গল্প-আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (একাদশ শ্রেণী)

গল্প-আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (একাদশ শ্রেণী)

                              গল্প

১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম গল্পের নাম –

(ক) ছুটি

(খ) কাবুলিওয়ালা

(গ) ভিখারিনী

(ঘ) দুরাশা

২। রবীন্দ্রনাথের ‘রবিবার’, ‘শেষকথা’ ও ‘ল্যাবরেটরি’ গল্প তিনটি একসঙ্গে কী নামে প্রকাশিত হয়?

(ক) শ্রেষ্ঠ গল্প

(খ) তিনসঙ্গী

(গ) ত্রয়ী

(ঘ) কোনোটাই নয়

৩। ‘রাসমণির ছেলে’ গল্পটির রচয়িতা হলেন –

(ক) শরৎচন্দ্র 

(খ) বঙ্কিমচন্দ্র

(গ) রবীন্দ্রনাথ

(ঘ) বিভূতিভূষণ

৪। শরৎচন্দ্রের প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থটি হল  –

(ক) বিরাজ বউ

(খ) শ্যামলী

(গ) শেষের পরিচয়

(ঘ) বড়দিদি

৫। শরৎচন্দ্রের একটি সার্থক ছোটোগল্প হল –

(ক) পরিণীতা 

(খ) মেজদিদি

(গ) বিন্দুর ছেলে 

(ঘ) মহেশ

৬। শরৎচন্দ্র কোন্ গল্পটির জন্য ‘কুন্তলীন’ পুরস্কার পেয়েছিলেন?

(ক) পণ্ডিতমশাই

(খ) মন্দির

(গ) অভাগীর স্বর্গ

(ঘ) মহেশ

৭। ‘সরীসৃপ গল্পগ্রন্থটির রচয়িতা হলেন –

(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

(খ) বিভূতিভূষণ 

(গ) বঙ্কিমচন্দ্র 

(ঘ) রবীন্দ্রনাথ

৮। বিভূতিভূষণের প্রথম গল্পের নাম হল –

(ক) সরীসৃপ

(খ) অতসী মামী

(গ) উপেক্ষিতা

(ঘ) মন্দির

৯। ‘মেঘমল্লার’ গল্প সংকলন গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন –

(ক) তারাশংকর 

(খ) বিভূতিভূষণ

(গ) শরৎচন্দ্র 

(ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র

১০। তারাশংকরের প্রথম ছোটো গল্পটি হল –

(ক) রসকলি

(খ) কালিন্দী

(গ) না

(ঘ) রাইকমল

১১। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত প্রথম গল্পটি হল – 

(ক) অহিংসা

(খ) অতসী মামী

(গ) শিল্পী

(ঘ) পদ্মানদীর মাঝি

১২। ‘বিন্দুবিসর্গ’ গল্পগ্রন্থটির রচয়িতা –

(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

(খ) বনফুল

(গ) তারাশংকর

(ঘ) বিভূতিভূষণ

১৩। ‘হনুমানের স্বপ্ন’ গল্পগ্রন্থটির রচয়িতা হলেন –

(ক) তারাশংকর

(খ) বিভূতিভূষণ

(গ) পরশুরাম

(ঘ) শরৎচন্দ্র

১৪। ‘পরশুরাম’ ছদ্মনামটি হল –

(ক) বঙ্কিমচন্দ্রের 

(খ) রাজশেখর বসুর

(গ) বলাইচাঁদের

(ঘ) রবীন্দ্রনাথের

১৫। ‘বনফুল’ ছদ্মনামটি হল –

(ক) রাজশেখর বসুর

(খ) বঙ্কিমচন্দ্রের

(গ) বলাইচাঁদের 

(ঘ) রবীন্দ্রনাথের

১৬। ‘শুক্রে শনি’ কৌতুক গল্পগ্রন্থটির রচয়িতা হলেন –

(ক) দিব্যেন্দু পালিত 

(খ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(গ) প্রফুল্ল রায় 

(ঘ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

১৭। ‘বিছন’, ‘ধৌলি’, ‘রুদালী’ ছোটো গল্পগুলির রচয়িতা হলেন –

(ক) দিব্যেন্দু পালিত

(খ) আশাপূর্ণা দেবী

(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(ঘ) মহাশ্বেতা দেবী

১৮। ‘শহরে আসা’ গল্পগ্রন্থটি কার লেখা?

(ক) দিব্যেন্দু পালিত

(খ) বিমল মিত্র

(গ) মতি নন্দী

(ঘ) প্রফুল্ল রায়

১৯। পঞ্চম রাগ গল্পসংকলন গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন –

(ক) বিমল মিত্র 

(খ) নবেন্দু ঘোষ

(গ) আশাপূর্ণা দেবী

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

২০। ‘হারানের নাতজামাই’ গল্পটি লিখেছেন –

(ক) তারাশংকর

(খ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

(গ) দিব্যেন্দু পালিত

(ঘ) বিমল মিত্র

২১। ‘ফসিল’ গল্পটির রচয়িতা হলেন –

(ক) বিমল কর

(খ) সুবোধ ঘোষ

(গ) আশাপূর্ণা দেবী

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

২২। ‘টোপ’ গল্পের রচয়িতা হলেন –

(ক) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

(খ) বিমল কর

(গ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

২৩। ‘ঘনাদা’ রচয়িতার নাম –

(ক) দিব্যেন্দু পালিত

(খ) বিমল কর

(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(ঘ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

২৪। ‘বৈতরণী তীরে’ ও ‘বিন্দুবিসর্গ’ গল্পগ্রন্থদুটির রচয়িতার নাম – 

(ক) আশাপূর্ণা দেবী

(খ) নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

(গ) বনফুল

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

২৫। ‘পরাশর বর্মা’ গোয়েন্দা গল্পটি কার লেখা?

(ক) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(খ) প্রমথ চৌধুরী 

(গ) বিমল কর 

(ঘ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

২৬। রবীন্দ্রনাথের প্রথম গল্প সংকলনের প্রথম গল্পটি হল –

(ক) দেনাপাওনা

(খ) শাস্তি

(গ) ব্যবধান

(ঘ) রাজপথের কথা

২৭। ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ গল্পটি কোন পত্রিকায় ১২৯৮ সালে প্রকাশিত হয়?

(ক) ভারতী

(খ) সাধনা

(গ) প্রবাসী

(ঘ) হিতবাদী

২৮। রবীন্দ্রনাথের একটি অতিপ্রাকৃত গল্প হল –

(ক) নিশীথে

(খ) ছুটি

(গ) ত্যাগ

(ঘ) মধ্যবর্তিনী

২৯। ‘জাবালী’ গল্পটি কার লেখা?

(ক) পরশুরামের 

(খ) রবীন্দ্রনাথের

(গ) শরৎচন্দ্রের

(ঘ) এঁদের কেউ নন

৩০। ‘শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’, ‘ভূশণ্ডীর মাঠ’ গল্প-দুটি কার লেখা?

(ক) রবীন্দ্রনাথের 

(খ) রাজশেখর বসুর

(গ) দিব্যেন্দু পালিতের

(ঘ) শরৎচন্দ্রের

৩১। ‘নারী ও নাগিনী’ গল্পটি লিখেছেন –

(ক) শরৎচন্দ্র

(খ) তারাশংকর

(গ) রবীন্দ্রনাথ 

(ঘ) পরশুরাম

৩২। ‘পুঁইমাচা’ গল্পটি লিখেছেন –

(ক) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

(খ) শরৎচন্দ্র

(গ) রাজশেখর বসু

(ঘ) এঁদের কেউ নন

৩৩। ‘মহানগর’ গল্পটির রচয়িতা হলেন –

(ক) শরৎচন্দ্র 

(খ) তারাশংকর

(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(ঘ) বনফুল

গ 

৩৪। ‘শরীর’, ‘প্রাত্যহিক’, ‘জলসত্র’, ‘ধীবর’ গল্পগুলি লিখেছেন –

(ক) মহাশ্বেতা দেবী

(খ) বনফুল

(গ) রাজশেখর বসু

(ঘ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

৩৫। ‘মনোমুকুর’ গল্পগ্রন্থটি কার লেখা?

(ক) সমরেশ বসুর 

(খ) বিমল মিত্রের

(গ) বিমল করের 

(ঘ) পরশুরামের

৩৬। ‘মেঘমল্লার’, ‘মৌরীফুল’ গল্পগ্রন্থদুটি কার লেখা?

(ক) শরৎচন্দ্রের

(খ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের

(গ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

(ঘ) এঁদের কারো নয়।

৩৭। ‘শুধু কেরানী’, ‘এক রাত্রি’ গল্পের লেখক হলেন –

(ক) তারাশংকর

(খ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

(গ) বনফুল

(ঘ) পরশুরাম

৩৯। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ভূমিহীন কৃষকদের আন্দোলনের রূপরেখা ফুটে উঠেছে কোন গল্পে?

(ক) শিল্পী

(খ) হারানের নাতজামাই

(গ) মহাকালের জটার জট

(ঘ) বৌ

৪০। ‘আত্মপ্রতিকৃতি’, ‘ভুল’, ‘স্বপ্নের ভিতর মৃত্যু’ গল্পগুলির লেখক হলেন –

(ক) তারাশংকর

(খ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

(গ) পরশুরাম

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

৪১। ‘সমুদ্র’, ‘শোকসভা’, ‘মুন্নির সঙ্গে কিছুক্ষণ’ গল্পগুলির লেখক হলেন – 

(ক) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

(খ) বনফুল

(গ) দিব্যেন্দু পালিত 

(ঘ) বিমল কর

৪২। ‘মোহনা’, ‘সুধাময়’, ‘হৃদয় বিনিময়’, ‘অতঃপর’ গল্পগ্রন্থের রচয়িতা হলেন –

(ক) বিমল কর

(খ) দিব্যেন্দু পালিত

(গ) বনফুল

(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র

১। শরৎচন্দ্রের তিনটি সার্থক ছোটোগল্পের নাম লেখো।

শরৎচন্দ্রের তিনটি সার্থক ছোটোগল্প হল ‘মহেশ’, ‘অভাগীর স্বর্গ’ ও ‘একাদশী বৈরাগী’।

২। পরশুরাম কার ছদ্মনাম? তাঁর রচিত যে-কোনো একটি গল্পগ্রন্থের নাম লেখো।

রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম হল ‘পরশুরাম’। 

তাঁর রচিত একটি গল্পগ্রন্থের নাম হল ‘হনুমানের স্বপ্ন’।

৩। ‘কল্লোল’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন? এর প্রকাশকাল কত?

১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দিনেশরঞ্জন দাশ এবং গোকুলচন্দ্র নাগের সম্পাদনায় ‘কল্লোল’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। 

৪। মহাশ্বেতা দেবীর চারটি গল্পের নাম লেখো।

মহাশ্বেতা দেবীর চারটি গল্প হল বান, পিণ্ডদান, ভাত, সংরক্ষণ।

৫। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চারটি উল্লেখযোগ্য গল্পের নাম লেখো। 

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চারটি উল্লেখযোগ্য গল্প হল টিকটিকি, কে বাঁচায় কে বাঁচে, শিল্পী ও হারানের নাতজামাই।

৬। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের বিষয়বস্তু কি?

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বহু গল্পের বিষয়বস্তু হল জন্ম ও মৃত্যু – দুই মহাসত্যের সন্ধান।

৭। ‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’ গল্পটি কার লেখা?

‘গুপী গায়েন বাঘা বায়েন’ গল্পের রচয়িতা হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

৮। একজন হাস্যরসস্রষ্টা সাহিত্যশিল্পীর নাম লেখো। 

রাজশেখর বসু ওরফে পরশুরাম এক অসামান্য হাস্যরসস্রষ্টা সাহিত্যশিল্পী।

৯। রাজশেখর বসুর দুটি গল্পসংকলন গ্রন্থের নাম লেখো।

রাজশেখর বসু রচিত দুটি গল্পসংকলন গ্রন্থ হল ‘গড্ডলিকা’ ও ‘কজ্জলী’।

১০। বিমল করের কয়েকটি গল্পগ্রন্থের নাম লেখো। 

বিমল করের কয়েকটি গল্পগ্রন্থের মধ্যে ‘অতঃপর’, ‘আঙুরলতা’, ‘আয়োজন’, ‘মোহানা’, ‘সুধাময়’, ‘হৃদয় বিনিময়’ প্রভৃতির নাম করা যায়।

১১। রমাপদ চৌধুরীর কয়েকটি গল্পগ্রন্থের নাম লেখো।

রমাপদ চৌধুরীর কয়েকটি গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘চন্দনকুঙ্কুম’, ‘চোখে চোখে’, ‘রুমাবাঈ’ ‘লজ্জাবতী’ প্রভৃতি।

১২। সমরেশ বসুর দুটি উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের নাম লেখো।

সমরেশ বসুর দুটি উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হল ‘পসারিণী তৃষ্ণা’ ও ‘কামনাবাসনা”।

১৩। মতি নন্দীর একটি গল্পসংকলন গ্রন্থের নাম লেখো। 

মতি নন্দীর একটি গল্পসংকলন গ্রন্থ হল ‘শহরে আসা’।

১৪। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের জগৎ কীরূপ? 

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের জগৎ স্বতন্ত্র। তাই হৃদয়ের প্রাধান্য রয়েছে বলে বাস্তবের প্রত্যক্ষ মগ্নতা থেকে মনকে মুক্ত রাখে।

১৫। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের ভাবনা কীরূপ? 

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের উপনিষদাশ্রয়ী রূপক গল্প রচনায় তাঁর শিল্পসত্তা কিছুটা রোমান্সধর্মী, আবার পাপ ও পুণ্যের মেরুকরণে কিছুটা Classic।

১৬। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের দুটি গল্পের নাম লেখো।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ-এর দুটি গল্প হল ‘বাস্তুসাপ’, ‘ঘটবাবু’। 

১৭। আশাপূর্ণা দেবীর একটি উল্লেখযোগ্য ছোটোগল্পের নাম লেখো।

আশাপূর্ণা দেবীর একটি উল্লেখযোগ্য গল্প হল ‘ক্যাকটাস’।

১। ছোটোগল্প কাকে বলে? বাংলা ছোটোগল্পের ধারায় রবীন্দ্রনাথের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ করো।

বাংলা সাহিতো ছোটোগল্প রচনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথই প্রথম ও শ্রেষ্ঠ রূপকার। তিনি ছোটোগল্প প্রসঙ্গে যে ধারণা দিয়েছেন তা হল “মানুষের জীবনটা বিপুল একটা বনস্পতির মতো। তার আয়তন তার আকৃতি সুঠাম। দিনে দিনে চলছে তার মধ্যে এলোমেলো ডালপালার পুনরাবৃত্তি। এই স্তূপাকার একঘেয়েমির মধ্যে হঠাৎ একটি ফল ফলে ওঠে, সে নিটোল, সে সুডোল, বাইরে তার রং রাঙা কিংবা কালো, ভিতরে তার রস তীব্র কিংবা কটু। সে সংক্ষিপ্ত, সে অনিবার্য, সে দৈবলব্ধ, সে ছোটোগল্প।” ড. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন, “একটি ক্ষুদ্র আখ্যানখন্ডে সমগ্র জীবন তাৎপর্য প্রতিবিম্বিত করাই ছোটোগল্পের উদ্দেশ্য ও শিল্পরূপের প্রেরণা।”

জমিদারির কাজ দেখাশোনার জন্য বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথকে শিলাইদহ, সাজাদপুর কুঠিতে যেতে হত এবং সেখানে সাধারণ মানুষের সত্যে গভীর পরিচয়ের মধ্যে অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে গল্পের ডালি সাজিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের ছোটোগল্পের যে বৈচিত্র্য প্রকাশ পেয়েছে তার শ্রেণি অনুযায়ী গল্পের নাম উল্লেখ করে বলা যায়, ‘শাস্তি’, ছুটি, ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘রাসমণির ছেলে’, ‘দিদি’, ‘ঠাকুরদা’, ‘সম্পত্তি সমর্পণ’ প্রভৃতি। এই সব গল্পে গ্রামের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র ও সামাজিক রীতিনীতির বাত্যয়ে মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় ঘটে তারই চিত্র ফুটে উঠেছে। 

মানুষের মনের সঙ্গে প্রকৃতির যে নিবিড় যোগসূত্রতা তার রূপ প্রতিফলিত হয়েছে ‘অতিথি’, ‘আপন’, ‘মেঘ ও রৌদ্র’ প্রভৃতি গল্পে। মানবমনের প্রেমসৌন্দর্যের চিত্র, ঘাত-প্রতিঘাত, স্বার্থপরতা, ভালোবাসার গভীরতায় পুরুষ-নারীর মনের বিপন্নতার ছবি পাওয়া যায় ‘দুরাশা’, ‘শেষের রাত্রি’, ‘মানভঞ্জন’, ‘মাল্যদান’ প্রভৃতি গল্পে। রবীন্দ্রনাথের অতিপ্রাকৃত গল্পগুলির মধ্যে রয়েছে ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘মণিহারা’, ‘নিশীথে’ প্রভৃতি। বার্ধক্যের আঙিনায় অবস্থানকালে তাঁর লেখনী হতে যে লেখাগুলি পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে ‘রবিবার’, ‘শেষকথা’, ‘ল্যাবরেটরি প্রভৃতি, যেখানে আধুনিক জীবনের সমস্যার কথা পাওয়া যায়।

রবীন্দ্রনাথের গল্পগুলি শুধু অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও গীতিধর্মের মূর্ছনা নয়, এখানে রয়েছে সাহিত্য শিল্পগুণমণ্ডিত ও অনুভূতিতে ধৃত মানবমনের আন্তর প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথ শ্রেষ্ঠ গীতিকবি ছিলেন বলেই শ্রেষ্ঠ ছোটোগল্পে এত সহজে উত্তীর্ণ হয়েছেন। গল্পগুচ্ছের প্রাথমিক যুগের রবীন্দ্র গল্পের মধ্যেই আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জীবনভূমি পরিবর্তিত হয়েছে। শিল্পীর জীবনদৃষ্টি পেয়েছে এক অনাবিষ্কৃত পূর্ব জগতে প্রথম প্রবেশাধিকার। সাহিত্যের ইতিহাসে এইটাই শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

২। ছোটোগল্পকার বিভূতিভূষণের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

বিভূতিভূষণ ঔপন্যাসিক হিসাবে যেমন নতুন ধারার প্রবর্তক ছিলেন, তেমন ছোটোগল্প রচয়িতাকার হিসাবেও তিনি একজন কুশলী শিল্পী ছিলেন। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের ছোটোখাটো সুখ-দুঃখের মধ্যে যে লীলাচঞ্চলতা আছে, সুখের ভিতর যে দুঃখের আভাস আছে, দুঃখের মধ্যেও যে আনন্দের ইঙ্গিত আছে, বিভূতিভূষণ সাহিত্যরচনার জন্য সেগুলিকেই আশ্রয় করেছেন, জীবনাড়ম্বর তাঁর সাহিত্যের উপজীব্য নয়।

ছোটোগল্প দিয়েই বিভূতিভূষণের সাহিত্যজীবনের সুত্রপাত। তিনি বহু গল্প রচনা করেছেন যা বিষয়-বৈচিত্র্যে, রূপবৈচিত্র্যে খুবই সাহিত্য রসোত্তীর্ণ। তিনি নানা ধরনের ছোটোগল্প লিখেছেন, যার মধ্যে কাহিনিপ্রধান গল্পে কাহিনি ছাড়াও ঘটনাবিন্যাস, পরিবেশ, কথোপকথনের ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘পুঁইমাচা’ এই জাতীয় গল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ‘মৌরীফুল’ গল্পটি চরিত্র প্রধান, সেখানে আবার নারীচরিত্রের প্রাধান্য। 

জীবনটা যে শুধু দুঃখের প্রবাহধারা নয়, সেখানেও আনন্দের আস্বাদন করা যায় লেখক তাই দেখিয়েছেন ‘মেঘমল্লার’, ‘সুলোচনার কাহিনী’, ‘বোতাম’, ‘চিঠি’ প্রভৃতি গল্পে। অলৌকিক কাহিনিও তাঁর রচনায় উঠে এসেছে ‘বউচণ্ডীর মাঠ’, ‘প্রত্নতত্ত্ব’, ‘খুটি দেবতা’ প্রভৃতি গল্পে। ‘জলসত্ৰ’ গল্পটিতে লেখক এক নতুন ধরনের জীবনধারার পরিচয় দিয়েছেন। 

বিভূতিভূষণের ছোটোগল্পে নর-নারীর জটিল মানসিকতার চিত্র নেই, নেই বাস্তবতার নামে ক্লেদ-পঙ্কিল জীবনের চালচিত্র। সেখানে মানুষের শান্ত স্নিগ্ধ মধুর স্বভাবটিই ফুটে উঠেছে। মানবিক দিকগুলির ওপরই তাঁর কোনো-কোনো গল্পে রোমান্স প্রবণতার পরিচয় মেলে। পারিবারিক জীবন নিয়ে তিনি যে সব গল্প লিখেছেন, সেখানে ‘ভাবের ঐকান্তিকতা’ ও ‘করুণরসের গভীরতা’ লক্ষ্য করা যায়। এককথায় বিভূতিভূষণের ছোটোগল্প বাংলা সাহিত্যের সম্পদ।

৩। ছোটোগল্পকার হিসাবে তারাশংকরের মূল্যায়ন করো।

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় ঔপন্যাসিক হিসাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও ছোটোগল্প রচনাতেও তার সিদ্ধি ছিল অনায়াসলভ্য। তারাশংকরের রচিত গল্পের সংখ্যা প্রায় দুশো। পঁয়ত্রিশটি গল্পগ্রন্থে এগুলি সংকলিত হয়ে রয়েছে। ‘রসকলি’ গল্প দিয়ে পাকাপাকিভাবে তারাশংকর বাংলা সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। তারপর একের পর এক ‘মেলা, ‘ইমারত, ‘নারী ও নাগিনী’, ‘জলসাঘর’, ‘যাদুকরী’, ‘ছলনাময়ী’, ‘রাইকমল’, ‘মালাচন্দন’, “তারিণীমাঝি’, ‘ডাইনি’, ‘খাজাঞ্চিবাবু’, ‘অগ্রদানী’ প্রভৃতি গল্প লিখেছেন। 

তাঁর গল্পে প্রকৃতির ভয়ংকর কঠিন রূপটিই ফুটে উঠেছে। গল্পের একদিকে মানুষের আদিম, অকৃত্রিম, রুক্ষ, হিংস্র, রূঢ় বাস্তব রূপ যেমন ফুটেছে, তেমনি অন্যদিকে তার পাপ-পুণ্য বোধের যন্ত্রণা, মানুষের মহিমার দিকটিও উদ্ভাসিত হয়েছে। তার গল্প বলার ধরনে, গল্প শেষ করার আবেদনে নাট্যাবহ এক প্রধান উপাদান। তাঁর অধিকাংশ সার্থক ছোটোগল্পের চরিত্র, পরিবেশ, ঘটনা, নিসর্গ তাঁর পরিচিত রাঢ়ভূমি। তাঁর অনেক গল্পেরই বিন্যাস মহাকাব্যিক অখন্ড সম্পূর্ণতার অভিপ্রায়ী। ছোটোগল্পের রাহস্যিক প্রকৃতি ছাপিয়ে সেখানে বড়ো হয়ে উঠেছে মহাকাব্যিক বিশালতা।

একদিকে পর্বত-অরণ্য ঘেরা ছোটোনাগপুরের মালভূমি, সাঁওতাল পরগনা; অন্যদিকে শস্যশ্যামলা বঙ্গভূমি। এরই মাঝে রাঢ়দেশ যা আদিবাসী ও জঙ্গলপ্রধান, শান্ত-বৈষ্ণব-আউল-বাউল-সাঁই-দরবেশের সমন্বয়ক্ষেত্র। এখানে দরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর বুকে আছে অফুরন্ত ভালোবাসা, বিশ্বাস, মনুষ্যত্ব, শ্রদ্ধাবোধ। লেখক দিগন্তবিস্তৃত বীরভূমের গেরুয়া মাটির রহস্যময় ছায়া ছায়া আহ্বান, শুকনো শুকনো গাছ, প্রকৃতি মানুষের আদিম প্রবৃত্তি ও অকৃত্রিমতা খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন। তাই তিনি বলেছেন, “আমার বই বলুন আর যাই বলুন, সেটা হচ্ছে আমার এই রাঢ়দেশ। এর ভেতর থেকেই আমার যা কিছু সঞ্চয়, এখানকার মানুষ, এখানকার জীবন নিয়ে লিখেছি। তার বেশি আমার কিছু নয়।”

Leave a Comment