বিভাব – সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

বিভাব – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা (সাহিত্যচর্চা)

রচয়িতাশম্ভূ মিত্র
কি ধরনের রচনানাটক
অন্তর্ভুক্তদ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
পাঠ্য বইসাহিত্যচর্চা

Table of Contents

বিভাব – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা (সাহিত্যচর্চা)


১. ‘বিভাব’ নাটকে নাট্যরীতির যে নতুনত্ব প্রকাশ পেয়েছে তা আলোচনা কর।

প্রশ্নের মান
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাপড়েনি

নাটক একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃশ্য শিল্প। অভিনয়ের মাধ্যমে নাটকের কুশীলবরা বিভিন্ন বিষয়কে দর্শক সমক্ষে উপস্থাপন করেন। এক্ষেত্রে নাট্যকারের অবদান তুলনামূলক কম, কারণ অভিনয় যতটা সুন্দর হবে দর্শকদের কাছে নাটক ঠিক ততটাই জনপ্রিয়তা ও গ্ৰহণযোগ্যতা পাবে। আমাদের পাঠ্য, ‘বিভাব’ নাটকে নাট্যকার শম্ভু মিত্র সমকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে, প্রচলিত নাট্যরীতি বদল করে ভিন্ন রীতিতে বা বলা ভালো অভিনব কায়দায় নাট্যভাবনাকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।

বাংলা নাট্যজগতের অন্যতম ব্যক্তিত্ব, বহুরূপী নাট্যগোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্র রচিত ’বিভাব’ একটি ভিন্ন স্বাদের একাঙ্কিকা। স্বয়ং শম্ভু মিত্রের ভাষায় নাটকটির জন্ম ‘দুরন্ত অভাব’ থেকে। বস্তুত নাটক সৃষ্টির পিছনে বহুরূপীর আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যহীনতা নিশ্চয়ই একটা কারণ। নাটক করবার বোকামিটা ছাড়া ভালো স্টেজ, সিনসিনারি, আলো, ঝালর কিছুই তাদের ছিল না। অথচ ছিল সরকারি করের বোঝা । তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই একটা প্যাঁচ বার করতে হয়েছিল। যেখানে নিদেন একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই অভিনয় করা যাবে, সিনসিনারি, দরজা-জানালা, টেবিল-বেঞ্চ, আলো, ঝালর কোনো উপকরণই লাগবে না।

  নাট্যাভিনয়, নাট্যরচনা ও পরিচালনার পাশাপাশি শম্ভু মিত্র নাটক নিয়ে বহু গবেষণা করেছেন। আর তারই ফসল হল ওয়ার্কশপ ধর্মী এই একাঙ্কিকা। তিনি পুরোনো বাংলা নাটক, প্রাদেশিক নাটক, এমনকি বিদেশি নাটক পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কোনোরকম নাট্য-উপকরণ, সাজসজ্জা, জৌলুস, আলো, ঝালর ছাড়াই কেবল ভঙ্গির প্রয়োগে দর্শকদের মনে রস নিস্পত্তি ঘটানো যায়। তিনি উড়ে দেশের যাত্রা, মারাঠি লোকনাট্য, জাপানি কাবুকি থিয়েটার প্রভৃতির থেকে নির্যাস গ্রহণ করে সৃষ্টি করলেন ভঙ্গি প্রধান নাটক ‘বিভাব’। সেখানে কোনোরকম উপকরণের ব্যবহার তো  থাকলই না, উপরন্তু নাটকের চরিত্ররাও বাস্তব জীবনের পরিচিতি নিয়েই উপস্থিত হলেন। নাট্যাংশে নায়ক-নায়িকা কে বাস্তবের স্বাচ্ছন্দ্য জীবনে চলার স্বাধীনতা দিয়েছেন – এইভাবে অভিনয়ে নতুনত্ব প্রতিষ্ঠা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য।

    সমাজে বাস্তবতার প্রতিফলনের পাশাপাশি নাট্য সৃষ্টির পিছনে নাট্যকর্মীদের যে আন্তরিক নিষ্ঠা ও প্রয়াস ক্রিয়াশীল থাকে তা দর্শকদের বোধের কাছে সুন্দর ভাবে পৌঁছে দিয়েছেন নাট্যকার। এখানেই নাট্যরীতির অভিনবত্ব শুধু সার্থক নয়, বলা চলে চির নতুন।


২. ‘বুদ্ধিটা কী করে এলো তা বলি’ – বক্তা এখানে কোন বুদ্ধির কথা বলেছেন? বুদ্ধি প্রয়োগ কোথায় কিভাবে করেছেন?

প্রশ্নের মান২+৩
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাপড়েনি

আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ সংলাপটি বাংলা নাট্যসাহিত্যে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের প্রবক্তা শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকের অংশ বিশেষ।

 নট ও নাট্যকার শম্ভু মিত্রের সাথে গণনাট্য সংঘের মতান্তর (১৯৪৮) ঘটায় তিনি দল ত্যাগ করে অপেশাদারি রঙ্গমঞ্চ ‘বহুরূপী’ নাট্যদল প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় বহুরূপী চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে দর্শকদের মনোরঞ্জন করবেন সেই ভাবনা থেকেই নতুন করে বুদ্ধি অনুসন্ধান করতে হয়। এখানে সেই বুদ্ধির কথাই বলা হয়েছে।

                    সরকারের উদাসিন্য, চুড়ান্ত অসহযোগিতা ও সরকারি খাজনার রক্তচক্ষু – এইসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নাটকের প্রতি অদম্য ভালোবাসাকে পাথেয় করে ওই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পুরোনো বাংলা নাটক কে আশ্রয় করেছেন নাট্যকার। তিনি এক পুরোনো বাংলা নাটকে লেখা দেখেছিলেন, ‘রাজা রথারোহনম নাটয়তি’। অর্থাৎ রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন। বাস্তবে রথ না থাকলেও একটা ভঙ্গিতে তা বোঝানো হল। আবার একটি উড়ে দেশের যাত্রার কথা বলেছেন, ‘তমে ঘোড়া নেইকরি চঞ্চল খবর নেই আসিবি’। দূত ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গি করে হেট হেট করতে করতে গেল আবার সংবাদ নিয়ে চলে এলো।

   রুশ দেশীয় বিখ্যাত চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখায় জানতে পারি জাপানি থিয়েটার কাবুকির অভিনয়েও অনেক  কাল্পনিক অঙ্গ ভঙ্গির মাধ্যমে সহজেই নানা বিষয় উপস্থাপন করা যায়। আর তাতে যদি দর্শকদের কল্পনার উৎসমুখ খুলে দেওয়া যায় তাহলে দর্শকরা আনন্দ পাবে। বুদ্ধির প্রকাশ – অবকাশ দুইই থাকবে। এই প্রেক্ষিতে চিন্তা করেই নাট্যকার শম্ভু মিত্র ‘বিভাব’ নাটকের নাট্য কৌশল পরিবর্তন করে নতুন রূপ দিয়েছিলেন। অর্থ ও সাশ্রয় হবে আর দর্শকদের মনের কাছেও পৌঁছানো যাবে—এই ভাবনা তেই নাট্যকার সুচতুর কৌশলে বুদ্ধির প্রয়োগ করেছিলেন।


৩. এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না -জীবনকে উপলব্ধি করার জন্য বক্তা কী করেছিলেন? শেষে    কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?      

প্রশ্নের মান ৩+২
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাপড়েনি

আলোচ্য তাৎপর্যপূর্ণ সংলাপটি বাংলা নাট্য সাহিত্যে গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের প্রবক্তা শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’নাটকের অংশ বিশেষ।

উক্ত সংলাপটির মধ্য দিয়ে বক্তা শম্ভু মিত্র চিরকালীন সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সম্পাদকের নির্দেশেবহুরূপী নাট্যদলের প্রাণপুরুষ শম্ভু মিত্র বক্স অফিস সফল হাসির নাটকের খোরাক সংগ্রহ করতে সহ অভিনেতা অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে আসেন।সেখানে প্রথমে বসার ভঙ্গির মাধ্যমে হাস্যরস সৃষ্টিতে চেষ্টা করেন,কিন্তু অমর এবং বৌদি তৃপ্তি মিত্র জানিয়ে দেয় এতে হবে না।কারণ,”এতে কোনো গল্প নেই, কোনো হিউম্যান ইন্টারনেট রেস্ট নেই, নেই কোনো পপুলার অ্যাপিল “।

এরপর তৃপ্তি মিত্রের উদ্যোগে দর্শকদের চাহিদার কথা ভেবে ‘লভ সিন’এবং তার পর ‘প্রগেসিভ লভ সিন’ – এর দৃশ্য অভিনীত হয়। কিন্তু তাও সার্থক হাসির প্লট তৈরি করতে পারে নি। তখনই শম্ভু মিত্র নাটককে চার দেওয়ালের গণ্ডি থেকে বের করে বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে বলেন। তাঁর মতে, সেখানেই হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক পাওয়া যাবে। এখানে মূলত জীবনের গভীরতাকে খোঁজার বদলে তার লঘু ব্যঞ্জনাকে খোঁজার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সম্পাদকের ইচ্ছা করতে, হাসির নাটকের খোরাক খুঁজতে গিয়ে বক্তার অভিজ্ঞতা হয়েছিল ভীষণ ভয়ংকর। সত্যিকারের জীবনকে উপলব্ধি করতে চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে আসেন কিন্তু শহরের ব্যস্ত রাজপথে হাসির কোনো রসদই চোখে পড়ে না। এমন সময় চাল কাপড়ের দাবির জোরালো আওয়াজে মুখর একটি মিছিল এগিয়ে আসে। মিছিল আটকাতে পুলিশ গুলি চালায়, একটি ছেলে ও মেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অসহায় বিপন্ন শোভা যাত্রীদের গোঙানি ও হাহাকারের আওয়াজ ভেসে আসে।

বাস্তবের নির্মম আঘাতে প্রাণ হারায় সাধারণ মানুষ। সেখানে মূল্যহীন হয়ে ওঠে জীবনবোধ বা শিল্প বোধ। সস্তা প্র মোদ ও ভাঁড়ার মধ্যে সুখ ঢাকতে চাওয়া মানুষের অগভীর স্বার্থপর মানসিকতাকেই এখানে নাট্যকার কাঠগড়ায় দাঁড় করান। এভাবে বাস্তবের নির্মম সত্যকে শিল্প সৌন্দর্যের মধ্যে দিয়ে নাট্যকার বিদ্রুপাত্মক হাস্যরসের প্রতিষ্ঠা করেছেন ও সমাজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।


৪. ‘আমাদের মনে হয় এর নাম হ ওয়া উচিত অভাব নাটক’। – অভাবের চিত্র ‘বিভাব’নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।

প্রশ্নের মান
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০১৫

কথামুখ :- শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে আমরা দেখি, জনৈক ভদ্রলােক পুরােনাে নাট্যশাস্ত্র ঘেঁটে শম্ভু মিত্র রচিত নাটকের নাম দিয়েছিলেন বিভাব। বিভাব’ শব্দটির অর্থ হল মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া নয়টি রসানুভূতির কারণ।

লেখকের উপলব্ধি :- নিজের নাট্যভাবনা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই নামের বিরােধ খুঁজে পেয়েছেন স্বয়ং নাট্যকারই। একারণেই তার মনে হয়েছে, তাদের নাটকের নাম হওয়া উচিত অভাব নাটক। প্রবল অভাব থেকেই তাদের এই নাটকের জন্ম।

উপলব্ধির কারণ :- এই নাটকে ভালাে মঞ্চ নেই, নেই আলাে বা ঝালর ইত্যাদি মঞ্যসজ্জার বিবিধ উপকরণ। থাকার মধ্যে শুধু আছে নাটক করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। এর ওপর রয়েছে সরকারের চূড়ান্ত অসহযােগিতাও। এত কষ্ট করে সব কিছু জোগাড় করার পর অভিনয়ের ব্যবস্থা করা হলেও উঠে আসে খাজনার দাবি। পেশাদারি মঞ্চকে যে খাজনা দিতে হয় না, গ্রুপ থিয়েটারকে তা দিতে হয়। সরকারের এই বিমাত্সুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করে নাট্যকার এরপর নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান—“…আমরা তাে নাটক নিয়ে ব্যবসা করি না, তাই সরকার আমাদের গলা টিপে খাজনা আদায় করে নেন।”

শেষের কথা :- এই চূড়ান্ত প্রতিকূলতায় গ্রুপ থিয়েটারের পক্ষে নিজের পায়ে দাঁড়ানাে অনেক সময়েই সম্ভব হয়ে ওঠে না। গ্রুপ থিয়েটারের প্রবল অভাবের এই চিত্রই ‘বিভাব’ নাটকে প্রকাশ পেয়েছে।


৫. ‘আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম’ – বক্তা মারাঠি তামাশায় কী দেখেছিলেন ? বক্তা কোন প্রসঙ্গে মারাঠি তামাশার কথা বলেছিলেন ?

প্রশ্নের মান৪ +১
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০১৬

মারাঠি তামাশায় দেখা বিষয় :- শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটক থেকে সংকলিত এই উদৃষ্টিতে নাট্যকারের দেখা মারাঠি তামাশার প্রসঙ্গ রয়েছে। নাট্যকার শ্রী শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশায় দেখেন যে, মরে একদিকে দাঁড়িয়ে থেকে চাষি জমিদারের কাছে অনেক অনুরােধ-উপরােধ করে। তার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে সে মন্দিরে যায় ভগবানের কাছে অভিযােগ জানাতে। চাষি মন্দিরে গেলেও মরে বাইরে সে গেল না, মরে তক্তার ওপর কয়েকবার সে এমনভাবে ঘুরপাক খেল যে, তাকে দেখে মনে হল সে যেন গ্রামটা পেরিয়ে গেল। তারপর একপাশে গিয়ে সে কাল্পনিক মন্দিরকে লক্ষ করে ভগবানের উদ্দেশে তার মনের দুঃখ কথা নিবেদন করতে লাগল। কিছু আগে যে জমিদারের পাঠ করেছিল, সে মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখে দাড়ি-গোঁফ এঁটে পুরােহিত সাজল এবং মন্দিরের সামনে দাঁড়ানাে চাষির কাছে এসে ধর্মীয় তর্জনগঞর্জন করতে লাগল। শ্রী শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশার এই দৃশ্যই দেখেছিলেন এবং তিনি এও লক্ষ করেছিলেন যে, মাঠ-ভরতি দর্শক এই আজব অভিনয় নিঃশব্দে বিনা বাক্যে দেখে চলেছে।

প্রসঙ্গ:- নাট্যকার শম্ভু মিত্র গ্রুপ থিয়েটারের নানাবিধ অসুবিধার কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, মঞ্চবা মঞ্সজ্জার উপকরণসমূহ না থাকা সত্ত্বেও নাটক মঞ্স্থ করা যায়। এই সিদ্ধান্তটা কীভাবে তার মাথায় এল, তার কারণ হিসেবেই নাট্যকার মারাঠি তামাশার প্রসঙ্গ এনেছেন।


৬. ‘তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন।’ – আইজেনস্টাইনসাহেবকে ? তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন ? সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন ?

প্রশ্নের মান১+১+৩ 
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০১৭

আইজেনস্টাইন সাহেবের পরিচয় :- নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে উল্লিখিত আইজেনস্টাইন সাহেব হলেন প্রখ্যাত এক রাশিয়ান চিত্রপরিচালক।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ :- তিনি জাপানের নৃত্যনির্ভর, ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটারের অভিনেতাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।

অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইনের লেখা :- আইজেনস্টাইন লেখেন যে, কাবুকি থিয়েটারে দেহ এবং মুখভঙ্গি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মঞ্চে এক নাইট’ ক্ষুধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। এবং কতদূর চলে এলেন তা বােঝাতে তিনি স্টেজের পিছন দিক থেকে গম্ভীরভাবে এগােতে থাকেন। শিফটাররা তার ঠিক পিছনে মস্ত দুর্গদ্বার ধরে দাঁড়ায়।

তলােয়ার যুদ্ধের দৃশ্যে দেখা যায়, দুই যােদ্ধা খাপ থেকে কাল্পনিক তলােয়ার বের করলেন এবং কাল্পনিক যুদ্ধ করতে লাগলেন। একজন অন্যজনের কাল্পনিক খোঁচা খেয়ে লুটিয়ে পড়লেন। মরার আগে একবার তাঁর হাতটা নড়ে উঠল, তারপর একটা পা তিরতির করে কাপল, চোখটা দুবার ঘুরল, মাথাটা দুবার নড়ল। শেষে তার জিভ বেরিয়ে গেল। তারপর স্টেজে তাঁর সদ্যবিধবা স্ত্রী ঢুকে যখন প্রবল কান্নাকাটি শুরু করল, তখন সেই মৃত লােকটা উঠে আস্তে করে চলে গেল। কারণ, তখন দর্শকদের কাছে মহিলার শােকপ্রকাশটাই কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য, তার মৃত স্বামীর উপস্থিতি নয়। কাবুকি থিয়েটারের এইসব প্রাসঙ্গিক দৃশ্যগুলির বর্ণনাই দিয়েছিলেন আইজেনস্টাইন।


৭. ‘বিভাব’কথাটির সাধারণ অর্থ কী ? ‘বিভাব’নাটকটির নামকরণ কতখানি তাৎপর্যপূর্ণ, আলোচনা করো।

প্রশ্নের মান১+৪ 
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০১৮

‘বিভাব’কথাটির সাধারণ অর্থ বিশেষ ভাব।

সাহিত্য বস্তুর নামকরণ সাহিত্য আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। লেখক নামকরণের মধ্যে দিয়ে তাঁর সাহিত্য বস্তুর মর্ম কথাটি সংক্ষেপিত করেন। কথাসাহিত্যে নানাদিক থেকেই নামকরণ করা হয়ে থাকে। আমাদের আলোচ্য ‘বিভাব’নাটকের সূচনা অংশে নাট্যকার শম্ভু মিত্র বলেছেন, ‘আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত অভাব নাটক’। তাই আমাদের আলোচ্য বিষয় হল নাটকের কোন নামকরণটি যথাযথ ও সংগত ?

সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্রে ‘বিভাব’শব্দটির অর্থ হল কাব্য নাটকে অভিব্যক্ত রসের যে স্থায়ী ভাবে তার কারণ। অর্থাৎ যে ভাব থেকে প্রকাশিত রসের জন্ম তা হল বিভাব। ‘বিভাব’নাটকে নাট্যদলের সম্পাদকের ইচ্ছা হল হাস্যরসের নাটকের অভিনয় করা। তাই হাসির খোরাক জোগাড় করার উদ্দেশ্যে নাট্যকার শম্ভু মিত্র এসেছেন অমর গাঙ্গুলীর বাড়িতে। কাঙ্খিত হাস্যরসের সন্ধানে তাঁরা দুটি লভ সিন অভিনয় করেও প্রত্যাশিত হাসির খোরাক পেলেন না। এরপর তারা হাসির স্থায়ীভাবের সন্ধানে বেরিয়ে জীবনকে দেখতে চাইলেন।

জীবনের অসংগতি, অসংলগ্ন আচার-আচরণ হাস্যরসের জন্ম দেয়। কিন্তু জীবনের চরম অভাব – অনটন জনিত দুঃখ – কষ্ট – যন্ত্রনা এবং তা থেকে বাঁচার তাগিদে ‘চাল চাই, কাপড় চাই’ — দাবির সোচ্চার আর্তি। এই আর্তি সরকারের অসহিষ্ণুতার কারণ হয়। ফলে পুলিশের নিষ্ঠুর পীড়নে দুটি যুব প্রাণ অকালে ঝরে যায়। এটাই হল জীবনের চরম পরিহাস। এ হল করুন রসের বিভাব।

নাট্যকার ও নাট্যদলের আপত্তি অনুযায়ী নামকরণ ‘অভাব’রাখার কারণ আর্থিক অনটন বা অভিনয়ের আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতির অভাব। তবে নাটক করার তাগিদ থেকে এমন একটা প্যাঁচ বের করা হয়েছে, যেখানে শুধু মাত্র একটা স্টেজ হলেই অভিনয়ের কাজটি সম্পন্ন করা যায়।তবে এই অভাবের পিছনে বিভাব কাজ করেছে।’অভাব’এই স্থায়ী ভাব থেকে নাট্যদলের ভাবনা চিন্তা প্রসূত ‘প্যাঁচ’যা অভিনয়ের আঙ্গিক ভঙ্গিমা তার উদ্ভব। সুতরাং নাটকের বিষয়ের দিক অথবা অভিনয়ের ভঙ্গিমার দিক থেকেও ‘বিভাব’নামকরণ সংগত, যথাযথ ও সার্থক।

৮. ‘জীবন কোথায় ?’ – কে, কাকে বলেছেন  ? বক্তা জীবনকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে করেন ?

প্রশ্নের মান১+১+৩  
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০১৯

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি:- শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলিকে উদ্দেশ্য করে আলােচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

জীবনের সন্ধানস্থল:- ‘বিভাব’ নাটকে নাট্যদলের সম্পাদকের নির্দেশে হাসির নাটকের উপকরণ খুঁজতে শম্ভু মিত্র সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে যান। সেখানে ‘বৌদি’ তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ‘লভ সিন’ এবং ‘প্রগ্রেসিভ লভ সিন’-এর দৃশ্যের অবতারণা করেও হাসি পায় না। তখন তার সিদ্ধান্ত নেন যে, ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না। ‘হাসির খােরাক, পপুলার জিনিসের খােরাক’-এর জন্য চার দেয়ালের বাইরে বেরােতে হবে। রাস্তায়, মাঠে, ঘাটে গিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কাল্পনিকভাবে রাস্তায় গিয়েও সেখানকার মােটরগাড়ি, বাস, হাত-রিকশা কিংবা চলন্ত ট্রামের মধ্যে হাসির উপকরণের খোঁজ তারা পায়নি।

৯. ‘এমনিসময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।’ – ‘এমনিসময়’বলতে কোন পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে ? সাহেবের নাম কী ? তিনি কী লিখেছিলেন ?

প্রশ্নের মান২+১+২
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা২০২০

শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’নাটকে দেখা যায় নাটক শুরু হতেই নাট্যকার সরাসরি দর্শকদের সাথে কথা বলতে থাকেন।এই প্রসঙ্গেই উঠে আসে গ্রুপ থিয়েটারের আর্থিক অনটনের দিকটি।নাট্যকার দর্শকদেরজানিয়েছেনযে, নাট্য – সরঞ্জাম বাদ দিয়ে যদি অঙ্গভঙ্গির সাহায্যে কাজ চালানো যেত তাহলে নাটক তৈরির ব্যয়ভার অনেক কমে যেত।

একটি পুরনো বাংলা নাটকে এবং ভারতের অন্যান্য প্রদেশের যাত্রা – তামাশায় অঙ্গভঙ্গিমার ব্যবহারের প্রমাণ নাট্যকার পেয়েছিলেন।কিন্তু তাঁর মতে,যদি কোনো সাহেবএবিষয়েশংসাপত্রদিতেন তাহলে বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা মেনে নিতেন।ঠিক এই সময়েই তিনি এক সাহেবের লেখা পড়েছিলেন।

আলোচ্য অংশে যে সাহেবের উল্লেখ রয়েছে তিনি হলেন রুশ দেশীয় বিখ্যাত চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন।

একবার কাবুকি নামে এক জাপানি থিয়েটার মস্কো তে গিয়েছিল।সেই থিয়েটার দেখার অভিজ্ঞতার কথাই আইজেনস্টাইন সাহেব লিখেছিলেন।সেই নাটকেও নাকি অঙ্গভঙ্গির বহুল ব্যবহার ছিল।এই সাহেবের লেখা পড়ে নাট্যকার আরো জানতে পারেন যে,কাবুকি থিয়েটার চলাকালীন মঞ্চে যদি অতিরিক্ত লোক থাকে সেটাও কেউ খারাপ চোখে দেখে না। আসলে নাট্যকার বলতে চেয়েছেন যে,আইজেনস্টাইনসাহেব তাঁর লেখায় জাপানি কাবুকি থিয়েটারের অনেক প্রশংসা করেছিলেন।


Leave a Comment