শিকার – সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

শিকার – সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

রচয়িতা জীবনানন্দ দাশ
কি ধরনের রচনা কবিতা
অন্তর্ভুক্ত দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
পাঠ্য বই সাহিত্যচর্চা
শিকার – সাহিত্যচর্চা

শিকার -দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা (সাহিত্যচর্চা)


১.’এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল !’ — কে অপেক্ষা করছিল ? তার পরিণতি কী হয়েছিল ?

প্রশ্নের মান ১+৪
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৬

রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘শিকার’কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশে সুন্দর বাদামী হরিণটি ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল।

চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে হরিণটি সারারাত সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ছুটে বেড়িয়েছে।জীবনের প্রতি আসক্তি ও বাঁচার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে সে সংগ্রাম করেছে।শেষ পর্যন্ত সংগ্রামে জয়লাভ করে ভোরের আলোয় সে বেরিয়ে এসেছে। নদীর শীতল জলে নিজেকে ভাসিয়ে দেয় সারা রাতের ক্লান্তি, অবসাদ নিরসনের জন্য। সে আবার নিজেকে সৌন্দর্যে ভরিয়ে তুলতে চায়। তার মধ্যে প্রেমজনিত আবেগ, ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা, বাঁচার প্রচণ্ড ইচ্ছা যখন প্রবল থেকে প্রবলতর ঠিক তখনই আচমকা ঘটে যায় অঘটন।

হিংস্র জন্তু চিতাবাঘিনীর আক্রমণ থেকে হরিণটি নিজেকে বাঁচালেও মানুষের হাত থেকে সে রেহাই পেলনা। মানুষের লোভ লালসার শিকার হয়ে তাকে মরতেই হল। বন্যেরা বনে সুন্দর হলেও যন্ত্র শক্তিতে বলীয়ান মানুষ অসহায় জীবনকে নির্মমভাবে ধ্বংস করছে। তাদের লোভের আগুনে ধ্বংস হয় কত নিষ্পাপ প্রাণ, নির্মল স্বপ্ন, বেঁচে থাকার ন্যূনতম ইচ্ছা।

এভাবেই যন্ত্র শক্তির সাহায্যে উন্মত্ত মানুষ প্রকৃতির বুক চিরে উল্লাসের খেলায় মাতোয়ারা। অসহায়, দুর্বল প্রাণ কাঁদলেও লোভী, লালসাতুর মানুষ ক্ষমতা লোভে নির্বিকার। হরিণের মৃত্যু কবিতার শুভবোধ ও সমগ্ৰ আশাবাদের পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে।


২. ‘শিকার’কবিতায় ভোরের পরিবেশ যেভাবে চিত্রিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখ।সেই পরিবেশ কোন ঘটনায় করুণ হয়ে উঠল ?

প্রশ্নের মান ৩+২
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৮

রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘শিকার’কবিতায় একটি বাদামী হরিণের হত্যার পটভূমিতে ভোরের বৈপরীত্যময় অসাধারণ রূপকে তুলে ধরেছেন। আলোচ্য কবিতায় ‘ভোর’শব্দ প্রয়োগে কবি সচেতন দুটি চিত্রকল্প ভিন্ন ভাবে প্রয়োগ করেছেন।

প্রথম পর্যায়ে, ভোরের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রকৃতির মাধুর্যময় ছবি। নীল আকাশ, সবুজ বনানী যেন ভোরের আলো মেখে গতিশীলতার দিকে এগিয়ে চলে। নানা উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহার করে কবি ভোরের সজীবতাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। ভোরের আকাশের রঙ ঘাস ফড়িঙের দেহের মত কোমল নীল। চারিদিকে পেয়ারা আর নোনার গাছ টিয়ার পালকের মত সবুজ। একটি তারা আকাশে রয়েছে বাসর ঘরে জেগে থাকা কনে বউয়ের মত একা। অথবা প্রাচীন মিশরের মানুষী তার বক্ষস্থলের একটি মুক্তা কবির নীল মদের গ্লাসে রেখেছিল এ তেমনই একা। হিমের রাতে শরীর গরম করার জন্য দেশোয়ালিরা সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলে ছিল।ভোরের সূর্যের আলোয় মোরগ ফুলের মত সেই লাল আগুন আর কুসুমের মত নেই, রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মত ফেকাসে হয়ে গেছে।সকালের আলোয় শিশিরে ভেজা বন ও আকাশ যেন ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মত ঝিলমিল করছে।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, ভোরের আলোয় প্রকৃতি পুঞ্জের শান্ত নিটোল সৌন্দর্যের মাঝে একটি বাদামী রঙের সুন্দর হরিণ বিনিদ্র নিশি যাপনের পর বন থেকে নেমে এসেছে নদীর ধারে। কচি বাতাবি লেবুর মত সবুজ সুগন্ধি ঘাস খাওয়ার পর সে নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ঘুম হীন ক্লান্ত অবশ শরীরকে স্রোতে ডুবিয়ে দিয়ে প্রাণচঞ্চল হতে চেয়েছিল।নতুন করে জেগে ওঠে উল্লাসে উজ্জ্বীবিত হয়ে সাহসে, সাধে, সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমকে দিতে চেয়েছিল।

ভোরের আলোয় অরণ্য প্রকৃতির শান্ত সুষমা মণ্ডিত সৌন্দর্য যখন নিটোল পরিপূর্ণতা বিরাজ করছে তখনই এক অদ্ভুত শব্দ হয়। তারপর দেখা যায় নদীর জল মচকা ফুলের পাপড়ির মত লাল হয়ে গেছে। অর্থাৎ শিকারীর বন্দুকের গুলিতে সুন্দর বাদামী হরিণটি প্রাণ হারায়। হরিণের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে যে নৃশংস দৃশ্য তৈরি হয় তার পটভূমিতে প্রকৃতির এই নির্মল ছবি যেন সেই নৃশংসতাকেই নির্মম করে তোলে। প্রকৃতির এরকম রূপ মানুষের হৃদয়হীনতার স্বরূপকে তুলে ধরতে সাহায্য করে। হরিণের মৃত্যুতেই ভোরের মায়াময় পরিবেশ করুন হয়ে ওঠে।


৩. ‘এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে’ — সেই ভোরের বর্ণনা দাও। ‘সে’ভোরের আলোয় নেমে আসার পর কী কী ঘটল, লেখ।

প্রশ্নের মান ৩+২ 
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০২০

রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘শিকার’ কবিতায় একটি বাদামী হরিণের হত্যার পটভূমিতে ভোরের বৈপরীত্যময় অসাধারণ রূপকে তুলে ধরেছেন। আলোচ্য কবিতায় ‘ভোর’ শব্দ প্রয়োগে কবি সচেতন দুটি চিত্রকল্প ভিন্ন ভাবে প্রয়োগ করেছেন।

প্রথম পর্যায়ে, ভোরের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রকৃতির মাধুর্যময় ছবি। নীল আকাশ, সবুজ বনানী যেন ভোরের আলো মেখে গতিশীলতার দিকে এগিয়ে চলে। নানা উপমা ও চিত্রকল্প ব্যবহার করে কবি ভোরের সজীবতাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন। ভোরের আকাশের রঙ ঘাস ফড়িঙের দেহের মত কোমল নীল। চারিদিকে পেয়ারা আর নোনার গাছ টিয়ার পালকের মত সবুজ। একটি তারা আকাশে রয়েছে বাসর ঘরে জেগে থাকা কনে বউয়ের মত একা। অথবা প্রাচীন মিশরের মানুষী তার বক্ষস্থলের একটি মুক্তা কবির নীল মদের গ্লাসে রেখেছিল এ তেমনই একা। হিমের রাতে শরীর গরম করার জন্য দেশোয়ালিরা সারারাত মাঠে আগুন জ্বেলে ছিল। ভোরের সূর্যের আলোয় মোরগ ফুলের মত সেই লাল আগুন আর কুসুমের মত নেই, রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মত ফেকাসে হয়ে গেছে। সকালের আলোয় শিশিরে ভেজা বন ও আকাশ যেন ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মত ঝিলমিল করছে।

দ্বিতীয়পর্যায়েভোর নিয়ে আসে মর্মান্তিক এক প্রতিচ্ছবি। মানব সভ্যতার চরম দুর্দমনীয় লোভের শিকার হয় একটি সুন্দর বাদামী হরিণ — এই ভোরের পটভূমিকায়।

ভোরের আলোয় প্রকৃতি পুঞ্জের শান্ত নিটোল সৌন্দর্যের মাঝে একটি বাদামী রঙের সুন্দর হরিণ বিনিদ্র নিশি যাপনের পর বন থেকে নেমে এসেছে নদীর ধারে। কচি বাতাবি লেবুর মত সবুজ সুগন্ধি ঘাস খাওয়ার পর সে নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। ঘুম হীন ক্লান্ত অবশ শরীরকে স্রোতে ডুবিয়ে দিয়ে প্রাণচঞ্চল হতে চেয়েছিল। নতুন করে জেগে ওঠে উল্লাসে উজ্জ্বীবিত হয়ে সাহসে, সাধে, সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমকে দিতে চেয়েছিল।এরপরই এক অদ্ভুত শব্দ হয়। তারপর দেখা যায় নদীর জল মচকা ফুলের পাপড়ির মত লাল হয়ে গেছে। অর্থাৎ শিকারীর বন্দুকের গুলিতে সুন্দর বাদামী হরিণটি প্রাণ হারায়।


৪. ‘আগুন জ্বলল আবার’ – ‘আবার’শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী ?আবার আগুন জ্বলল কেন ?এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত দেয় ?

প্রশ্নের মান ১+২+২
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা আসেনি

রবীন্দ্রোত্তরকালেরশ্রেষ্ঠকবিজীবনানন্দদাশের ‘শিকার’কবিতায় আগুন জ্বালার প্রসঙ্গ দুবার এসেছে। প্রথম বার আগুন জ্বেলে ছিল দেদেশোয়ালীরা শীতের রাতে শরীরকে উত্তপ্ত করার জন্য। কিন্তু দ্বিতীয় বার আগুন জ্বালানো হয়েছে সম্পূর্ণ অন্য পটভূমিকায়নিহত হরিণের মাংস রান্নার জন্য। ‘আবার’শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, এই বিভাজনকে স্পষ্ট করার জন্য।

আলোচ্য কবিতার শেষাংশে দেখা যায় কয়েকজন সভ্য বন্দুকবাজ অরণ্যে গিয়েছিল শিকারের উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে সুন্দরবাদামীহরিণ সারারাত চিতাবাঘিনীরহাতথেকেনিজেকে বাঁচিয়ে ভোরের আলোয় নদীর জলে ক্লান্ত শরীরটাকে ভাসিয়ে দিয়েছিল আরাম পাওয়ার জন্য। বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর হরিণটি নিজের রূপে হরিণীর পর হরিণীকে চমকে দেওয়ার জন্য অস্থির হয়েছিল। এমন সময় সেই স্বপ্নে আঘাত আসে শিকারীদের ছোঁড়া অব্যর্থ গুলিতে। নিস্তেজ হয়ে নদীর জলে লুটিয়ে পড়ে হরিণটি। মাংসলোলুপ শিকারীর দল রসনা পরিতৃপ্তির নিরসনে দ্বিতীয় বার আগুন জ্বালিয়ে।সেই আগুনেই তৈরি হল উষ্ণ লাল হরিণের মাংস।

হিংস্র জন্তু চিতা বাঘিনীর আক্রমণ থেকে হরিণটি নিজেকে বাঁচালেও মানুষের হাত থেকে সে রেহাই পেল না।মানুষের লোভ লালসার শিকার হয়ে তাকেমরতে ইহল।বন্যেরা বনেসুন্দর হলেওযন্ত্রশক্তিতেবলীয়ানমানুষঅসহায়জীবনকেনির্মমভাবেধ্বংসকরছে।তাদেরলোভেরআগুনেধ্বংসহয়কতনিষ্পাপপ্রাণ,নির্মলস্বপ্ন,বেঁচেথাকারন্যূনতমইচ্ছা। আলোচ্য অংশে কবি এই চরম সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন।

Leave a Comment