ভারতের ভাষা পরিবার ও বাংলা ভাষা: একাদশ শ্রেণী বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব চতুর্থ অধ্যায়)

ভারতের ভাষা পরিবার ও বাংলা ভাষা একাদশ শ্রেণী বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব চতুর্থ অধ্যায়)

Table of Contents

ভারতের ভাষা পরিবার ও বাংলা ভাষা একাদশ শ্রেণী বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতি

একাদশ শ্রেণী ভারতের ভাষা পরিবার ও বাংলা ভাষা বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতি হতে MCQ Question and test. 👆CLICK HERE


একাদশ শ্রেণী বাঙালীর ভাষা ও সংস্কৃতি হতে ভারতের ভাষা পরিবার ও বাংলা ভাষা ছোট প্রশ্ন উত্তর

  • ১। পৃথিবীর ভাষাবংশের মধ্যে কোনটি প্রধান ?
    • পৃথিবীর ভাষাবংশের মধ্যে প্রধান হল ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাবংশ।
  • ২। ‘শতম’ গুচ্ছের মধ্যে কোন কোন ভাষা পড়ে?
    • ‘শতম্’ গুচ্ছের মধ্যে ইন্দো-ইরানীয়, বালতো-স্লাভিক, আলবেনীয় ও আর্মেনীয় ভাষা পড়ে।
  • ৩। ইন্দো-ইরানীয় শাখাকে ‘আর্য শাখা’ বলা হয় কেন?
    • ড. সুকুমার সেন বলেছেন, “ইন্দো-ইরানীয় শাখা ভাষীরা নিজেদের ‘আর্য’ বলিয়া গৌরব বোধ করিত, তাই ইহার নাম আর্যভাষা”।
  • ৪। ইন্দো-ইরানীয় বা আর্য শাখার কয়টি উপশাখা ও কী কী?
    • ইন্দো-ইরানীয় বা আর্য শাখার দুটি উপশাখা – ইরানীয় এবং ভারতীয় আর্য। 
  • ৫। ভারতবর্ষে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশের নাম লেখো।
    • ভারতবর্ষে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশ হল ইন্দো-ইউরোপীয়, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় এবং ভোটচিনীয়।
  • ৬। ভারতীয় আর্যভাষা কোন ভাষার শাখা?
    • ইন্দো-ইরানীয় ভাষার অন্যতম প্রধান শাখা হল ভারতীয় আর্যভাষা।
  • ৭। বাংলাভাষা ছাড়া নব্য ভারতীয় আর্যভাষার আর দুটি ভাষার নাম লেখো। 
    • বাংলাভাষা ছাড়া নব্য ভারতীয় আর্যভাষার অপর দুটি ভাষা হল – ওড়িয়া ও অসমিয়া।
  • ৮। নব্য ভারতীয় আর্যভাষা পর্বের ভারতীয় আর্যভাষাগুলির নাম কী? 
    • নব্য ভারতীয় আর্যভাষা পর্বের ভারতীয় আর্যভাষাগুলির নাম হল বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অবধি, পঞ্জাবি ইত্যাদি।
  • ৯। ‘বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক’ কোন ভাষায় রচিত? 
    • বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ‘ত্রিপিটক’ পালি ভাষায় রচিত।
  • ১০। পালি ভাষার নিদর্শন কোথায় পাওয়া যায় ? 
    • অশোকের শিলালিপি ও বুদ্ধদেবের উপদেশগুলিতে পালিভাষার নিদর্শন পাওয়া যায়।
  • ১১। বাংলাভাষার আদিযুগের নিদর্শন কী?
    • বাংলাভাষার আদিযুগের নিদর্শন হল ‘চর্যাগীতিকোষ’ বা ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’।
  • ১২। বাংলা ভাষার জননী কে?
    • বাংলা ভাষার জননী হল মাগধী অপভ্রংশ।
  • ১৩। তামিল ভাষা কোন ভাষাবংশের অন্তর্গত?
    • তামিল ভাষা দ্রাবিড় ভাষাবংশের অন্তর্গত।
  • ১৪। আদি মধ্যযুগের বিশিষ্ট সাহিত্যিক নিদর্শনের নাম লেখো। 
    • আদি মধ্যযুগের বিশিষ্ট সাহিত্যিক নিদর্শন হল বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন।
  • ১৫। সাঁওতালি ভাষা কোন ভাষাবংশের অন্তর্গত।
    • সাঁওতালি ভাষা অস্ট্রিক ভাষাবংশের অন্তর্গত।
  • ১৬। অস্ট্রিক ভাষাবংশের অন্তর্গত একটি ভাষার নাম লেখো। 
    • অস্ট্রিক ভাষাবংশের অন্তর্গত একটি ভাষা হল মুন্ডারি।
  • ১৭। বাংলা, ওড়িয়া এবং অসমিয়া – এই তিনটি ভাষার জন্ম কোন ভাষা থেকে হয়েছে?
    • বাংলা, ওড়িয়া এবং অসমিয়া – এই তিনটি ভাষা মাগধী অপভ্রংশ থেকে জন্ম লাভ করেছে।
  • ১৮। মালাধর বসুর ‘শ্রীকৃয়ুবিজয়’ বাংলা ভাষার কোন স্তরের নিদর্শন?
    • মালাধর বসুর ‘শ্রীকুয়ুবিজয়’ বাংলা ভাষার আদি-মধ্যযুগের নিদর্শন।
  • ১৯। নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার উদ্ভবকাল কত?
    • নব্য ভারতীয় আর্যভাষার উদ্ভবকাল হল আনুমানিক ৯০০ খ্রিস্টাব্দ।
  • ২০। ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটি কার লেখা ও কোন্ স্তরের বাংলা ভাষার নিদর্শন ?
    • ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যটির রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস এবং এই কাব্যটি বাংলা ভাষার আদি-মধ্যযুগের নিদর্শন। 
  • ২১। ‘বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ’ বাংলাভাষার কোন স্তরের নিদর্শন?
    • ‘বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ’ বাংলাভাষার মধ্যভারতীয় (আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৯০০ খ্রিস্টাব্দ) স্তরের নিদর্শন।
  • ২২। কালিদাসের সময়কাল কোন যুগে  
    • কালিদাসের সময়কাল মধ্যভারতীয় আর্যভাষার যুগে।
  • ২৩। বেদ কয় প্রকার ও কী কী ? 
    • বেদ চার প্রকার – ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব।
  • ২৪। প্রত্যেক বেদের কয়টি অংশ এবং কী কী?
    • প্রত্যেক বেদের চারটি অংশ – ‘সংহিতা’ (মন্ত্রভাগ), ‘ব্রাহ্মণ’ (ব্যাখ্যা, আখ্যান-উপাখ্যান), ‘উপনিষদ’ (মুল আধ্যাত্মিক তত্ত্ব) ও ‘আরণ্যক’ (দার্শনিক তত্ত্ব)।
  • ২৫। পাণিনির ‘অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থটি কোন সময়ের রচনা?
    • পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী’ গ্রন্থটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দে রচিত।
  • ২৬। ‘ছান্দস্’ ভাষা কী?
    • সাহিত্যিক প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার যে নিদর্শন ঋগ্বেদের কবিতায় পাওয়া যায়, তাই ‘ছান্দস্’ ভাষা।

১। “ভারত চার ভাষাবংশের দেশ” – এই চার ভাষা বংশের পরিচয় দাও।  ৫  (২০১৪, ২০১৯, ২০২৩)

ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশের নাম হল – (১) ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাবংশ, (২) অস্ট্রিক ভাষাবংশ, (৩) দ্রাবিড় ভাষাবংশ এবং (৪) ভোট-চিনীয় ভাষাবংশ।

ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষা বংশ :- ইন্দো-ইউরোপীয় বা আর্য ভাষাবংশটি পৃথিবীর ভাষাবংশগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্ম আনুমানিক ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি। পূর্ব ইউরোপকেই এর শেষ পীঠস্থান বলে ধরা হয়। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সমগ্র প্রাচীন শাখাগুলির একটি হল ইন্দো-ইরানীয়, যার দুটি শাখার মধ্যে রয়েছে – ইরানীয় ও ভারতীয় আর্য। এই ভারতীয় আর্য শাখাটি আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতে প্রবেশ করার পর থেকে ভারতীয় আর্যভাষার সূচনা ঘটে এবং নানা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এই ভাষার বিকাশ ঘটেছে।

অস্ট্রিক ভাষাবংশ :- অস্ট্রিক ভাষাবংশের দুটি শাখার মধ্যে একটি হল অস্ট্রো-এশিয়াটিক এবং অপরটি হল অস্ট্রোনেশীয়। অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখাটির মধ্যে মোন-খমের এবং কোল উপশাখা রয়েছে। কোল উপশাখার শবর, সাঁওতালি, মুন্ডারি, খাসি প্রভৃতি ভাষাগুলি ভারতবর্ষের নানাস্থানে, তেমন – পশ্চিমবঙ্গে, ওড়িশায়, বিহারে, মধ্যপ্রদেশে ও অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্বোত্তর অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। 

দ্রাবিড় ভাষাবংশ :- দ্রাবিড় বংশের ভাষা প্রধানত ভারতবর্ষের দক্ষিণাংশেই প্রচলিত। এই বংশের মুখ্য ভাষাগুলি তামিলনাড়ু বা মাদ্রাজে ‘তামিল’, অন্ধ্রপ্রদেশে ‘তেলুগু, কেরলে ‘মালয়লম্’, কর্ণাটকে বা মহীশূরে ‘কনড়’ বা ‘কানাড়ি’ নামে পরিচিত।

ভোট-চিনীয় ভাষাবংশ :- ভোট-চিনীয় বংশের ‘চিনীয়’, ‘থাই’ ও ‘ভোটবর্মি’ নামে তিনটি প্রধান শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে চিন দেশে সর্ববৃহৎ ‘চিনীয়’ ভাষার নিদর্শন, শ্যামদেশে ‘থাই’ বা ‘শ্যামী’ ও ভোট-বর্মি শাখার মধ্যে তিব্বতে ‘তিব্বতি’, ব্রহ্মদেশ বা মায়ানমারে ‘বর্মি’ ও ভারতবর্ষে বড়ো, নাগা প্রভৃতি ভাষার প্রচলন দেখা যায়।


২। মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল উল্লেখ করে এই পর্বটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ৫ (২০১৫, ২০১৮, ২০২২)

ভারতীয় আর্যদের মুখের ভাষা প্রকৃতি স্বাভাবিক নিয়মেই ক্রমে ক্রমে পরিবর্তিত হয়ে আসছিল। এই পরিবর্তনের ফলে অনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দের কাছাকাছি সময় থেকে ভারতীয় আর্যভাষার ধ্বনিগত তথা ব্যাকরণগত স্বরূপ প্রাচীন ভারতীয় বৈদিক সংস্কৃত থেকে এত পৃথক হয়ে গেল যে ওই সময় থেকে ভারতীয় আর্যভাষার অন্য এক যুগের সূচনা ধরা হয়। এই যুগটির নাম হল মধ্যভারতীয় আর্যভাষার যুগ। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষার যুগগত নাম বৈদিক সংস্কৃত আর মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার যুগগত নাম প্রাকৃত ভাষা।

মধ্যভারতীয় আর্যভাষার কালসীমা আনুমানিক ৬০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এই পর্বের প্রধান ভাষা হল প্রাকৃত ভাষা। এছাড়া ক্লাসিক্যাল সংস্কৃত, বৌদ্ধ সংস্কৃত বা মিশ্র সংস্কৃত এবং পালি ভাষাও মূলত এই যুগেই পড়ে। প্রায় দেড় হাজার বছর এই ভাষার অস্তিত্বকাল। 

সুদীর্ঘকাল ধরে ভারতীয় আর্যভাষা একই রূপে ছিল না। কালে কালে তারও পরিবর্তন হয়ে চলেছিল। এই পরিবর্তনের সূত্র ধরে মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার ইতিহাসকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়। আবার ভারতবর্ষে আর্যরা একে একে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, ফলে তাদের ভাষাতেও আঞ্চলিক স্বাতন্ত্র্যতা গড়ে উঠেছে। তাই মধ্যভারতীয় আর্যভাষার বিভিন্ন কালপর্বে বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপও লক্ষ্য করা যায়।


৩। ‘সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার জননী’ – এই মত গ্রহণযোগ্য কিনা তা যুক্তি সহ আলোচনা কর।  ৫  (২০১৫) 

সংস্কৃত বাংला ভাষার জননী নয়। কারণ, প্রাচীন ভারতীয় আর্য থেকে মধ্যভারতীয় আর্যের মাগধী প্রাকৃত, মাগধী প্রাকৃত থেকে মাগধী অপভ্রংশ, মাগধী অপভ্রংশ থেকে অবহটঠ এবং তার থেকে বাংলা ভাষার জন্ম।

সংস্কৃত হল বৈদিকের পরবর্তী একটি প্রায় কৃত্রিম ভাষা। পরবর্তীকালে যার আর কোনো বিবর্তন হয় নি। আবার বৈদিক ভাষাকেও নব্য ভারতীয় আর্য ভাষাগুলির জন্ম উৎস বলা যায় না। নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির জন্ম উৎস হল বৈদিক ভাষার কথ্যরূপ থেকে জাত। মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার শেষ স্তর বিভিন্ন অপভ্রংশ অবহটঠ ভাষা। 

পরিশেষে বলা যায় সংস্কৃত নয়, বাংলা ভাষার জন্ম হয়েছে মাগধী অপভ্রংশ অবহটঠ থেকে। তাই মাগধী অপভ্রংশই হল বাংলা ভাষার জননী।


৪। ভোটচিনা ভাষা বংশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ৫ (২০১৬)

ভাষাবিজ্ঞানীদের মতে, ভারতবর্ষে প্রচলিত ভাষাগুলি চারটি প্রধান ভাষাবংশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই চারটি ভাষা বংশের অন্যতম একটি হল ভোটচিনা ভাষাবংশ। ভোট-চিনা গোষ্ঠীর ভাষা ভারতবর্ষের হিমালয়ের পাদদেশে এবং আসাম, চিন, তিব্বত, বর্মা প্রভৃতি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ভোট-চিনীয় বংশের তিনটি শাখা রয়েছে – চিনীয় বা চিনা, থাই ও ভোট-বর্মি। 

চিনীয় শাখার প্রধান ভাষা হল চিনা ভাষা। এই ভাষা পৃথিবীর বেশিসংখ্যক লোক ব্যবহার করে। দ্বিতীয় শাখা বা থাই শাখার ভাষা শ্যামদেশের ভাষা শ্যামী বা সিয়ামি। ভোট-বর্মি শাখার ভাষা তিব্বতের ভাষা তিব্বতি, ব্রহ্মদেশের ভাষা বর্মি এবং ভারতের কোনো-কোনো অঞ্চলে বোড়ো, নাগা, মেইথেই, ভুটিয়া প্রভৃতি ভাষা। আধুনিক বাংলায় ব্যবহৃত ‘চা’, ‘লিচু’ প্রভৃতি ভাষা এই ভাষাবংশের অন্তর্ভুক্ত।


৫। প্রাকৃত ভাষার এইরূপ নামকরণের কারণ কি? এই ভাষার তিনটি আঞ্চলিক রূপের নাম লেখ। ২+৩ (২০১৭, ২০২০, ২০২৩)

প্রাকৃত ভাষার নামকরণের ক্ষেত্রে বলা হয় যে, প্রাকৃত শব্দটি ‘প্রকৃত’ থেকে জাত। এই প্রকৃত শব্দের অর্থ হল মূল উপাদান। অর্থাৎ, এই প্রাকৃত ভাষার মূল উপাদান বৈদিক সংস্কৃত ভাষা। এই ভাষা বৈদিক সংস্কৃত থেকে জাত বলেই এর নাম প্রাকৃত ভাষা।

আবার শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সর্বসাধারণের ভাষারূপে প্রাকৃত ভাষার উদ্ভব। সেদিক থেকে জনগণের ব্যবহৃত ভাষা বা প্রাকৃত জনের ভাষা বলে এর নাম প্রাকৃত ভাষা।

সময়কাল হিসেবে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কালপর্বের প্রধান ভাষা হল প্রাকৃত ভাষা। এই প্রাকৃত ভাষার তিনটি আঞ্চলিক রূপভেদ রয়েছে। –

(ক) শৌরসেনী প্রাকৃত :- পশ্চিম ভারতের দিল্লি, মথুরা ও মিরাট অঞ্চলে শৌরসেনী প্রাকৃতের প্রচলন ছিল।

(খ) মাগধী প্রাকৃত :- পূর্ব ভারতে মাগধী প্রাকৃত প্রচলিত ছিল।

(গ) পৈশাচী প্রাকৃত :- উত্তর-পশ্চিম ভারতে সম্ভাব্য উৎস হলেও পরবর্তীকালে মধ্য ভারতেও পৈশাচী প্রাকৃতের প্রচলন হয়।


৬। অস্ট্রিক ভাষা বংশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ৫  (২০১৮)

অস্ট্রিক গোষ্ঠীর ভাষা ভারতে প্রচলিত ভাষাবংশের মধ্যে একটি। এই অস্ট্রিক ভাষা ভারতবর্ষে ‘কোল’ বা ‘মুন্ডা’ ভাষা নামে পরিচিত। এর দুটি শাখার – ‘অস্ট্রো-এশিয়াটিক’ ও ‘অস্ট্রোনেশীয়’। অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখার প্রধান ভাষা হল শবর, সাঁওতালি, খাসি, মুন্ডারি, নিকোবরি। এই ভাষাগুলি আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, ছোটোনাগপুর, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি স্থানে প্রচলিত। আবার অস্ট্রোনেশীয় শাখার মালয়, যবদ্বীপীয় ইত্যাদি ভাষা মালয়, যবদ্বীপ প্রভৃতি স্থানে প্রচলিত।

অস্ট্রিক ভাষা ভারতীয় আর্যভাষার মধ্যে নব্য আর্যভাষাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল বলে ভাষাতাত্ত্বিকগণের অভিমত। বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারের অধিকাংশ দেশি শব্দ অস্ট্রিক ভাষা থেকে নেওয়া বলে অনুমান করা হয়। যেমন – খড়, খুঁটি, ঝিঙা, চিংড়ি, ঢেঁকি, ডিংগা, ডিম্ব, ঢিল, ঢিপি, মুড়ি ইত্যাদি। খোকা, খুকি কুড়ি (বিশ অর্থে) শব্দগুলি অস্ট্রিক ভাষা থেকে আগত। ‘বঙ্গ’ নামটিও এই ভাবে এসেছে বলে ধরা হয়। সংস্কৃত শব্দ তাম্বুল, অলাবু, কদলী, নারিকেল শব্দগুলি অস্ট্রিক ভাষা থেকে আগত।


৭। নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার সময়কাল উল্লেখ করে এই পর্বের সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। ৫ (২০২০)

নব্য ভারতীয় আর্যভাষার আনুমানিক কাল দশম শতাব্দী থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও অপভ্রংশ থেকে আধুনিক ভাষাগুলির উদ্ভব দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যেই সংঘটিত হয়েছিল। 

নব্য ভারতীয় আর্যভাষা বলতে কোনো একটি ভাষাকে বোঝায় না, উল্লেখিত সময়ে ভারতে আর্য শাখা থেকে যে সমস্ত নবীন ভাষার জন্ম হয় তাদের সকলকেই বোঝায়। ভারতের নবীন ভাষাগুলি মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার পাঁচটি প্রাকৃত রূপ থেকেই জাত। তা হল পৈশাচী প্রাকৃত থেকে পৈশাচী অপভ্রংশ-অবহঠের জন্ম হয় এবং তা থেকেই ‘সিন্ধি’ ও ‘পঞ্জাবি’ ভাষার জন্ম। মাহারাষ্ট্রী প্রাকৃত থেকে মাহারাষ্ট্রী অপভ্রংশ-অবহটঠের জন্ম এবং ‘মারাঠি’ ও ‘কোঙ্কনি’ হল নব্য ভারতীয় ভাষা।

শৌরসেনী প্রাকৃত থেকে শৌরসেনী অপভ্রংশ-অবহটঠের জন্ম এবং যার মধ্যে মধ্যদেশীয় শাখার ‘কথ্য হিন্দুস্থানি’, ব্রজভাষা, কনৌজি, বুন্দেলি ও পশ্চিম ভারতীয় শাখার গুজরাটি, রাজস্থানি প্রভৃতি রয়েছে। অর্ধমাগধী প্রাকৃত থেকে অর্ধমাগধী অপভ্রংশ-অবহটঠের জন্ম এবং এর পশ্চিমা শাখায় রয়েছে মৈথিলি, মগহি, ভোজপুরি এবং পূর্ব শাখায় রয়েছে বাংলা ও অসমিয়া।

নব্য ভারতীয় আর্যভাষার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হল (১) এখানে যুক্ত ব্যঞ্জনের মধ্যে একটি ব্যঞ্জনের লোপ ও পূর্ববর্তী স্বরে দীর্ঘতা (নচ্চ > নাচ, হত্থ > হাত), (২) পদের শেষে অবস্থিত স্বরধ্বনির লোপ অথবা বিকৃতি ঘটে (রাম > রাম্, অগ্নি > আগ্), (৩) নব্য ভারতীয় আর্যভাষায় প্রত্যেক কারকের বিভক্তিগুলি সবই লুপ্ত থাকে, (৪) এখানে একাধিক ধাতুর সংযোগে গঠিত যৌগিক কালের রূপ দেখা যায়।

Leave a Comment