আমি দেখি – সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা)

সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা) আমি দেখি শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আমি দেখি – সাহিত্যচর্চা দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা


১. ‘আমার দরকার শুধু গাছ দেখা’ – বক্তা কে ? তার গাছ দেখা দরকার কেন ? ১+৪ (২০১৬)

প্রকৃতি প্রেমের কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতায় প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন কবি স্বয়ং।

প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভালোবাসায় কবি মন সবুজ খোঁজে। সবুজের শ্যামলিমা গায়ে মেখে কবি শহরের ক্লেদাক্ত কে ভুলতে চান। শহর জীবন কবি কে শান্তি দেয় নি, দেয় নি মনের সজীবতা। শরীরের আরোগ্যের জন্য এবং মানসিক ভাবে সজীব থাকার জন্য গাছের সবুজ অত্যন্ত প্রয়োজন। জঙ্গলের বনগন্ধি সংস্রব থেকে বহুদিন বিচ্ছিন্ন হয়ে কবি শহর জীবনে অভ্যস্ত হয়েছেন। কিন্তু অরণ্য তাঁকে হাতছানি দেয়, সবুজের স্পর্শ পেতে চায় মন। শুধু গাছ আর গাছের সবুজকে তিনি নয়নে-মনেন-শরীরে সুনিবিড় ভাবে উপলব্ধি করতে চান।

শহর থেকে নির্বিচারে সবুজ কেটে ধ্বংস করার আগ্রাসন কবি কে ব্যথিত করে। নগরের রোগাক্রান্ত জনসমাজের একজন হয়ে কবি সেই যন্ত্রণার শরিক হন। তিনি অনুভব করেছেন,

‘শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়’।

শহরের এই ক্রনিক ব্যাধির একমাত্র উপায় যেন বৃক্ষ। বহুদিন জঙ্গলে যেতে না পারার আক্ষেপ থেকে কবি তাই বলেন,

‘গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও’।

সরল-সবুজের ব্যাপ্ত স্নিগ্ধতায় শহর জীবন সবুজে-সবুজে মহাসমারোহে নিত্যনতুন সাজে বর্ণময় হয়ে উঠবে বলে কবি আশাবাদী। পরিশুদ্ধ অক্সিজেন আর পরিবেশর ভারসাম্য রক্ষায় দূষণ মুক্ত সুস্থ্য-সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার অঙ্গীকারে কবির কাতর আবেদন কবিতার প্রথম ও শেষ পঙক্তিতে ফুটে উঠেছে।


২. ‘আরোগ্যের জন্য ঐ সবুজের ভীষণ দরকার’ – ‘ঐ সবুজ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? সেই সবুজকে পাওয়ার জন্য কবি কী কী নির্দেশ দিয়েছেন ? ১+৪ (২০১৯)

‘আমি দেখি’ কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় শহর জীবনের রুক্ষ্ম, বিবর্ণ পরিবেশে সবুজ প্রকৃতি পাওয়ার আকুলতা ব্যক্ত করেছেন। আলোচ্য অংশে ‘ঐ সবুজ’ বলতে অরণ্য ভূমির প্রাণ প্রাচুর্যে ভরা প্রকৃতির সেই সবুজকেই বুঝিয়েছেন কবি।

আলোচ্য কবিতায় বিপন্ন নাগরিক সভ্যতার ছবির পাশাপাশি ফুটে উঠেছে প্রকৃতির প্রতি কবির আন্তরিক ভালোবাসা। সহজ-সরল জীবন ভাবনায় কবি গাছের অপরিহার্য বা আবশ্যকীয় গুণাবলীগুলি প্রকাশ করেছেন। শহরবাসী কবি ইঁট-কাঠ-পাথরের যান্ত্রিক সভ্যতার মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছেন গ্রাম্য প্রকৃতি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না। নগর জীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য কবি চেয়েছেন শহরের সবুজায়ন হোক। যেদিকে চোখ যায় শুধু নিষ্প্রাণ সৌধের মিছিল। গাছের সৌন্দর্য কবির চোখে পড়ে নি। তাই গাছ দেখার জন্য কবির ব্যাকুল আবেদন –

“আমার দরকার শুধু গাছ দেখা গাছ দেখে যাওয়া “1

গাছ মানুষের পরম প্রিয় উপকারী বন্ধু ও আদিম মাতা-পিতা। দুঃখের বিষয়, যন্ত্র সভ্যতার সুখ, সম্পদ ও বিলাস-বৈভবে অন্ধ মানুষ নির্মমভাবে অরণ্য উচ্ছেদ করে কংক্রিটের রাজ্য গড়ছে। সেখান থেকে চির নির্বাসিত গাছ-গাছালি, তাদের শীতল ছায়া, প্রাণদ বায়ু। কবি তাই ক্রোধের সঙ্গে বলেছেন, —

‘শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়। J

বেঁচে থাকার জন্য ‘গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার’, আর ‘আরোগ্যের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার’। তাছাড়া দৃষ্টি শক্তিকে সজীব ও সতেজ রাখার জন্য ‘চোখ তো সবুজ চায়’, আর ‘দেহ চায় সবুজ বাগান’। ‘সবুজ’ হল গাছের স্বতস্ফূর্ত প্রাণ উজ্জ্বলতার প্রতীক। সুতরাং নিজে বাঁচতে ও পরিবেশ কে বাঁচাতে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন কবি।

Leave a Comment