সাহিত্যচর্চা (দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা) পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন হল আন্তর্জাতিক কবিতা যা বোর্টেল্ট ব্রেখট রচিত । এটির অনুবাদ করেছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। নিম্নে পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হল।
রচয়িতা | বোর্টেল্ট ব্রেখট |
কি ধরনের রচনা | আন্তর্জাতিক কবিতা |
অন্তর্ভুক্ত | দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা |
পাঠ্য বই | সাহিত্যচর্চা |
অনুবাদ | শঙ্খ ঘোষ |
পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন – সাহিত্যচর্চা – দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
১। ” সেই সন্ধ্যায় কোথায় গেল রাজমিস্ত্রিরা?” – রাজমিস্ত্রিরা কি নির্মাণ করেছিল? এই প্রশ্নের মাধ্যমে বক্তা কি বলতে চেয়েছেন? ১+৪
বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন‘ কবিতায় পৃথিবীর সর্ববৃহৎ চিনের প্রাচীর নির্মাণ প্রসঙ্গে মজুরের জবানিতে কবি স্বয়ং প্রশ্নে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেছেন।
চৈনিক সম্রাট সি-হুয়াং-তি হুনদের অক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দে চিনের প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে হান, সুই এবং মিং রাজাদের সময়েও সাড়ে ছয় হাজার কিমি দীর্ঘ এই পাঁচিলটি নির্মাণ ও পুনর্গঠনের কাজ চলেছিল। অসংখ্য রাজমিস্ত্রির সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়।
শত শত বছরের প্রচেষ্টায়, অগনিত সাধারণ শ্রমিকের ত্যাগ ও শ্রমের দৃষ্টান্ত হল এই সুদীর্ঘ প্রাচীর। এটি নির্মাণের সময় বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, ইতিহাসে তার সাক্ষ্য মেলে। এই সমস্ত মানুষদের আত্মত্যাগে চিনের প্রাচীর নির্মিত হয়েছে আমরা জানালেও ইতিহাস তাদের সম্মান দেয়নি, দেয়নি স্বীকৃতি। সামান্য প্রাপ্তি থেকে এই সমস্ত মুটে মজুররা বঞ্চিত।
বিশ্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রকট হয়ে ওঠে শ্রমজীবী মানুষের আত্মবলিদানের স্মৃতিকথা। অথচ চিনের প্রাচীর নির্মাণের নির্মাতা হিসাবে কৃতিত্বের শিরোপা লাভ করেছে চৈনিক সম্রাটেরা। প্রচলিত ইতিহাসের পাতায় প্রকৃত সত্যের এমন অমর্যাদাকেই কবি চোখে আঙুল দিয়ে শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে দেখিয়ে দিতে চান। ক্ষমতার ইতিহাসের এই বৈষম্যকে বিদ্রূপ করে সমষ্টিগত মানুষের চলমানতার ইতিহাসকেই পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরেন।
২। “পাতায়-পাতায় জয় বা জয়োৎসবের ভোজ বানাত কারা? – পাতায় পাতায় কাদের জয় লেখা? জয়োৎসবের ভোজ যারা বানাত তাদের প্রতি কবির কি মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে? ২+৩
উদ্ধৃতাংশটি বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
প্রচলিত ইতিহাস বইয়ের পাতায় শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের জীবন যন্ত্রণা তো দূরের কথা, তাদের উপেক্ষিত করা হয়েছে। আর অমরকীর্তি গাঁথা হয়েছে পুঁজিবাদী শাসকের অঙ্গলিলেহনে রচিত রাজা কিংবা, শাসকের ক্ষমতা দম্ভের ইতিহাস ও বীরত্বগাথা।
জয়োৎসবের ভোজ বলতে ক্ষমতাবান শাসকের সাম্রাজ্যবিস্তার বা সাফল্যের কীর্তি কাহিনী প্রচারের দিকটিকেই কবি ফুটিয়ে তুলেছেন। সিজার, ফিলিপ, আলেকজাণ্ডার, ফেডারিকের জয় আসলে রাজার আত্মদম্ভ ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা বা মহিমা প্রকাশের কৌশল মাত্রা। শাসকের ব্যক্তিমাহাত্ম্য প্রচারের এই নির্লজ্জ উল্লাসকেই তিনি ‘জয়োৎসবের ভোজ’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
আন্তরিক ইতিহাস সচেতন কবি বের্টোল্ট ব্রেখট বঞ্চিত সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের কর্মচঞ্চল ঐতিহাসিক ভূমিকার দিকটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। ইতিহাসের বিজয় কাহিনীর প্রসঙ্গ উপস্থাপনের মাধ্যমে বিজয়ের পরবর্তী অনুষ্ঠান সূচীকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সেখানে জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠা রাজা-রাজড়াদের জয়োৎসবের ভোজের আয়োজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কবি এই রাজা-রাজড়াদের আনন্দের প্রতিচ্ছবির আড়ালে প্রকাশ করেছেন রন্ধনকারীদের হৃদয় যন্ত্রণা ও ক্ষোভকে। যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রমে সুস্বাদু রান্না করে উৎসবের মাহাত্ম্যকে সাফল্যমণ্ডিত ও বর্ণময় করে তোলে তাদের খবর কেউ নেয় না। তারা কেবল মানুষের রসনাতৃপ্ত করে কিন্তু নিজে তৃপ্তি পায় না। পায় কেবল সামাজিক লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, অপমান। সমাজের কাছে ইতিহাসের পাতায় তারা অজ্ঞাত।
যাদের শ্রমে এমন উৎসবের আয়োজন তারা ব্রাত্যজন হওয়ায় কবি ইতিহাস ও বাস্তব জ্ঞান সমৃদ্ধ ভাবনা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন ইতিহাসের হৃদয়হীনতার ছবি বা নির্মমতার চিত্র। জয়োৎসবের পূর্ণতা শ্রমজীবী মানুষ অর্থাৎ রাঁধুনিকে বাদ দিয়ে হয় না। কবি মানবিক হৃদয় দিয়ে সেই সমস্ত শ্রমজীবী মানুষদের সমবেদনা জানিয়েছেন।
৩। “বইয়ে লেখে রাজার নাম। রাজারা কি পাথর ঘাড়ে করে আনত? – কারা, কেন পাথর ঘাড়ে করে এনেছিল? ১+৪
উদ্ধৃতাংশটি বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশে কবি নির্মাণ শ্রমিকদের কথা বলেছেন, যে কোনো নির্মাণ কাজের সময় তারা পাথর ঘাড়ে করে আনত।
ইতিহাসের সবকিছু ঘিরে যত নির্মাণ কাজ, যত গঠনমূলক কীর্তি, সব কৃতিত্বের অধিকারী ও খ্যাতি রাজরাজড়াদের নামেই। কিন্তু তাঁরা ঘাড়ে করে পাথর বয়ে আনে নি। পাথর বয়ে এনেছিল নির্মাণকর্মীরা। তাদের শ্রমে গড়ে ওঠে বিরাট প্রাসাদ, ইমারত প্রভৃতি। যারা শ্রম দিয়ে, জীবন দিয়ে, প্রতিটি রক্তবিন্দু দিয়ে এইসব গঠন ও নির্মাণ কাজে আত্মনিয়োগ করে ইতিহাসের পাতায় তাদের সৃষ্টি ও শিল্পকে অমরত্ব দিয়েছে। কিন্তু তাদের নামোল্লেখ নেই, তাদের কথা কেউ মনেও রাখেনি।
সাত দরজাওয়ালা থিবস হোক, বারবার ধ্বংস হওয়া ব্যাবিলন নগরীরর পুনর্নির্মাণ হোক, লিমা-নগরীর নির্মাণশৈলী হোক, কিংবা চিনের সুবিশাল প্রাচীর নির্মাণ হোক সবক্ষেত্রে নির্মাণ শ্রমিকদের অবদান মুখ্য। কিন্তু তারা উপেক্ষিত অনুক্ত ও অবহেলিত। যুগ যুগ ধরে শ্রমিক শ্রেণির প্রতি এই অন্যায় ও অবিচার হয়ে এসেছে। বর্তমানও তার ব্যতিক্রম নয়।
৪। “কে আবার গড়ে তুলল এতবার” – কি গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে? এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি কি বলতে চেয়েছেন? ১+৪
বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতা থেকে সংকলিত আলোচ্য উক্তিটিতে প্রাচীন নগরী ব্যাবিলনের বারংবার গড়ে তােলার কথা বলা হয়েছে।
আলােচ্য কবিতাটিতে এই প্রশ্নের মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছেন যে, পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রমজীবী মানুষের গুরুত্বই সর্বাপেক্ষা বেশি। অথচ যারা ক্ষমতাবান শাসক, তারাই খ্যাতির আলােকে আলােকিত হন। বহুযুগ ধরে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের নিয়েই প্রথাগত ইতিহাস লেখা হয়ে আসছে। আমাদের প্রচলিত ইতিহাসে রাজারাজড়া এবং সাম্রাজ্যবাদী শাসকের জয়কেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। আর, সমাজের উঁচুতলার বিত্তবান মানুষরাই সেই ইতিহাসকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
কবি যথার্থই এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, ইতিহাসের প্রকৃত কারিগর সাধারণ শ্রমজীবী মানুষেরাই। প্রাচীনতম মেসােপটেমিয়া সভ্যতার নগররাষ্ট্র ব্যাবিলন যেমন নির্মাণ করেছেন তারাই, তেমনই বারংবার ধ্বংস হবার পর তা পুনরায় গড়ে তুলেছেন ইতিহাসে স্থান না-পাওয়া সেই শ্রমজীবী মানুষরাই। শ্রমজীবী মানুষের ঘাম-রক্ত-শ্রমের ইতিহাস প্রথাগত ইতিহাসের আড়ালেই থেকে যায়। প্রশ্নোধৃত উক্তিটির মাধ্যমে কবি বলতে চেয়েছেন যে সাধারণ, শ্রমজীবী মানুষের হাতেই থাকে ইতিহাসের প্রকৃত চাবিকাঠি।
৫। “ভারত জয় করেছিল তরুণ আলেকজান্ডার। একলাই নাকি?” – আলেকজান্ডার কে ছিলেন ? ‘একলাই না কি’ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন ? – ১+৪
উদ্ধৃতাংশটি বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
মহান বীর আলেকজান্ডার ছিলেন গ্ৰিসের নগররাষ্ট্র ম্যাসিডনের রাজা। তিনি দিগ্বিজয়ে বেরিয়ে মিশর, পারস্য, আফগানিস্তানে আধিপত্য বিস্তার করে ভারত অভিযান করেন।
আলোচ্য কবিতায় কবি পরিচিত ও প্রথাগত ইতিহাসের সীমাবদ্ধতাকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। সেই প্রসঙ্গেই আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণের প্রসঙ্গটির উল্লেখ করেছেন কবি। ৩২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডারের ভারত বিজয়ের সূচনা হয়। ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হিদাস্পিসের যুদ্ধে পুরুর সঙ্গে সন্ধি করতে বাধ্য হন আলেকজান্ডার। তাঁর এই ভারত জয়ের জন্য যে সৈনিকরা তাকে সাহায্য করেছিলেন, ইতিহাসে তাদের কোনো উল্লেখ নেই, ইতিহাস তাদের রণকুশলতা অমর করে রাখেনি। অথচ তাদের আত্মত্যাগ ছাড়া আলেকজান্ডারের ভারত জয়ের স্বপ্ন কিছুতেই সাফল্যের মুখ দেখতে পারত না।
কবি বলতে চেয়েছেন যে, প্রচলিত ইতিহাসের লক্ষণই হল প্রভুত্বকামী শক্তির জয় ঘোষণা করা। কিন্তু যাঁরা তাঁকে ইতিহাসের নায়ক করে, নেপথ্যে থেকে কার্যসিদ্ধি ঘটায় তাদের কথা কেউ মনে রাখে না। এই শ্রেণিই হল ইতিহাসের প্রকৃত কারিগর। শ্রমজীবীই হোক বা সাধারণ মানুষ ক্ষমতাবানদের আলোয় তারা চির উপেক্ষিতই থেকে যায়।
সাত দরজাওয়ালা থিবসই হোক বা ঝকঝকে লিমা – নেপথ্যের কারিগরদের কথা কেউ মনে রাখে না, থেকে যায় শুধু রাজার নাম। আলেকজান্ডারের আক্রমণের উল্লেখে একইভাবে উপেক্ষিত থেকে যায় সেনাবাহিনীও। প্রথাগত ইতিহাসের অসম্পূর্ণতাকে এভাবেই কবি স্পষ্ট করেছেন এই কবিতায়।
৬। “স্পেনের ফিলিপ কেঁদেছিল খুব। আর কেউ কাঁদেনি? – উদ্ধৃতাংশটি যে কবিতার অন্তর্গত সেই কবিতায় আর কোন কোন শাসকের নাম আছে? ফিলিপ কেঁদেছিলেন কেন? ‘আর কেউ কাঁদেনি?’ বলতে বক্তা কি বোঝাতে চেয়েছেন? ২+১+২
বের্টোল্ট ব্রেখট রচিত ও শঙ্খ ঘোষ কর্তৃক অনূদিত ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’ কবিতায় স্পেনের রাজা ফিলিপ ছাড়া আর যেসব শাসকের নাম উল্লেখ রয়েছে তারা হলেন রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার, গ্ৰিসের ম্যাসিডন রাজ্যের সম্রাট আলেকজান্ডার এবং রাশিয়ার সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধে স্পেনের নৌবহর ‘স্প্যানিশ আর্মাডা’র শোচনীয় পরাজয়ে স্পেন রাজ ফিলিপের শোক ও পরিতাপের শেষ নেই। তাই তিনি কেঁদেছিলেন।
ইতিহাসের পাতায় পাতায় কেবল যুদ্ধের কাহিনি। ঐতিহাসিকরা বিজয়ী রাজার বিজয়োল্লাসের কথা যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি পরাজিত রাজার মনোবেদনা লিপিবদ্ধ করতে কার্পণ্য করেননি। আসলে ইতিহাস আর রাজকাহিনি সমার্থক হয়ে উঠেছে। প্রচলিত ইতিহাসে সাধারণ মানুষের উল্লেখ নেই বললেই চলে। অথচ, যেকোনো যুদ্ধে সামনের সারিতে থাকত সাধারণ যোদ্ধারা। তারা রাজা নয়, তাই তাদের বীরত্বের কথা বা বলিদানের কথা ইতিহাসে স্থান পায়নি।
কবি প্রশ্ন করেছেন, ‘আর কেউ কাঁদেনি? এর উত্তরে বলা যায় যে রাজার সৈন্য, সেনাপতি এবং তাদের পরিবারের লোকজনও চোখের জল ফেলেছিল। স্পেনরাজ ফিলিপের কান্নার থেকে তাদের কান্নার গভীরতা আরো বেশি ছিল। আলোচ্য প্রশ্নের মাধ্যমে কবি সাধারণ সৈন্যদের মহত্বের কথাই তুলে ধরতে চেয়েছেন।
৭। ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন কবিতায় কবি কী কী বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন? প্রশ্নগুলির তাৎপর্য কী?
কবি বের্টেল্ট ব্রেখট-এর ‘Questions From a Worker who Reads’ কবিতাটি বাংলায় অনুবাদ করেন কবি শঙ্খ ঘোষ। ভাষান্তরের কারণে কবি শঙ্খ ঘোষ কবিতাটির নামকরণ করেছেন ‘পড়তে জানে এমন এক মজুরের প্রশ্ন’। মার্কসীয় ভাবনায় দীক্ষিত কবি শ্রমজীবী মানুষদের সভ্যতার অগ্রগতির অন্যতম কারিগর বলে উল্লেখ করেছেন। যাদের শ্রমের উপর নির্ভর করে সভ্যতার ইমারত গড়ে ওঠে সেই সকল শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষ অবলম্বন করে কবি তথাকথিত সমাজের উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের কাছে কিছু প্রশ্ন রেখেছেন।
সকল প্রকার নির্মাণের পিছনে আছে শ্রমজীবী মানুষের অবদান। যাদের কায়িক পরিশ্রমের ওপর সভ্যতার রথচক্র নির্ভর করে তাদের কোনো কথাই ইতিহাসের পাতায় স্থান পায়নি। শত শত সাম্রাজ্যের উত্থান পতন ঘটে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষের কর্ম থেমে থাকে না। তাই কবি প্রশ্ন করেছেন, থিবস কারা নির্মাণ করে?, বাইজানটিয়ান সভ্যতা কারা গড়ে তোলে?, সিজার কি একাই যুদ্ধ করেছিলেন?, আলোকজাণ্ডার কি একাই ভারত জয়ে এসেছিলেন? কবিতার দুটি স্তবকে এই সব প্রশ্নের উল্লেখ আছে।
প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া যায় শ্রমজীবী মানুষের অবদানের কথা। একই সাথে পাওয়া যায় তাদের অবহেলিত ও বঞ্চিত জীবনের কথা, যাদের কর্মে সভ্যতার উন্নতি সূচক নিদর্শনগুলি গড়ে ওঠে। নির্মাণকার্য সম্পন্ন হওয়ার পর তাদের কোনো কথাই ইতিহাসের পাতায় স্থান পায় না। স্রষ্টাদের স্থান হয় সবার অগোচরে। তাদের জীবনের অন্ধকার দিনগুলির অবসান হয় না।
কবিতার প্রত্যেকটি প্রশ্ন পাঠককে যেন সচেতন করে তোলে। শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকা বা অবদান যে কতটা সে সম্পর্কে সকলকে অবগত করানোই কবির মূল লক্ষ্য। শ্রমজীবী মানুষের অবদান সম্পর্কে ইতিহাস যে নীরব সে কথাই ব্যঞ্জিত হয়েছে কবির কলমে।