বাংলা ভাষা: ধ্বনিতত্ত্ব

বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস হতে দ্বিতীয় পর্ব ভাষা হতে ধ্বনিতত্ত্ব নামক দ্বিতীয় অধ্যায় হতে প্রশ্ন উত্তর নিম্নে দেওয়া হল। উচ্চ মাধ্যমিক দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা সিলেবাস অনুসারে দ্বিতীয় পর্ব ভাষা হতে  ধ্বনিতত্ত্ব  আলোচন করা হয়েছে ।

বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস দ্বিতীয় পর্ব ভাষা হতে ধ্বনিতত্ত্ব


১. উদাহরণ সহ গুচ্ছধ্বনির পরিচয় দাও

প্রশ্নের মান
উচ্চ মাধ্যমিক২০১৬

গুচ্ছধ্বনি :-

‘উত্তর’ শব্দটিতে (উ+ত+ত+অ+র ) পাশাপাশি দুটি ‘ত’আছে,যাদের মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। তবে এই দুই ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে স্বরধ্বনি না থাকলেও দলসীমা ( উত্ – তর) থাকে। অর্থাৎ দুটি ব্যঞ্জনবর্ণের ( ‘ত’ও ‘ত’ ) প্রথমটি পূর্ববর্তী দলের এবং শেষেরটি পরবর্তী দলের অংশ।

আবার, ‘করছি’ শব্দে ( ক+অ+র+ছ+ই ) পাশাপাশি ‘র’ ও ‘ছ’আছে,যাদের মাঝে কোনো স্বরধ্বনি নেই। তবে দলসীমা ( কর – ছি )আছে। প্রথম দলের শেষে ‘র’এবং পরবর্তী দলের প্রথমে ‘ছ’অবস্থান করছে।

সংজ্ঞা :-

এরকম পাশাপাশি উচ্চারিত ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ, যাদের মাঝখানে স্বরধ্বনি থাকে না, কিন্তু দলসীমা থাকে তাদের গুচ্ছধ্বনি বলে।

বৈচিত্র্য :-

বাংলায় দুটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ২০০ টিরও বেশি। তিনটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি গুচ্ছধ্বনির সংখ্যা ৮ টি, যার তৃতীয় ব্যঞ্জন অবশ্যই ‘র’। চারটি ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশে তৈরি একমাত্র গুচ্ছধ্বনি যুক্ত শব্দ ‘সংস্কৃত’।


২. অবিভাজ্য ধ্বনি কাকে বলে ?দুটি অবিভাজ্য ধ্বনির পরিচয় দাও

প্রশ্নের মান১+২+২
উচ্চ মাধ্যমিক২০১

সংজ্ঞা :-

ভাষার যেসব উপাদান একাধিক ধ্বনিখণ্ড জুড়ে তৈরি হলেও সেই ধ্বনিখণ্ড গুলিকে কোনোভাবেই খণ্ডিত করা যায় না, তাদের অবিভাজ্য ধ্বনি বলে।

দুটি অবিভাজ্য ধ্বনি :-

ক) শ্বাসাঘাত :-

শ্বাসাঘাত হল একাধিক দল যুক্ত শব্দের কোনো একটি দলকে অপেক্ষাকৃত বেশি জোর দিয়ে উচ্চারণ করা। শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি পুরো দল জুড়ে, কোনো নির্দিষ্ট ধ্বনিতে নয়। তাই এটি অবিভাজ্য ধ্বনি। বাংলায় সাধারণত শব্দের প্রথম দলটিতে শ্বাসাঘাতের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

যেমন –

মাখন, আরতি শব্দের প্রথম দল মা, আ – এর ওপর শ্বাসাঘাত পড়ে।

খ) দৈর্ঘ্য :-

কোনো স্বরধ্বনি যদি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চারিত হয়, তবে তাকে দৈর্ঘ্য বলে। বাংলায় বহুদল শব্দের স্বরধ্বনির তুলনায় একদল শব্দের স্বরধ্বনির দৈর্ঘ্য বেশি, ফলে একদল শব্দের দৈর্ঘ্যও বেশি।

যেমন –

আমার’ শব্দের ‘আ’ – এর চেয়ে ‘আম’শব্দের ‘আ’বেশি দীর্ঘ।


৩. উদাহরণ সহ যুক্তধ্বনির পরিচয় দাও

প্রশ্নের মান
উচ্চ মাধ্যমিক২০১

যুক্তধ্বনি :-

তৃণ’শব্দের আদ্য অবস্থানে বা দলের আদিতে ‘তৃ’উচ্চারিত হয়। এই ব্যঞ্জনধ্বনি গুলির মাঝে কোনো দলসীমা ( তৃ – ণ ) নেই।

একই রকমভাবে ‘স্থির’শব্দের আদ্য অবস্থানে ‘স্থ’উচ্চারিত হয়। ব্যঞ্জনের এই সমাবেশে কোনো দলসীমা ( স্থির – একদল ) থাকে না।

সংজ্ঞা :-

যে ব্যঞ্জনধ্বনির সমাবেশ গুলি শব্দের আদ্য অবস্থানে থাকে এবং তার সাথে কোনো দলসীমা থাকে না তাদের যুক্তধ্বনি বলে।

বৈচিত্র্য :-

বাংলায় এরকম যুক্তধ্বনির সংখ্যা ২৮ টি এবং প্রধানত ইংরেজি থেকে আগত ঋণ শব্দে আরো ১৮ টি। তিন ব্যঞ্জনের সমাবেশে তৈরি যুক্তধ্বনি ২ টি — ‘স্ত্র’ও ‘স্পৃ’।এগুলি দিয়ে যথাক্রমে ‘স্ত্রী’ও ‘স্পৃহা’প্রভৃতি শব্দ গঠন করা যায়।


৪. উদাহরণ সহ ‘ধ্বনিমূল’ ও ‘সহধ্বনির’ সম্পর্ক বুঝিয়ে দাও

প্রশ্নের মান
উচ্চ মাধ্যমিক২০২০

ধ্বনিমূল ও সহধ্বনির সম্পর্ককে তিন রকমভাবে আলোচনা করা যায় —

ক) ‘ধ্বনিমূল’ ও ‘সহধ্বনির’ সম্পর্ক

প্রতিটি ধ্বনিমূল হল এক – একটি ধ্বনি পরিবার — সহধ্বনিগুলি সেই পরিবারের সদস্য। কোনো পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি, আবার কোনো পরিবারের কম।  একই পরিবারের সদস্যরা দুটি শর্ত পূরণ করে —

  • i) তাদের মধ্যে উচ্চারণগত মিল থাকবে।
  • ii) সদস্যরা পরস্পরের সাথে পরিপূরক অবস্থানে থাকবে, অর্থাৎ একজনের বদলে অন্যজন উচ্চারিত হবে না।

যেমন –

/ল/ পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিন। এই পরিবারের তিন সদস্যের মধ্যে উচ্চারণগত সামান্য পার্থক্য থাকলে ও মিলের ভাগটাই বেশি।

খ) ‘ধ্বনিমূল’ ও ‘সহধ্বনির’ সম্পর্ক

ধ্বনিমূল একটি কল্পনা, যার বাস্তব উপলব্ধি হল সহধ্বনি।অর্থাৎ একাধিক সহধ্বনির বাস্তব উচ্চারণের আড়ালে একটি করে কাল্পনিক ধ্বনিমূল আছে।

যেমন –

/ল/ – এর অস্তিত্ব কাল্পনিক বা মানসিক, কিন্তু এর তিনটি সহধ্বনি হল ভাষায় বাস্তব যা আসলে উচ্চারিত হয়।

গ) ‘ধ্বনিমূল’ ও ‘সহধ্বনির’ সম্পর্ক

ভাষায় ধ্বনিমূল ও সহধ্বনি আলাদা ধরনের দায়িত্ব পালন করে। ধ্বনিমূল কথার অর্থ পরিবর্তন করে আর সহধ্বনি শব্দের উচ্চারণ ঠিক রাখে। অর্থাৎ ধ্বনিমূল ভাষায় অর্থের তফাত করতে সমর্থ, কিন্তু সহধ্বনি অর্থের তফাত করতে পারে না।

যেমন –

‘জাল’ ও ‘জাম’। ( ল ) ধ্বনিমূলের পরিবর্তে ( ম ) উচ্চারণ করলে আমরা অন্য একটি শব্দ পাই, যার অর্থ আলাদা। কিন্তু যদিচেষ্টা করে ‘জাল’শব্দটি দন্ত্য ( ল ) দিয়ে উচ্চারণ করি তাহলে কানে অদ্ভুত শোনালেও অর্থ বদলাবে না।


Leave a Comment