মহুয়ার দেশ – সাহিত্যচর্চা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
রচয়িতা | সমর সেন |
কি ধরনের রচনা | কবিতা |
অন্তর্ভুক্ত | দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা |
পাঠ্য বই | সাহিত্যচর্চা |
মহুয়ার দেশ – সাহিত্যচর্চা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
১. ‘ঘুমহীন তাদের চোখে হানা দেয় / কীসের ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন।’ — কাদের কথা বলা হয়েছে ? তাদের ঘুমহীন চোখে ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন হানা দেয় কেন ?
প্রশ্নের মান | ১+৪ |
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা | ২০১৫ |
নাগরিক কবি সমর সেন তাঁর ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’কবিতার আলোচ্য অংশে মহুয়ার দেশের প্রকৃতির বুকে মহুয়ার গন্ধে পরিপৃক্ত, সহজ সরল জীবনধারণে অভ্যস্থ মানুষ, যারা পুঁজিপতিদের শোষণ শাসনে যন্ত্রণাকাতর হয়ে কয়লাখনির শ্রমিকে পরিণত, তাদের কথাই বুঝিয়েছেন।
সাঁওতাল পরগনার জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে মাটির নীচে থাকা খনিজ সম্পদের (কয়লা) মালিক হয়ে পুঁজিপতিরা ঐ অঞ্চলের মানুষদের দিনমজুর হিসেবে কাজ করাতে থাকে। দিনরাত তারা অনবরত কাজ করে চলে। তাই কর্ম ক্লান্তি জনিত স্ফূর্তিহীনতা, নিস্তেজ নিরুদ্যমযুক্ত অবসাদ তাদের চোখের ঘুম কেড়ে নেয়। শিশির ভেজা সবুজ সকালে কবি তাদের প্রত্যক্ষ করেছেন ধুলোর কলঙ্ক মাখা অবসন্ন অবস্থায়।
পুঁজিপতি শ্রেনির আগ্রাসনের শিকার হয়ে সাঁওতাল পরগনার মেঘ মদির মহুয়ার দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছেদ পড়ে। উদার প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও শ্যামলিমায়, দেবদারুর দীর্ঘ রহস্যময় ছায়াতলে থাকা মানুষ বাস্তবের রূঢ় আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের ঘুমহীন চোখে হানা দেয় ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্ন আসলে জঙ্গল – পাহাড় – শালবনে তাদের চিরাচরিত অধিকার হারানোর দুঃস্বপ্ন। সেই দুঃস্বপ্ন ক্লান্ত, কারণপুঁজিপতিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত আন্দোলন যে — ‘জয়হীন চেষ্টার সঙ্গীত, আশাহীন কর্মের উদ্যম’ — ইতিহাস বারবার তার সাক্ষ্য দিয়েছে।
২. ‘আমার ক্লান্তির উপরে ঝরুক মহুয়া ফুল, / নামুক মহুয়ার গন্ধ।’ — ‘আমার’বলতে কার কথা বলা হয়েছে ?এমন কামনার কারণ কী ?
প্রশ্নের মান | ১+৪ |
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা | ২০১৭ |
কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতা থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশে ‘আমার’বলতে কবি সমর্থন সেনতাঁর নিজের কথাই বুঝিয়েছেন।
অস্তগামী স্তিমিত সূর্য জলস্রোতে গলিত সোনার মতো উজ্জ্বল আলোর স্তম্ভ এঁকে দেয়, যা স্তব্ধতার নামান্তর। এর মধ্যে যে মায়াময় আবেশ আছে তা যেন হঠাৎই ছিন্ন হয়ে যায় নাগরিক পরিবেশের প্রতিকূলতায়। এই অসুস্থ নাগরিক পরিবেশে কবির জীবন প্রতি মুহূর্তে গ্লাণিময় হয়ে উঠেছে। ধোঁয়ার বঙ্কিম (কুটিল)নিঃশ্বাস যেনশীতের দুঃস্বপ্নের মতো ঘুরেফিরে আসে।যা প্রকৃতির উজ্জ্বলতাকে ঢেকে দেয়, ফুটে ওঠে নগর জীবনের বিবর্ণ, ক্লান্তিকর ভয়াবহ এক চেহারা। —
‘কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতোআর কতদিন !’
নগর জীবনের বিষাক্ত পরিবেশে এভাবেই খণ্ডিত হয় সৌন্দর্যের বাতাবরণ।
এই অবস্থায় কবির চেতনায় আসে অনেক দূরের সাঁওতাল পরগনার গ্রামীণ পরিবেশ, যা কবির কাছে মেঘ মদির মহুয়ার দেশ।সেখানে সারাক্ষণ ছায়া ফেলে দেবদারুর দীর্ঘ রহস্য। আর দূরে শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন, যা রাতের নির্জন নিঃসঙ্গতাকে আলোড়িত করে। সেই নির্মল প্রকৃতির সান্নিধ্যে, মহুয়া ফুলের গন্ধে বিভোর হয়ে কবি নাগরিক জীবনের অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে চান। তাই কবির একান্ত প্রার্থনা —
‘আমার ক্লান্তির উপর ঝরুক মহুয়া ফুল, নামুক মহুয়ার গন্ধ’।
৩. ‘অবসন্ন মানুষের শরীরে দেখি ধুলোর কলঙ্ক’ — এখানে কোন মানুষদের কথা বলা হয়েছে ? তাঁরা অবসন্ন কেন ?’ধুলোর কলঙ্ক’বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?
প্রশ্নের মান | ১+২+২ |
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা | ২০২০ |
নাগরিক কবি সমর সেন তাঁর ‘কয়েকটি কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘মহুয়ার দেশ’ কবিতায় শিশিরস্নাত সবুজ সকালে মানুষকে দেখেছেন অবসন্ন অবস্থায়। অর্থাৎ অতিশয় ক্লান্তি জনিত স্ফূর্তিহীনতা, নিস্তেজ নিরুদ্যমযুক্ত অবসাদগ্ৰস্থ অবস্থা।
সাঁওতাল পরগনার জঙ্গল ও পাহাড় ঘেরা অঞ্চলে পুঁজিপতিরা মাটির থাকা খনিজ সম্পদ (কয়লা) কব্জা করতে চাইলে ঐ অঞ্চলের মানুষেরা ক্রমে শ্রমিক ও দিনমজুরে পরিণত হয়। মূলত তারা পুঁজিপতি শ্রেনির আগ্রাসনের শিকার হয়ে পড়ে। তাই তাদের চিরাচরিত জীবনযাত্রায় স্ফূর্তিহীনতা ও অবসাদ লক্ষ্য করেন কবি। সারা রাতের কাজে তাদের ঘুমহীন চোখে হানা দেয় ক্লান্ত দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্ন আসলে জঙ্গল – পাহাড় – শালবনে তাদের চিরাচরিত অধিকার হারানোর দুঃস্বপ্ন। সেই দুঃস্বপ্ন ক্লান্ত, কারণ পুঁজিপতিদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের চিরাচরিত আন্দোলন যে — ‘জয়হীন চেষ্টার সঙ্গীত, আশাহীন কর্মের উদ্যম’ — ইতিহাস বারবার তার সাক্ষ্য দিয়েছে।
স্বপ্নময় মেঘ মদির মহুয়ার দেশ এখন কবির কাছে অসহ্য। সেখানে নিবিড় অন্ধকারে কবি মাঝে মাঝে শোনেন মহুয়া বনের ধারে কয়লাখনির গভীর বিশাল শব্দ। এই শব্দের উৎস ডিনামাইট বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের ফলে সেখানকার ধুলো শিশির ভেজা সবুজ সকালে আস্তরণ ফেলে, যা প্রত্যক্ষ করেন কবি অবসন্ন মানুষের শরীরে ধুলোর কলঙ্ক রূপে। কবির বিশ্বাস এই ধুলোর কলঙ্ক কোনোদিন হয়তো ঝড়ের দ্যোতক হয়ে মেঘ মদির মহুয়ার দেশে আনবে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বিনাশের কালবৈশাখী। যার ফলশ্রুতিতে আবার মহুয়ার দেশে জন্ম নেবে নিষ্কলঙ্ক আর এক নতুন মহুয়ার দেশ।