শ্রীকৃষ্ণকীর্তন: মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য-বাঙ্গালীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন: মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য-বাঙ্গালীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন- মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য-বাঙ্গালীর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি

১। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতার নাম কী?

(ক) বড়ু চণ্ডীদাস

(খ) চণ্ডীদাস

(ঘ) দ্বিজ চণ্ডীদাস

(গ) অনন্ত চণ্ডীদাস

২। “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কে আবিষ্কার করেন?

(ক) যশোদারঞ্জন রায়

(খ) বিকাশরঞ্জন রায়

(গ) বসন্তরঞ্জন রায়

(ঘ) বসুরঞ্জন রায়

৩। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের পুথিটি আবিষ্কৃত হয় –

(ক) ১৯১০ সালে

(খ) ১৯০৮ সালে

(গ) ১৯০৭ সালে

(ঘ) ১৯০৯ সালে

৪। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির অপর নাম হল –

(ক) শ্রীকৃষ্ণসন্দৰ্ভ

(খ) শ্রীকৃঘ্নবিজয়

(গ) কৃষ্ণসন্দর্ভ

(ঘ) কৃষ্ণবিজয়

৫। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির নামকরণ করেছিলেন –

(ক) রঞ্জন রায়

(খ) বসন্ত রায়

(গ) বসন্তরঞ্জন রায়

(ঘ) যশোদারঞ্জন রায়

৬। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি রচিত হয় আনুমানিক কত খ্রিস্টাব্দে?

(ক) ১৪৭০-১৪৯০ 

(খ) ১৪৭৩-১৪৮০

(গ) ১৫০০-১৫১০

(ঘ) ১৪৯০-১৫00

৭। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যগ্রন্থটি কত খণ্ডে বিভক্ত?

(ক) ১২ খণ্ড

(খ) ১৪ খন্ড

(গ) ১৫ খন্ড

(ঘ) ১৩ খন্ড

৮। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ গ্রন্থটির শেষ খন্ড হল –

(ক) রাধা

(খ) বিরহ

(গ) রাধাবিরহ

(ঘ) কোনোটাই নয়

৯। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যে কোন্ রসের প্রাধান্য ?

(ক) মধুর

(খ) শৃঙ্গার

(গ) শান্ত

(ঘ) দাস্য

১০। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রধান চরিত্র কয়টি?

(ক) চারটি

(খ) পাঁচটি

(গ) দুটি

(ঘ) তিনটি

১১। বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম কাহিনি কাব্যের নাম হল –

(ক) চর্যাপদ

(খ) চর্যাচর্যবিনিশ্চয়

(গ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

(ঘ) পদাবলি

১২। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের পদসংখ্যা কয়টি ?

(ক) ৪২০

(গ) ৪১৯

(খ) ৪২১

(ঘ) ৪১৮

১৩। বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরের — গ্রাম থেকে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুথিটি আবিষ্কার করেন।

(ক) কাঁকিল্যা

(খ) কুলীন গ্রাম

(গ) কুমারহট্ট

(ঘ) কোনোটাই নয়

১৪। “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুথিটি কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়?

(ক) ১৯১২

(খ) ১৯১৪

(গ) ১৯১৫

(ঘ) ১৯১৬

১৫। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পুথির মধ্যে প্রাপ্ত চিরকুটে পুথির নাম হিসাবে পাওয়া যায় –

(ক) শ্রীকৃষ্ণচরিত

(খ) শ্রীকৃষ্ণসন্দৰ্ভ

(গ) কৃষ্ণচরিত

(ঘ) কোনোটাই নয়

১৬। বড়ু চণ্ডীদাসের বাসস্থান ছিল বাঁকুড়া জেলার কোন গ্ৰামে?

(ক) ছাতনা 

(খ) কাঁকিল্যা

(গ) কুলীনগ্রাম

(ঘ) কোনোটাই নয়

১৭। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের প্রথম খণ্ডের নাম –

(ক) জন্মখণ্ড

(খ) ভারখণ্ড

(গ) কৃষ্ণখণ্ড

(ঘ) রাধাখণ্ড

১৮। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির শেষ খণ্ড হল –

(ক) বৃন্দাবনখণ্ড

(খ) বাণখণ্ড

(গ) রাধাবিরহ

(ঘ) বংশীখণ্ড

১৯। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রধান উপজীব্য হল –

(ক) রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা

(খ) রাধার বিরহ

(গ) বৈষ্ণবধর্ম প্রচার

(ঘ) কোনোটাই নয়

২০। বাংলাদেশে রাধাকৃষ্ণবিষয়ক প্রথম কাহিনি কাব্য হল –

(ক) চর্যাপদ

(খ) শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

(গ) ভাগবত

(ঘ) চৈতন্য ভাগবত

১। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের আবিষ্কারক কে? 

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের আবিষ্কারক হলেন বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ।

২। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কোথা থেকে আবিষ্কৃত হয়?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের কাছে কাঁকিল্যা গ্রামের অধিবাসী প্রখ্যাত বৈষ্ণব শ্রীনিবাস আচার্যের দৌহিত্রবংশজাত দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির গোয়ালঘর থেকে আবিষ্কৃত হয়।

৩। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের কোন যুগের নিদর্শন? 

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি মধ্যযুগের নিদর্শন।

৪। “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর তেরোটি খণ্ডের নাম কী?

শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের তেরোটি খণ্ড হল জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড, ভারখণ্ড, ছত্রখণ্ড, বৃন্দাবনখণ্ড, কালিয়দমনখণ্ড, যমুনাখন্ড, হারখণ্ড, বাণখণ্ড, বংশীখন্ড ও রাধাবিরহ।

৫। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ গ্রন্থটি কোন রসের কোন বিষয়ক কাব্য ?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ গ্রন্থটি শৃঙ্গাররসের রাধাকৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাব্য।

৬। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কবে, কোথা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়।

৭। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রধান চরিত্র কয়টি ও কী কী ?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের প্রধান চরিত্র তিনটি – রাধা, কৃষ্ণ ও বড়ায়ি। 

৮। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কোন জাতীয়, কোন শতাব্দীর রচনা?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি নাট্যজাতীয় কাব্য। এটি পঞ্চদশ শতাব্দীর রচনা। 

৯। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ এর প্রাপ্ত পুথির কোন কোন অংশ খণ্ডিত ছিল।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এর প্রাপ্ত পুথির ‘জন্মখণ্ড’ ও ‘রাধাবিরহ’ অংশ খণ্ডিত ছিল।

১০। ‘শ্রীকৃষ্ণকীৰ্তন’ কোন ধরনের কাব্য? 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি রাধাকৃযষ্ণবিষয়ক প্রথম কাহিনি কাব্য।

১১। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষাবৈশিষ্ট্য কী? 

শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষাকে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় আদি-মধ্যযুগের বাংলা ভাষার একমাত্র আদর্শ নিদর্শন বলেছেন।

১২। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির রচনাকাল উল্লেখ করো।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের পূর্বে রচিত বলে উল্লেখ করা যায়।

১৩। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা কে?

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের রচয়িতা হলেন কবি বড়ু চণ্ডীদাস।

১৪। বড়ু চণ্ডীদাস কোন দেবীর আরাধ্যা ছিলেন?

বড়ু চণ্ডীদাস শাক্তদেবী বাশুলির আরাধ্যা ছিলেন। 

১৫। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটিতে কতগুলি পদ রয়েছে?

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটিতে ৪১৮টি পদ রয়েছে।

১। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কয়টি খণ্ড ও কী কী ? এই কাব্যটির সাহিত্যমূল্য আলোচনা করো। ১+২+২ (২০১৫)

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের ১৩ টি খণ্ড। – জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড, ভারখণ্ড, ছত্রখণ্ড, বৃন্দাবনখণ্ড, কালিয়দমনখণ্ড, যমুনাখণ্ড, হারখণ্ড, বাণখণ্ড, বংশীখণ্ড ও রাধাবিরহ।

বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আদি-মধ্যযুগের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনই শুধু নয়, একই সঙ্গে বাংলা ভাষায় প্রাপ্ত কৃষ্ণলীলাকথা নিয়ে রচিত প্রথম কাব্যও বটে। কবির মৌলিকতা প্রকাশ পেয়েছে আদিরস ও লোককথাকে পুরাণের কাঠামোয় ফেলে নতুন স্বাদে উপস্থিত করার মধ্যে। কাব্যটির মধ্যে একাধারে নাট্যরস, গীতিরস ও আখ্যানবিবৃতির ত্রিবেণীসংগম ঘটেছে। রাধা, কৃষ্ণ ও সখী – এই তিনটি চরিত্রের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে কাহিনি পেয়েছে গতি, প্রধান হয়েছে গীত, গীতগুলিই সংলাপ ও তার মাধ্যমেই রাধা ও সখীরা তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। 

কবি তাঁর কাব্যের বাণীবয়নে, চিত্ররচনায় এবং অলংকার নির্মাণে বিদ্রুপ ব্যঙ্গে ঝলসিত বাক্যবিন্যাসে লোকরুচিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। বিরহব্যথিতা রাধাকে কৃষ্ণ যখন বলেন, “পোটলী বান্ধিঞা রাখ নহুলী যৌবন” তখন ভাষা ব্যবহারের এই বিশিষ্টতাই কৃষ্ণ চরিত্রের নির্মমতাকে বুঝিয়ে দেয়।

কাব্যের ছন্দে পয়ার ত্রিপদীতে মাত্রাসমতা সব সময় না থাকলেও পয়ার ত্রিপদীর কাঠামো বজায় রয়েছে। তবে কোনো কোনো জায়গায় এক ধরনের শিথিল চটুল ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম এই আখ্যায়িকা কাব্যটি পটভূমি ও চরিত্রসৃষ্টিতে একই সঙ্গে পৌরাণিক ও লৌকিক।

২। কে, কবে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ -এর পুথি আবিষ্কার করেন । কাব্যটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

২+৩ (২০১৮, ২০২২)

বাংলা সাহিত্যের গবেষক বসন্তরঞ্জন রায় বিদদ্বল্লভ মহাশয় বাঁকুড়া জেলার বনবিষ্ণুপুরের কাছে কাঁকিল্যা গ্ৰামের অধিবাসী দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে অযত্নে রক্ষিত অবস্থায় ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ -এর পুথিটি আবিষ্কার করেন।

ভাগবত প্রভৃতি পুরাণের কৃষ্ণলীলা বিষয়ক কাহিনিকে সামান্য অনুসরণ করে, জয়দেবের গীতগোবিন্দের বিশেষ প্রভাব শিরোধার্য করে বড়ু চণ্ডীদাস রাধাকৃষ্ণবিষয়ক কাব্য ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ রচনা করেন। ভূভারহরণের জন্য দেবতাদের অনুরোধে মর্তে কৃষ্ণের জন্ম, মথুরা গমন, মথুরা থেকে কিছু সময়ের জন্য প্রত্যাবর্তন এবং রাধার সঙ্গে মিলনের পর কৃষ্ণের পুনরায় মথুরা যাত্রা ও বিরহিণী রাধার ব্যাকুল ক্রন্দন পর্যন্ত এসে পুথিটির পাতা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কাব্যটি মিলনান্ত নাকি বিয়োগান্ত তা বোঝা যায় না।  

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যটিতে মোট ১৩টি খন্ড রয়েছে – জন্মখণ্ড, তাম্বুলখণ্ড, দানখণ্ড, নৌকাখণ্ড, ভারখণ্ড, ছত্রখণ্ড, বৃন্দাবনখণ্ড, কালিয়দমনখণ্ড, যমুনাখণ্ড, হারখণ্ড, বাণখন্ড, বংশীখন্ড ও রাধাবিরহ।

বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা পুরাণ ও বৈষ্ণব শাস্ত্রাদি বর্ণিত রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি থেকে অনেকাংশে পৃথক। কৃষ্ণের জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনায় ও রাসলীলা, বস্ত্রহরণ ইত্যাদিতে বড়ু চণ্ডীদাস বিষ্ণুপুরাণ, ভাগবত পুরাণাদির অনুসরণ করেছেন। আর অবশিষ্ট অংশে তিনি পুরাণবহির্ভূত ঘটনারই আশ্রয় নিয়েছেন। 

বড়ু চণ্ডীদাস জয়দেবের গীতগোবিন্দের ভাব, ভাষা, নাট্যগীতের কাঠামো প্রত্যক্ষভাবে অনুসরণ করেছেন। কবি অমার্জিত, স্থূল ও গ্রামীণ রাধাকৃষ্ণের প্রণয়কাহিনির মধ্যে যে কবিত্বশক্তি ও জীবন অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। কাব্যশরীরের প্রসাধনে কবির উপমা রূপক, উৎপ্রেক্ষা অলংকারের প্রয়োগনৈপুণ্য অসাধারণ। কবির ছন্দোবৈচিত্র্যে কারুদক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায় শ্রীরাধার রূপ বর্ণনায় –

তিন ভুবনজনমোহিনী।

রতিরসকামদোহনী।।

শিরীষ কুসুম কোঁ অলী।

অদ্ভূত কণকপুতলী।।

সহজেই বোঝা যায়, ভাবপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা কবি বড়ু চণ্ডীদাসের হাতে এক বিশেষ শক্তি আয়ত্ত করেছে।

৩। বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন কোনটি ? এর সাহিত্যমূল্য আলোচনা করো।

  ১+৪ (২০২০)

বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের প্রথম নিদর্শন বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।

বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ আদি-মধ্যযুগের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনই শুধু নয়, একই সঙ্গে বাংলা ভাষায় প্রাপ্ত কৃষ্ণলীলাকথা নিয়ে রচিত প্রথম কাব্যও বটে। কবির মৌলিকতা প্রকাশ পেয়েছে আদিরস ও লোককথাকে পুরাণের কাঠামোয় ফেলে নতুন স্বাদে উপস্থিত করার মধ্যে। কাব্যটির মধ্যে একাধারে নাট্যরস, গীতিরস ও আখ্যানবিবৃতির ত্রিবেণীসংগম ঘটেছে। রাধা, কৃষ্ণ ও সখী – এই তিনটি চরিত্রের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে কাহিনি পেয়েছে গতি, প্রধান হয়েছে গীত, গীতগুলিই সংলাপ ও তার মাধ্যমেই রাধা ও সখীরা তাদের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। 

কবি তাঁর কাব্যের বাণীবয়নে, চিত্ররচনায় এবং অলংকার নির্মাণে বিদ্রুপ ব্যঙ্গে ঝলসিত বাক্যবিন্যাসে লোকরুচিকে প্রশ্রয় দিয়েছেন। বিরহব্যথিতা রাধাকে কৃষ্ণ যখন বলেন, “পোটলী বান্ধিঞা রাখ নহুলী যৌবন” তখন ভাষা ব্যবহারের এই বিশিষ্টতাই কৃষ্ণ চরিত্রের নির্মমতাকে বুঝিয়ে দেয়।

কাব্যের ছন্দে পয়ার ত্রিপদীতে মাত্রাসমতা সব সময় না থাকলেও পয়ার ত্রিপদীর কাঠামো বজায় রয়েছে। তবে কোনো কোনো জায়গায় এক ধরনের শিথিল চটুল ছন্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বাংলা সাহিত্যের প্রথম এই আখ্যায়িকা কাব্যটি পটভূমি ও চরিত্রসৃষ্টিতে একই সঙ্গে পৌরাণিক ও লৌকিক।

Leave a Comment