অলৌকিক – সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা) অলৌকিক

Table of Contents

অলৌকিক -দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা-সাহিত্যচর্চা


১. ‘গল্পটা আমাদের স্কুলে শোনানো হল।’ – গল্পটা কী ? স্কুলে গল্পটা শুনে লেখকের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ? ৪+১(২০১৫)

যথার্থবাদী কথা সাহিত্যিক কর্তার সিং দুগ্গাল রচিত, অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃক তরজমায়িত ‘অলৌকিক’গল্পে আলোচ্য প্রসঙ্গটির উল্লেখ আছে।

হাসান আব্দালের জঙ্গলে গুরু নানকের একটি গল্প কথার মধ্যে দিয়ে আলোচ্য গল্পের কাহিনী অগ্ৰসর হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে হাসানআব্দালেরজঙ্গলে  গুরুনানক ও তাঁর শিষ্য মর্দানা ঘুরতে থাকে। হঠাৎ শিষ্য মর্দানা জল তেষ্টায় কাতর হয়ে পড়ে। কাছাকাছি কোথাও জল না থাকায় গুরু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, পাশের গ্রামে পৌঁছালে পানীয় জল পাওয়া যাবে। কিন্তু গুরুর কোনো কথাই কাজে আসে না। তেষ্টায় অস্থির মর্দানা জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে গুরু পাহাড়ের চূড়ার অধিবাসী দরবেশ বলী কান্ধারীর কুটিরের পাশে কুয়োর জলের সন্ধান দেন। তিনি আরও বলেন এ তল্লাটে ওঁর কুয়ো ছাড়া আর কোথাও জল নেই।

জলের সন্ধান পেয়ে তেষ্টায় কাতর মর্দানা অত্যন্ত কষ্ট করে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বলী কান্ধারীর কাছে জল প্রার্থনা করে।কিন্তু মর্দানা গুরু নানকের সঙ্গি জানতে পেরে বলী কান্ধারী তাকে জল না দিয়ে তাড়িয়ে দেন। ব্যর্থ মর্দানা ফিরে আসে গুরুর কাছে।সব শুনে গুরু হেসে মর্দানাকে আবার গিয়ে নম্রভাবে জল চাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু বলী কান্ধারী এবারও ‘আমি কাফেরের শিষ্যকে এক গন্ডুস জলও দেব না’বলে তাড়িয়ে দেন। গুরুর কথামত তেষ্টায় কাতর মর্দানা তৃতীয় বার গিয়ে বলী কান্ধারীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে।কিন্তু বলী কান্ধারী অহংকার প্রকাশ করে মর্দানাকে তাড়িয়ে দেন। মর্দানা ফিরে এসে গুরুর পায়ে প্রায় মূর্ছিত হয়ে পড়ে।

এরপর গুরু নানক শিষ্য মর্দানার পিঠে হাত বুলিয়ে সাহস জুগিয়ে তাকে সামনের পাথরটি তুলতে বলেন। পাথর তুলতেই জলের ঝরনা বেরিয়ে আসে। ঠিক সেই সময় বলী কান্ধারীর জলের প্রয়োজন হয়, কিন্তু কুয়োর কাছে গিয়ে দেখেন এক বিন্দুও জল নেই। অথচ নীচে জলের স্রোত। তখন ক্রুদ্ধ হয়ে বলী কান্ধারী পাথরের একটা বড়ো চাঙড় নীচের দিকে গড়িয়ে দেন। মর্দানা তা দেখে চেঁচিয়ে উঠলে গুরু নানক জয় নিরঙ্কার ধ্বনি দিতে বলেন। এরপর পাথরের চাঙড়টি কাছে আসতেই গুরু নানক হাত দিয়ে সেটি থামিয়ে দেন। আলোচ্য উদ্ধৃতাংশে এই গল্পের কথাই বলা হয়েছে।

গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর গল্পের কাহিনী শুনে লেখকের অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছিল। তিনি শিক্ষক মহাশয়ের সঙ্গেও এ ব্যাপারে তর্ক করেন। আর এর প্রতিবাদ স্বরূপ তাঁর প্রচণ্ড চেঁচিয়ে উঠতে ইচ্ছা করে


২. ‘ঝড়ের বেগে ছুটে আসা ট্রেন থামানো গেল, পাথরের চাঁই থামানো যাবে না কেন?’ – ট্রেন থামানোর দরকার হয়েছিল কেন ? ট্রেন কীভাবে থামানো হয়েছিল ? ১+৪  (২০১৬)

বিশ শতকের এক ক্রান্তি লগ্নের কথাকার কর্তার সিং দুগগাল রচিত, অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃকতরজমায়িত’অলৌকিক’গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

দূরের শহরের ফিরিঙ্গিরা ভারতের নিরস্ত্র স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়েছিল। নিহত হয় অনেকেই। আর যারা বেঁচে আছে তারা খিদে ও তেষ্টায় মরণাপন্ন।অথচ তাদের ট্রেনে করে দূর শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই কাতর, বন্দী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ট্রেন থামানোর দরকার হয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গল্প হল ‘অলৌকিক’। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রান্তিকালে দেশ জুড়ে চলছে নির্মম, নৃশংস অত্যাচার। স্বাধীনতা আন্দোলনকারী নিরিহ ভারতীয়দের উপর পুলিশ প্রশাসন নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকলকেই। আর জীবিত মানুষদের অন্য শহরের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থাকরা হচ্ছে। ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর মৃতপ্রায় সেই মানুষদের তৃষ্ণার জল টুকুও দেওয়া হয় নি। এমনকি হুকুম হয়েছে তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। ব্রিটিশ শাসনের এই কঠোরতায় পাঞ্জা সাহেবের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা ঠিক করে ক্ষুধা-তৃষ্ণায়কাতর কয়েদিদের ট্রেনটা থামানো হবে।

ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থাকবে শহরবাসী তা কিছুতেই হতে দেবেনা। কারণ, এই পাঞ্জা সাহেবেই গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা মিটিয়ে ছিলেন।ট্রেন থামানোর অনেক আবেদন করেও যখন কোনো অনুমতি পাওয়া যায় নি তখন গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর স্বামী ও তার সঙ্গী-সাথীরা চলন্ত ট্রেন থামানোর জন্য রেল লাইনে শুয়ে পড়েছিল। তাদের পিছনে একই ভাবে শুয়ে পড়ে মহিলা ও ছেলের দল। ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসা ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। ট্রেন সম্পূর্ণ থেমে যায় গল্পশ্রোতারমায়েরবান্ধবীর মাথার ঠিক আগে। কিন্তু ইতিপূর্বে ট্রেনের চাকা তার স্বামী ও সঙ্গীদের বুকের ওপর দিয়ে চলে গেছে। তাদের অন্তর থেকে নির্গত হচ্ছে জয় নিরঙ্কার ধ্বনি। এইভাবেই মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে ট্রেনটি থামানো হয়েছিল।


৩. ‘চোখের জলটা তাদের জন্য’ – বক্তা কাদের জন্য চোখের জল উৎসর্গ করেছেন ? যে ঘটনায় বক্তার চোখে জল এসেছিল সেই ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখ।১+৪  (২০১৭)

বিশশতকের এক ক্রান্তি লগ্নের কথাকার কর্তার সিংদুগগাল রচিত,অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃক তরজমায়িত ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

আলোচ্য অংশে যারা জীবনকে তুচ্ছ করে কোনো কিছুর পরোয়া না করে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর বন্দী দেশপ্রেমিকদের রুটি, জল পৌঁছে দিয়েছিল বক্তা চোখের জলটা তাদের জন্য উৎসর্গ করেছেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গল্প হল ‘অলৌকিক’। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রান্তিকালে দেশ জুড়ে চলছে নির্মম, নৃশংস অত্যাচার। স্বাধীনতা আন্দোলনকারী নিরিহ ভারতীয়দের উপর পুলিশ প্রশাসন নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকলকেই। আর জীবিত মানুষদের অন্য শহরের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতর মৃত প্রায়সেই মানুষদের তৃষ্ণার জল টুকুও দেওয়া হয়নি। এমন কি হুকুম হয়েছে তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। ব্রিটিশ শাসনের এই কঠোরতায় পাঞ্জা সাহেবের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা ঠিক করে ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতর কয়েদিদের ট্রেনটা থামানো হবে।

ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থাকবে শহরবাসী তা কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ, এই পাঞ্জাসাহেবেই গুরু নানক শিষ্যমর্দানার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন। ট্রেন থামানোর অনেক আবেদন করে ও যখন কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি তখন গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর স্বামী ও তার সঙ্গী-সাথীরা চলন্ত ট্রেন থামানোর জন্য রেল লাইনে শুয়ে পড়েছিল। তাদের পিছনে একই ভাবে শুয়ে পড়ে মহিলা ও ছেলের দল। ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসা ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। ট্রেন সম্পূর্ণ থেমে যায় গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর মাথার ঠিক আগে। কিন্তু ইতি পূর্বে ট্রেনের চাকা তার স্বামীও সঙ্গীদের বুকের ওপর দিয়ে চলে গেছে। তাদের অন্তর থেকে নির্গত হচ্ছে জয় নিরঙ্কার ধ্বনি।খাল পারের সেতুর দিকে তাদের রক্তের স্রোত বয়ে গেছে। এই ঘটনার পরই বক্তার চোখে জল এসেছিল।


৪. ‘অলৌকিক’গল্পে হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর ঘটনাটি লেখক প্রথমে বিশ্বাস করেন নি কেন ? পরে কীভাবে সেই ঘটনা তাঁর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠল ? ২+৩  (২০১৮)

বিশশতকের একক্রান্তি লগ্নের কথাকার কর্তার সিংদুগগাল রচিত, অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃক তরজমায়িত ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

পাঞ্জা সাহেবের প্রথম গল্পটি লেখক শোনেন তাঁর মায়ের মুখে। গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামিয়ে দেওয়া বা পাথরের তলায় ঝরনা সৃষ্টির রহস্য বৈচিত্র্য দেখে লেখকের মনে আশ্চর্য বা এক বিস্ময়ের জগৎ তৈরি হয়েছিল। বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে মাটির নিচে জলের ঝরনার সত্যতা মেনে নিলেও বাস্তবে শুধু হাত দিয়ে পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া পাথরের চাঁই থামানো ছিল অবিশ্বাসযোগ্য। তাই স্বাভাবিকভাবেই লেখক প্রথমে ঘটনাটি বিশ্বাস করতে পারেন নি।

স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গল্প হল ‘অলৌকিক’। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রান্তিকালে দেশ জুড়ে চলছে নির্মম, নৃশংস অত্যাচার। স্বাধীনতা আন্দোলনকারী নিরিহ ভারতীয়দের উপর পুলিশ প্রশাসন নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকলকেই। আর জীবিত মানুষদের অন্য শহরের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতরমৃ ত প্রায়সেই মানুষদের তৃষ্ণার জলটুকু ও দেওয়া হয়নি। এমনকি হুকুম হয়েছে তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। ব্রিটিশ শাসনের এই কঠোরতায় পাঞ্জাসাহেবের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা ঠিক করে ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতর কয়েদিদের ট্রেনটা থামানো হবে।

ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থাকবে শহরবাসী তা কিছুতেই হতে দেবে না। কারণ, এই পাঞ্জাসাহেবেই গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন। ট্রেন থামানোর অনেক আবেদন করে ও যখন কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি তখন গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর স্বামী ও তার সঙ্গী- সাথীরা চলন্ত ট্রেন থামানোর জন্য রেল লাইনে শুয়ে পড়েছিল। তাদের পিছনে একই ভাবে শুয়ে পড়ে মহিলা ও ছেলের দল। ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসা ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। ট্রেন সম্পূর্ণ থেমে যায় গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর মাথার ঠিক আগে। কিন্তু ইতিপূর্বে ট্রেনের চাকা তার স্বামী ও সঙ্গীদের বুকের ওপর দিয়ে চলে গেছে। তাদের অন্তর থেকে নির্গত হচ্ছে জয় নিরঙ্কার ধ্বনি। খাল পারের সেতুর দিকে তাদের রক্তের স্রোত বয়ে গেছে।

মহৎ আদর্শের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে এই আত্মবলিদানের ঘটনায় গল্পকথক অভিভূত ও বিহ্বল হয়ে পড়েন। তিনি পাঞ্জা সাহেবের অধিবাসীদের সংকল্পবদ্ধ এই অন্তর শক্তি উপলব্ধি করার চেষ্টা করেন। আর তখনই গুরু নানকের হাত দিয়ে পাথরের চাঁই থামানোর গল্পটি লেখকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।


৫. ‘অবাকবিহ্বল বসে আছি, মুখে কথা নেই’ – মুখে কথা নেই কেন ? ৫  (২০১৯)

বিশ শতকের একক্রান্তি লগ্নের কথাকার কর্তার সিংদুগগাল রচিত, অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃক তরজমায়িত ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেশপ্রেমিক নিরস্ত্র ভারতীয়দের উপর ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী গল্প হল ‘অলৌকিক’। পরাধীন ভারতবর্ষে স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রান্তিকালে দেশজুড়ে চলছে নির্মম, নৃশংস অত্যাচার। স্বাধীনতা আন্দোলনকারী নিরিহ ভারতীয়দের উপর পুলিশ প্রশাসন নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছিল আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা সকলকেই। আর জীবিত মানুষদের অন্য শহরের জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতর মৃত প্রায় সেই মানুষদের তৃষ্ণার জলটুকু ও দেওয়া হয়নি। এমন কি হুকুম হয়েছে তাদের ট্রেন যেন কোথাও না থামে। ব্রিটিশ শাসনের এই কঠোরতায় পাঞ্জাসাহেবের লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তারা ঠিক করে ক্ষুধা- তৃষ্ণায় কাতর কয়েদিদের ট্রেনটা থামানো হবে।

ক্ষুধার্ত মানুষ অনাহারে থাকবে শহর বা সীতা কিছুতেই হতে দেবেনা। কারণ, এই পাঞ্জা সাহেবেই গুরু নানক শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা মিটিয়েছিলেন। ট্রেন থামানোর অনেক আবেদন করেও যখন কোনো অনুমতি পাওয়া যায়নি তখন গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর স্বামী ও তার সঙ্গী- সাথীরা চলন্ত ট্রেন থামানোর জন্য রেল লাইনে শুয়ে পড়েছিল। তাদের পিছনেএকই ভাবে শুয়ে পড়ে মহিলা ও ছেলের দল। ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসা ট্রেনের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে।ট্রেন সম্পূর্ণ থেমে যায় গল্প শ্রোতার মায়ের বান্ধবীর মাথার ঠিক আগে। কিন্তু ইতি পূর্বে ট্রেনের চাকা তার স্বামী ও সঙ্গীদের বুকের ওপর দিয়ে চলে গেছে। তাদের অন্তর থেকে নির্গত হচ্ছে জয় নিরঙ্কার ধ্বনি। খাল পারের সেতুর দিকে তাদের রক্তের স্রোত বয়ে গেছে।

মহৎ আদর্শের জন্য বৃহত্তর স্বার্থে এই আত্মবলিদানের ঘটনায় গল্প কথক অভিভূতও বিহ্বল হয়ে পড়েন।মুখে কথা সরে না। এমনকি সারাদিন একফোঁটা জলও মুখে দিতে পারেন নি।


৬. হঠাৎশিষ্য মর্দানার জল তেষ্টা পেল’ – তেষ্টা মেটানোর জন্য মর্দানাকে কী করতে হয়েছিল ? তাঁর তেষ্টা শেষ অবধি কীভাবে মিটেছিল ? ৩+২  (২০২০)

বিশ শতকের এক ক্রান্তিলগ্নের কথাকার কর্তার সিংদুগগাল রচিত, অনিন্দ্য সৌরভ কর্তৃক তরজমায়িত ‘অলৌকিক’ গল্প থেকে প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি গৃহীত হয়েছে।

হাসান আব্দালের জঙ্গলে গুরুনানকের একটি গল্পকথার মধ্যে দিয়ে আলোচ্য গল্পের কাহিনী অগ্ৰসর হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে হাসান আব্দালের জঙ্গলে গুরু নানকও তাঁর শিষ্য মর্দানা ঘুরতে থাকে। হঠাৎ শিষ্য মর্দানা জল তেষ্টায় কাতর হয়ে পড়ে। কাছাকাছি কোথাও জল না থাকায় গুরু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, পাশের গ্রামে পৌঁছালে পানীয় জল পাওয়া যাবে। কিন্তু গুরুর কোনো কথাই কাজে আসেনা। তেষ্টায় অস্থির মর্দানা জল ছাড়া মাছের মতো ছটফট করতে থাকে। নিরুপায় হয়ে গুরু পাহাড়ের চূড়ার অধিবাসী দরবেশ বলীকান্ধারীর কুটিরের পাশে কুয়োর জলের সন্ধান দেন। তিনি আরও বলেন এ তল্লাটে ওঁর কুয়ো ছাড়া আর কোথাও জল নেই।

জলের সন্ধান পেয়ে তেষ্টায় কাতর মর্দানা অত্যন্ত কষ্ট করে পাহাড়েরচূ ড়ায় উঠে বলীকান্ধারীর কাছে জল প্রার্থনা করেন। কিন্তু মর্দানা গুরু নানকের সঙ্গি জানতে পেরে বলীকান্ধারী তাকে জল না দিয়ে তাড়িয়েদেন। ব্যর্থ মর্দানা ফিরে আসে গুরুর কাছে। সব শুনে গুরু হেসে মর্দানাকে আবার গিয়ে নম্রভাবে জল চাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু বলীকান্ধারী এবারও ‘আমিকাফেরের শিষ্যকে এক গন্ডূ সজলও দেবনা’ বলে তাড়িয়ে দেন। গুরুর কথামত তেষ্টায় কাতর মর্দানা তৃতীয়বার গিয়ে বলীকান্ধারীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে।কিন্তু বলীকান্ধারী অহংকার প্রকাশ করে মর্দানাকে তাড়িয়ে দেন। মর্দানা ফিরেএ সে গুরুর পায়ে প্রায় মূর্ছিত হয়ে পড়ে।

বলী কান্ধারীর কাছে জল পায় নি মর্দানা।তাই গুরু নানক ধ্যানে বসেন। তার পর গুরু নানক শিষ্য মর্দানার পিঠে হাত বুলিয়ে সাহস জুগিয়ে তাকে সামনের পাথরটি তুলতে বলেন। পাথর তুলতেই জলের ঝরনা বেরিয়ে আসে। এইভাবেই গুরু নানকের দ্বারা আবিষ্কৃত ঝরনার জল পান করে শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা মিটেছিল।


৭. অলৌকিক গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার কর

প্রখ্যাত পাঞ্জাবি সাহিত্যিক কর্তার সিং দুগগাল রচিত ‘অলৌকিক’গল্পটি বিশ্লেষণ করে উপলব্ধি করা যায় যে, গল্পটি বিষয়নিষ্ঠ ও ব্যঞ্জনাধর্মী গল্পের উপাদানে সমৃদ্ধ। গল্পটির শিরোনাম ‘অলৌকিক’।অলৌকিক বলতে মনুষ্য লোকে অসম্ভব, যা লোকাতীত।

সাহিত্যে নামকরণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।নামকরণের মধ্যে দিয়ে স্রষ্টা বা শিল্পী তাঁর দক্ষতা ও প্রতিভাকে প্রকাশ করেন। তাছাড়া নামকরণের মাধ্যমে ফুটে ওঠে শিল্পীর মননশীল চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি। নামকরণ বিভিন্ন আঙ্গিকে হয়ে থাকে। আমাদের পাঠ্য ‘অলৌকিক’গল্পের নামকরণ ব্যঞ্জনাধর্মী ও বিষয়ী বলে মনে হয়।

লেখকের বর্ণনায় গল্পের প্লট সত্যিই অলৌকিক। কাহিনীর প্রথম পর্বে ধর্মগুরু নানকের অলৌকিক অর্থাৎ লোকাতীত গল্প বর্ণিত হয়েছে। হাসান আব্দালের জঙ্গলে গুরু নানক পাথরের নিচে জলের ঝরনা আবিষ্কার করে শিষ্য মর্দানার তৃষ্ণা নিবারণ করেছেন। পাহাড়ের চূড়া থেকে বলী কান্ধারীর গড়িয়ে দেওয়া পাথরের চাঁই তিনি শুধু হাত দিয়ে থামিয়েছেন। সেই পাথরে গুরুর হাতের পাঞ্জার ছাপ আজও আছে। এসবই গল্পকথকের কাছে অলৌকিক বা লোকাতীত ঘটনা।

আলোচ্য গল্পটি শুধু ধর্মগুরুনানকেরঅলৌকিক ক্ষমতার কীর্তিগাঁথা নয়, বরং দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল বীরগাথা হয়ে ওঠে। পাঞ্জা সাহেবের একদল মানুষ বন্দী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিকদের অভুক্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দূরের শহরে যেতে দেবে না বলে আত্মবলিদান দিয়ে ট্রেন থামায়। এই পর্বে অতি লৌকিকতা ও অন্যান্য সাধারণতা প্রকাশ পায়।

গুরু নানকের পাথরের চাঁই থামানো এবং পাঞ্জা সাহেবে সাকা হওয়া — দুটি কাহিনী সূত্রে আসলে এই ব্যঞ্জনাই যে, মহৎ লক্ষ্যের জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে অন্তর শক্তিতে বলীয়ান মানুষ আপাতদৃষ্টিতে যা অলৌকিক তাকেও অতি লৌকিক করে তোলে। এই ব্যঞ্জনাই নামকরণের অন্তর্নিহিত থেকে গল্পটিকে সার্থকনামা করে।

Leave a Comment