কর্মকারক কাকে বলে ? কর্মকারকের প্রকারভেদ মুখ্য কর্ম কাকে বলে ? গৌণ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
কর্মকারক কাকে বলে ?
কর্তা যাকে অবলম্বন করে বা আশ্রয় করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্মকারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কী’ বা ‘কাকে ‘ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা-ই কর্ম কারক।
উদাহরণ – খোকা বই পড়ে। এই বাক্যে ‘বই’ ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই বই হল কর্মকারক। প্রদীপকে স্কুলে আজ ভালো দেখাচ্ছে। এই বাক্যে ‘প্রদীপকে’ ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই প্রদীপ হলেন কর্মকারক।
কর্মকারকের প্রকারভেদ
কর্ম সাধারণত ১০ প্রকার – ১) মুখ্য কর্ম , ২) গৌণ কর্ম , ৩) উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম , ৪) সমধাতুজ কর্ম , ৫) বাক্যাংশ কর্ম , ৬) উপবাক্যীয় কর্ম , ৭) কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম , ৮) উহ্য কর্ম , ৯) অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম , ১০) কর্মের বিপ্সা
মুখ্য কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
কতকগুলি সকর্মক ক্রিয়ার দুটি করে কর্ম থাকে একটি প্রাণিবাচক এবং অপরটি বস্তুবাচক। বস্তুবাচক কর্মটিকে মুখ্য কর্ম বলা হয়। অর্থাৎ ক্রিয়াকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে মুখ্য কর্ম পাওয়া যায়।
উদাহরণ – রামবাবু আমাদের ইংরেজি পড়ান। এখানে ‘ইংরেজি’ পদটিকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হল মুখ্য কর্ম। বিকাশ তার ভাইকে অংক করায়। এখানে ‘অংক’ পদটিকে কি দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তাই হল মুখ্য কর্ম।
গৌণ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
দ্বিকর্মক বাক্যের ব্যাক্তিবাচক কর্মটিকে গৌণ কর্ম বলা হয়। অর্থাৎ ক্রিয়া কে, ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে গৌণ কর্ম পাওয়া যায়।
উদাহরণ – রাধিকা তার ভাইকে অঙ্ক করায়। ভাইকে পদটি গৌণ কর্ম।
উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
কোন কোন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি কর্ম ছাড়াও আরেকটি পরিপূরক কর্মের প্রয়োজন হয় । স্বাভাবিক বিভক্তিযুক্ত কর্মটি উদ্দেশ্য কর্ম। আর পরিপূরক বিভক্তিহীন কর্মটি বিধেয় কর্ম।
উদাহরণ – রানী মাস্টার মশাইকে দেবতা মনে করে। আলোচ্য বাক্যে ‘মাস্টারমশাই’ কে আমরা উদ্দেশ্য কর্ম আর ‘দেবতা’ বিধেয় কর্ম।
সমধাতুজ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
ক্রিয়াটি যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন কর্মও যদি সেই একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয় তাহলে কর্মটিকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম।
উদাহরণ – দুই বন্ধু মিলে কি খেলাই না খেলল। আলোচ্য বাক্যে খেলা এই ধাতু থেকেই ক্রিয়া ও কর্ম দুইটিই পাওয়া যাচ্ছে । তাই এখানে ‘খেলায়’ সমধাতুজ কর্ম।
বাক্যাংশ কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
সমাপিকা ক্রিয়া বিহীন বাক্যাংশ যদি কর্ম হিসাবে ব্যবহৃত হয় তবে তা বাক্যাংশ কর্ম।
উদাহরণ – ‘একের পর এক হেরে যাওয়া’ আমি আর মেনে নেব না। আলোচ্য বাক্যে ‘একের পর এক হেরে যাওয়া’ হল বাক্যাংশ কর্ম।
উপবাক্যীয় কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
জটিল বাক্যের অপ্রধান অংশ কর্ম রূপে ব্যবহৃত হলে তাকে উপবাক্যীয় কর্ম বলে।
উদাহরণ – ‘শেষ অবধি তাদের কি হল’ কেউ জানে না। আলোচ্য বাক্যে ‘শেষ অবধি তাদের কি হলো’ এই উপবাক্য টি কর্ম রূপে ব্যবহৃত হয়েছে।
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
কর্ম যেখানে কর্তার ভূমিকা নেয় অর্থাৎ কর্ম যেখানে কর্তা রূপে ক্রিয়া সম্পাদন করে সেই কর্মটি হলো কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম।
উদাহরণ – সীতাকে ভালো দেখাচ্ছিল। আলোচ্য বাক্যে ‘সীতাকে’ হল কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম।
উহ্য কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
বাক্যের কর্ম যখন উহ্য থাকে তখন তাকে উহ্য কর্ম বলে।
উদাহরণ – সবাই এখন(বই) পড়ছে। এখানে সবাই এখন কি পড়ছে অর্থাৎ বই পড়ছে। কিন্তু বই শব্দটি উহ্য আছে।
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
অসমাপিকা ক্রিয়া যখন কর্মের মতো আচরণ করে তখন তাকে অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম বলা হয়।
উদাহরণ – খোকা এখন হাঁটতে শিখেছে। আলোচ্য বাক্যে ‘হাঁটতে’ অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী কর্ম।
কর্মের বিপ্সা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।
একই কর্ম একাধিকার ব্যবহৃত হলে অর্থাৎ একই কর্মের পুনরাবৃত্তি হলে তাকে কর্মের বিপ্সা বলা হয়।
উদাহরণ – ‘যা যা আনতে বলেছিলাম এনেছো’। এই বাক্যে যা যা হলো কর্মের বীপ্সা। ‘যা যা করার করো’। এই বাক্যে যা যা হলো কর্মের বিপ্সা।