একাদশ শ্রেণীর মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সাহিত্য হতে শাক্ত পদাবলী সমস্থ ছোট বড় ও MCQ প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল
শাক্ত পদাবলী
১। অষ্টাদশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য কাব্যবৈচিত্র্য কোন কাব্যে পাওয়া যায় ?
(ক) বৈষ্ণব পদাবলিতে
(খ) চর্যাগীতিতে
(গ) শাক্ত পদাবলিতে
(ঘ) পদ্মাবতীতে
গ
২। শাক্ত গান কোন্ দেবীকে কেন্দ্র করে রচিত ?
(ক) সরস্বতী
(খ) কালিকা
(গ) লক্ষ্মী
(ঘ) মনসা
খ
৩। শাক্তগণকে সেকালে কী বলা হত?
(ক) মানশ্রী
(খ) শক্তিশ্রী
(গ) মালসী
(ঘ) মালবশ্রী
গ
৪। কোন বেদে আদ্যাশক্তির কথা পাওয়া যায়?
(ক) যজুর্বেদে
(খ) ঋকবেদে
(গ) অথর্ববেদে
(ঘ) সামবেদে
খ
৫। শাক্ত পদাবলির উমা-পার্বতী-দুর্গার ভাবনা কোথা থেকে নেওয়া?
(ক) যজুর্বেদ
(খ) পুরাণ
(গ) মঙ্গলকাব্য
(ঘ) বৈস্নব পদাবলি
খ
৬। শাক্ত পদাবলির মূল রস হল –
(ক) শৃঙ্গাররস
(খ) মধুররস
(গ) শান্তরস
(ঘ) বাৎসল্য রস
ঘ
৭। শাক্ত পদাবলিকে কবিত্বের উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন –
(ক) রমাপ্রসাদ সেন
(খ) রামপ্রসাদ সেন
(গ) বিদ্যাসুন্দর
(ঘ) ঈশ্বরগুপ্ত
খ
৮। রামপ্রসাদ সেনের জন্মস্থান কোথায় ?
(ক) হালিশহরে
(খ) আরামবাগে
(গ) চন্দননগরে
(ঘ) বেলানগরে
ক
৯। রামপ্রসাদ সেন কত খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন ?
(ক) ১৭৮১
(খ) ১৭৮২
(গ) ১৭৮৩
(ঘ) ১৭৮৪
ক
১০। রামপ্রসাদের পদাবলির সংখ্যা প্রায় –
(ক) ২০০
(খ) ৩০০
(গ) ৪০০
(ঘ) ১০০
খ
১১। শাক্ত পদাবলির দ্বিতীয় উল্লেখযোগ্য কবি হলেন –
(ক) সাধক কমলাকান্ত
(খ) দ্বিজ রামপ্রসাদ
(গ) আজু গোঁসাই
(ঘ) বিদ্যাসুন্দর
ক
১২। কমলাকান্তের ভণিতায় পদের সংখ্যা কত?
(ক) ২০০
(খ) ৪০০
(গ) ১০০
(ঘ) ৩০০
ঘ
১৩। ‘কালিকামঙ্গল’ কাব্যটি কার রচনা?
(ক) ভারতচন্দ্র
(খ) রামপ্রসাদ
(গ) বিদ্যাসুন্দর
(ঘ) দ্বিজ রামপ্রসাদ
খ
১৪। শ্যামাসংগীত রচয়িতা রাধাকান্ত মিশ্রের বাড়ি কোথায় ছিল ?
(ক) বর্ধমানে
(খ) হুগলিতে
(গ) হাওড়ায়
(ঘ) কলকাতায়
ঘ
১৫। ‘আমায় দে মা তবিলদারী’ – গানটি কার ?
(ক) দ্বিজ রামপ্রসাদের
(খ) রামপ্রসাদ সেনের
(গ) কমলাকান্তের
(ঘ) দাশুরায়ের
খ
১৬। ‘পেদুঠাকুর’ নামে কোন্ কবি পরিচিত ছিলেন?
(ক) দ্বিজ রামপ্রসাদ
(খ) কমলাকান্ত
(গ) দাশুরায়
(ঘ) রামপ্রসাদ সেন
ক
১৭। কোন্ মহারাজ শাক্তগীতি রচনা করেছিলেন?
(ক) দাশুরায়
(খ) রামবসু
(গ) মহারাজ নন্দকুমার রায়
(ঘ) রাজকিশোর
গ
১৮। উমা-পার্বতী-দুর্গা-কালিকাকে উপলক্ষ্য করে রচিত গানকে বলে –
(ক) আগমনী গান
(খ) বিজয়া গান
(গ) শাক্ত গান
(ঘ) কোনোটা নয়
গ
১৯। কোন পুরাণে দেবী আদ্যাশক্তির কথা বর্ণিত আছে?
(ক) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ
(খ) বিষ্ণুপুরাণ
(গ) চণ্ডীপুরাণ
(ঘ) কোনোটা নয়
ক
২০। রামপ্রসাদ কলকাতার ধনাঢ্য জমিদারের বাড়িতে কি কাজ করতেন?
(ক) মুহুরিগিরি
(খ) চৌকিদারি
(গ) দ্বারোয়ানগিরি
(ঘ) কোনোটা নয়
ক
২১। রামপ্রসাদ নিজের গানে যে সুর দিতেন তা হল –
(ক) কালী সুর
(খ) আগমনী সুর
(গ) প্রসাদী সুর
(ঘ) বিজয়াসুর
গ
২২। সাধক কমলাকান্তের জন্মস্থান — জেলার কালনা গ্রামে।
(ক) বীরভূম
(খ) বর্ধমান
(গ) হুগলি
(ঘ) চব্বিশ পরগণা
খ
২৩। কমলাকান্তের আগমনী ও বিজয়ার গান রামপ্রসাদের গানের চেয়েও কাব্যাংশে —।
(ক) উৎকৃষ্ট
(খ) নিকৃষ্ট
(গ) অতি নিকৃষ্ট
(ঘ) কোনোটাই নয়
ক
২৪। রামপ্রসাদের রচিত একটি গ্রন্থ হল –
(ক) কালীকীর্তন
(খ) আগমনী
(গ) বিজয়া
(ঘ) কোনোটিই নয়
ক
১। অষ্টাদশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য কাব্যবৈচিত্র্য কোনটি?
অষ্টাদশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য কাব্যবৈচিত্র্য হল শাক্ত পদাবলি।
২। শাক্ত গান কাকে বলে?
শক্তি অর্থাৎ উমা-পার্বতী দুর্গা-কালিকাকে কেন্দ্র করে যে গান রচিত হয়, তাকে শাক্ত গান বলে।
৩। শাক্ত গানকে সেকালে কী বলা হত?
শাক্ত গানকে সেকালে ‘মালসী’ বলা হত।
৪। শাক্ত গানকে ‘মালসী’ বলে অভিহিত করার কারণ কী?
শাক্তগানগুলি ‘মালবশ্রী’ রাগে গাওয়া হত বলে এই নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
৫। আদ্যাশক্তির কথা কোন্ বেদে পাওয়া যায়?
আদ্যাশক্তির কথা ঋকবেদের দেবীসূক্তে পাওয়া যায়।
৬। শাক্ত পদের বিশিষ্টতা কী?
শাক্ত পদগুলিতে গানের সুর ছাড়া বিশুদ্ধ সৌন্দর্যবোধজাত কাব্যলক্ষণ তেমন নেই।
৭। রামপ্রসাদ সেনের জন্মস্থান কোথায় ?
অষ্টাদশ শতাব্দীর শাক্তপদ রচয়িতা রামপ্রসাদ সেন ১৭২০-২১ খ্রিস্টাব্দে হালিশহরে জন্মগ্রহণ করেন।
৮। রামপ্রসাদ কলকাতার কোথায় কী করতেন?
রামপ্রসাদ সেন কলকাতার কোনো ধনাঢ্য জমিদারের বাড়িতে মুহুরিগিরি করতেন।
৯। “আমায় দে মা তবিলদারী” গান লেখার পর রামপ্রসাদের জীবনে কী ঘটনা ঘটেছিল?
“আমায় দে মা তবিলদারী” গানটি লেখার পর রামপ্রসাদ ঊর্ধ্বতন কর্মচারীর বিরাগভাজন হন, তবে সহৃদয় জমিদারের কাছ থেকে অব্যাহতি দিয়ে মাসোহারার ব্যবস্থা করেছিলেন।
১০। রামপ্রসাদ সেনের বিশেষত্ব কী ছিল?
রামপ্রসাদ সেন একাধারে সাধক, কবি ও গায়ক ছিলেন।
১১। ‘প্রসাদী সুর’ কী?
রামপ্রসাদ সেন নিজের গানে যে সাদামাটা সুর দিতেন তা ‘প্রসাদী সুর’ নামে প্রচলিত।
১২। দ্বিজ রামপ্রসাদের গান কাদের মুখে শোনা যেত?
দ্বিজ রামপ্রসাদের গান পূর্ববঙ্গের মাঝিমাল্লাদের মুখে শোনা যেত।
১৩। রামপ্রসাদের দু-খানি গ্রন্থের নাম লেখো।
রামপ্রসাদের কালীকীর্তন ও কৃষ্ণকীর্তন নামে দু-খানি গ্রন্থ রয়েছে।
১৪। কমলাকান্ত রচিত তন্ত্রসাধনার গ্রন্থটির নাম কী?
কমলাকান্ত রচিত তন্ত্রসাধনার প্রন্থটির নাম হল ‘সাধক-রঞ্জন’।
১৫। ‘সকলি তোমারি ইচ্ছা, ইচ্ছাময়ী তারা তুমি’ – কার গান?
দেওয়ান রামদুলাল নন্দী গানটির রচয়িতা।
১। অষ্টাদশ শতাব্দীর যুগবৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে রামপ্রসাদ সেনের কাব্যচর্চার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
৫ (২০১৪)
বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অবক্ষয়ের সূচনা ঘটে অষ্টাদশ শতাব্দীতে। শতাব্দীর শুরুতে কেন্দ্রীয় মুঘল শাসন ভেঙে পড়ে এবং মধ্যভাগ থেকে শুরু হয় পাশ্চাত্য বণিক শাসনের সূত্রপাত। এই দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আঠারো শতকের বাঙালি জীবন আলোড়িত হয়েছিল।
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুরশিদকুলি খাঁ থেকে সিরাজ-উদ্-দৌলা পর্যন্ত স্বাধীন নবাবগণ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং বিশৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করতে পারেন নি। ফলে পশ্চিমবাংলা বর্গি উপদ্রবে ছিন্নবিচ্ছিন্ন, পূর্ববঙ্গ মগ জলদস্যুদের দ্বারা আক্রান্ত, ও দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচারে দেশজুড়ে মাৎস্যন্যায়।
এরপর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির করায়ত্ত হলে ভারতের পল্লিসমাজের সম্পূর্ণ ভাঙন শুরু হয়। ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের মন্বন্তরে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করলে চরম অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে জমিদারতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা এবং কলকাতার নাগরিক জীবনে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের মধ্য দিয়ে এদেশে মধ্যযুগের অবসান সূচিত হতে থাকে।
বাঙালি জীবনের এই অবরুদ্ধ পর্বে রামপ্রসাদের আবির্ভাব ও তাঁর রচিত ‘শাক্তগীতি’ কিছু পরিমাণে মুক্ত বাতাবরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল। শাক্ত পদাবলি হল কালিকা-উমা পার্বতীকে কেন্দ্র করে রচিত গান; যা বাৎসল্যকে আশ্রয় করে অভিব্যক্ত। রামপ্রসাদ ‘কালীকীর্তন’ ও ‘কৃষ্ণকীর্তন’ নামে দুখানি কাব্য লিখেছিলেন, তবে এতে তাঁর প্রতিভার বিকাশ ঘটে নি। তার যা কিছু খ্যাতি, তা তাঁর শাক্ত গানের ওপরই নির্ভর করে রয়েছে।
রামপ্রসাদের পদাবলির সংখ্যা প্রায় তিনশো। তার মধ্যে একটি উমা বিষয়ক (আগমনী ও বিজয়া), আর একটি সাধন বিষয়ক (তন্ত্রোক্ত সাধনা), অপরটি হল দেবীর বিরাট স্বরূপবিষয়ক এবং শেষটি হল তত্ত্বদর্শন ও নীতি বিষয়ক।
রামপ্রসাদের পদ প্রবাদবাক্যের মতো বাঙালির মুখেমুখে ছড়িয়ে রয়েছে। যেমন –
মন-গরীবের কি দোষ আছে
তুমি বাজিকরের মেয়ে শ্যামা,
যেমন নাচাও তেমনি নাচে।
বা,
বল মা আমি দাঁড়াই কোথা
আমার কেউ নাই শংকরী হেথা।
কিংবা,
আমি কি দুঃখেরে ডরাই।
ভবে দাও মা দুঃখ আর কত চাই।।
অথবা,
মন রে কৃষি কাজ জানো না।
এমন মানব জমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলত সোনা।।
কবির পদ আশাহীন মানুষের সান্ত্বনাস্থল; বাস্তব দুঃখের একমাত্র প্রতিষেধক। কয়েকশো বছর আগে লোকান্তরিত রামপ্রসাদ আজও প্রবাদবাক্যের মতো জীবিত। তার গান উদার আকাশের মতো বিশাল, বাঙালির হৃদয়ে তাঁর স্থান চিরদিন অক্ষয় হয়ে থাকবে।