প্রবন্ধ: আমাদের দেশ ভারতবর্ষ

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা কর ।

আমাদের দেশভারতবর্ষ
রাজধানী নয়া দিল্লি
নামকরণরাজা ভরত
শূন্য আবিষ্কার আর্যভট্ট
নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সম্পর্কে প্রবন্ধ

“ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা

তাহার মাঝে আছে দেশ এক – সকল দেশের সেরা” 

ভূমিকা :- সকল দেশের সেরা এই দেশটি হল আমাদের জন্মভূমি ভারতবর্ষ। দেশ আমাদের সকলের কাছে এক পরম আবেগের বিষয়। নিজের দেশকে আমরা মাতৃভূমি বা পিতৃভূমি বলে থাকি। প্রত্যেকটি মানুষের কাছে দেশ বলতে শুধুমাত্র কোনো একটি ভূখন্ড নয়, দেশ হল মানুষের জন্মভূমি, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সকল প্রকার আবেগ এবং ভালোবাসা। আমাদের দেশের নাম ভারতবর্ষ। আজকের একবিংশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষ পৃথিবীতে একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। 

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ -এর অবস্থান :-

পৃথিবীর বুকে বৃহত্তম মহাদেশ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত আমাদের দেশ ভারতবর্ষ। ভূ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ এই দেশটির উত্তর-পূর্বে রয়েছে হিমালয় পর্বত শ্রেণী, উত্তর-পশ্চিমে কারাকোরাম ও পিরপাঞ্জালের মত বৃহৎ পর্বতশ্রেণী, দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগর, পশ্চিমে আরব সাগর আর সবচেয়ে দক্ষিণের রয়েছে সুবিশাল ভারত মহাসাগর। পৃথিবীর বুকে আশ্চর্যজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারতবর্ষ একটি উপমহাদেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে থাকে। ভারতবর্ষের উত্তরপূর্বে অবস্থিত চীন, নেপাল, ভুটান; দক্ষিনে শ্রীলংকা, পূর্বে বাংলাদেশ ও মায়ানমার এবং পশ্চিমে পাকিস্তান।

ভারত নামের উৎপত্তি

চন্দ্রবংশীয় পৌরাণিক রাজা ভরতের নামানুসারে ভারত নামটির উৎপত্তি। কথিত আছে এই বর্ষ বা অঞ্চলটি রাজা ভরতকে দান করা হয়েছিল বলে এর নাম ভারতবর্ষ। ইংরেজি ইন্ডিয়া (India) শব্দটি এসেছে সিন্ধু নদের আদি ফার্সি নাম হিন্দু থেকে। প্রাচীন গ্রিকরা ভারতীয়দের ইন্দোই অর্থাৎ, ইন্দাস (সিন্ধু) নদী অববাহিকার অধিবাসী) নামে অভিহিত করতেন। স্বাধীনতার পর ভারতের সংবিধানে ও লোকমুখে ভারত নামটিই প্রচলিত হয়। মধ্যযুগে উত্তর ভারত অর্থে ফার্সি হিন্দুস্তান (হিন্দুস্থান, সিন্ধুনদের দেশ) শব্দটিও ব্যবহৃত হত। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই শব্দটি সমগ্র ভারত অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ভারতবর্ষের ইতিহাস

পৃথিবীর বুকে ভারতবর্ষের এক সুপ্রাচীন ও গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে। এই বিশ্বে প্রাচীনকাল থেকে যত সভ্যতা গড়ে উঠেছে তারমধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হল ভারতীয় সভ্যতা এবং সংস্কৃতি। খ্রিস্টপূর্ব প্রায় ৫০০০ বছর আগে থেকে ভারতবর্ষের বুকে মানুষ এক অন্যতম উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। সিন্ধু নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সংস্কৃতি। তারপর থেকে কালের নিয়মে বহু ছোট-বড় সংস্কৃতি ভারতবর্ষের সভ্যতার স্রোতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এক সময় এই দেশের বুকে পত্তন ঘটেছে মহান বৈদিক সভ্যতার। এরপর উত্থান ঘটেছে মৌর্য, গুপ্ত, কুষাণ প্রভৃতি বৃহৎ সাম্রাজ্যের।

আমাদের দেশ ভারতবর্ষ মহান

প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষের সভ্যতার টানে এসেছে শক, হূন, পারসিক, গ্ৰিক প্রভৃতি জাতি। এরপর এসেছে মধ্য এশিয়ার মুসলমানেরা। তারপর এসেছে ব্রিটিশ। পৃথিবীর সকল অংশের সকল প্রকারের মানুষের মিলনে আমাদের ভারতবর্ষ হয়ে উঠেছে মহান।

আমাদের দেশ ভারতবর্ষের ঐতিহ্য

আমাদের দেশের যেমন এক সুপ্রাচীন ইতিহাস আছে, তেমনি রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে বয়ে আনা এক মহান ঐতিহ্য। এক্ষেত্রে প্রথমেই উল্লেখ্য হলো পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ তিনটি ধর্মের (হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন) জন্মস্থান আমাদের ভারতবর্ষ। ভারতবর্ষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেই বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বৌদ্ধ ধর্মের শান্তির বাণী পৃথিবীজুড়ে সুবিদিত। এই পবিত্র দেশ থেকেই ভগবান গৌতম বুদ্ধ তার শান্তির বাণী প্রচার করেছিলেন। তাছাড়া প্রাচীন যুগে ভারতবর্ষ ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পীঠস্থান। ভারতবর্ষের প্রাচীন গণিতজ্ঞ আর্যভট্ট শূন্যের আবিষ্কর্তা। 

ভারতবর্ষের রাজ্য ও জনসংখ্যা

ভারতবর্ষ একটি জনবহুল দেশ বর্তমানে ভারতবর্ষের জনসংখ্যা ১৩০ কোটিরও বেশি। বর্তমানে ভারতবর্ষে ২৮ রাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল রয়েছে। আয়তনের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ রাজ্য হল মধ্যপ্রদেশ আর জনসংখ্যার দিক দিয়ে উত্তর প্রদেশ।

বিশ্ববরেণ্য ভারত

হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন প্রভৃতি নানা ধর্মাবলম্বী মানুষ ভারতে বাস করেন। বুদ্ধ, মহাবীর, নানক, চৈতন্য, মহাত্মা গান্ধি, রবীন্দ্রনাথ, শ্রীঅরবিন্দ,  বিবেকানন্দ, নেতাজি ভারতে জন্মগ্রহণ করে এই দেশকে বিশ্ববরেণ্য করে তুলেছেন।

বৈচিত্র্যময় ভারত

আমাদের দেশ নানা প্রকার বৈচিত্র্যে ভরপুর। দেশটির একদিকে যেমন রয়েছে হিমালয়ের মতো সুউচ্চ পর্বতশ্রেণী, তেমনি রয়েছে সাগর, উপসাগর, মহাসাগর। ভারতবর্ষের উত্তর পূর্বে যেমন রয়েছে চেরাপুঞ্জির মত পৃথিবীর সবথেকে আর্দ্র অঞ্চল, তেমনি পশ্চিমে রয়েছে রাজস্থানের উষ্ণ ও শুষ্ক থর মরুভূমি। দক্ষিণ অংশে যেমন অবস্থিত মালভূমি তেমনি উত্তরে রয়েছে উচ্চভূমি, আবার পূর্বে সমভূমি। ব্যাপক ভূ-প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কারণে ভারতবর্ষকে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা বিশ্বের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ বলেও অভিহিত করে থাকেন।

বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য

প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মত মানুষ তথা তাদের খাদ্য, পোশাক-আশাক, ভাষা, দৈনিক জীবনযাপনেও ব্যাপক পার্থক্য সারা দেশজুড়ে বর্তমান। এত বৈচিত্র্য সত্ত্বেও ভারতবর্ষের প্রতিটি কোণার প্রত্যেক মানুষ নিজেকে ভারতবাসী বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এইখানেই ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য লক্ষ্য করা যায়।

আজকের ভারতবর্ষ

বিশ্বের দরবারে আজ ভারত একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাম। দীর্ঘ ১৯০ বছর ঔপনিবেশিকতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকা সত্বেও স্বাধীনতার মাত্র 75 বছরের মধ্যে ভারত নিজেকে এক অভাবনীয় উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। পৃথিবীজুড়ে প্রত্যেকটি আধুনিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে আজ ভারতীয়রা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। মহাকাশ গবেষণা থেকে শুরু করে চিকিৎসা তথা প্রযুক্তিবিদ্যা সকল ক্ষেত্রে ভারতের জয়যাত্রা অব্যাহত। বিশাল জনসংখ্যার কারণে আজকের ভারতবর্ষ হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খোলা বাজার। এই বাজারের উপর ভিত্তি করে একের পর এক বৃহৎ শিল্প ভারতবর্ষে বিকাশ লাভ করেছে। 

উপসংহার

সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই ভারত পৃথিবীতে শান্তি, সমৃদ্ধি, জ্ঞান চর্চা এবং আন্তর্জাতিকতার এক মূর্ত প্রতীক। নিজের সেই মহান ঐতিহ্যকে আমাদের দেশ আজও সগৌরবে বহন করে নিয়ে চলেছে। আধুনিক বিশ্বে আধুনিক মননের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারত পৃথিবীতে দিশা দেখাচ্ছে। এমন একটি দেশে জন্ম লাভ করে আমি সত্যিই গর্বিত। সময়ের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারত যে উচ্চ আসন লাভ করছে তাতে ভারতবর্ষের মানুষের “ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে” – এই স্বপ্ন ধীরে ধীরে সার্থকতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।


(FAQ) আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রবন্ধটি সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য

  1. আমাদের দেশ ভারতবর্ষ কোন মহাদেশে অবস্থিত?

    এশিয়া।

  2. কোন রাজার নাম অনুসারে আমাদের দেশের নাম হয়?

    রাজা ভরত।

  3. বর্তমান ভারতে কতগুলি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে?

    ২৮ টি অঙ্গরাজ্য ও ৮ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।

  4. আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রবন্ধটি কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে

    আমাদের দেশ ভারতবর্ষ প্রবন্ধটি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে

Leave a Comment