অব্যয় পদ

অব্যয়

অব্যয় পদ :- যে পদের কোনো অবস্থাতেই (লিঙ্গ বচন পুরুষ ভেদে) কোনো পরিবর্তন হয় না এবং মনের আবেগ বিস্ময় প্রকাশ করে দুটি বাক্য কে যুক্ত করে তাকে অব্যয় পদ বলে।

অব্যয় পদের প্রকারভেদ :- অব্যয় পদ সাধারণত চার প্রকার – (১) পদান্বয়ী  অব্যয় (২) সমুচ্চয়ী অব্যয় (৩) অনন্বয়ী অব্যয় (৪) অনুকার অব্যয়।

(১)পদান্বয়ী অব্যয় :- যে অব্যয় বাক্যের অন্তর্গত দুটি পদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে পদান্বয়ী  অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- তোমার জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছি। তোমায় দিয়ে এ কাজ হবে না। এখানে জন্য, দিয়ে, পদাম্বয়ী অব্যয়। এরূপ দ্বারা, সঙ্গে, সহিত, ব্যতীত, পর্যন্ত, ন্যায়, বিনা ইত্যাদি।

(২) সমুচ্চয়ী অব্যয় :- যে অব্যয় একাধিক বাক্যকে সংযুক্ত বা সংকুচিত করে তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বলে।

উদাহরণ :-  রাম এবং শ্যাম দুজনে খেলা করছে। সে গরিব কিন্তু সৎ। এখানে এবং, সৎ, সমুচ্চয়ী অব্যয়। এরূপ অথবা, ও, অথচ, বরং,  যেহেতু ইত্যাদি।

সমুচ্চয়ী অব্যয়ের প্রকারভেদ : সমুচ্চয়ী অব্যয় তিন প্রকার (ক) সংযোজক অব্যয় (খ) প্রশ্নসূচক অব্যয় (গ) সাপেক্ষ অব্যয়।

(ক) সংযোজক অব্যয় :- যে অব্যয় দুই বা দুইয়ের বেশি পদ বা বাক্যাংশ কে যুক্ত করে বা তাদের মধ্যে সংযোগ ঘটায় তাকে সংযোজক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- সে মার খায় কিন্তু প্রতিবাদ করে না। তুমি আর আমি ছাড়া কেউ আসবে না। এখানে কিন্তু, আর, সংযোজক অব্যয়। এরূপ – অথচ, অথবা,‌ বরং, তবু, কিংবা,‌ যেহেতু ইত্যাদি।

(খ) প্রশ্ন সূচক অব্যয় :- যে অব্যয়ের দ্বারা বাক্যে প্রশ্ন বোঝানো হয়, তাকে প্রশ্ন সূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- তোমার বাড়ি কোথায় ? তোমার নাম কী ? এখানে কোথায়, কী, প্রশ্নসূচক অব্যয়। এরূপ –  কবে, কেন, কোথা, কেমন, কে ইত্যাদি।

(গ) সাপেক্ষ অব্যয় :- পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত যে জোড়া অব্যয় দুটি পৃথক বাক্যে পৃথকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং বাক্য দুটিকে একটি বাক্যে পরিণত করে, সেই জোড়া অব্যয়কে সাপেক্ষ অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- যদি তুমি  আসো তবে আমি যাব। বরং না খেয়ে মরবো তবুও তার কাছে কিছু চাইবো না। এখানে যদি তবে, বরং তবুও সাপেক্ষ অব্যয়। এরূপ – হয় নয়, যেই অমনি,  এত যে ইত্যাদি।

৩. অনন্বয়ী অব্যয় :- যে অব্যয় দ্বারা মানুষের মনের আনন্দ, দুঃখ, ঘৃণা, লজ্জা, আশঙ্কা প্রভৃতির প্রকাশ ঘটে তাদের অনন্বয়ী অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- বিমলা, ছি ছি ! এমন কাজ তুমি করতে পারলে ? শাবাস ! বাপের বেটা বটে তুমি। এখানে ছি ছি, শাবাস অনন্বয়ী অব্যয়। এরূপ-  হায়, কী কী, কত না,  বাহবা, বাঃ ইত্যাদি।

অনন্বয়ী অব্যয়ের প্রকারভেদ :- অনন্বয়ী অব্যয় সাত প্রকার(ক) আলংকারিক অব্যয় (খ) আবেগসূচক অব্যয় (গ) সম্মতিসূচক অব্যয় (ঘ) অসম্মতিসূচক অব্যয় (ঙ) সম্বোধনসূচক অব্যয় (চ) সাদৃশ্যসূচক অব্যয় (ছ) সংশয়সূচক অব্যয়।

(ক) আলংকারিক অব্যয় :- যে অব্যয় পদের কোনো মানে হয় না কিন্তু বাক্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যের শোভাবর্ধন করে তাকে আলংকারিক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- গরিবের আবার রাত দিন। শাহজাহানের কথা শুনে আমি তো একেবারে আকাশ থেকে পড়লাম। এখানে আবার, তো আলংকারিক অব্যয়। এরূপ- কী, না, কীবা, অথচ, তো, তুমিও, বটে, কত না ইত্যাদি।

(খ) আবেগসূচক অব্যয় :- যে সব অব্যয় পদের দ্বারা মানুষের মনের ভাব, আনন্দ, দুঃখ , আশঙ্কা, লজ্জা, ঘৃনা, ইত্যাদির প্রকাশ ঘটে তাদের আবেগ সূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- বাঃ ! খুব ভালো অভিনয় করেছ। হায় ! হায় ! আমার সর্বনাশ হয়ে গেল। এখানে  বাঃ, হায় ! হায় ! আবেগ সূচক অব্যয়। এরূপ – শাবাশ ! ছি ছি, আহা, উঃ, ওরে বাবা ইত্যাদি।

(গ) সম্মতিসূচক অব্যয় :- যে অব্যয় সমর্থন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তাকে সমর্থন বা সম্মতিসূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- হ্যাঁ, আজই আমি কলকাতা চলে যাচ্ছি। হুঁ, দেখা যাবে কে কত বড়ো খেলোয়াড়। এখানে হ্যাঁ, হুঁ, সম্মতিসূচক অব্যয়। এরূপ- আচ্ছা, আজ্ঞে, ইত্যাদি।

(ঘ) অসম্মতিসূচক অব্যয় :- যে অব্যয়ের সাহায্যে অসম্মতি বোঝায়, তাকে অসম্মতিসূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- আমি তোমার সঙ্গে মোটেই যাব না। তুমি যা ভাবছো ব্যাপারটা তা নয়। এখানে  না, নয়, অসম্মতিসূচক অব্যয়। এরূপ – নেই, নয়, কখনোই না ইত্যাদি।

(ঙ) সম্বোধনসূচক অব্যয় :- কাউকে সম্বোধন বা আহ্বান করার জন্য যে অব্যয় ব্যবহৃত হয় তাকে সম্বোধনসূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- হে ভগবান আমাকে বিপদ থেকে উদ্ধার করো। ওহে একটা বই নিয়ে এসো তো। এখানে  হে, ওহে, সম্বোধনসূচক অব্যয়। এরূপ-  ওরে, ওহে, ওগো ইত্যাদি।

(চ) সাদৃশ্যসূচক অব্যয় :- সাদৃশ্য বা মিল বোঝানোর জন্য যেসব অব্যয় এর ব্যবহার দেখা যায় তাদের সাদৃশ্যসূচক অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- তোমার মতো কাউকে দেখিনি। এখানে মতো, সাদৃশ্যসূচক অব্যয়। এরূপ- মতন, পারা, প্রায় হেন, ইত্যাদি।

(ছ) সংশয়সূচক অব্যয় :- যে অব্যয়ের দ্বারা কোনো বিষয়ে সংশয় বোঝায়, তাকে সংশয়সূচক অব্যয় বলে ।

উদাহরণ :- তুমি নাকি কাল দিল্লি যাচ্ছ ? এখানে নাকি সংশয়সূচক অব্যয়। এরূপ- যেন, বুঝি, কি না ইত্যাদি।

৪. অনুকার অব্যয় :- ধ্বনি বা আওয়াজ এর অনুকরণে যে অব্যয় ব্যবহৃত হয়, তাকে অনুকার অব্যয় বলে।

উদাহরণ :- ঘড়িতে ঢং ঢং করে নটা বাজল। বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর। এখানে ঢং ঢং, টাপুর-টুপুর অনুকার অব্যয়। এরূপ – ফিসফিস, টনটন, ধড়ফড়, ধু-ধু, ঠনঠন ইত্যাদি।

Leave a Comment