fbpx

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা: বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস (দ্বাদশ শ্রেণী)

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা দ্বাদশ শ্রেণী হতে বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস প্রথম পর্ব বাঙালির শিল্প ও সংস্কৃতি চতুর্থ অধ্যায়ের ।

Table of Contents

 বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা


১। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা কর। (২০১৬)

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট দক্ষিণবঙ্গের কপোতাক্ষ নদীতীরবর্তী রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। অসুস্থতার জন্য তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় সাময়িক ছেদ ঘটলেও তিনি দেশ-বিদেশের ইতিহাস, ভাষা, পুরাতত্ত্বের পাঠ গ্রহণ করেন। পরে সুস্থ হয়ে এন্ট্রান্স পাস করে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশনে পড়ার সময় প্রেসিডেন্সি কলেজের রসায়নের অধ্যাপক আলেকজান্ডার পেডলার ও পদার্থবিদ জন এলিয়টের বক্তৃতা শুনে ক্রমশ তিনি রসায়নের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। 

এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও প্রাণীবিদ্যার পাঠ গ্রহণ করেন। ১৮৮৫ সালে বি এসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি Conjugated Sulphates of Copper Magnesium-group : A study of Isomorphous mixtures and Molecular Combinations বিষয়ে গবেষণায় নিয়োজিত হন। এরপর ডক্টরেট লাভ করে তিনি ইউনিভার্সিটি কেমিক্যাল সোসাইটির সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্সি কলেজে অস্থায়ী সহকারী রসায়নের অধ্যাপকের পদে থাকাকালীন প্রফুল্লচন্দ্র ছাত্রদের চরম অধ্যবসায়ের সঙ্গে পড়িয়ে তাদেরকে তিনি কৌতূহলী করে তোলেন। ক্রমে তিনি তেলজাতীয় খাদ্যে এবং দুধে ভেজাল নির্ধারণের পদ্ধতি আবিষ্কারে সাফল্য অর্জন করেন। বাঙালির ব্যবসা-বিমুখতা দূর করতে তিনি ‘বেঙ্গল কেমিক্যালস’ গড়ে তুললেন। সারা ভারতে এত বড়ো সালফিউরিক অ্যাসিড তৈরির কারখানা আর কোথাও ছিল না। এ ছাড়া তিনি ক্যালকাটা পটারি, বেঙ্গল এনামেল, চক্রবর্তী-চ্যাটার্জি অ্যান্ড কোং ইত্যাদি স্থাপনে পরামর্শ ও উৎসাহ দেন। 

১৮৯৫ সালে তিনি পারদঘটিত নতুন যৌগ মারকিউরাস নাইট্রেট আবিষ্কার করেন। একদল ছাত্র-গবেষকের সাহায্যে প্রফুল্লচন্দ্র ভারতে একটি নব্য রাসায়নিক গোষ্ঠী গড়ে তুলতে সমর্থ হন। সেই দলে ছিলেন বিমানবিহারী দে, নীলরতন ধর, রসিকলাল দত্ত, প্রিয়দারঞ্জন রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ। ১৯১৬ সালে তিনি বিজ্ঞান কলেজে পালিত অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন তাঁর জীবনাবসান হয়।


২। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিধানচন্দ্র রায়ের অবদান আলোচনা কর। (২০১৭)

প্রখ্যাত চিকিৎসক এবং স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ ডা. বিধানচন্দ্র রায় ১৮৮২ সালের ১ জুলাই বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। বিএ পাস করার পর থেকে তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এলএমএস এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমডি ডিগ্রি লাভ করেন। প্রাদেশিক মেডিকেল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার সুবাদে তিনি বিভিন্ন প্রদেশে পরিক্রমা করার সুযোগ পান। 

বিধানচন্দ্র বিলেতে গিয়ে এমআরসিপি, এমআরসিএস, এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুলে (বর্তমান নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) শিক্ষকতার জীবিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে বিধানচন্দ্র রয়্যাল সোসাইটি অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনের এবং আমেরিকান সোসাইটি চেস্ট ফিজিসিয়ানের ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৪২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি উপাধিতে ভূষিত করে। 

১৯৪৮ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হন। ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ ছিল। তিনি শিলং হাইড্রো ইলেকট্রিক কোম্পানির অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। জাহাজ, বিমান, ইনসিওরেন্সের ব্যবসার পাশাপাশি মায়ের নামে পাটনায় একটি বিদ্যালয়ও স্থাপন করেন। মূলত তাঁরই উদ্যোগে দুর্গাপুর একটি প্রসিদ্ধ শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে ওঠে। 

১৯৬১ সালে তিনি ‘ভারতরত্ন’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৬২ সালে ১ জুলাই তাঁর মহাপ্রয়াণ ঘটে। তাঁর ইচ্ছানুসারে পরবর্তীকালে তাঁর বাসভবনে রোগ-নির্ণয় গবেষণাকেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।


৩। বাঙালির বিজ্ঞান ভাবনা ও বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদান আলোচনা কর। (২০১৮, ২০২২)

বাঙালির বিজ্ঞান ভাবনায় ও বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সমাজসংস্কারের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্কতার প্রসারে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দ্বারকানাথ ঠাকুর। চিকিৎসাশিক্ষার ক্ষেত্রে যেমন তিনি প্রচুর অর্থ অনুদান দেন, তেমনি শবব্যবচ্ছেদ প্রবর্তনেও তিনি উদ্যোগী ভূমিকা নেন। 

দ্বারকানাথের পুত্র দেবেন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল জ্যোতির্বিদ্যায়। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ পিতার এই বিশেষ দিকটিতে আলোকপাত করেছেন। স্বর্ণকুমারী দেবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহও দেবেন্দ্রনাথের উৎসাহেই। ভূতত্ত্ব, নৃতত্ত্ব, জীবতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়েও দেবেন্দ্রনাথের উৎসাহ ছিল। 

দেবেন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠপুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথ গণিতে এক বিস্ময়কর প্রতিভা ছিলেন। ইউক্লিডের জ্যামিতি ছিল তাঁর প্রিয় অধ্যয়নের বিষয়। মহেন্দ্রলাল সরকারের ইন্ডিয়ান সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন গঠনে দ্বিজেন্দ্রনাথ বিশেষভাবে সাহায্য করেন। হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর মেডিকেল কলেজে শিক্ষা নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের স্থূলমর্ম তাঁর লেখা একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ফ্রেনলজি বা শিরোমিতিবিদ্যার চর্চা করতেন।

বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। বিশ্বপরিচয় গ্রন্থে ছড়িয়ে আছে তাঁর বিজ্ঞান-নির্ভর রচনাসমূহ। গ্রহগণ জীবের আবাস ভূমি, সামুদ্রিক জীব কীটাণু, বৈজ্ঞানিক সংবাদ, ইচ্ছামৃত্যু, মাকড়সা সমাজে স্ত্রীজাতির গৌরব ইত্যাদি রবীন্দ্রনাথের উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞান-বিষয়ক রচনা। অনেকগুলি সমালোচনামূলক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধও রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন। তার মধ্যে সুবোধচন্দ্র মহলানবিশের জীবতত্ত্ব-এর সমালোচনা, জগদানন্দ রায়ের বায়ুনভোবিদ্যা-র সমালোচনা, রায়চৌধুরীর সৃষ্টির বিশালতত্ত্ব-এর সমালোচনা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

প্রকৃতপক্ষে বাঙালির বিজ্ঞান ভাবনা ও বিজ্ঞান চর্চার সূচনা জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পরিমন্ডলেই ঘটেছিল। ঠাকুর পরিবার থেকে প্রকাশিত বালক, ভারতী, সাধনা পত্র-পত্রিকাতে বিজ্ঞান বিষয়ক বহু রচনা প্রকাশিত হতো।


৪। বাংলা চিকিৎসা বিজ্ঞানে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা কর।  (২০১৯)

ব্রিটিশ ভারতের প্রথম দুইজন মহিলা স্নাতকের একজন এবং ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক ছিলেন কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় (বসু)। সমাজসেবী, রাজনীতিজ্ঞ ও প্রথম বাঙালী নারী চিকিৎসক হিসেবে কাদম্বিনী গাঙ্গুলীর প্রতিভা অপরিসীম।

বর্তমান বিহারের অন্তর্গত ভাগলপুরে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই কাদম্বিনী বসু জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৬৮ সালে ভাগলপুর গার্লস ইন্সটিটিউটে এবং ১৯৭৩ সালে কলকাতার ‘হিন্দু বোর্ডিং স্কুল’-এ ভরতি হন। দু-বছর পর তাঁকে ভরতি করা হয় বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে। এরপর বেথুন স্কুলে ভরতি হয়ে সেখান থেকেই তিনি এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেন। ১৮৮২ সালে কাদম্বিনী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হন। তিনি এবং চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট। 

১৮৮০ সালে এফ এ পাস করে পরের বছর মেডিকেল পড়তে চেয়ে আবেদন করেন তিনি।  ১৮৮৩ সালে দ্বারকানাথ গাঙ্গুলির সঙ্গে কাদম্বিনীর বিবাহ হয়। পরবর্তীকালে ১৮৮৪ সালে তিনি কলকাতা মেডিকেল কলেজে প্রথম ছাত্রী হিসেবে ভরতি হন। কিন্তু অধ্যাপকদের অসন্তোষের জেরে তিনি মেডিসিন-এ উত্তীর্ণ হতে পারেন নি। তবে অধ্যক্ষ প্রদত্ত জি বি এম সি (গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিকেল কলেজ) উপাধি লাভ করে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

১৮৯০ সালে লেডি ডাফরিন হাসপাতালে নিযুক্ত হন কাদম্বিনী। ১৮৮৯ সালেই তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে পঞ্চম কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগদান করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ট্রিপল ডিপ্লোমা লাভ করেন। নেপালের রাজমাতার চিকিৎসার জন্য তিনি ১৮৯৫-৯৬ সালে নেপালে যান। ১৯২১ সালে কাদম্বিনী দেবী খনি শ্রমিকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বিহারে যান। 

১৯২৩ সালের ৩ অক্টোবর কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। তারই প্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তী সময়ে বহু নারী মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে সফল চিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন।


৫। বাঙালির বিজ্ঞান সাধনায় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর অবদান আলোচনা কর। (২০২০)

বাংলার বিজ্ঞানচর্চায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু। নর্মাল স্কুল, নিউ ইন্ডিয়ান স্কুল, হিন্দু স্কুল, প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। আইএসসি, বিএসসি এবং এমএসসি পাশ করে বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপনার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার রিডার হিসেবে যোগ দেন। এখানে অধ্যাপনাকালেই তাঁর বোস সংখ্যায়ন সম্পর্কিত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে তিনি দু- বছরের জন্য ইউরোপে যান। তিনি ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের পদার্থবিদ্যা শাখার সভাপতিত্ব করেন, পরে মূল সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। ঢাকার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের খয়রা অধ্যাপকের পদে যোগ দেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন হন, অবসরের পর ‘এমেরিটাস প্রফেসর’ হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি বিশ্বভারতীর উপাচার্যের পদও গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদার্থবিদ্যার জাতীয় অধ্যাপকরূপে নিযুক্ত করেন এবং আমৃত্যু তিনি ওই পদে আসীন থাকেন।

ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সুইটজারল্যান্ড, চেকোশ্লোভাকিয়া প্রভৃতি দেশের জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা কর্তৃক সংবর্ধিত সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯৪৮ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ স্থাপন করেন। জনসমাজকে বিজ্ঞানসচেতন করা, জনকল্যাণে বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ঘটানো এবং মাতৃভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার প্রচলনে তিনি পরিষদের মুখপত্ররূপে জ্ঞান ও বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর বিশ্বপরিচয় গ্রন্থ, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর জাপানে গ্রন্থ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অর্কেস্ট্রা কাব্যগ্রন্থ সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।


৬। বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের অবদান আলোচনা কর।

আধুনিক রাশিবিজ্ঞানের জনক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ১৮৯৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্ম বয়েজ স্কুলে বাল্যশিক্ষার পর প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ইংল্যান্ডে কিংস কলেজে পড়াকালীন তিনি রাশিবিজ্ঞানের প্রতি কৌতূহলী হয়ে পড়েন। দেশে ফিরে দীর্ঘকাল প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপনা করেন।

রাশিবিজ্ঞান বিষয়ে তাঁর প্রথম গবেষণা Anthropological observation on the Anglo-Indians of Calcutta। তিনি অ্যানথ্রোপোমেট্রিক পরিমাপ বিষয়ে গবেষণা করেন, আবিষ্কার করেন O² সংখ্যায়ন সূত্র, যার থেকে মানুষের মধ্যে জাতিগত ভেদাভেদ আছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব হয়। ১৯২২-২৩ সালে তিনি ভারতীয় আবহবিজ্ঞানের পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবহবিদ হন। তাঁর নির্দেশিত পথে ভারত সরকার হীরাকুদ বাঁধ নির্মাণ করেন। বরানগরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইন্সটিটিউটে রাশিবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে তিনি পরীক্ষা পদ্ধতির আমূল সংস্কার ঘটান। এ ছাড়াও তিনি Design of Experiment নিয়ে গবেষণা করে কৃষির উন্নতিকে ত্বরান্বিত করেন। 

১৯৩৩ সালে রাশিবিজ্ঞানের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি ষাণ্মাসিক পত্রিকা সংখ্যা প্রকাশ করেন। ১৯৪২ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস গণিত শাখার মধ্যে রাশিবিজ্ঞানকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রশান্তচন্দ্রকে গণিত শাখার সভাপতি নির্বাচন করে। তিনি ‘National Sample Survey (১৯৫০) এবং রাইটার্স বিল্ডিং-এ ‘State Statistical Bureau’ প্রতিষ্ঠা করেন। 

রবীন্দ্রনাথ-ঘনিষ্ঠ এই বিজ্ঞানী স্বদেশে ও বিদেশে ‘দেশিকোত্তম’, ‘পদ্মভূষণ’ সহ বহু সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৭২ সালের ২৮ জুন প্রশান্তচন্দ্র পরলোক গমন করেন।


৭। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে মেঘনাদ সাহার অবদান আলোচনা করো। 

বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা। তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, জুবিলি স্কুল, ঢাকা কলেজ, কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষাগ্রহণ করেন। গণিতে এমএসসি পাশ করে মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগ দেন। এখানে গবেষণা করে তিনি পরপর দুই বছরে ডিএসসি ও পিআরএস হন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল রিলেটিভিটি, প্রেসার অব লাইট ও অ্যাস্ট্রোফিজিক্স। 

‘থিওরি অব থার্মাল আয়োনাইজেশন’ বিষয়ে গবেষণায় তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেন। লন্ডন ও বার্লিনে তাঁর গবেষণার ব্যাবহারিক প্রয়োগ দেখানোর আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি বিদেশে যান। দেশে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্স বিভাগে প্রথম ‘খয়রা অধ্যাপক’ নিযুক্ত হন। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ বছর কাজের মধ্যে দিয়ে তিনি ‘স্কুল অব ফিজিক্স’ নামক পদার্থবিদ্যার শিক্ষাকেন্দ্র ও গবেষণাগার গড়ে তোলেন। 

মেঘনাদ সাহা বিজ্ঞান কংগ্রেসের সভাপতি হয়ে সর্বপ্রথম ভারতের সার্বিক উন্নতিতে বিজ্ঞান প্রয়োগের কথা বলেন। কলকাতায় ফিরে এসে তিনি বিজ্ঞান কলেজের ‘পালিত’ অধ্যাপক হন ও পরে ‘ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’ গড়ে তোলেন। সায়েন্স অ্যান্ড কালচার পত্রিকার মধ্য দিয়ে তিনি নানান সমাজ-সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি, ফ্রেঞ্চ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি, বোস্টন অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স প্রভৃতির ফেলো, ইনটারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন, ভারতীয় বিজ্ঞানোৎকর্ষিণী সমিতি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট ও সিন্ডিকেট এবং রাধাকৃষ্ণণ কমিশনের সদস্য ছিলেন।

আমন্ত্রিত সভ্য হিসেবে তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, ইতালি প্রভৃতি দেশে যান। তাঁর লেখা বইগুলির মধ্যে রয়েছে The Principles of Relativity, Treatise on Heat, Treatise on Modern Physics, Junior Textbook of Heatwith Meteorology প্রভৃতি। ১৯৫৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।


৮। বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান আলোচনা করো।

১৮৫৮ সালের ১৩ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুর জেলার রাড়িখাল গ্রামে জগদীশচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন। জগদীশচন্দ্র কলকাতায় এসে প্রথমে হেয়ার স্কুলে, পরে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করে ভরতি হন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলেজে পড়াকালীন সুখ্যাত অধ্যাপক ফাদার লাফোঁর সংস্পর্শে এসে তাঁর কাছ থেকেই প্রকৃতিবিজ্ঞান ও পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব হাতেকলমে পরীক্ষার দ্বারা আয়ত্ত করেন। পিতার ইচ্ছানুসারে দেশসেবার জন্য জগদীশচন্দ্র বিজ্ঞানী হওয়ার সংকল্পে কেমব্রিজে গিয়ে ক্রাইস্টান কলেজে ভরতি হন। চার বছর বিলেতে থেকে বি এসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও উদ্ভিদবিদ্যায় ব্যুৎপত্তি অর্জন করে দেশে ফেরেন। 

প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনার সময় থেকেই তিনি বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে দেশীয় কারিগর দিয়ে নিজ ব্যয়ে যন্ত্রপাতি তৈরি করান। ক্রমে আকাশস্পন্দন ও আকাশসম্ভব জগৎ, বিদ্যুৎ রশ্মির দিক পরিবর্তন, বিদ্যুৎ তরঙ্গ সৃষ্টি, বিনা তারে সংবাদপ্রেরণ, এক্স-রে, কাচ ও বায়ুর রশ্মিপথ পরিবর্তন করার শক্তি, জীব ও জড় পদার্থের উপর বিদ্যুৎ রশ্মিপাতের ফলের ক্ষমতা, জড় ও জীবের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে পৃথিবীর নানা গবেষণাগারে মূল্যবান গবেষণা করেন। এ ছাড়াও তিনি দীর্ঘকাল উদ্ভিদ ও প্রাণীর পেশির তুলনামূলক গবেষণা করেন।

তাঁর লেখা বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থগুলি হল Physiology of Ascent of Sap, Physiology of Photosynthesis, Nervous Mechanism of Plants, Growth and Tropic Movements of Plants ইত্যাদি। বাংলায় লেখা তাঁর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলি অব্যক্ত গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর নিয়ে তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর গিরিডিতে এই কর্মবীর বিজ্ঞানসাধকের মহাপ্রয়াণ ঘটে।


৯। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে ডা. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান আলোচনা করো।

ভারতের সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৩৩ সালের ২ নভেম্বর হাওড়া জেলার পাইকপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম তারকনাথ সরকার। কলুটোলা ব্রাঞ্চ স্কুল ও হিন্দু কলেজের পাঠ শেষ করে তিনি ১৮৬১ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে আই এম এস এবং ১৮৬৩ সালে এম ডি উপাধি লাভ করেন। 

বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের প্রেরণায় নিজের চিকিৎসাধারা পালটে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ হিসাবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৮৬৭ সাল থেকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার কাজ শুরু করে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাবিষয়ক বহু গ্রন্থ লিখেছেন। ১৮৬৭ সালে Calcutta Journal of Medicine পত্রিকা প্রকাশ করেন। “Indian Association for the Cultivation of Science’ প্রতিষ্ঠা তাঁর অন্যতম স্মরণীয় কীর্তি। ১৮৮৮ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে তিনি সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। 

ডা. মহেন্দ্রলাল সরকার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো (১৮৭০), অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট, কলকাতার শেরিফ (১৮৮৪) এবং বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য (১৮৮৭-১৮৯৩) ছিলেন। তিনি বৈদ্যনাথ রাজকুমারী কুষ্ঠাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৮৩ সালে তিনি সিআইই এবং ১৮৯০ সালে ডিএল (ডক্টর অব ল) উপাধি লাভ করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়াও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেও তাঁর বিশেষ পাণ্ডিত্য ছিল।


১০। বাঙালির বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারীর অবদান আলোচনা করো। 

স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ১৮৭৩ সালের ৭ জুন জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নিবাস ছিল হুগলি জেলার মহেশতলায়। পিতা নীলমণি ব্রহ্মচারী ছিলেন রেলওয়ের চিকিৎসক। উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের ওষুধ ‘ইউরিয়া স্টিরামাইন’-এর আবিষ্কারক হিসেবে ইতিহাস-বিখ্যাত হয়ে আছেন। 

গণিতে প্রথম শ্রেণির অনার্স-সহ বিএ পাস করার পর তিনি রসায়নে এম এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। উপেন্দ্রনাথ মেডিসিন ও সার্জারিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম বি পাস করেন এবং গুডিভ ও ম্যাকলাউড পদক লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি শরীরতত্ত্বে পি এইচ ডি উপাধি, কোটস পদক, গ্রিফিথ পুরস্কার ও মিন্টো পদক পান। এরপর কিছুকাল তিনি ঢাকা মেডিকেল স্কুলে প্যাথোলজি ও মেটেরিয়া মেডিকার শিক্ষক ছিলেন।

আই এম এস না হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় প্রতিভা ও কর্মদক্ষতার গুণে উপেন্দ্রনাথ ১৯২৩ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অতিরিক্ত চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত হন। সরকারি কাজ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি করমাইকেল মেডিকেল কলেজে শিক্ষকতার কাজে নিযুক্ত হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণ-রসায়ন বিভাগেও তিনি অধ্যাপনা করেন। তিনি ম্যালেরিয়া, ব্ল্যাক ওয়াটার ফিভার এবং রসায়নশাস্ত্র বিষয়ে ব্যাপক ও গভীর গবেষণা করেছেন। 

তাঁর চিকিৎসাবিষয়ক রচনাবলির মধ্যে ‘ট্রিটিজ অন কালাজ্বর’ বিখ্যাত। তিনি বিলাতের রয়্যাল সোসাইটি অব মেডিসিনের সভ্য ছিলেন। ইন্দোরে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের (১৯৩৬) সভাপতি ও বহু ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৩৪ সালে তিনি ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। ব্রহ্মচারী রিসার্চ ইন্সটিটিউট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দেশি ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। ১৯৪৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী পরলোক গমন করেন।


১১। বাংলার বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসে নীলরতন সরকারের অবদান আলোচনা করো।

প্রখ্যাত চিকিৎসক নীলরতন সরকার ১৮৬১ সালের ১ অক্টোবর চব্বিশ পরগনার নেত্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে জয়নগর থেকে এন্ট্রান্স এবং ক্যাম্বেল মেডিকেল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। ১৮৮৫ সালে তিনি মেডিকেল কলেজে ভরতি হন এবং ১৮৮৮ সালে এম বি হন। পরের দু-বছরের মধ্যে তিনি এম এ এবং এম ডি উপাধি অর্জন করেন। ১৮৯৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো এবং ক্রমে ফ্যাকাল্টি অব সায়েন্স, ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের ডিন ও স্নাতকোত্তর কলা ও বিজ্ঞানশিক্ষা বিভাগের সভাপতি হন। 

রাধাগোবিন্দ কর এবং সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি ১৯১৬ সালে বেলগাছিয়া মেডিকেল কলেজ (বর্তমান আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল) স্থাপন করেন। তিনি জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সম্পাদক হিসেবে এদেশে বৃত্তিগত প্রশিক্ষণের ব্যাপারে বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়ে ওঠেন। যাদবপুর যক্ষ্মা হাসপাতাল, বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ন্যাশানাল ট্যানারি, ন্যাশানাল সোপ ফ্যাক্টরি গঠনে তাঁর ভূমিকা অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। রাঙ্গামাটি চা কোম্পানি গঠনে তিনি বহু অর্থ নিয়োগ করেন। 

নীলরতন সরকার বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী ও ভারতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি এবং ১৯১২-২৭ সাল পর্যন্ত বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। ক্যাম্পবেল মেডিকেল স্কুল, কলেজে রূপান্তরিত হলে তাঁরই নামাঙ্কিত হয়ে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নামে পরিচিত হয়।

Leave a Comment