বাক্য রূপান্তর

বাক্য রূপান্তর

বাক্য রূপান্তর :– বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়। অর্থাৎ, বাক্য রূপান্তর করার সময় খেয়াল রাখতে হবে, বাক্যের অর্থ যেন পাল্টে না যায়। বাক্যের অর্থ পাল্টে গেলে বাক্যটি অন্য বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু বাক্য রূপান্তরের ক্ষেত্রে আমাদেরকে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতি তথা রূপ পরিবর্তন করতে হবে, বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করা যাবে না।

সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর :- সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যটি সংযোগ করতে উপযুক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনোটি ব্যবহার করতে হয়।

উদাহরণ :-

সরল বাক্য : ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

জটিল বাক্য : যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

সরল বাক্য :ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

জটিল বাক্য : যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।

জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয় এবং সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয় বাদ পড়ে।

উদাহরণ :-

জটিল বাক্য : যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।

সরল বাক্য : আজীবন এ কথা মনে রাখব।

জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

সরল বাক্য :– দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর :- সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপযুক্ত অব্যয় ব্যবহার করতে হবে।

উদাহরণ :-

সরল বাক্য : দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য :দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)

সরল বাক্য :আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগিক বাক্য : আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর :যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে অসমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে।

উদাহরণ :-

যৌগিক বাক্য : তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সমাপিকা ক্রিয়া- হয়েছে, হয়নি)

সরল বাক্য : তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘হয়েছে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘হলেও’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক বাক্য : মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া- করে ও করে)

সরল বাক্য : মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘করে’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘করলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর : জটিল বাক্যে কয়েকটি খণ্ডবাক্য থাকে, এবং সেগুলো পরস্পর নির্ভরশীল থাকে। জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

উদাহরণ :-

জটিল বাক্য : যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।

যৌগিক বাক্য : সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

জটিল বাক্য : যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।

যৌগিক বাক্য : তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।

যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর : যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোনো অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে। তবে, সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলোর পূর্ণ বাক্য দুটির প্রথমেই বসাতে হবে, এমন কথা নেই; উপযুক্ত যে কোন জায়গাতেই বসানো যেতে পারে।

উদাহরণ :-

যৌগিক বাক্য : দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

জটিল বাক্য : যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য : তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

জটিল বাক্য : যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

যৌগিক বাক্য : এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

জটিল বাক্য : এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- (ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য :তুমি খুব ভাল।

নেতিবাচক বাক্য : তুমি মোটেও খারাপ নও। (ভাল- খারাপ)

(খ) ‘না করলেই নয়’, ‘না করে পারবো না’ ইত্যাদি বাক্যাংশ যোগ করে অনেক ইতিবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করতে হয়।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য : তুমি কালকে আসবে।

নেতিবাচক বাক্য :– তুমি কালকে না আসলেই নয়।

ইতিবাচক বাক্য : গুগল ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার ঢুকবেই।

নেতিবাচক বাক্য : গুগল ওয়েবসাইটটি এতো ভাল, তুমি আবার না ঢুকে পারবেই না।

(গ) নতুন কোন বিপরীতার্থক বা নঞর্থক (না বোধক) শব্দ যোগ করে।

যেমন –

ইতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টাতে থাকল।

নেতিবাচক বাক্য : সে বইয়ের পাতা উল্টানো বন্ধ রাখলো না।

নেতিবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- (ক) বিশেষণ পদের বিপরীত শব্দ ব্যবহার করে অনেক নেতিবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে উপস্থিত ছিল না।

ইতিবাচক বাক্য : সে ক্লাশে অনুপস্থিত ছিল।

(খ) নেতিবাচক বাক্যের না বোধক বাক্যাংশকে কোন বিপরীতার্থক বিশেষণে রূপান্তর করেও ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর করা যায়।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তিনি কোনদিন চিন্তাও করেন নি।

ইতিবাচক বাক্য : দেবার্চনার কথা তার কাছে অচিন্ত্যনীয় ছিল।

নেতিবাচক বাক্য : এসব কথা সে মুখেও আনতে পারত না।

ইতিবাচক বাক্য : এসব কথা তার কাছে অকথ্য ছিল।

(গ) নতুন কোন ইতিবাচক বিপরীতার্থক শব্দ যোগ করে।

যেমন –

নেতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে নেই।

ইতিবাচক বাক্য : মা জেগে দেখে খোকা তার পাশে অনুপস্থিত।

প্রশ্নবাচক বাক্যকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- মূলত প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক থেকে সরাসরি নেতিবাচক বাক্যে পরিণত করলেই নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেবল প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক হিসেবে কল্পনা করতে হয়। আর যেগুলো সরাসরি ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরিত হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে নেতিবাচক করতে হয়।

যেমন –

প্রশ্ন : তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে ?

নেতি : তুমি কাল স্কুলে আসোনি।

প্রশ্ন :গুগল ওয়েবসাইটটি কি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ ?

নেতি : গুগল ওয়েবসাইটটি পড়াশোনা করার জন্য খারাপ না।

প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি ?

নেতি : তুমি ছবিটা না দেখে পারোনি।

প্রশ্নবাচক বাক্যকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তর :- কিছু প্রশ্নবাচক বাক্যকে স্বাভাবিকভাবে সরাসরি প্রশ্নবাচক থেকে ইতিবাচকে রূপান্তরিত করা যায়। আর যেগুলো সরাসরি রূপান্তর করলে নেতিবাচক হয়, সেগুলোকে নেতিবাচক থেকে ইতিবাচক বাক্যে রূপান্তরের নিয়মে ইতিবাচক করতে হয়।

যেমন –

প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখোনি ?

ইতি : তুমি ছবিটা দেখেছো।

প্রশ্ন : তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে ?

ইতি : তুমি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।

ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা বিবৃতিমূলক বাক্যকে প্রশ্নবাচক বাক্যে রূপান্তর :- বিবৃতিমূলক বাক্যে প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে সেগুলোকে বিপরীত বাক্যে (ইতি হলে নেতি এবং নেতি হলে ইতিবাচকে) সরাসরি রূপান্তর করলেই বাক্য রূপান্তর সম্পন্ন হয়।

যেমন –

বিবৃতি : তুমি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে।

প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি কাল স্কুলে অনুপস্থিত ছিলে ?

প্রশ্ন : তুমি কি কাল স্কুলে উপস্থিত ছিলে ?/ তুমি কি কাল স্কুলে এসেছিলে ?

বিবৃতি :- তুমি ছবিটা দেখোনি।

প্রশ্নসূচক অব্যয় যুক্ত করে : তুমি কি ছবিটা দেখোনি ?

প্রশ্ন : তুমি কি ছবিটা দেখেছো ?

আবেগসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর :- বিস্ময়সূচক বা আবেগসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তরিত করার জন্য আবেগের ভাবটি প্রশমিত করে বাক্যটিকে সরল বিবৃতিতে পরিণত করতে হবে। আবেগসূচক বাক্যকে নির্দেশক বাক্যে পরিণত করার সময় আবেগসূচক অব্যয় থাকলে সেটি বাদ দিতে হবে। নির্দেশক বাক্যের মধ্যে আবেগসূচক অব্যয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যায় না।

যেমন “কী বড় সাপ!” বললে বক্তার বিস্ময়ের স্ফুরণ ঘটলো, কিন্তু যদি বলা হয়, “সাপটি খুব বড়ো।” তাহলে বিস্ময় অপগত হলো, বাক্যটি একটি সাধারণ বিবৃতিতে পরিণত হলো, হয়ে পড়লো নির্দেশক বাক্য।

প্রার্থনাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর :- প্রার্থনাসূচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্য করার জন্য ‘কামনা করছি’, ‘আশা করছি’, ‘প্রার্থনা করছি’ প্রভৃতি শব্দবন্ধ ব্যবহার করতে হবে। এর সাথে ক্রিয়াটিকেও বদলে নিতে হতে পারে।

যেমন

প্রার্থনা “তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো।”

নির্দেশক “তোমার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।”

প্রার্থনা “ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন ‌”

নির্দেশক -“ঈশ্বরের কাছে তোমার মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করি।”

শর্তসাপেক্ষ বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর :- শর্তসাপেক্ষ বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তরিত করার জন্য শর্তের ভাবটিকে গৌণ করে দিতে হবে, বিবরণের ভাবটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শর্তটিকে ক্রিয়াবিশেষণের রূপ দিলে বাক্যটি অনেকটাই বিবৃতিমূলক হয়ে ওঠে। সে জন্য ইলে-প্রত্যয়ান্ত অসমাপিকা ক্রিয়াটির বিলোপ ঘটাতে হবে। তবে শর্তের ভাবটি সবসময় পুরোপুরি চাপা পড়ে না।

শর্তসাপেক্ষ – তুমি এলে আমি যাবো।

নির্দেশক – তোমার আসার পর আমি যাবো।

শর্তসাপেক্ষ – সকাল হলেই পাখিরা ডাকবে।

নির্দেশক – সকাল হ‌ওয়ার পর পাখিরা ডাকবে।

শর্তসাপেক্ষ – মন দিয়ে পড়াশোনা করলে সফল হবে।

নির্দেশক – মন দিয়ে পড়াশোনা করার মাধ্যমেই সফল হবে।

সন্দেহবাচক থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর :- সন্দেহবাচক বাক্য থেকে নির্দেশক বাক্যে রূপান্তর করার প্রয়োজন আদৌ কতটা রয়েছে সে নিয়ে সন্দেহ আছে। তবু ব্যাকরণগত ভাবে রূপান্তর করা সম্ভব। অবশ্যই সন্দেহবাচক অব্যয় লোপ পায়। সে রকম দু একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে।

সন্দেহবাচক – পাছে কেউ দেখে ফেলে !

নির্দেশক – কেউ দেখে ফেলার সম্ভাবনা আছে।

Leave a Comment