একাদশ শ্রেণী বাংলার বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পর্ব: (ভাষা) চতুর্থ অধ্যায় ভাষাবৈচিত্র্য ও বাংলা ভাষা হতে ছোট ও বড় প্রশ্ন উত্তর
ভাষাবৈচিত্র্য ও বাংলা ভাষা- একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি
ভাষাবৈচিত্র্য ও বাংলা ভাষা- একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
১। ভাষা কাকে বলে?
বাগযন্ত্রের সাহায্যে মানুষ যে অর্থবোধক ধ্বনি উচ্চারণ করে, তাকে ভাষা বলে।
২। সাধুভাষা ও চলিতভাষা কী?
সাধারণত পণ্ডিতগণের লেখ্যভাষা হল সাধুভাষা এবং আপামর জনসাধারণের মুখের বা কথা বলার ভাষা হল চলিতভাষা।
৩। রাঢ়ি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল নির্দেশ করো।
রাঢ়ি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল হল কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর-পূর্ব মেদিনীপুর, বীরভূম, বর্ধমান, পূর্ব বাঁকুড়া, মুরশিদাবাদ, নদিয়া।
৪। বঙ্গালি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল উল্লেখ করো।
ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি হল বঙ্গালি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল।
৫। বরেন্দ্রী উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল লেখো।
মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, রাজশাহি, পাবনা (উত্তর-মধ্য বঙ্গ) ও বগুড়া হল বরেন্দ্রী উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল।
৬। ঝাড়খণ্ডি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল উল্লেখ করো।
ঝাড়খণ্ডি উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল হল দক্ষিণ-পশ্চিম ঝাড়খণ্ড, বিহারের কিছু অঞ্চল, সিংভূম, মানভূম, বাঁকুড়া (পশ্চিম), পুরুলিয়া।
৭। কামরূপী উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল উল্লেখ করো।
উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, রংপুর, কাছাড়, শ্রীহট্ট, ত্রিপুরা নিয়ে কামরূপী উপভাষার ভৌগোলিক অঞ্চল বিস্তৃত।
৮। মান্য বাংলা চলিতভাষায় কোন্ মৌখিক উপভাষার প্রভাব বেশি?
মান্য বাংলা চলিতভাষায় রাঢ়ি উপভাষার প্রভাব বেশি।
৯। পূর্ববঙ্গে কোন মৌখিক উপভাষা প্রচলিত?
পূর্ববঙ্গের বাঙ্গালি উপভাষা প্রচলিত।
১০। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় বাংলার কোন্ কথ্য উপভাষা প্রচলিত?
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় বাংলার রাঢ়ি উপভাষা প্রচলিত।
১১। বাংলা গদ্য উপভাষার দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
বাংলা গদ্য উপভাষার বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বলা যায় যে, (ক) বাংলা গদ্য উপভাষা ছন্দোবদ্ধ। (খ) বাংলা গদ্য উপভাষায় কাব্যিক শব্দ ব্যবহারে সাধু ও চলিতভাষার মিশ্রণ থাকে।
১২। তেলুগু ভাষা কোন ভাষাবংশের অন্তর্গত?
তেলুগু ভাষা দ্রাবিড় ভাষাবংশের অন্তর্গত।
১৩। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে বাংলার কোন মৌখিক উপভাষা প্রচলিত?
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে ‘বরেন্দ্রী’ উপভাষা প্রচলিত।
১৪। বাংলা সাহিত্যিক গদ্য উপভাষার প্রধান রূপ দুটি কী কী ?
বাংলা সাহিত্যিক গদ্য উপভাষার প্রধান দুটি রূপ হল সাধু ও চলিত।
১৫। ‘আছ’ ধাতুর জায়গায় ‘বট্’ ধাতুর প্রয়োগ কোন উপভাষায় দেখা যায়?
‘ঝাড়খণ্ডি’ উপভাষায় ‘আছ’ ধাতুর জায়গায় ‘বট্’ ধাতুর প্রয়োগ দেখা যায়।
১৬। অপিনিহিতি কোন উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য?
অপিনিহিতি বঙ্গালি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য।
১৭। না-বাচক ক্রিয়াপদ কোন উপভাষায় ব্যবহৃত হয় ?
না-বাচক ক্রিয়াপদ কামরূপী উপভাষায় ব্যবহৃত হয়।
১৮। ‘অপিনিহিতি’ ও ‘অভিশ্রুতি’ কোন্ কোন্ উপভাষায় প্রচলিত ?
‘অপিনিহিতি’ বঙ্গালি উপভাষায় এবং ‘অভিশ্রুতি’ রাঢ়ি উপভাষায় প্রচলিত।
১৯। পুরুলিয়া জেলায় কোন উপভাষা প্রচলিত? পুরুলিয়া জেলায় ঝাড়খণ্ডি উপভাষা প্রচলিত।
২০। সাহিত্যে ব্যবহৃত গদ্যের কটি রীতি? কী-কী?
সাহিত্যে ব্যবহৃত গদ্যের দুটি রীতি – একটি সাধু আর অপরটি চলিত।
২১। কণ্টক থেকে কাঁটা কোন উপভাষার বৈশিষ্ট্য?
কণ্টক থেকে কাঁটা রাঢ়ি উপভাষার বৈশিষ্ট্য।
ভাষাবৈচিত্র্য ও বাংলা ভাষা- একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি বড় প্রশ্ন ও উত্তর
১। উপভাষা কাকে বলে ? বাংলা উপভাষা কয় প্রকার ও কী কী? যে কোনো এক প্রকার উপভাষার আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য লেখো। ১+২+২ (২০২২)
উপভাষা :- ডক্টর সুকুমার সেন বলেছেন, কোনো ভাষাসম্প্রদায়ের অন্তর্গত ছোটো ছোটো দলে বা অঞ্চলে বিশেষ প্রচলিত ভাষাছাঁদকে উপভাষা (Dialect) বলে।
উপভাষার শ্রেণীবিভাগ :- কথ্য বাংলার প্রধান উপভাষার সংখ্যা পাঁচটি। – (ক) রাঢ়ি (খ) বঙ্গালি, (গ) বরেন্দ্রী, (ঘ) ঝাড়খণ্ডি ও (ঙ) কামরূপী।
রাঢ়ি উপভাষার বৈশিষ্ট্য :- (ক) শব্দের আদ্য অক্ষর ‘অ’ কার ‘ও’ কার রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন – অতুল > ওতুল, বন > বোন, মন > মোন, প্রতি > প্রোতি ইত্যাদি।
(খ) শব্দের শেষের অঘোষধ্বনি ঘোষধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন – শাক > শাগ, কাক > কাগ ইত্যাদি।
(গ) কর্তৃকারক ছাড়া অন্য কালকে বহুবচনে ‘দের’ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন – আমাদের বল দাও, তোমাদের দ্বারা একাজ হবে না।
(ঘ) রাঢ়ি উপভাষার গৌণ কর্মে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয় কিন্তু মুখ্য কর্মে কোনো বিভক্তি যুক্ত হয় না। যেমন – বাবা আমাকে একটি পেন দিয়েছেন।
২। সাহিত্যিক গদ্য উপভাষা হিসেবে বাংলা সাধু ও চলিত গদ্যের পার্থক্য গুলি সূত্রাকারে লেখ। ৫
বাংলা সাধু ও চলিত গদ্যের পার্থক্য গুলি হল –
(ক) সংস্কৃত বা তৎসম শব্দের অধিক ব্যবহার সাধু ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেমন – হস্ত, চন্দ্র, পিতা, কিঞ্চিৎ ইত্যাদি। অপরদিকে, চলিত ভাষায় অর্ধতৎসম বা তদ্ভব শব্দের বহুল ব্যবহার হয়। যেমন – চাঁদ, হাত, কিছু ইত্যাদি
(খ) সাধু ভাষায় যৌগিক ক্রিয়ার পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন – করিতেছি, দেখিতেছি ইত্যাদি। কিন্তু চলিত ভাষায় ক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন – দেখিতে পাইল > দেখতে পেল, শুনিতে পাইল > শুনতে পেল।
(গ) সাধু ভাষায় সর্বনাম পদের তৎসম শব্দের পূর্ণরূপ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু চলিত ভাষায় সর্বনাম পদের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন তাহার > তার, তাহাদের > তাদের, যাহা > যা ইত্যাদি।
(ঘ) সাধু ভাষায় প্রাচীন অনুসর্গ ও অনুসর্গের পূর্ণরূপ ব্যবহার বেশি। অপর দিকে চলিত ভাষায় অনুসর্গের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহৃত হয়। যেমন – হইতে > হতে, অপেক্ষা > চেয়ে ইত্যাদি।
(ঙ) গুরগম্ভীর ধ্বনি প্রযোগ সাধু ভাষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু চলতি ভাষায় ধ্বনাত্মক শব্দ, অনুকার শব্দ, প্রচলিত প্রবাদ প্রবচন ও বাগধারার প্রয়োগ দেখা যায়।
(চ) সাধু ভাষায় বাক্য তৈরি করার সময় কর্তা, কর্ম, ক্রিয়াপদের ক্রম মেনে চলা হয়। কিন্তু চলিত ভাষার ক্ষেত্রে এরূপ নির্দিষ্ট কোনো ক্রম মেনে চলা হয় না।