আমার বাংলা -সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

আমার বাংলাসুভাষ মুখোপাধ্যায়
আমার বাংলাদ্বাদশ শ্রেণী বাংলা

Table of Contents

আমার বাংলা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – সাহিত্যচর্চা


গারো পাহাড়ের নীচে – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – আমার বাংলা

১.’কিন্তু হাতি বেগার আর চলল না’ – হাতি বেগার আইন কী ? তা আর চলল না কেন ? ৩+২  (২০১৬) অথবা, ‘তাই প্রজারা বিদ্রোহী হয়ে উঠল’ – প্রজারাবিদ্রোহীহয়েউঠলকেন ? কে তাদের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ? ৪+১

সাংবাদিক রূপে পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘আমার বাংলা’গ্ৰন্থের অন্তর্গত ‘গারো পাহাড়ের নীচে’রচনাংশ থেকে গৃহীত আলোচ্য অংশে সামন্ততান্ত্রিক জমিদারি শোষণের এক নির্মম চিত্র ফুটে উঠেছে। গারো পাহাড়ের পাদদেশে সুসং পরগনার হাজংরা চাষাবাদে বেশ পটু ছিল। কিন্তু তাদের উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশ জমিদারের পাইক-বরকন্দাজরা নানা অছিলায় নিয়ে চলে যেত।ফলে প্রজারা হয়ে পড়ত নিঃস্ব।

পঞ্চাশ-ষাট বছর আগে এই অঞ্চলে একটা আইন ছিল, যার নাম হাতি বেগার। জমিদারদের হাতি শিকার করার বেজায় শখ। এই শখ মেটাতে জমিদার পাহাড়ি বন্য এলাকায় মাচা বেঁধে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে বেশ খোশ মেজাজে থাকতেন। আর গ্রামের অসহায় সাধারণ প্রজারা খাবার চাল-চিড়ে বেঁধে সেখানে আসতে বাধ্য হত শুধুমাত্র জমিদারের শখ পূরণ করার জন্য। জমিদার মাচায় বেশ নিরাপদে থাকত, আর যে জঙ্গলে হাতি আছে বা যেখানে জমিদার হাতি শিকারে ব্যস্ত সেই জঙ্গল বেড় দিয়ে দাঁড়াত প্রজারা। ছেলে-বুড়ো কাউকেই রেহাই দেওয়া হত না। এই নির্মম প্রথাইহল হাতি বেগার আইন।

গভীর জঙ্গলে জীবন বিপন্ন করে সমানে দাঁড়িয়ে থাকার ফলে সাপের কামড়ে কিংবা বাঘের আক্রমণে বহু মানুষ মারা যেত।জমিদারের হাতি শিকারের শখ পূরণ করতে গিয়ে নিরিহ অসহায় প্রজারা অকালে প্রাণ দিত।এই নিষ্ঠুর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রজারা একসময় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। চাকলায় চাকলায় মিটিং শুরু হয়, কামারশালায় তৈরি হয় মারাত্মক সব অস্ত্র-শস্ত্র। শেষ পর্যন্ত জমিদারের বাহিনীর কাছে প্রজারা পরাজিত হলেও হাতি বেগার আইন বন্ধ হয়ে যায়।

প্রজাদের প্রতি এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন গোরাচাঁদ মাস্টার।

২. ‘এত ফসল, এত প্রাচূর্য — তবু কিন্তু মানুষগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় জীবনে তাদের শান্তি নেই’ – মানুষগুলোর জীবন যাত্রার পরিচয় দাও। তাদের জীবনে শান্তি নেই কেন ? ৩+২  (২০২০)

সাংবাদিকরূপেপদাতিককবিসুভাষমুখোপাধ্যায়ের’আমারবাংলা’গ্ৰন্থেরঅন্তর্গত’গারোপাহাড়েরনীচে’রচনাংশে সুসং পরগনার প্রকৃতি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার কথা সহজ সরল ভাষায় রূপ পেয়েছে। লেখকের দরদী মন ঐ অঞ্চলের জনজাতির কথা বিবরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করেছে।

গারো পাহাড়ের নীচে সুসং পরগনায় বাস করে হাজং, গারো, কোচ, বানাই, ডালু, মার্গান প্রভৃতি নানা উপজাতির মানুষ।এখানকার প্রথম বাসিন্দা হাজংরা ছিল চাষাবাদে খুব দক্ষ। তাই গারোরা তাদের নাম দিয়েছিল হাজং অর্থাৎ চাষের পোকা। বুনো জন্তুদের ভয়ে তারা মাচার উপর ঘর বেঁধে পোষা হাঁস, মুরগিদের নিয়ে বাস করে। সেখানেই রান্না, খাওয়া, ঘুমানোর সব ব্যবস্থা থাকে।

চাষের সময় প্রত্যেক জনজাতির মানুষ হাল-বলদ নিয়ে চাষাবাদ করে। ধান কাটার সময় নারী-পুরুষ সকলেই কাস্তে হাতে মাঠে যায়। পিঠে আঁটি বাঁধা ধান নিয়ে ছোটো ছোটো ছেলের দল খামারে এসে জোটে। কিন্তু পরিশ্রম করে উৎপাদিত ফসলের বেশিরভাগ অংশই পাইক-বরকন্দাজরা এসে পাওনা-গণ্ডার নামে আত্মসাৎ করে নিয়ে যায়। খিটখিটে বুড়িরা শাপমুন্নি দিতে থাকে। জমিদারকে টঙ্ক দিতে গিয়ে চাষীরা ফকির হয়।

পঞ্চাশ-ষাটবছরআগেএইঅঞ্চলেএকটাআইনছিল,যারনামহাতিবেগার।জমিদারের শখ মেটাতে হাতি শিকারের সময় জঙ্গল ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হত গ্রামের অসংখ্য নিরিহ প্রজাদের। ছেলে হোক বুড়ো হোক কারোর মাপ নেই। ফলে তাদের কাউকে সাপের মুখে, কাউকে বাঘের আক্রমণে প্রাণ দিতে হত। গোরাচাঁদ মাস্টারের নেতৃত্বে প্রজাবিদ্রোহের ফলে হাতি বেগার আইন বন্ধ হলেও তাদের দুর্দশা ঘোচেনি।

গারোদের নিজস্ব ভাষা আছে। হাজং, ডালুদের ভাষা বাংলা হলেও তাদের উচ্চারণ একটু আলাদা। তারা ‘ত’কে ‘ট’আর ‘ট’কে ‘ত’বলে। আবার ‘ড’কে ‘দ’আর ‘দ’কে ‘ড’বলে। কানে অদ্ভুত ঠেকলেও এই জনজাতিদের নিজস্বতা ফুটে ওঠে তাদের ভাষা ব্যবহারে।

অনেক বছর আগে গারো পাহাড়ের নীচে বসবাসকারী অধিবাসীদের গোলাভরা ধান, মাঠ ভরা শস্য ছিল। গোয়ালে থাকত ৬০-৭০ টা গোরু, নর্দমায় দুধ ঢালাই যেত। তাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে কোনো অসুবিধাই হত না। কিন্তু জমিদারের নির্মম অত্যাচারে এখন তা কল্পনাতীত। এই কারণেই তাদের জীবনে শান্তি নেই।


ছাতির বদলে হাতি – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – আমার বাংলা

১. ‘এদিকে আর একরকমের প্রথা আছে — নানকার প্রথা।’ – নানকার প্রজাদের অবস্থা কেমন ছিল ? পরে তাদের অবস্থার কী পরিবর্তন হয়েছিল ? ৩+২ (২০১৫)অথবা,‘এদিকেআরএকরকমেরপ্রথাআছে–নানকারপ্রথা।’- নানকার প্রথা কী ? এই প্রথায় জমিদার কীভাবে হার মানে ?

বাস্তববাদী সমাজ সচেতন লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’গ্ৰন্থে সংকলিত ‘ছাতির বদলে হাতি’রচনায় নানকার প্রথার পরিচয় পাই।

ময়মনসিংহের নিকটতম গারো পাহাড় অঞ্চলে এক শ্রেণীর কৃষকদের নানকার বলা হয়েছে। এই কৃষক-প্রজাদেরজমিতে স্বত্ব বা অধিকার থাকত না। এমনকি জমির আম, কাঁঠালেও তাদের অধিকার ছিল না। স্বত্ব ভোগ করতে না পারলেও জমি জরিপের পর আড়াই টাকা পর্যন্ত খাজনা দিতে হত। খাজনা দিতে না পারলে তহশিলদার প্রজাদের কাছারিতে ধরে নিয়ে যেত, পিছমোড়া করে বেঁধে মারত, তারপর মালঘরে আটকে রাখত।

মহাজনরা কর্জা ধানের এক মনে দুই মন সুদ আদায় করত। আর তা দিতে না পারলে তাদের জমি নিলামে তুলে সব সম্পত্তি খাস করে নেওয়া হত। সব মিলিয়ে নানকার প্রজাদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।

গারো পাহাড় অঞ্চলে নোয়াপাড়া, দুমনাকুড়া, ঘোষপাড়া ও ভুবনকুড়ার বিরাট তল্লাটে কৃষক-প্রজারা একযোগে বিদ্রোহী হয়ে ওঠায় পরবর্তীতে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছিল। তারা জমিদারের খামারে চাষের ধান তোলেনি। পুলিশ, কাছারি প্রয়োগ করেও কিছু হয় নি। শেষ পর্যন্ত জমিদার প্রজাদের কাছে হার মেনেছে।

এখন বন্দরের ভদ্রলোকেরা প্রজাদের তুই-তোকারি করতে সাহস পায় না ‘আপনি’বলে সম্ভাষণ করে। প্রজারাও অনেক সভ্য হয়েছে। আগে বাপ-ছেলে একসাথে বসে মদ খেত, কিন্তু এখন তা সমাজের চোখে লজ্জার বিষয়।

যারা এত কষ্ট করে সবার মুখে অন্ন জোগায়, জমিদারের হাত থেকে বাংলার সমস্ত জমি তাদের হাতে দিয়ে, মহাজনের নিষ্ঠুর ঋণের বোঝা থেকে তাদের মুক্তি দিয়ে লেখক অবস্থা পরিবর্তনের সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

২. ‘তাতে চেংমানের চোখ কপালে উঠল।’ – চেংমান কে ? তার চোখ কপালে ওঠার কারণ কী ? ১+৪  (২০১৭) অথবা,’নতুন ছাতি মাথায় দিয়ে মহাফুর্তিতে বাড়ির দিকে সে চলল’-কার কথা বলা হয়েছে?সে নতুন ছাতি কীভাবে পেল? ১+৪ (২০১৯)

বাস্তববাদী সমাজসচেতন লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমারবাংলা’ গ্ৰন্থে সংকলিত’ ছাতির বদলে হাতি’ রচনার আলোচ্য অংশে দরিদ্র আদিবাসী গারো চাষী হলেন চেংমান।তিনি মহাজনের ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন।

হালুয়াঘাট বন্দরে বন্ধকী তেজারতির ব্যবসায় প্রসিদ্ধ ছিল মনমোহন মহাজনের নাম। সহজ সরল গারো চাষী চেংমান এই মহাজনের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। হালুয়াঘাট বন্দরে সওদা করতে এসে মুসলধারে বৃষ্টিতে আটকে গেলে মহাজনের দোকানের ঝাঁপির নিচে আশ্রয় নেয় সে। তার দুরবস্থা দেখে দরদ উথলে ওঠে মনমোহন মহাজনের। তিনি করুণার অবতার হয়ে খাস কলকাতা থেকে আনা আনকোরা নতুন একটি ছাতা তাকে দিয়ে দেন।

ঘটনার আকস্মিকতায় চেংমান হতচকিত হলে মনমোহন মহাজন তাকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, সুবিধা মতো পয়সা দিলেই হবে। সরল হৃদয় চেংমান অসহায়ের সহায় করুণাময়ের নাম জপ করতে করতে ইঁদুরকল বুঝতে না পেরে মহাফুর্তিতে নতুন ছাতি মাথায় বাড়ি চলে যান।

বারংবার প্রাপ্য অর্থ মেটাতে গেলে মহাজন আমল দেয় না। ক্রমে চেংমান ধারের কথা ভুলেই যায়। কিন্তু কয়েক বছর পর মনমোহন মহাজন তাকে ধরে প্রাপ্য অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। লাল খেরোয় বাঁধানো জাবদা খাতা বার করে যা পাওনা হিসাব দেখালো, তাতে চেংমানের চোখ কপালে উঠল। এই কবছরে চক্রবৃদ্ধি হারে ছাতির দাম বাবদ সুদ সমেত পাওনা হয়েছে হাজার খানিক টাকা, যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান। এইভাবে সরল সহজিয়া জীবনের অতি বিশ্বাসের মরণফাঁদ চেংমানের জীবনের সুখ স্বপ্নকে বিদ্ধস্ত ও সর্বস্বান্ত করেছিল।

৩. ‘ছিল জোতদার আর তালুকদারের নিরঙ্কুশ শাসন।” – শাসন সম্পর্কে লেখক কী জানিয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখ।৫  (২০১৮)

বাস্তববাদীসমাজসচেতনলেখকসুভাষমুখোপাধ্যায়রচিত’আমারবাংলা’গ্ৰন্থেসংকলিত’ছাতিরবদলেহাতি’রচনায় গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর মহাজন, জমিদার ও জোতদারদের শোষণের চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রথমেই দেখি গারো চাষী চেংমানকে ছাতা ধার দিয়ে মনমোহন মহাজন ক-বছরে চক্রবৃদ্ধি হারে ছাতারদামবাবদসুদসমেত হাজার খানেক টাকা দাবি করে, যা প্রায় একটা হাতির দামের সমান।

ডালুদের গ্রাম কুমার গাঁতির নিবেদন সরকারের মুদিখানায় দু-দশ বছর বাকিতে মশলাপাতি কেনার জন্য মহাজন কুটিশ্বর সাহা তার ছেষট্টি বিঘে জমি দেনার দায়ে কেড়ে নিয়েছেন। আবার এক মহাজন এক চাষীকে ধারে কোদাল দিয়ে পরে তার কাছ থেকে পনেরো বিঘে জমি মোচড় দিয়ে নিয়েছিল।

শুধুমাত্র মহাজনদের অত্যাচার নয়, গারো পাহাড়ের অধিবাসীদের ওপর জমিদার, জোতদারদেরও শোষণ ও অত্যাচার ছিল। চাষী তার জমির ধান জমিদারের খামারে তুলতে বাধ্য থাকত। জমিদারের পাওনা মিটিয়ে অবশিষ্ট ধান চাষীরা ঘরে নিয়ে যেতে পারত। চুক্তি ধান শোধ করার পর টাকায় এক মন হিসেবে কর্জার ধান দিয়ে চাষীকে ঋণ শোধ করতে হত। তাছাড়া আছে হাজার রকমের আবওয়াব অর্থাৎ অতিরিক্ত দেয় কর।

যে চাষী বুকের রক্ত জল করে এত কষ্টে ফসল ফলাল সবশেষে তাকে শুধু পালা হাতে করে ঘরে ফিরতে হতো।মহাজনেরা কর্জা ধানে এক মনে দুই মন সুদ আদায় করত।খাজনা দিতে না পারায় প্রজাদের কাছারিতে ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে মারা হত। মালঘরে আটকে রেখে নিলামে সব সম্পত্তি খাস করে নিত।


কলের কলকাতা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – আমার বাংলা

১.’হঠাৎ একদিন ক্ষেপে উঠল কলের কলকাতা।’কলকাতার ‘ক্ষেপে ওঠা’বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? কলকাতার ক্ষেপে ওঠার ফল কী হয়েছিল ? ২+৩  (২০১৭)

কলকাতার খেপে ওঠা‘ :- সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত ‘কলের কলকাতা’ রচনা থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর দুই এবং তিনের দশকে অসহযােগ আন্দোলন, আইন-অমান্য আন্দোলন, বিলিতি দ্রব্য বর্জন আন্দোলন-ইত্যাদি নানা স্বদেশি আন্দোলনে সমগ্র দেশ উত্তাল হয়েছিল। এই ‘কলকাতার ক্ষেপে ওঠা’ বলতে লেখক ভারতের এই স্বাধীনতা আন্দোলনে আপামর কলকাতাবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণকেই বুঝিয়েছেন।

খেপে ওঠা‘- ফল :- স্বাধীনতা আন্দোলনে শুধু কলকাতার রাজপথগুলিই নয়, শান্ত গলিগুলিও অশান্ত হয়ে ওঠে। কলকাতার সর্বত্র রাস্তার মােড়ে মােড়ে মিটিং চলতে থাকে। স্কুল কলেজে শুরু হয় পিকেটিং। ঘরে বসে না থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। এরপর সারা শহর জুড়ে আগুন জ্বলতে থাকে, আর সেই আগুনে বিলিতি কাপড় পােড়ানাে হতে থাকে। দলে দলে মানুষ পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বিলিতি কাপড় পােড়ানাের আহ্বান জানাতে থাকে। দু-পাশের বাড়ি থেকে তাদের উদ্দেশ্যে ছুড়ে দেওয়া হতে থাকে বিলিতি কাপড়। রােয়াকে বসে-থাকা বৃদ্ধের দল গল্পগুজবের সঙ্গে সঙ্গে তকলি ঘুরিয়ে সুতাে কেটে চলেন। খদ্দরের টুপি পরার হিড়িক লেগে যায়। যেখানে-সেখানে ধ্বনিত হতে থাকে বন্দেমাতরম ধ্বনি। লাল-পাগড়িপরা, ইংরেজ সরকারের পুলিশের সঙ্গে জনসাধারণের সংঘর্ষ বেধে যায়। কোথাও কোথাও চলে পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ। এসবই ছিল কলকাতার ক্ষেপে ওঠা’র ফলশ্রুতি।

২. ‘অমনি মনের মধ্যে গুনগুনিয়ে উঠল মার কাছে শেখা গান’ – মার কাছে শেখা গানটি কী ? কোন প্রসঙ্গে লেখক এই উক্তি করেছেন ? ১+৪   (২০১৯)

লেখকের শােনা গান :- ‘কলের কলকাতা’ রচনার লেখক সুভাষ মুখােপাধ্যায় ছেলেবেলায় তার মায়ের কাছ থেকে যে গানটি শুনেছিলেন সেটি হল—”ও তাের শিকল পরা ছল। শিকল পরে শিকলরে তুই করবি রে বিকল।”

প্রসঙ্গ :লেখকদের বাড়িওয়ালা রামদুলালবাবুর দাদার অনুরােধে লেখক একবার জেলে যান গ্রেফতার হওয়া তাঁদেরই বাড়িওয়ালা, কংগ্রেস কর্মী রামদুলালবাবুর সঙ্গে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে লেখক দেখেন, ভ্যানের কয়েদিদের সমবেত ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনিতে জেলখানা কাঁপছে। জেলখানায় ঢুকে একটু এগিয়ে বাঁ-দিকের শেষ ঘরের চেয়ারে বসে আছেন স্বয়ং সুভাষচন্দ্র বসু। সেই সময় বলেন লেখক আরও লক্ষ করেন, জেলের ভেতরে থাকা বন্দিরা জালের জানলায় জেল ওয়ার্ডারদের চোখ এড়িয়ে মাঝে মাঝে এসে ভিড় করছিল লেখকদের দেখতে। এদের মধ্যে একজন লেখককে তার বাড়ির নম্বর দিয়ে অনুরােধ করে বলেন লেখক যেন তার বৃদ্ধা মায়ের কাছে তার ভালাে থাকার সংবাদটুকু পৌঁছে দেন। জেলের দরজা পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে লেখক হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি ভাবতে থাকেন রাস্তায় রাস্তায় আন্দোলনরত মানুষগুলি জেলখানার অন্ধকার গুহায় দিন কাটানাের প্রতিদান পাবেন কি না। এসময় হঠাৎই লেখকের মনের মধ্যে গুনগুন করে ওঠে মায়ের কাছে শেখা সেই গান- “ও তাের শিকল পরা ছল। শিকল পরে শিকলরে তুই করবি রে বিকল।”


মেঘের গায়ে জেলখানাজেলখানা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – আমার বাংলা

১. ‘গাঁয়ের লোকে ঠাট্টা করে বলে — চোট্টা সাধুর ছেলে হবে নির্ঘাত বিশে ডাকাত।’ – সাধু কে ? ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’রচনাংশে সাধুর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখ ? ১+৪  (২০১৫)

বাস্তববাদীসমাজসচেতনলেখকসুভাষমুখোপাধ্যায়রচিত’আমারবাংলা’গ্ৰন্থেসংকলিত’মেঘের গায়ে জেলখানা’রচনা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটিতে বক্সা জেলে বন্দী জনৈক কয়েদি হল সাধু। আগে ছিল ছিঁচকে চোর, জেল থেকে পাকা সিঁধেল চোর হয়ে বেরিয়ে আসে সাদা গাঁজার কলকেতে চোখ রাঙানো সাধুচরণ।

পঞ্চাশ বছরের সাধুচরণের গায়ে মাংস একেবারেই নেই। তার বাড়ি জয়নগরের কাছে এক গ্রামে।ছেলে বেলায় বাবা মা মারা যায় তার। আত্মীয়দের বাড়িতে জায়গা হয়নি তার। তাই পেটের জ্বালায় সে ছিঁচকে চুরি করতে বাধ্য হয়। পরে হাতে নাতে ধরা পড়ে জেল হয় এবং জেল থেকে বেরোয় পাকা সিঁধেল চোর হয়ে। তার পর থেকে অনেক বার জেলে এসেছে সাধুচরণ।

এক সময় সংসার করার মন হওয়ায় সাধুচরণ বিয়ে করেছিল।চোরাই পয়সায় কিছু জায়গা জমিও কিনেছিল।তার একটা ছোট্ট ছেলেও আছে। কিন্তু  রোজ রাতের প্রহরে প্রহরে চৌকিদারের খবরদারি ইচ্ছা থাকলেও তাকে ভালো থাকতে দেয়নি। যেখানে যা কিছু হোক থানায় সাধুচরণের ডাক পড়ত। মোটা রুলের গুঁতো আর পকেটের পয়সা ঘুষ দিয়ে তবেই ছাড়া পেত।

সব কিছু বুঝে শুনে শেষ পর্যন্ত চুরি করে জেলের ভাত খাওয়াই ভালো বলে মনে করেছে সাধুচরণ।তবে পড়ে থাকা শুকনো জমি আর ছেলের জন্য তার মন কেমন করে।

২. ‘জেলখানাটা পাহাড়ের তিনতলা সমান একটা হাঁটুর ওপর’ – কোন জেলখানা ? সেখানে সাধারণ কয়েদিদের ওপর কীরকম অত্যাচার করা হত ?১+৪   (২০১৮)

বাস্তববাদী সমাজ সচেতন লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্ৰন্থে সংকলিত ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতাংশটিতে বক্সার জেলখানার কথা বলা হয়েছে।

উঁচু পাঁচিল তোলা বক্সার জেলখানা। আলো, হাওয়া বর্জিত আলাদা একটা জগৎ। না বাংলা, না হিন্দি ভাষায় কথা বলা মানুষ গুলো জানোয়ারের পালের মতো খোঁয়াড়ে ঠাসাঠাসি করে বেঁচে থাকে। সূর্য অস্ত যেতেই লক আপ।রাত ফর্সা হলে আবার খোলা হত। সার বেঁধে লাইনে দাঁড়ালে গুণতি হবে। জেলের জমাদারকে সেলাম জানাতে হবে। একটু এদিক ওদিক হলেই কয়েদিদের পিঠে পড়ত ডাণ্ডা কিংবা লোহার নাল মারা বুটের লাথি। কয়েদিদের কারো নামে নালিশ হলেই ডাক পড়ে কেসটেবিলে।কথায় কথায় ডিগ্রি বন্ধ, মার্কা কাটা, কম্বল ধোলাই কিংবা মাড়ভাত ইত্যাদি শাস্তির ব্যবস্থা ছিল।

ছোট্টো ছোট্টো নির্জন কুঠুরি (ডিগ্রি), চারিদিক বন্ধ, কারো মুখ দেখা যাবে না। এমনকি বন্ধ দরজার নিচে সরু ফাঁক দিয়ে খাবারের ঠাণ্ডা সানকি ছুঁড়ে দেওয়া হত কয়েদিদের কে।মাসের পর মাস এভাবেই কাটত তাদের জীবন। কখনো বা তাদের পায়ে পরিয়ে দেওয়া হত লোহার বেড়ি। বছরে তিন মাস সাজা মাপ করার যে নিয়ম তাকে বলে মার্কা।কর্তাদের মন জুগিয়ে চলতে না পারলে মার্কাও কাটা যেত।

জেলের সব কাজ করানো হয় কয়েদিদের দিয়ে। শুধু জুতো সেলাই নয়, হাড়ি মেথরের কাজ থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হত তাদের। দড়িচাল্লি, ধোবিচাল্লি, ঘনিকর, মিস্ত্রিঘর, ছাপাখানা, গোয়ালঘর, তরকারি বাগান ইত্যাদি বিভাগে গোলামের মতো কয়েদিদের কে বিনা মজুরিতে উদয়াস্ত খাটানো হত। বক্সা জেলের সাধারণ কয়েদিরা এই ভাবেই অত্যাচারিত হত।

৩. ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনা অবলম্বনে সাধুচরণ ও মুস্তফার জীবন কাহিনী বর্ণনা কর।৩+২  (২০২০)

বাস্তববাদী সমাজসচেতন লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘আমার বাংলা’ গ্ৰন্থে সংকলিত’ মেঘের গায়ে জেলখানা’ রচনায় বক্সা জেলে বন্দী জনৈক কয়েদি হল সাধু।আগে ছিল ছিঁচকে চোর, জেল থেকে পাকা সিঁধেল চোর হয়ে বেরিয়ে আসে সাদা গাঁজার কলকেতে চোখরাঙানো সাধু চরণ।

পঞ্চাশ বছরের সাধুচরণের গায়ে মাংস একেবারেই নেই। তার বাড়ি জয়নগরের কাছে এক গ্রামে।ছেলে বেলায় বাবা মা মারা যায় তার। আত্মীয়দের বাড়িতে জায়গা হয়নি তার।তাই পেটের জ্বালায় সে ছিঁচকে চুরি করতে বাধ্য হয়।পরে হাতেনাতে ধরা পড়ে জেল হয় এবং জেল থেকে বেরোয় পাকা সিঁধেল চোর হয়ে।তারপর থেকে অনেকবার জেলে এসেছে সাধুচরণ।

এক সময় সংসার করার মন হওয়ায় সাধুচরণ বিয়ে করেছিল। চোরাই পয়সায় কিছু জায়গা জমিও কিনেছিল। তার একটা ছোট্ট ছেলেও আছে। কিন্তু রোজ রাতের প্রহরে প্রহরে চৌকিদারের খবরদারি ইচ্ছা থাকলেও তাকে ভালো থাকতে দেয়নি। যেখানে যা কিছু হোক থানায় সাধুচরণের ডাক পড়ত। মোটা রুলের গুঁতো আর পকেটের পয়সা ঘুষ দিয়ে তবেই ছাড়া পেত।

সবকিছু বুঝে শুনে শেষ পর্যন্ত চুরি করে জেলের ভাত খাওয়াই ভালো বলে মনে করেছে সাধুচরণ। তবে পড়ে থাকা শুকনো জমি আর ছেলের জন্য তার মন কেমন করে।

যারা অনাথশিশু, শহরের ফুটপাতে মানুষ, গুণ্ডা ও পকেটমারের কাছে যাদের হাতেখড়ি হয়, তেমনি এক বছর দশকের ফুটফুটে বালক মুস্তাফা। দুনিয়ার কাউকে যেন কেয়ার করে না এমন ভঙ্গি নিয়ে চলাফেরা করে। এণ্টালির ওদিকে কোনো একটা স্কুলে সে পড়ত। তার বাপ ছিল রাজমিস্ত্রি। তিনতলার উঁচু ভাড়া থেকে পড়ে বাপ মারা গেল। মাইনের অভাবে স্কুল থেকে মুস্তাফার নাম কাটা গেল। বিধবা মা, ছোটো ছোটো ভাই বোন নিয়ে বেশ বড়ো সংসার।

বস্তিতে থাকত এক পকেটমারের সর্দার।সেটাকার লোভ দেখিয়ে মুস্তাফাকে তার দলে টেনে নেয়। লোকের পকেট মেরে ধরা পড়ায় জেল হয় মুস্তাফার। এইভাবে পকেট মেরে সে বারচারেক জেলে এসেছে। স্কুল যেতে ইচ্ছে করে করে কিনা জানতে চাইলে সে বলে, – ‘ইচ্ছে করলেই কি যাওয়া যায় ?’

৪. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘মেঘের গায়ে জেলখানা’রচনা অবলম্বনে বক্সার জেলখানার বর্ণনা দাও। ৫

বাস্তববাদীসমাজসচেতনলেখকসুভাষমুখোপাধ্যায়রচিত’আমারবাংলা’গ্ৰন্থেসংকলিত’মেঘেরগায়েজেলখানা’রচনায় বক্সার জেলের অবস্থান ও তার আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার বর্ণনা আছে। হাওড়া থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে উঠে সাহেবগঞ্জ পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেন বদলে সকরিগলির ঘাট। তারপর স্টিমারে উঠে গঙ্গা পেরিয়ে মণিহারির ঘাট। এইভাবে বিহার বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে ট্রেন ক্রমশ হিমালয়ের কোল ঘেঁষে এগোতে থাকে। একেবারে বাগডোগরা, হাতিঘিষা, নকশালবাড়ি পেরিয়ে শিলিগুড়ি শহর।এরপর রাজা ভাতখাওয়ায় ট্রাক ধরে সান্তাল বাড়ি পৌঁছাতে হয়। এখান থেকে বক্সার জেলখানা প্রায় দুই মাইলের পথ।

জয়ন্তী পাহাড় ও ভূটান পাহাড়ে ওঠার রাস্তা দুটি বাদ দিয়ে অবশিষ্ট রাস্তাটিই ঘাস আর কাঁকরে ভরা ছোট্ট একটা মাঠ পেরিয়ে কাঁটাতারে ঘেরা বক্সা জেলখানার পাথরের সিড়িতে গিয়ে শেষ হয়েছে। উঁচুপাঁচিলতোলাবক্সারজেলখানা।আলো,হাওয়াবর্জিতআলাদাএকটাজগৎ।পাহাড়ের তিনতলা সমান উঁচু জেলখানার সিড়ি যেখানে শেষ হয়েছে ঠিক তার মুখে বড়ো একটা ফটক। ছোট্ট একটা গেট খুলে যাবে, তার ভেতর দিয়ে মাথা বাঁচিয়ে হেঁট হয়ে ঢুকতে হবে। বাঁদিকে জেলের অফিস, সেপাইদের ব্যারাক, নীচু পদের কর্মীদের কোয়ার্টার।

তিন তিনটে ফটক পেরিয়ে তবেই জেলের অন্দরমহল।পাহাড়ের তিনটে খাঁজের প্রত্যেকটিতে সারি সারি ঘর, পুরু পাথরের দেওয়াল আর রঙ করা কাঠের ছাদ। ছাদের কাছ বরাবর গরাদ আঁটা গোরুর চোখের মতো জানালা। ডবল দরজা – মোটা কাঠের আর পেটানো লোহার। সামনে কাঁটাতারে ঘেরা ছোট্ট ছোট্ট উঠান। আঁকাবাঁকা অনেক গুলো রাস্তা। দিনের বেলায় আলো ঝোলানো পোস্ট গুলো দেখলে মনে হবে ফাঁসির মঞ্চ। দেওয়ালের বাইরে একশো হাত অন্তর উঁচু করে তৈরি সেন্ট্রিবক্স। তার উপর দাঁড়িয়ে দিন নেই রাত নেই পাহারা দেয় বন্দুকধারী সেপাই।

প্রকাণ্ড একটা চাবির রিঙ গলায় ঝুলিয়ে একটা দাড়িওয়ালা সেপাই কেবলই চরকির মতো ঘুরছে আর এগেট ওগেট খুলছে। দুই-তিন বার করে গুণে তবেই লোক ঢোকাচ্ছে ও বের করছে। মানুষগুলো তার কাছে শুধুমাত্র একটা অঙ্কের সংখ্যা। জেলখানার ভেতরে দেওয়ালের গায়ে বিভিন্ন উপদেশাবলী লেখা আছে। এককথায় লেখকের মতে বক্সা বন্দী শিবির অনেকটা জার্মানির হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতো।


হাত বাড়াও – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা – আমার বাংলা

১. ‘তোমরা হাত বাড়াও, তাকে সাহায্য করো।’ – লেখক কাকে, কীভাবে, কেন সাহায্য করতে বলেছেন ? ১+২+২ (২০১৬)

বাস্তববাদীসমাজসচেতনলেখকসুভাষমুখোপাধ্যায়তাঁর’আমারবাংলা’গ্ৰন্থেসংকলিত’হাত বাড়াও’রচনাংশে মাজা পড়ে যাওয়া, হাঁটতে অক্ষম বারো-তেরো বছরের উলঙ্গ ছেলেটিকে, যে জানোয়ারের মতো চার পায়ে হাঁটছিল তাকে সাহায্যের কথা বলেছেন।

লেখক ‘হাতবাড়াও’রচনাংশে পঞ্চাশের আকালের এক মর্মস্পর্শী বিবরণ দিয়েছেন। ১৩৫০ সালের ভয়াবহ মন্বন্তরের চিত্র ফুটে উঠেছে সেই বিবরণে। লেখক রাজবাড়ির বাজারে বসেছিলেন ফরিদপুরের গাড়ি ধরার প্রতীক্ষায়।তাঁর চোখের সামনে দেখা দিল মন্বন্তর বিধ্বস্ত আকালের এক খণ্ডচিত্র। স্টেশনের রাস্তায় চার পায়ে হেঁটে এগিয়ে আসা এক অদ্ভুত জন্তু তিনি প্রত্যক্ষ করলেন। অবশ্য সেই জন্তু অমৃতের পুত্র মানুষ, মাজা পড়ে যাওয়া বারো-তেরোবছরের একউলঙ্গ শিশু।সে দুহাত প্রসারিত করে মাটি ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে চায়। প্রকৃতপক্ষে ঐ ছেলেটি দীর্ঘ পরাধীন ও যুদ্ধ – দুর্ভিক্ষের অভিঘাতে ন্যুব্জ পৃষ্ঠ বাঙালি জাতির প্রতীক।বাঙালি এখন মাথা তুলে দাঁড়াতে চায়।তাই লেখকের আবেদন তার হাত ধরে উচ্চশির হয়ে তাকে দাঁড়াতে সাহায্য করা হোক।

মন্বন্তর দীর্ণ লেখক লিখতে বসে যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন যুদ্ধ – মন্বন্তরের ঘনায়মান অন্ধকারে সেই শিশুর জ্বলন্ত দুটি চোখ আসমুদ্র হিমাচল বঙ্গ দেশকে অতন্দ্র পাহারা দিচ্ছে। তার দীপ্ত দুচোখে শান্তির প্রত্যাশা। সে চায় মাঠের সোনালী ফসলে, চাষীর গোলাভরা ধানে শান্তি। সে চায় কলকারখানায় শ্রমিকদের আন্দোলিত মিলিত বাহুতে শান্তি। সে চায়  আর দুর্ভিক্ষ নয়, আর যুদ্ধ নয়, স্বাধীন – সুখী জীবন ও পরম শান্তি। যুদ্ধ – মন্বন্তরে উত্থান শক্তি রহিত বাংলাকে দাঁড় করাতে হলে আমাদের সকলকেই বিবেকি হাত বাড়িয়ে দিতে হবে বলে লেখক মন্তব্য করেছেন।


Leave a Comment