সমাস কাকে বলে ও সমাস শব্দের অর্থ কি ? সমাস কয় প্রকার ও কি কি? সমাসের উদাহরণ দাও। সমাস ও সন্ধির পার্থক্য কি? এই নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল ।
সমাস কাকে বলে ও সমাস শব্দের অর্থ
:- ব্যাকরণে সমাস কথাটির অর্থ হল সংক্ষিপ্ত বা সংক্ষেপ । ব্যুৎপত্তিগত অর্থ সম্ —√অস্ + ঘঞ্ = সমাস। মনের ভাবকে যথাযথভাবে সহজ সরল ও সংক্ষেপে প্রকাশ করার জন্য সমাস পড়া বা জানার প্রয়োজন । তাই বাক্যের দুই বা তার বেশি পদকে এক পদে পরিণত করে সংক্ষেপ করার রীতিকে বলা হয় সমাস ।
সমাসের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিক হল—
- (১) সমস্যমান পদ
- (২) ব্যাসবাক্য
- (৩) সমস্তপদ /সমাসবদ্ধ পদ ।
(১) সমস্যমান পদ —
যে সকল পদের যোগে সমাস তৈরি হয় তাদের সমস্যমান পদ বলে । যেমন— পথের রাজা = রাজপথ, বিলেত থেকে ফেরত = বিলেত ফেরত । এখানে ‘পথের’, ‘বিলেত’ হল পূর্বপদ । রাজা, ফেরত হল পরপদ বা উত্তরপদ ।
(২) ব্যাসবাক্য / বিগ্রহ বাক্য —
সমস্যমান পদগুলি দিয়ে যে বাক্য বা বাক্যাংশ তৈরি হয় তাকে ব্যাসবাক্য বলে। যেমন— বিলেত থেকে ফেরত, পথের রাজা ।
(৩) সমস্তপদ বা সমাসবদ্ধ পদ —
পূর্বপদ ও পরপদ বা উত্তরপদের মিলনে যে নতুন পদ সৃষ্টি হয় তাকে বলে সমস্তপদ । যেমন – রাজার পুত্র = রাজপুত্র —এই সমাসটিতে ‘রাজার পুত্র’ —হল ব্যাস বাক্য, ‘রাজপুত্র’ —হল সমস্তপদ, ‘রাজার’ এবং ‘পুত্র’ —হল সমস্যমান পদ ।
সমাসের শ্রেণীবিভাগ
বাংলা ভাষায় সমাস মূলত ছয় প্রকার—
- (১) তৎপুরুষ,
- (২) কর্মধারয়,
- (৩) দ্বন্দ্ব,
- (৪) দ্বিগু,
- (৫) বহুব্রীহি,
- (৬) অব্যয়ীভাব।
এছাড়াও (৭) নিত্য সমাস, (৮) বাক্যাশ্রয়ী সমাস ও (৯) অলোপ সমাস আছে।
পূর্বপদের অর্থ প্রাধান্য | পরপদের অর্থ প্রাধান্য | সমাস |
---|---|---|
আছে | আছে | দ্বন্দ্ব |
নেই | আছে | কর্মধারয়, তৎপুরুষ, দ্বিগু |
আছে | নেই | অব্যয়ীভাব |
নেই | নেই | বহুব্রীহি |
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য :-
- (ক) সন্ধি হল বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন আর পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত দুই বা তার বেশি পদের একপদে পরিণত হওয়াই হল সমাস । যেমন দেব + আলয় = দেবালয় → সন্ধি, দেবের আলয় = দেবালয় → সমাস ।
- (খ) সন্ধিতে উভয় পদের অর্থ বজায় থাকে কিন্তু সমাসের ক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়া অন্য সমাসে পদগুলি সমানভাবে গুরুত্ব নাও পেতে পারে । নব + অন্ন = নবান্ন → সন্ধি । দশ আনন যার = দশানন → সমাস ।
- (গ) সন্ধিতে বিভক্তি লোপ পায় না কিন্তু সমাসে বিভক্তি লোপ পায় । সিংহ + আসন = সিংহাসন → সন্ধি । সিংহ চিহ্নিত আসন = সিংহাসন → সমাস ।