প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ: বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি

প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় অধ্যায়)

প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ

প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ: বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি সমস্থ ছোট বড় ও MCQ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল


প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

১। লিপির প্রয়োজনীয়তা কি?

মানুষ তার মুখের ভাষাকে লিখে রাখার জন্য লিপির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে এবং পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।

২। সংস্কৃত ভাষা লেখার জন্য কোন লিপি ব্যবহার করা হয়? 

সংস্কৃত ভাষা লেখার জন্য ‘দেবনাগরী’ লিপি ব্যবহার করা হয়।

৩। সংস্কৃত লিপির সঙ্গে আর কোন্ কোন্ লিপির মিল রয়েছে? 

সংস্কৃত লিপির সঙ্গে হিন্দি, মারাঠি ও নেপালি লিপির মিল আছে।

৪। বাংলা লিপির সঙ্গে আর কোন লিপির মিল রয়েছে? 

বাংলা লিপির সঙ্গে অসমিয়া লিপির মিল রয়েছে।

৫। ‘রোমীয় বর্ণমালা’ কাকে বলে?

লাতিন ভাষা লেখার জন্য রোমে এই লিপি ব্যবহার করা হত বলে একে রোমীয় বর্ণমালা বা লাতিন বর্ণমালা বলে।

৬। রোমীয় লিপির বিকাশ কীভাবে ঘটেছে?

লাতিন বর্ণমালা থেকে নানা পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক রোমীয় লিপির বিকাশ হয়েছে।

৭। রোমীয় ভাষায় বর্ণগুলিকে কীভাবে লেখা হয়? 

রোমীয় ভাষায় বর্ণগুলি লেখার ক্ষেত্রে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ পৃথক পৃথকভাবে লেখা হয়।

৮। প্রাগৈতিহাসিক যুগে মানুষ কীভাবে বস্তু ও ঘটনাকে প্রকাশ করত ?

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ ছবি এঁকে উল্লেখযোগ্য বস্তু ও ঘটনাকে প্রকাশ করত।

৯। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের বস্তু ও ঘটনার প্রকাশের কথা আমরা কীভাবে জানতে পারি ?

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষের বস্তু ও ঘটনার প্রকাশ আমরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্বতগুহার গায়ে আঁকা ছবি থেকে পাই।

১০। লিপির ক্ষেত্রে আলেখ্য পদ্ধতি বলতে কী বোঝায় ? 

ছবি এঁকে উল্লেখযোগ্য বস্তু ও ঘটনাকে প্রকাশ করার পদ্ধতিকে বলা হয় ‘আলেখ্য পদ্ধতি’।

১১। লিপির ক্ষেত্রে ‘কুইপু’ পদ্ধতি বলতে কী বোঝায় ? 

নানা রঙের দড়ির গুছিতে গিট বেঁধে বিশেষ ঘটনা ও বিষয় নথিভুক্ত করা হত। লিপির উদ্ভবের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিকে ‘কুইপু’ বলে।

১২। লিপির উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে কোন্ পদ্ধতির পরিচয় পাওয়া যায়?

লিপির উদ্ভব ও ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে প্রথম সোপানে আলেখ্য ও স্মারকচিত্র পদ্ধতির পরিচয় পাওয়া যায়।

১৩। লিপির উদ্ভবের ক্ষেত্রে চিত্রলিপি এবং ভাবলিপি বলতে কী বোঝায়?

লিপির উদ্ভবের ক্ষেত্রে চিত্রলিপি এবং ভাবলিপি বলতে বোঝায় এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ছবি না দিয়ে শুধু রেখাচিত্র করা হত।

১৪। লিপির উদ্ভব ও বিকাশে তৃতীয় সোপানটি কীরূপ ছিল? 

লিপির উদ্ভব ও বিকাশে তৃতীয় সোপানে বস্তু ও বিষয় বোঝানোর ক্ষেত্রে বস্তু ও বিষয়জ্ঞাপন শব্দ নির্দেশ করা হত।

১৫। চিত্রলিপি ও ভাবলিপির পরবর্তী স্তরে লিপির ক্ষেত্রে কী গ্রহণ করা হয়েছিল? 

লিপির ক্ষেত্রে চিত্রলিপি ও ভাবলিপির পরবর্তী স্তরে শব্দলিপি অনুসরণ করা হয়েছিল।

১৬। লিপির উদ্ভবে শব্দলিপির পরিচয় কোথায় পাওয়া যায় ?

লিপির উদ্ভবে ‘শব্দলিপি’র পরিচয় প্রাচীন মিশরীয় চিত্রপ্রতীক ও প্রাচীন চিনের লিপিতে পাওয়া যায়। 

১৭। লিপি উদ্ভবে ‘শীর্ষনির্দেশ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

শব্দচিত্রের রেখা সংক্ষিপ্ত ও সাংকেতিক হয় এবং শব্দলিপিটি সমগ্র ধ্বনিসমষ্টিকে না-বুঝিয়ে কেবল প্রথম ধ্বনিকে নির্দেশ করতে থাকে। এই পদ্ধতি হল ‘শীর্ষনির্দেশ’ এবং এর ফলে শব্দলিপি পরিবর্তিত হয় অক্ষরলিপিতে।

১৮। অক্ষরলিপির পরবর্তী সোপানটি ছিল?

অক্ষরলিপির পরবর্তী সোপানটি ছিল ‘ধ্বনিলিপি’।

১৯। গ্রিক বা রোমান লিপির প্রকৃতি কীরূপ?

গ্রিক বা রোমান লিপির প্রকৃতি ছিল সম্পূর্ণ ধ্বনিমূলক বর্ণমালা।

২০। ভারতীয় লিপির প্রকৃতি কীরূপ? 

ভারতীয় লিপির প্রকৃতি অংশত ধ্বনিমূলক এবং অংশত অক্ষরমূলক। যেমন – (অ) ধ্বনিমূলক, (ক) = (ক্ অ) অক্ষরমূলক। 

২১। প্রাচীন ও আধুনিক সভ্যজগতের লিপিমালা কোথা থেকে উদ্ভূত?

প্রাচীন ও আধুনিক সভ্যজগতের লিপিমালা চারটি প্রাচীন পদ্ধতি থেকে উদ্ভূত – (১) সুমেরীয়-মিশরীয় চিত্রলিপি, (২) ভারতীয় চিত্রলিপি, (৩) চৈনিক চিত্রলিপি এবং (৪) মেসোপটেমীয় বাণমুখ চিত্রলিপি।

২২। সুমেরীয় লিপিচিত্র থেকে পরবর্তীকালে কোন্ কোন্ বর্ণমালা উৎপন্ন হয়েছে?

সুমেরীয় লিপিচিত্র থেকে পরবর্তীকালে ইউরোপীয় বর্ণমালা, আরামীয়, হিব্রু, আরবি প্রভৃতি বিভিন্ন সেমীয় বর্ণমালাগুলি উৎপন্ন হয়েছে।

২৩। মিশরীয় লিপিচিত্রর আদিম রূপ থেকে কী লিপি পাওয়া যায় ? 

মিশরীয় লিপিচিত্রের আদিম রূপ থেকে সংক্ষিপ্ত বা শিষ্ট লিপি এসেছিল।

২৪। ভারতবর্ষের প্রাচীনতম লিপিমালা কটি এবং কী কী? 

ভারতবর্ষের প্রাচীনতম লিপিমালা দুটি – (১) খরোষ্ঠী, (২) ব্রাহ্মী।

২৫। ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী লিপি লেখার পদ্ধতি কী?

ব্রাহ্মী লিপি লিখতে হয় বাম থেকে ডান দিকে এবং খরোষ্ঠী লিপি লিখতে হয় ডান থেকে বাম দিকে।

২৬। খরোষ্ঠী লিপি কোন লিপি থেকে উৎপন্ন হয়েছে?

খরোষ্ঠী লিপি সেমীয় লিপি থেকে উৎপন্ন হয়েছে।

২৭। ব্রাহ্মী লিপির পরিণতি কীরূপ হয়েছে?  

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে অর্থাৎ অশোকের সময়ে ব্রাহ্মী লিপি স্থানকালের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এসে আধুনিক ভারতীয় এবং পূর্ব-এশীয় বিবিধ লিপিমালায় পরিণত হয়েছে।

২৮। ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত কয়েকটি লিপির নাম লেখো।

ব্ৰাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত কয়েকটি লিপি হল সিংহলি, তিব্বতি, বর্মি, সিয়ামি, যবদ্বীপী, কোরীয় প্রভৃতি।

২৯। কুটিল লিপি কাকে বলে?

গুপ্ত শাসনকালে ব্রাহ্মী লিপি ভারতের পূর্বাঞ্চলে যে রূপ পেয়েছিল, তাকে কুটিল লিপি বলে।

৩০। বাংলা বর্ণমালা নিজস্ব রূপ কবে পেয়েছিল? 

খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকে বাংলা বর্ণমালা নিজস্ব রূপ গ্রহণ করেছিল।

প্রাচীন লিপি এবং বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ বড় প্রশ্ন ও উত্তর


১। ব্রাহ্মী লিপি থেকে বাংলা লিপি বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়গুলি সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

৫ (২০১৪) 

খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে ব্রাহ্মী লিপির দুটি আঞ্চলিক রূপ গড়ে ওঠে – উত্তর ভারতীয় রূপ এবং দক্ষিণ ও বহির্ভারতীয় রূপ। এর দ্বিতীয় রূপটি থেকে পল্লব লিপির উদ্ভব হয়, যার থেকে গ্রন্থি, মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও সিংহলি লিপির জন্ম হয়েছে। ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় রূপই হল কুষাণ লিপি। চতুর্থ শতাব্দীতে অর্থাৎ গুপ্তরাজাদের শাসনকালে কুষাণ লিপি বিবর্তিত হয়ে গুপ্ত লিপি নাম ধারণ করে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত লিপি থেকে ‘সিদ্ধমাতৃকা’ লিপির জন্ম হয়। সপ্তম শতাব্দীতে এই সিদ্ধমাতৃকা লিপি থেকেই কুটিল লিপি উদ্ভূত হয়।

এই কুটিল লিপি অষ্টম শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই পাঁচটি শাখার মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারত শাখা বা শারদা লিপি থেকে তিব্বতি, কাশ্মীরি ও গুরুমুখি লিপি; উত্তর ও মধ্যভারত শাখা থেকে দেবনাগরী, কায়থী ও গুজরাটি লিপি; মধ্য এশিয়া শাখা থেকে খােটানি লিপি এবং যবদ্বীপ-বালিদ্বীপ শাখা থেকে যবদ্বীপীয় কুটিল লিপি উদ্ভূত হয়।

কুটিল লিপির পঞ্চম শাখা বা পূর্ব-ভারত শাখার লিপি হল প্রত্ন বাংলা লিপি বা গৌড়ীয় লিপি। নবম শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যের রাজা নারায়ণ পালের তাম্রশাসনে এই লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায়। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই প্রত্ন বাংলা লিপি থেকে নেপালি, ওড়িয়া, মৈথিলি, বঙ্গলিপি – এই চার প্রকার লিপি উদ্ভূত হয়েছে। এইভাবেই ব্রাহ্মী লিপি থেকে ক্রমে ক্রমে বঙ্গলিপি বা বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে।


২। হিয়েরোগ্লিফিক লিপি কী? এর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

১+৪ (২০১৫, ২০১৮, ২০২০, ২০২৩)

হিয়েরোগ্লিফিক লিপি পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন মিশরে। মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল এই লিপির প্রবর্তক পাখির মাথা আর মানুষের শরীর বিশিষ্ট দেবতা থথ। হিয়েরাস’ শব্দের অর্থ পবিত্র আর ‘গ্লিফেইন’ শব্দের অর্থ খোদাই করা, অর্থাৎ পবিত্র লিপি। এই লিপির সব থেকে প্রাচীন নিদর্শন পৌনে সাত হাজার বছরের পুরোনো।

হিয়েরোগ্লিফিক চিত্রলিপি হলেও পরবর্তীকালে দল এবং ধ্বনির প্রতীক রূপে ব্যবহৃত হত। এই লিপিতে স্বরচিহ্ন ছিল না। কতকগুলি চিহ্ন একটি মাত্র ব্যঞ্জনধ্বনিকে প্রকাশ করত আবার কোনো কোনো চিহ্ন দুই না ততোধিক ব্যঞ্জনকে বোঝাতো। এই লিপি লেখা হত ডানদিক থেকে বামদিকে এবং কখনো কখনো নাম দিক থেকে ডানদিকে। 

প্রথমে পাথর কাঠে লেখা হলেও পরে প্যাপিরাস নামক নলখাগড়া পিটিয়ে পাতলা ফালি বানিয়ে কালি ও কলম দিয়ে লেখা হত। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় প্রায় সত্তর লক্ষ প্যাপিরাসের পুঁথি ছিল। ফ্যারাও তৃতীয় রামেসিসের আমলে একশো ত্রিশ ফুট লম্বা আর পৌনে সতেরা ফুট চওড়া একটি প্যাপিরাস পাওয়া গেছে। এ.সি. হ্যারিসের আবিষ্কৃত পৃথিবীর বৃহত্তম এই প্যাপিরাসের নাম হয়েছে দ্য গ্ৰেট হ্যারিস প্যাপিরাস। 

প্রথম যুগে এই লিপি অত্যন্ত জটিল থাকলেও পর এই লিপি রেখাচিত্রের সংখ্যা কমে আসে। এই ভাবে ধীরে ধীরে হায়রেটিক ও ডেমোটিক লিপির উদ্ভব হয়। ১৭৯৯ সালে ফরাসি দেশনায়ক নেপোলিয়ান বোনাপার্ট-এর সেনাদলের ক্যাপ্টেন, এন. বুসা মিশর বিজয়ের সময় নীলনদের মোহনায় স্যাঁ জুলিয়া দ্য রসেত্তা’ দুর্গের দেওয়ালে আঁকিবুকি কাটা একটি কালে পাথর দেখতে পান। এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মের একশো সাতানব্বই বছর আগে এপিফানেসের সম্মানে লেখা একটি ঘোষণা পত্র, যার উপরের ১৪ লাইন হিয়েরোগ্লিফিকে মাঝের ৩২ লাইন ডেমোটিকে আর শেষের চুয়ান্ন লাইন ছিল গ্ৰিকে। জাঁ ফ্রাঁসোয়া শাপলিঅঁ এই লিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন।


৩। কিউনিফর্ম বা কীলকলিপির নামকরণ কে করেছিলেন? এই লিপির সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাটি কোথায় পাওয়া গেছে? এই লিপির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

১+১+৩ (২০১৬, ২০১৯, ২০২২)

কিউনিফর্ম বা কীলকলিপির নামকরণ করেন বিখ্যাত লিপি বিশারদ টমাস হাইড।  

কিউনিফর্ম বা কীলকলিপির সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাটি উরুক শহরে পাওয়া গেছে, যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো।

বিশ্বের প্রাচীন লিপিগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কিউনিফর্ম লিপি। ভাষাবিদদের মতে কিউনিফর্ম লিপি মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিকের চেয়েও পুরনো। এই লিপির আকার কীলক বা ছোট্ট তীরের মতো হওয়ায় একে কিউনিফর্ম বা কীলক লিপি বলা হয়। সুমেরীয়রা এর আবিষ্কারক। এই লিপি আনুমানিক ৩২০০ খ্রিস্টপূর্বে ব্যবহৃত হত। কাদামাটির চার কোনা পাতে লেখার পর আগুনে পুড়িয়ে এই লিপিকে স্থায়ী করা হত। এটি প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার মানুষ ব্যবহার করত। এই লিখন পদ্ধতিতেই হামুরাবির আইনবিধি লিপিবদ্ধ করা হয়।

বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ও চিত্রের সমন্বয়ে লেখার পদ্ধতি হল কিউনিফর্ম। এই লিপিতে সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে গঠিত কোনো বর্ণমালা নেই এবং এতে নির্দিষ্ট কোনো অক্ষরও নেই। এই লিপিতে ৬০০ থেকে ১০০০-এর মতো কীলক আকৃতির শব্দ বা তাদের অংশের শেপ ব্যবহার করা হত।

এই লিপির পাঠোদ্ধারের সূচনা করেন আইরিশ পাদ্রি এডওয়ার্ড হিংকস। বর্তমানে ব্রিটিশ জাদুঘরসহ বার্লিন, ইরাক, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের জাদুঘরেও কিউনিফর্ম ট্যাবলেট সংরক্ষিত আছে।


৪। বাংলা লিপির উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা কর।

৫ (২০১৭, ২০১৯)

ভারতে প্রাপ্ত প্রাচীনতম লিপির সন্ধান পাওয়া যায় অশোকের বিভিন্ন অনুশাসনে। অশোকের অনুশাসনে দু-প্রকার লিপি পাওয়া যায় – ব্রাহ্মী ও খরোষ্ঠী। লিপি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আরামীয় লিপি থেকে ভারতের আদিলিপি ব্ৰাহ্মী ও খরোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে। খরোষ্ঠী লেখা হত ডান থেকে বাম দিকে এবং ব্রাহ্মী লেখা হত বাম থেকে ডান দিকে। অবশ্য ডান থেকে বাম দিকে লেখার নিদর্শনও রয়েছে। ব্রাহ্মী থেকে আধুনিক নাগরী, বাংলা প্রভৃতি ভারতীয় লিপির জন্ম হয়।

খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দে ব্রাহ্মী লিপির দুটি আঞ্চলিক রূপ গড়ে ওঠে – উত্তর ভারতীয় রূপ এবং দক্ষিণ ও বহির্ভারতীয় রূপ। এর দ্বিতীয় রূপটি থেকে পল্লব লিপির উদ্ভব হয়, যার থেকে গ্রন্থি, মালয়ালম, তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও সিংহলি লিপির জন্ম হয়েছে। ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় রূপই হল কুষাণ লিপি। চতুর্থ শতাব্দীতে অর্থাৎ গুপ্তরাজাদের শাসনকালে কুষাণ লিপি বিবর্তিত হয়ে গুপ্ত লিপি নাম ধারণ করে। ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত লিপি থেকে ‘সিদ্ধমাতৃকা’ লিপির জন্ম হয়। সপ্তম শতাব্দীতে এই সিদ্ধমাতৃকা লিপি থেকেই কুটিল লিপি উদ্ভূত হয়।

এই কুটিল লিপি অষ্টম শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশে পাঁচটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই পাঁচটি শাখার মধ্যে উত্তর-পশ্চিম ভারত শাখা বা শারদা লিপি থেকে তিব্বতি, কাশ্মীরি ও গুরুমুখি লিপি; উত্তর ও মধ্যভারত শাখা থেকে দেবনাগরী, কায়থী ও গুজরাটি লিপি; মধ্য এশিয়া শাখা থেকে খােটানি লিপি এবং যবদ্বীপ-বালিদ্বীপ শাখা থেকে যবদ্বীপীয় কুটিল লিপি উদ্ভূত হয়।

কুটিল লিপির পঞ্চম শাখা বা পূর্ব-ভারত শাখার লিপি হল প্রত্ন বাংলা লিপি বা গৌড়ীয় লিপি। নবম শতাব্দীতে পাল সাম্রাজ্যের রাজা নারায়ণ পালের তাম্রশাসনে এই লিপির প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া যায়। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে এই প্রত্ন বাংলা লিপি থেকে নেপালি, ওড়িয়া, মৈথিলি, বঙ্গলিপি – এই চার প্রকার লিপি উদ্ভূত হয়েছে। এইভাবেই ব্রাহ্মী লিপি থেকে ক্রমে ক্রমে বঙ্গলিপি বা বাংলা লিপির উদ্ভব হয়েছে।


Leave a Comment