ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে প্রবন্ধ রচনা কর ।
ছাত্রজীবনে সৌজন্য | ভদ্রতা |
ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার | সভ্য আচরণ |
ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে প্রবন্ধ
ভূমিকা
কৌতূক শিল্পী ভালু বন্দ্যোপধ্যায়ের একটি ক্যাসেটে শুনেছিলাম, “আগে ছাত্রের হাতে থাকতো পুস্তক, এমন থাকে ইষ্টক। লক্ষ্য মাস্টারের মস্তক।” এটা নিছক কৌতুক হলেও শুধু ছাত্রদের মধ্যে নয়, সমাজ জীবনের সর্বত্র সৌজন্য ও শিষ্টাচারের একান্তই অভাব। তাছাড়া ছাত্রজীবন যেহেতু জীবনের ভবিষৎ গঠনের একটি ধাপ তাই সেই সময়ে অর্জিত সৌজন্য ও শিষ্টাচার তার পরবর্তি জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে এবং যার ফলে একজন ছাত্র ভবিষ্যতের সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে।
শিষ্টাচার ও সৌজন্য কী ?
মার্জিত রুচিসম্মত ব্যবহারকেই শিষ্টাচার-সৌজন্য বলা হয়। শব্দদুটি আভিধানিক অর্থে সমার্থক। তবু দুইয়ের মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম পার্থক্য। আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ রুচিসম্মত ব্যবহারই শিষ্টাচার। আর সৌজন্য বলতে বাইরের মার্জিত ব্যবহারই শুধু নয় বা ভদ্রতার সামাজিক রীতি অনুসরণ নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে সুজনের মহৎ হৃদয়ের গভীর উষ্ণ স্পর্শ।
সৌজন্য ও শিষ্টাচারের পরিবর্তন
পরিবর্তনশীল জগতে সব কিছুই পরিবর্তিত হছে পরিবর্তনশীল পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। ফলে সৌজন্য, শিষ্টাচার, ভদ্রতা প্রভৃতিহ গুণাবলীরও রকমফের ঘটেছে। অতীতে এইসব মানবিক গুণাবলীগুলি প্রকাশের মাধ্যমে একজন লোক ভদ্র বলে পরিচিত হত। অর্থাৎ আপরকে সম্মান দিয়ে নিজেকে সম্মানিত করবার মাধ্যমে যে আনন্দ তাই সুজনের সৌজন্য নামে অভিহিত হতো। কিংবা, একজন অতিথিকে রুঢ় আচরণে অসম্মানিত করে আনন্দ পাওয়ার মধ্যে শিষ্টাচারের কোনো লক্ষ্মণ আছে বলে অতীতে মনে করা হতো না। ফোনে নিমন্ত্রন করে শিষ্টাচার দেখানোও অতীতে অসম্ভব ছিল, অসম্ভব ছিল শুধু চা খাইয়ে অতিথি বিদায় করা। কারন, সেই সময়ে সমাজে একটা নিয়ম-শৃঙ্খলা, ধর্মাধর্ম বোধ, কোনটা আচরনীয়, কোনটা আচরনীয় নয় – এটা সাধারণ মানুষের চোখ দিয়ে বিচার্য হতো।
ছাত্রজীবনে ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের গুরুত্ব
ছাত্রছাত্রীরা যেহেতু শিক্ষিত এবং শিক্ষার মধ্যে তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে ও তারা যেহেতু যুবক-যুবতী তাই তাদের কাছে মনুষ্যত্ব বৃত্তির স্বরূপ বেশী মাত্রায় থাকবে – একা সকলেই কামনা করে। দ্বিতীয়ত, আমরা আমাদের মুখ আয়নায় ফেলে দেখে নিতে পারি, কিন্তু অন্তরকে দেখবার উপায় হলো সৌজন্য, শিষ্টাচার – যার দ্বারা একজন মানুষের অন্তর্নিহিত সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনে সুকুমার প্রবৃত্তিগুলির যে বৃহৎ সম্ভাবনা থাকে তা সৌজন্য ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে পারে। তৃতীয়ত, “An honest man is the noblest work of God ?’ সুতরাং একজন ছাত্র বা ছাত্রী সৎভাবে কাজ করে তাদের সৌজন্য ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে পরমের আশীর্বাদ পেতে পারে। চতুর্থত, নীতি শ্লোকে আছে ‘বিদ্যা দদাতি বিনয়ং বিনয়াদ যাতি পাত্রতাম। / পাত্রত্বাদ ধনমাপ্নোতি ধনাদ ধর্মস্ততঃ সুখম।।’ পঞ্চমত, সৌজন্য ও শিষ্টাচার মানুষকে আন্তরিক ও সরল স্বভাবের করে তোলে ।
ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অন্তরায়
আভরণ যেমন দেহের শোভা, তেমনি সৌজন্য ও শিষ্টাচার আত্মার মাধুর্য্য। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সেই আত্মার মাধুর্য্য সব ক্ষেত্রে দুর্লভ। পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাওয়া ও একটা ভালো চাকরি করা ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের একমাত্র উদ্দেশ্য। সেজন্য মানসিক গুনাবলির বিকাশ ততটা গুরুত্ব পায় না। একজন ছাত্র বা ছাত্রী তার বন্ধুকে ঠেলে ফেলে দিয়ে এগিয়ে যেতে কুন্ঠাবোধ করে না, অভিভাকদের নির্দেশে প্রতিযোগীতায় এগিয়ে থাকার জন্য মিথ্যা কথা বলতেও দ্বিধা করে না। বিবেক বোধ বিসর্জন দিয়ে প্রতিযোগীতার ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকতে অস্বস্তি বোধ করে না। তাই তাদের কাছ থেকে শিষ্টাচার ও সৌজন্য বোধ আশা করা বৃথা।
প্রতিবন্ধকতা দূর করার উপায়
গান্ধিজির পৃথিবীব্যাপী খ্যাতির মূলে ছিল তাঁর ভদ্র ও মার্জিত আচরণ। নেপোলিয়নের মতো বীরও একজন ভিক্ষুককে পথ দেখিয়ে তাঁর সৌজন্য ও শিষ্টাচারকে মেলে ধরেছিলেন। তাই এই সব মানুষের আদর্শের চর্চা ও অনুধ্যান করা ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজন। প্রয়োজন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ঔদ্ধত্য ও অহমিকাকে বিসর্জন দেওয়া। কারণ, তা শিষ্টাচারের পরিবর্তে ভ্রষ্টাচারকে প্রকাশ করে। তাছাড়া ছাত্রছাত্রীদের সহনশীল মনোবৃত্তি থাকা দরকার। সহনশীল না হলে সৌজন্য ও শিষ্টাচার আসে না, অপরকে সম্মান দেওয়ার প্রবৃত্তি সৃষ্টি হয় না।
উপসংহার
তোষামোদ বা চাটুকার বৃত্তি কিন্তু শিষ্টাচারের পরিপন্থী। অতিরিক্ত বিনয়ও প্রতিবাদী চেতনাকে রুদ্ধ করে। আর এগুলি সৌজন্যের লক্ষণ নয়। আসলে সত্যতার দ্বারা, অপরকে সম্মান দিয়ে সম্মান পাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ বা মাধুর্য্য তার আস্বাদ যদি ছাত্রছাত্রীরা একবার পায়, তাহলে সেই পথ থেকে খুব একটা বিচ্যুত হবে না তারা। তাই ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারই তার পরিচয় – এই মন্ত্রে দীক্ষিত হোক ছাত্রছাত্রীরা, এই আশা করতে আপত্তি কোথায়?
(FAQ) ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য
-
ভদ্রতা ও মার্জিত ব্যবহারের কারণে পৃথিবী ব্যাপী বিখ্যাত ছিলেন কে?
– মহাত্মা গান্ধী
-
কোন ঐতিহাসিক চরিত্র একজন ভিক্ষুককে পথ দেখিয়ে সৌজন্যের দৃষ্টান্ত রেখেছিলেন?
– ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন
-
সুজনের সৌজন্য কি?
– অপরকে সম্মান দিয়ে নিজেকে সম্মানিত করবার মাধ্যমে যে আনন্দ তাই সুজনের সৌজন্য নামে অভিহিত হত।
-
ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধটি কোন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে
ছাত্রজীবনে সৌজন্য ও শিষ্টাচার প্রবন্ধটি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে