ক্রিয়া পদ

ক্রিয়া পদ 

ক্রিয়া পদ :- যে পদ দ্বারা কোন কাজ করা, ঘটা , সম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।

উদাহরন :পড়ছে, খেলছে, কাঁদছে ইত্যাদি।

ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ : ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ করার বেশ কয়েকটি  মাপকাঠি আছে।

(ক) গঠন অনুসারে ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ :-

প্রযোজক ক্রিয়া :প্রযোজক ধাতুতে উপযুক্ত প্রত্যয় বিভক্তি যোগ করে যে ক্রিয়া পাওয়া যায় তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। প্রযোজ‌ক ক্রিয়ার দ্বারা অন্যকে কাজ করানো বোঝায়।

উদাহরণ : মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। শিক্ষকমহাশয় ছাত্রটিকে ব্যাকরণ পড়াচ্ছেন

নামধাতুজ ক্রিয়া : নামধাতু থেকে যে ক্রিয়া উৎপন্ন হয় তাকে নামধাতুজ ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সারা শরীর বিষিয়ে গেল।

যৌগিক ক্রিয়া : প্রধান অর্থবাহী অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অপর একটি ক্রিয়ার যোগে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ :– ছেলেটি সবগুলো মিষ্টি খেয়ে ফেলল। মেয়েটি বই পড়তে লাগল

যুক্ত ক্রিয়া বা সংযোগমূলক ক্রিয়া : কোনো একটি বিশেষ্য বা বিশেষণের সঙ্গে একটি মৌলিক ক্রিয়ার সংযোগে গঠিত ক্রিয়াকে যুক্ত ক্রিয়া বা সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। অন্যভাবে বলা যায় , সংযোগমূলক ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ক্রিয়াকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ :কোনি নদীতে সাঁতার কাটছে। আবার তোরা মানুষ হ

ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া :ধ্বন্যাত্মক ধাতু থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াকে ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। বাঘটা রাগে ফুঁসছে

(খ) বাক্যের অর্থ প্রকাশের বা সম্পূর্ণতার বিচারে ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ :

সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যের ভাবকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে পারে বা বাক্যের পূর্ণতা ঘটায়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : আমি ভাত খেয়েছি । সে রোজ গান শোনে। এখানে খেয়েছি, শোনে, বাক্যের পূর্ণতা এনেছে তাই এরা সমাপিকা ক্রিয়া।

অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া বাক্যের ভাবকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রকাশ করতে পারে না বা যে ক্রিয়ার মাধ্যমে বাক্যের অর্থ পূর্ণতা লাভ করে না , তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : আমি ভাত খেয়ে এসেছি। সে খেলতে গেছে।

(গ) কর্ম অনুসারে ক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ :

সকর্মক ক্রিয়া :- যদি কোনো বাক্যের মধ্যে কর্ম থাকে তাহলে সেই বাক্যের ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ :- আমি ভাত খাই। সে বই পড়ে।

সকর্মক ক্রিয়া আবার ২ ধরণের। যেমন- এককর্মক ক্রিয়া ও দ্বিকর্মক ক্রিয়া।

এককর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়াগুলির একটিমাত্র কর্ম, তাদের এককর্মক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : আমি ভাত খাই। তিতাস বই পড়ছে। এই উদাহরণ‌গুলিতে প্রতিটি ক্রিয়ার একটি করে কর্ম আছে।

দ্বিকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার দু’টি কর্ম থাকে, তাকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ :- আমি ভাইকে সাইকেল দিলাম। সে রামকে টাকা দিল।

দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক বা অপ্রাণিবাচক কর্মটি হল মুখ্যকর্ম, প্রাণিবাচক কর্মটি গৌণকর্ম।

অকর্মক ক্রিয়া :- যদি কোন বাক্যে কর্ম না থাকে তাহলে সেই বাক্যের ক্রিয়াকে আমরা বলি অকর্মক ক্রিয়া।

উদাহরণ :- আমি খাই। বাপ্পা খেলছে। এখানে ক্রিয়ার কোনো কর্ম নেই। তাই এগুলি অকর্মক ক্রিয়া।

পঙ্গু ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার  সকল কালের ও সকল ভাবের রূপ হয় না , তাকে পঙ্গু ক্রিয়া বলে।

উদাহরণ : বটে, নয়, আছে প্রভৃতি ক্রিয়াগুলি পঙ্গু ক্রিয়া। মেয়েটি বুদ্ধিমান বটে। এই উদাহরণে ‘বটে’ ক্রিয়াকে অতীত বা ভবিষ্যতের রূপে বদলানো যায় না।

সমাপিকা ক্রিয়ার বিভিন্ন উপাদান : সমাপিকা ক্রিয়ার দুটি উপাদান আছে – (১) ক্রিয়ার কাল (২) ক্রিয়ার ভাব

ক্রিয়ার কাল :- কোনো কাজ ঘটার বিভিন্ন সময় বোঝানোর জন্য, ক্রিয়া যে বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হয়, তাকে ক্রিয়ার কাল বলে।

যেমন – রমেশ পড়া করছে। রমেশ পড়া করেছিল। রমেশ পড়া করবে। এখানে ক্রিয়া পদগুলির দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, করছে মানে কাজটা এখন চলছে, করছিল অর্থাৎ কাজটা হয়ে গেছে, করবে হল কাজটা পরে হবে। তাহলে কোনো ক্রিয়া ঘটবার সময়কে কাল বলে।

ক্রিয়ার ভাব :- যে বিশেষ ভঙ্গিতে অসমাপিকা ক্রিয়ার কাজটি কীভাবে ঘটছে তা বোঝা যায় সেই বিশেষ ভঙ্গি কে ক্রিয়ার ভাব বলে।

যেমন – আমি নাচ করছি। তারা বাড়ি যাচ্ছে।

Leave a Comment