সুভাষ মুখোপাধ্যায়

বাঙালি কবি ও গদ্যকার ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। সুভাষ মুখোপাধ্যায় জীবনী আলোচনা করা হল।

জন্ম১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৯ খ্রি
পিতামাতা ক্ষিতিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, যামিনী দেবী
পেশা সাহিত্যিক
বিখ্যাত কাব্যগ্ৰন্থ পদাতিক
উপাধি পদাতিক কবি
মৃত্যু৮ জুলাই, ২০০৩ সাল

সুভাষ মুখোপাধ্যায় জীবনী

ভূমিকা :- বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য বাঙালি কবি ও গদ্যকার ছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায়। কবিতা তার প্রধান সাহিত্যক্ষেত্র হলেও ছড়া, ভ্রমণসাহিত্য, অর্থনীতিমূলক রচনা, বিদেশি গ্রন্থের অনুবাদ, কবিতা সম্পর্কিত আলোচনা, উপন্যাস, জীবনী, শিশু ও কিশোর সাহিত্য সকল প্রকার রচনাতেই তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

জন্ম ও পিতৃপরিচয় :-

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে মামার বাড়িতে সুভাষ মুখোপাধ্যায় জন্মগ্ৰহণ করেন। তার পিতা ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও মাতা যামিনী দেবী। পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের কুষ্টিয়ায়।

শিক্ষা :-

ভবানীপুর মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করার পর ১৯৪১ সালে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন। পরে আশুতোষ কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নে প্রয়াসী হন। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ফলে পঠনপাঠন বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। 

কর্মজীবন :-

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করার পর তিনি পার্টির মুখপত্র ‘জনযুদ্ধ’ -এর সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘দৈনিক স্বাধীনতা’ পত্রিকায় সাংবাদিকতার কাজ নেন। দু-বছর পর পার্টি বেআইনি ঘোষিত হলে তাকে বন্দি করা হয় এবং পরে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ‘পরিচয়’ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বজবজে চটকল মজদুর সংগঠনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। স্বাধীন ভারতে আইন অমান্য আন্দোলন করে গ্রেফতার বরণ করেন। পার্টির কাজের সঙ্গে মনের মিল না হওয়ায় ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে সদস্যপদ ত্যাগ করেন।

সাহিত্য সাধনা :-

মাটি আর মানুষের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য, বাস্তব অভিজ্ঞতা কবিকে দিয়েছে মানুষের সঠিক জীবনচিত্র অঙ্কনের বিশেষ দক্ষতা। যেজন্য তাঁর কলমে মানুষের নিখুঁত ছবি উঠে এসেছে তাঁর স্বকীয় বিশেষত্বের মুনশিয়ানায়। চল্লিশ দশকের একেবারে গোড়ায় কবির যখন একুশ বছর বয়স, তখন প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’। কাব্যরচনা ছাড়া উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা, অনুবাদও করেছেন। 

কাব্যগ্ৰন্থ :-

তাঁর প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল পদাতিক (১৯৪০), অগ্নিকোণ (১৯৪৮), চিরকুট (১৯৫০), ফুল ফুটুক (১৯৫৭), যত দূরেই যাই (১৯৬২), কাল মধুমাস (১৯৬৬), এই ভাই (১৯৭১), ছেলে গেছে বনে (১৯৭২), একটু পা চালিয়ে ভাই (১৯৭৯), জল সইতে (১৯৮১), চইচই চইচই (১৯৮৩), বাঘ ডেকেছিল (১৯৮৫), যা রে কাগজের নৌকা (১৯৮৯), ধর্মের কল (১৯৯১)।

উপন্যাস :-

উপন্যাস গ্রন্থ হল ‘হাংরাস’, ‘কে কোথায় যায়’, ‘অন্তরীপ’, ‘কাঁচাপাকা’, ‘কমরেড কথা কও’। 

পুরস্কার ও সম্মাননা :-

প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ সুভাষ মুখোপাধ্যায় নানাভাবে সম্মানিত ও পুরষ্কৃত হয়েছেন। আনন্দ পুরস্কার, বিশ্বভারতী প্রদত্ত দেশিকোত্তম, সোভিয়েত দেশ-নেহরু পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ, সাহিত্য আকাদেমি, পদ্মশ্রী প্রভৃতি উপাধি ও পুরস্কার লাভ করেন। তা ছাড়া বহু আন্তর্জাতিক সমাবেশে যোগ দেন।

মৃত্যু :-

৮ জুলাই ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে কলকাতায় তার মৃত্যু হয়। 

উপসংহার :-

পরিণত বয়সে গায়ে খদ্দরের পাঞ্জাবি, পরনে সাদা পায়জামা, মাথাভর্তি ঘন কোঁকড়ানো চুল, বুদ্ধিদীপ্ত ঝকঝকে চোখ, চোখে চশমা, বামে চশমার নিচে বড় একটা আঁচিল  – কলকাতার প্রতিবেশে এরকম একটি প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

পদাতিক কবি কাকে বলা হয়?

সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

সুভাষ মুখোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কি?

পদাতিক।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের রিপোর্টাজ রচনার নাম কি?

আমার বাংলা।

Leave a Comment