জ্ঞানচক্ষু হতে সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
জ্ঞানচক্ষু হতে সংক্ষিপ্ত ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
বিষয় | বাংলা – গল্প |
গল্প | জ্ঞানচক্ষু |
রচনা | আশাপূর্ণা দেবী |
শ্রেণী | দশম শ্রেণী বাংলা |
জ্ঞানচক্ষু হতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
মান – ৩
১। “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই” – অংশটির তাৎপর্য কি?
প্রথিতযশা কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবি রচিত আমাদের পাঠ্য ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের উদ্ধৃত অংশে বক্তা তপনের মনে এই উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে।
প্রকৃত জহুরি যেমন রত্ন দেখেই বুঝে নেয়, রত্ন কতটা খাঁটি বা তাতে কতটা খাদ আছে, সেই রকমই একটি লেখার প্রকৃত মূল্যায়ন যে একজন লেখকের দ্বারাই সম্ভব তপন তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।
২। “তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়” – বিহ্বলতার কারণ কি?
বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন নামের এক কিশোর। তার লেখা গল্প লেখক মেশোমশাই পড়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন। গতানুগতিক বিষয় নিয়ে না লিখে তপন ভর্তি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি নিয়ে গল্পটি লিখে নতুন মেসোমশাই -এর প্রশংসা ধন্য হয়েছে। এমন প্রশংসায় তপন বিহ্বল হয়ে পড়েছে।
৩। “যেন নেশায় পেয়েছে” – কাকে কিসের নেশায় পেয়েছে ?
প্রথিতযশা কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘জানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন-কে লেখার নেশায় পেয়েছে।
লেখক মেশোমশাই এর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তখন একটি গল্প লেখে। এর পর বাড়িতে তাকে সকলেই কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী বলে ঠাট্টা করেছে। কিন্তু সমস্ত কিছুকে অগ্রাহ্য করে উৎসাহের উত্তেজনায় সে আরও তিনটে গল্প লিখেছে। এই লেখার নেশায় সে যেন মাতোয়ারা।
৪। ‘তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায়’ – তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারন কী ?
প্রথিতযশা কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে এলে বাড়িতে তপনের লেখা গল্পটি নিয়ে শোরগোল পড়ে যায়। কেউ বলে ‘চমৎকার লিখেছে তো’, আবার মেশোমশাই বলেন ‘কাঁচা হাতের লেখা কারেকশান করে নিতে হয়েছে’, আবার কেউ বলেন লেখক মেসোমশাই এর জন্যই ছাপা হয়েছে। এই ধরনের কথায় তপন আনন্দিত হওয়ার পরিবর্তে বিমর্ষ হয়ে পড়ে। কথাগুলি শুনতে শুনতে তপন হারিয়ে যায়।
৫। “এর মধ্যে তখন কোথায়?” – তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
প্রথিতযশা কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপন। পত্রিকায় প্রকাশিত তার গল্পটি মা পড়তে বললে পড়তে গিয়ে বুঝতে পারে এই লেখা তার নয়। তপনের লেখক মেশোমশাই গল্পের আদি-মধ্য-অন্ত পুরোটাই কারেকশন করে লিখেছেন। তাই তখন নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করেছে, এর মধ্যে তপন কোথা?
৬। “আজ যেন তার জীবনে সবচেয়ে দুঃখের দিন” – সবচেয়ে দুঃখের দিন কেন?
প্রথিতযশা কথাশিল্পী আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’, গল্পের প্রধান চরিত্র তপন। লেখক মেসোমশাই তার লেখা গল্পটি আগাগোড়া পালটে দিলে সে ব্যথিত ও মর্মাহত হয়ে পড়ে। বাড়ির সকলের সামনে তার লেখা গল্প যখন সে পড়ে, সবাই প্রশংসা করলেও সে যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়। তার নামে অন্যের লেখা পড়তে গিয়ে সে ব্যথায় কাতর হয়। তার মধ্যে জাগে দুঃখের অনুভূতি।
জ্ঞানচক্ষু হতে রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর
মান – ৫
১। “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা” – কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে? সেই ঘটনা বলতে কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞাধচক্ষু’ গল্পে এই তাৎপর্যপূর্ণ অংশটির উল্লেখ আমরা পাই। গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখা গল্প পত্রিকায় প্রকাশের জন্য মেসোমশাই নিয়ে গেছেন। তপন সেই আশাতেই প্রতীক্ষা করে থাকে। এর বেশ কিছুদিন পর যখন তপন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল তখন তার মাসি ও মেসো সন্ধ্যাতারা পত্রিকার একটি সংস্করণ নিয়ে বেড়াতে এলেন। পত্রিকার সূচিপত্রে তপন কুমার রায়-এর লেখা গল্প ‘প্রথমদিন’ প্রকাশিত হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট অংশে সেই সময়ের কথাই বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট অংশে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে তা যথেষ্ট চমকপ্রদ। রোমান্টিক মনের কিশোর তপন মেসোমশাই-কে দেখেই গল্প লেখার অনুপ্রেরনা লাভ করে। এক ব্যতিক্রমি মৌলিক প্রতিভার অধিকারিও ছিল সে। তাই আর পাঁচটা লেখকের মতো সাধারণ ঘটনা না লিখে সে তার স্কুলে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প লিখেছে। তার মেসোমশাই প্রশংসিত হয়ে গল্পটি সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়।
কিন্তু অনেকদিন কেটে গেলে তখন সে আশা ছেড়ে দেয়। এমন সময় ছোটো মাসি ও মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকার একটি সংস্করণ নিয়ে আসে। পত্রিকার নামি দামি লেখকদের সাথে তপন কুমার রায়ের লেখা ‘প্রথম দিন’ গল্পটিও সূচিপত্রে বিদ্যমান। তাই তপনের কাছে ঘটনাটি ছিল যথেষ্ট চমকপ্রদ ও বিষ্ময়কর।
২। ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের চরিত্রটি বিশেষণ করো।
বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র হল তপন। তপনকে নিয়েই গল্পের কাহিনী কায়া নির্মিত।
এই গল্পে তপনকে রোমান্টিক মনের এক কিশোর বালক বলেই আমার মনে হয়। নতুন মেসোমশাই-কে দেখে তার উপলব্ধি, লেখক হওয়ার ইচ্ছা, প্রশংসা শুনে আবেগের উচ্ছ্বাস প্রভৃতি বিষয় রোমান্টিক মনের পরিচয়কেই তুলে ধরে।
নতুন মেসোমশাইকে দেখে তার মনে লেখক হওয়ার ইচ্ছা জাগে এবং সেই বাসনার পরিপূরণও হয়ে যায়। শুধু ‘প্রথম দিন’ গল্পটিই নয়, আরও দু-তিনটে গল্প সে লিখে ফেলে। তার মধ্যে যে যথেষ্ট মৌলিক প্রতিভা ছিল তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তপন রোমান্টিক মনের একজন স্কুল পড়ুয়া কিশোর বালক হলেও তার মধ্যে বাস্তবতা বোধ প্রখর ছিল। যখন সে দেখে তার লেখা গল্প পুরোটাই পাল্টে দেওয়া হয়েছে, তখন তার হৃদয়ে সৃষ্টি হয় যন্ত্রণার ক্ষত। শেষপর্যন্ত সে ঠিক করে যদি কখনোও লেখা ছাপতে দেয় তো নিজে গিয়ে দেবে নিজের কাঁচা হাতের লেখা, ছাপা হয় হোক, না হয় না হোক। এভাবে যে আত্মপ্রত্যয় ও দৃঢ় সংকল্প সে গ্রহন করলো তা যথেষ্ট বাস্তবোচিত।
পরিশেষে আমরা বলতে পারি লেখিকা আশাপূর্ণা দেবী তপনের চরিত্র চিত্রনের মাধ্যমেই সৃষ্টির ও স্রষ্টার মনের কথা তুলে ধরেছেন।