fbpx

জীবনানন্দ দাশ

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক জীবনানন্দ দাশ। জীবনানন্দ দাশের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ।

জন্ম ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ সাল
পিতামাতা সত্যানন্দ দাশ, কুসুমকুমারী দেবী
পেশা কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার
বিশেষ অভিধা রূপসী বাংলার কবি
মৃত্যু ১২ অক্টোবর ১৯৫৪ সাল

জীবনানন্দ দাশ জীবনী

ভূমিকা :- জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মিলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী।

জন্ম ও পিতৃপরিচয় :-

কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম অধুনা বাংলাদেশের বরিশাল শহরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত প্রতিষ্ঠিত ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। মাতা কুসুমকুমারী দেবী ছিলেন একজন কবি। জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান। 

শিক্ষা :-

জীবনানন্দ ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি হন। তার আগে মায়ের তত্ত্বাবধানে ঘরেই লেখাপড়া হয়েছিল। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। বরিশালে ব্রজমোহন কলেজে আই এ-তে ভরতি হন এবং ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে পাস করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন :-

জীবনানন্দের কর্মজীবনের সূচনা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সিটি কলেজে ইংরেজির অধ্যাপক হিসেবে। এখানে অধ্যাপন করেন ১৯২২-১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। খুলনায় বাগেরহাট কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মাত্র তিন মাস। এরপরে চলে যান দিল্লি। সেখানে রামযশ কলেজে অধ্যাপনা করেন ১৯২৯-১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে পর্যন্ত। তারপর পাঁচ বছর প্রায় বেকার ছিলেন। দেশভাগের আগেই সপরিবারে চলে আসেন কলকাতায়। কিছুদিন হুমায়ুন কবিরের ‘দৈনিক স্বরাজ’ পত্রিকায় চাকরি করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে খড়্গপুর ইন্দা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে যোগ দেন বড়িশা কলেজে। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে যোগ দেন হাওড়া গার্লস্ কলেজে। এখানে আমৃত্যু কাজ করেছেন।

সাহিত্য সাধনা :-

জীবনানন্দের সাহিত্যসাধনার প্রেরণা তাঁর মায়ের কাছে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় তাঁর ‘বর্ষা-আবাহন’ কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯২৪-২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি রীতিমতো কবিতা লেখা শুরু করেন ‘কালি-কলম’, ‘কল্লোল’, ‘প্রগতি’ প্রভৃতি পত্রিকায়। পরে ‘পরিচয়’, ‘কবিতা’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘পূর্বাশা’ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। পত্রপত্রিকায় প্রচুর কবিতা প্রকাশিত হলেও কবিতাগুলি গ্রন্থবদ্ধ করার তাগিদ তিনি অনুভব করেননি। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ প্রকাশিত হয়। তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা’। তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয় ‘রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭) ও ‘বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১)। এছাড়াও রয়েছে ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘মহাপৃথিবী’, ‘সাতটি তারার তিমির’ ‘বনলতা সেন’ প্রভৃতি কাব্যগ্ৰন্থ। জীবনানন্দ প্রায় শ-খানেক গল্প, এগারোখানা উপন্যাস, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সাতচল্লিশটি প্রবন্ধ রচনা করেছেন।

মৃত্যু :-

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় দেশপ্রিয় পার্কের কাছে রাস্তা পার হতে গিয়ে ট্রাম দুর্ঘটনায় জীবনানন্দ গুরুতর আহত হন এবং  ২২ অক্টোবর তার দেহাবসান হয়।

উপসংহার :-

জীবদ্দশায় অসাধারণ কবি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করে উঠতে পারেননি। এর জন্য তার প্রচারবিমুখতাও দায়ী; তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তবে মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার পথিকৃতদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের জীবন এবং কবিতার উপর প্রচুর গ্রন্থ লেখা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

  1. রূপসী বাংলার কবি নামে পরিচিত কে?

    – জীবনানন্দ দাশ

  2. রূপসী বাংলা ও বনলতা সেন কার লেখা?

    – জীবনানন্দ দাশ

  3. নির্জনতম কবি কাকে বলা হয়?

    – জীবনানন্দ দাশ

  4. শুদ্ধতম কবি কাকে বলা হয়?

    – জীবনানন্দ দাশ

Leave a Comment