বহুরূপী: সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

বহুরূপী সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

বহুরূপী হতে সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

বিষয়বাংলা – গল্প
গল্পবহুরূপী
রচনাসুবোধ ঘোষ
শ্রেণীদশম শ্রেণী বাংলা

বহুরূপী হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

                 বহুরূপী – সুবোধ ঘোষ

মান – ৩

১। ‘কিন্তু কাজ করতে হরিদার প্রাণের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে’ – বক্তা কে? কী ধরনের বাধার কথা বলা হয়েছে?

কথাসাহিতিক সুরোধ ঘোষ রচিত আমাদের পাঠ্য ‘বহুরূপী’ শীর্ষক গল্পের বহুরূপী হরিদা সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন গল্পকথক।

হরিদার আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। শহরের শীর্ণকায় গলির ভিতরের ছোট্ট একটি ঘরে সে থাকে। কিন্তু নিয়ম অনুসারে প্রাত্যহিক কাজ করা তার পক্ষে অসহ্য মনে হয়। একঘেঁয়ে পুনরাবৃত্তি কর্মের মধ্যে সে থাকতে চায় না। আর হরিদা স্বাধীনচেতা মানুষ, কারোর আজ্ঞাবহ হয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয়। জীবনে নব নব বৈচিত্র্যের সন্ধান করে সে। তাই কাজ করতে হরিদার প্রানের মধ্যেই যেন একটা বাধা আছে।

২। “একটা আতঙ্কের হলা বেজে উঠেছিল” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আলোচ্য অংশের তৎপর্য লেখ।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ শীর্ষক গল্পের আলোচ্য অংশে হরিদা উন্মাদ পাগলের সাজে সজ্জিত হয়ে যখন চকের বাসস্ট্যান্ডে বাসযাত্রীদের দিকে ধাবিত হয় তখন সেখানে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। 

হরিদার জীবনের পেশাই হল বহুরূপী সেজে মানুষকে আনন্দ দেওয়া এবং জীবন উপভোগ করা আর বিনিময়ে অর্থ উপার্জন করা। পাগলের বেশে তার আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। মুখ থেকে তার লালা ঝরে পড়ছিল, আর তার চোখ দুটি ছিল কটকটে লাল, কোমরে জড়ানো ছিল একটি ছেঁড়া কম্বল আর গলায় ঝুলছিল টিনের কৌটার একটা মালা। শুধু তাই নয়, একটা থান ইট নিয়ে যখন সে বাসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল তখনই একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

৩। আমি তোমাদের একটি জব্বর খেলা দেখাব” – বক্তা কে? জব্বর খেলাটি কি ছিল তা লেখ।

বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত আমাদের পাঠ্য ‘বহুরূপী’ গল্পের প্রধান চরিত্র হরিদাই হলেন আলোচ্য উক্তিটির বক্তা।

হরিদা গল্প কথকের কাছে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন। জগদীশবাবু একজন সন্ন্যাসীকে যেভাবে আপ্যায়ন করেছিলেন সে কথা শুনে হরিদার মনে একটা চমৎকার মতলব তৈরি হয়। হরিদা শুধুমাত্র একটি সাদা উত্তরীয়, পরনে ছোট বহরের একটি সাদা থান, হাতে একটি ঝোলা, যাতে ছিল একটি গীতা, অর্থাৎ বিবাগী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গেলেন। জগদীশবাবু প্রণামী দিতে চাইলে তিনি প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতো তা প্রত্যাখান করেন। এই ভাবে হরিদা বিবাগী সেজে যে ‘জব্বর খেলা’ দেখালেন তাতে সবাই অবাক ও মুগ্ধ হয়ে যায়।

৪। ‘আপনার কাছে এটা আমার প্রাণের অনুরোধ’ – বক্তা কে? অনুরোধটি কী? প্রাণের অনুরোধ রক্ষিত হয় নি কেন ?

বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত আমাদের পাঠ্য ‘বহুরূপী’ গল্পের সংশিষ্ট উক্তিটির বক্তা হলেন জগদীশবাবু।

সন্ন্যাসী বেশে হরিদাকে জগদীশবাবু অনুরোধ করেন যে তিনি যেন কিছুদিন তাঁর বাড়িতে থেকে তাঁর পদসেবার সুযোগ দেন।

বিবাগী হরিদা জগদীশবাবুর প্রাণের অনুরোধ রক্ষা করেন নি। একজন প্রকৃত বিবাগীর মতো চার দেওয়ালের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্ব নিখিলের স্নেহাঞ্চলে সুখলাভ করতে চান। তাই জগদীশবাবুর অনুরোধ তিনি রক্ষা করেন নি।

৫। “এটা কী কান্ড করলেন হরিদা” – বক্তা কে ? কোন ধরনের কান্ডের কথা আলোচ্য উক্তিতে বলা হয়েছে।

সুবোধ ঘোষ রচিত আমাদের পাঠ্য ‘বহুরূপী’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন হরিদার বাড়িতে আড্ডা দিতে আসা একটি চরিত্র, যার নাম অনাদি।

হরিদার জীবনের পেশা হল বহুরূপীর রূপ ধারণ করে মানুষকে আনন্দ দেওয়া। সন্ন্যাসী বেশে জগদীশবাবুর বাড়িতে তার উপস্থিতি হওয়া এবং তার নিখুঁত অভিনয় সকলকে মুগ্ধ করেছিল। ধনী অথচ কৃপণ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি জাদীশবাবুও তার আচরনে মোহিত হয়ে যান এবং প্রণামী হিসাবে টাকা দিতে চাইলেন। প্রচন্ড আর্থিক অভাব থাকা সত্ত্বেও সেই প্রণামীর টাকা হরিদা নেয় নি। প্রণামীর টাকাকে উপেক্ষা করার মতো ঘটনাতে অনাদি চমকিত হয়েছেন। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে চান নি। তিনি শুধুমাত্র পারিশ্রমিক চেয়েছেন বলে অনাদি আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

৬। ‘কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে’ – কেন দোকানদার হেসেফেলেছিল?

সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের মুখ্য চরিত্রে হরিদার একমাত্র প্রাণের পেশা হল বহুরূপী সাজা। উদ্ধৃত অংশে হরিদা সুন্দরী বাইজির ছদ্মবেশে ঘুঙুরের মিষ্টি শব্দ করে রাস্তা দিয়ে প্রায় নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হলেও দোকানদার বহুরূপী হরিকে চিনতে পেরে হেসে ফেলেছিল।

৭। “সেটাই যে হরিদার জীবনের পেশা” – হরিদার জীবনের পেশা কী? কীভাবে তার জীবনযাপন হয়? 

অথবা, হরিদার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্যটি কি ?

সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পের মুখ্য চরিত্র হরিদার এক মাত্র প্রাণের পেশা হল বহুরূপী সাজা।

হরিদার জীবনে একটি নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে। সে বহুরূপী সেজে মাঝে মাঝে রোজগার করে এবং তাতে প্রতিদিনের আহারের সংস্থান হয়। মাঝে মাঝে আবার উপোসও করে। তারপর হঠাৎ একদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় বিচিত্র ছদ্মবেশে অপরূপ রূপ নিয়ে পথে বের হয়। যারা চিনতে পারে এক আনা দু আনা বকশিস দেয়, আর যারা চিনতে পারে না কিছুই দেয় না কিংবা বিরক্ত হয়ে দুটো একটা পয়সা দিয়ে দেয়।

৮। “সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস” – দুর্লভ জিনিসটি কী? কে কি ভাবে তা লাভ করেছিল? 

গল্পকার সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে উল্লেখিত জগদীশবাবুর বাড়িতে আসা এক সন্ন্যাসীর পায়ের ধূলো নেওয়াই এখানে দুর্লভ জিনিস।

হিমালয়ের কোনো এক গুহা থেকে জগদীশবাবুর বাড়িতে কোনো এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন। যিনি বছরে একটি হরিতকি খেয়ে বেঁচে থাকেন। জগদীশবাবু সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিতে চেয়েছিলেন। তিনি এক জোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেছিলেন। তখন বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী তার পা এগিয়ে দিয়েছিলেন, আর সেই সুযোগে জগদীশবাবু তার পায়ের ধুলো গ্রহন করেছিলেন।

৯। “বড় চমৎকার আজকের এই সন্ধ্যাকার চেহারা” – সন্ধ্যার চেহারার বর্নানা দাও?

সুবোধ ঘোষের ‘বহুরূপী’ গল্পে উল্লিখিত সন্ধ্যায় স্নিগ্ধ উজ্জ্বল চাঁদের আলো দীর্ঘকাল পরে শহরের পরিবেশকে শান্ত, স্নিগ্ধ ও সুন্দর করে তুলেছিল। ফুরফুরে বাতাসে জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানের গাছের পাতা ধীরে ধীরে যেন কি বলতে চেয়েছিল। এমন মায়াময় পরিবেশেই আবির্ভাব হয়েছিল বিবাগীরূপী হরিদার। বিশ্বপ্রকৃতি যেন এই মায়া জগৎ সৃষ্টি করে হরিদার পরিপূক হয়ে উঠেছিল।

১০। “গল্প শুনে খুব গম্ভির হয়ে গেলেন হরিদা” – কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিলেন?

‘বহুরূপী’ গল্পের লেখক সুরোধ ঘোষ ও অন্যদের কাছে জগদীশবাবু তার বাড়িতে আসা এক সন্ন্যাসীর কথা বলেছিলেন। তিনি সারা বছরে একটি হরিতকি খান, বয়স হাজার বছরেরও বেশী। তিনি কাউকেই তার পায়ের ধূলো দেন না। শুধুমাত্র জাদীশবাবু সোনার বোল লাগাनনো খড়ম উপহার দিতে গিয়ে কৌশলে তার পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন। সন্নাসীর এই গল্প শুনেই হরিদা গম্ভীর হয়ে উঠেছিল।

বহুরূপী হতে রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মান – ৫

১। ‘বহুরূপী’ গল্পে হরির বিভিন্ন রূপের মে পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখ।

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত কথাসাহিতিক সুবোধ ঘোষ রচিত ‘বহুরূপী’ গল্পটি একটি উল্লেখযোগ্য গল্প। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের ছিনাথ বহুরপীর মতোই হরিদাও বহুরূপী ধারণ করে আপন অভিনয় প্রদর্শনের দ্বারা দর্শকের যেমন মনোরঞ্জন করেন তেমনই তার শিল্পী মনেরও পরিতৃপ্তি ঘটান। 

আমাদের পাঠ্য গল্পে হরিদার দঃখ-দারিদ্রময় জীবনের পরিচয় গল্প কথক দিয়েছেন। তিনি সহজেই যে কোনোও কাজ করে তাঁর দুঃখ ঘোচাতে পারতেন, কিন্তু তিনি নব নব বৈচিত্র্যের সন্ধান করেন। তাই তার এই পেশা নির্বাচন। 

গল্পের প্রথমে আমরা হরিদাকে পাগলের বেশে দেখি। পোশাকটি অভিনব, তাঁর কোমরে একটা ছেঁড়া কম্বল জড়ানো, গলায় টিনের কৌটার একটি মালা। চকের বাসস্ট্যান্ডের কাছে তার এই রূপ দেখে একটা আতঙ্কের হল্লা তৈরি হয়েছিল।

হরিদার বাইজির ছদ্মবেশ তাকে যেমন সুনাম অর্জনে সহায়তা করেছিল তেমনই অর্থ উপার্জনও হয়েছিল প্রচুর। সন্ধ্যার মোহময় পরিবেশে নুপুরের ঝংকার পরিবেশকে মোহিত করে তুলেছিল। নকল পুলিশের অভিনয়ে মাস্টারমশাই বিভ্রান্ত হয়ে আটআনা ঘুষ দিয়েছিল।

গল্পের সিংহভাগ জুড়ে হরিদার সন্ন্যাসীবেশে অভিনয়ের পরিচয় আমরা পাই। শুভ্রবসন, আদুড় গা, দিব্যকান্তি হরিকে কথক ও তার বন্ধুরাও চিনতে পারেন নি। একজন প্রকৃত বিবাগীর মতো তার আধ্যাত্মিক দর্শন সকলকে মুগ্ধ করে।

পরিশেষে আমরা বলতে পারি ‘বহুরূপী’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা। তাকে ঘিরেই কাহিনী আবর্তিত হয়েছে। তার বিভিন্ন রূপধারণ, অভিনয় কুশলতা, সর্বোপরি পেশাকে সৎ হিসাবে বিবেচনা করা তাকে যে এক মহান চরিত্রে পরিণত করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Comment