জড় পদার্থও কর্তা হতে পারে। যেমন : সূর্য ওঠে।
(২) এককর্মক ক্রিয়ার কর্মে যদি ‘কে’ বিভক্তি থাকে, তাহলে জানবে সেটি কোনোমতেই কর্মবাচ্য বা কর্মকর্তৃবাচ্য হবে না। কারণ ওই দুটি বাচ্যে কর্মকে কর্তা সাজতে হয় আর কর্তা সাজতে হলে শূন্য বিভক্তি ধারণ করতেই হয়।
(৩) প্রকৃত কর্তায় দ্বারা/কর্তৃক/দিয়ে অনুসর্গ থাকলে সেটি কর্মবাচ্য হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
(৪) মূল ক্রিয়াটিকে যদি ত/ইত প্রত্যয় যোগে বিশেষণে পরিণত করা হয়, (যেমন – পঠিত, ভুক্ত, গৃহীত, বর্জিত, পরিত্যক্ত ইত্যাদি) তাহলে সেটি প্রায় সব সময়ই কর্মবাচ্য। যেমন : স্থানটি পরিত্যক্ত হয়েছে।
(৫) কর্মকর্তৃবাচ্যে কখনও কর্তার উল্লেখ থাকে না।
(৬) ক্রিয়া অকর্মক হলে স্বাভাবিক ভাবেই তার কর্মবাচ্য সম্ভব নয়। তাতে কর্তায় দ্বারা/দিয়া যাই থাক।
(৭) কর্মটি ক্রিয়ার ভাব-জাত বিশেষ্যের সাথে হাইফেন দিয়ে জুড়ে দেওয়া থাকলে সেটি অবশ্যই ভাববাচ্য। যেমন- “আমার ভাত-খাওয়া শেষ হ’ল।”
(৮) এছাড়া, ভাববাচ্যে কর্তায় কে/র-এর বিভক্তি থাকবে অথবা কর্তা থাকবে না।
(৯) ভাববাচ্যে হ ধাতু আছে দেখেই সহসা ভাববাচ্য ধরতে নেই। কর্মবাচ্যেও ধাতু লাগে।