কর্তৃকারক

কর্তৃকারককাকে বলে? কর্তৃকারক বা কর্তার প্রকারভেদগুলি কি কি?

কর্তৃকারক কাকে বলে ?

যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ বাক্যের মধ্যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে কর্তৃকারক বলে। অর্থাৎ ক্রিয়ার সঙ্গে ‘কে’ বা ‘কারা’ যোগ করে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায় তা-ই কর্তৃকারক।

উদাহরণ খোকা বই পড়ে। এই বাক্যে ‘খোকাকে’  ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই খোকা হল কর্তৃকারক।

ছেলেরা মাঠে খেলা করে। এই বাক্যে ‘ছেলেদেরকে’  ‘কারা’ দিয়ে প্রশ্ন করছে, তাই ছেলেরা হল কর্তৃকারক।    

কর্তৃকারক বা কর্তার প্রকারভেদ

কর্তা সাধারণত ১২ প্রকার –  ১) উক্ত কর্তা, ২) প্রযোজক কর্তা, ৩) প্রযোজ্য কর্তা, ৪) সমধাতুজ কর্তা, ৫) ব্যতিহার কর্তা, ৬) বাক্যাংশ কর্তা, ৭) উপবাক্যীয় কর্তা, ৮) নিরপেক্ষ কর্তা, ৯) সহযোগী কর্তা, ১০) অনুক্ত কর্তা, ১১) সাধন কর্তা, ১২) কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা

উক্ত কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

কর্তৃবাচ্যের কর্তাকে উক্ত কর্তা বলে। কর্তৃবাচ্যে কর্তাই হল ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক। অর্থাৎ ক্রিয়া হল কর্তার নিয়ন্ত্রিত।

উদাহরণ আজ বাড়িতে ‘শিক্ষক মহাশয়’ পড়াতে এসেছেন। এখানে “শিক্ষক মহাশয়” হলেন কর্তৃবাচ্যের কর্তা।

প্রযোজক কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

কর্তা নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলে তা হবে প্রযোজক কর্তা।

উদাহরণ ‘মা’ শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন। এই বাক্যে ‘মা’ যেহেতু শিশুকে দিয়ে কাজটি করাচ্ছেন তাই ‘মা‘ হলেন প্রযোজক কর্তা।

প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

যাকে দিয়ে প্রযোজক কর্তা কাজটি করিয়ে নেয় অর্থাৎ যে কর্তা অপরের প্রেরণায় কাজ করে, তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে।

উদাহরণ বাবা ছেলেকে অংক করাচ্ছেন। ‘ছেলে’ যেহেতু বাবার প্রেরণায় কাজটি করছে তাই , ‘ছেলে’ হল প্রযোজ্য কর্তা।

সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

কর্তা ও ক্রিয়া একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হল তাকে  সমধাতুজ কর্তা বলে।

উদাহরণ লেখক বই লেখেন। ক্রিয়া লেখেন ও কর্তা লেখক একই ধাতু ‘লিখ’ থেকে উৎপন্ন।

ব্যতিহার কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

একই ক্রিয়ার একের অধিক কর্তা থাকলে এবং তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বুঝালে সে কর্তাগুলি কে একসঙ্গে ব্যতিহার কর্তা বলে।

উদাহরণ কবিতে কবিতে যুদ্ধ হয়। এখানে ‘কবিতে কবিতে’ হল ব্যতিহার কর্তা। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়। এখানে ‘রাজায় রাজায়’ হল ব্যতিহার কর্তা।

বাক্যাংশ কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

সমাপিকা ক্রিয়া বিহীন কোন বাক্যাংশ ক্রিয়া সম্পাদন করলে অর্থাৎ বাক্যের কিছুটা অংশ ক্রিয়ার কর্তা  হলে তাকে বাক্যাংশ কর্তা বলে।

উদাহরণ – তোমার এই চলে যাওয়াটা ভালো দেখায়নি। এখানে তোমার এই চলে যাওয়াটা হল বাক্যাংশ কর্তা। ‘সৎ পথে জীবনযাপন করা’ মোটেই সহজ নয়। এখানে ‘সৎ পথে জীবনযাপন করা’ হল বাক্যাংশ কর্তা।

উপবাক্যীয় কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ  দাও।

কোন বাক্যের অন্তর্গত উপবাক্য কর্তা হিসেবে ক্রিয়া সম্পাদন করলে তাকে উপবাক্যীয় কর্তা বলে।

উদাহরণ সে এমনভাবে ফাঁকি দেবে ভাবতেই পারেনি। বাক্যটিতে ‘সে এমনভাবে ফাঁকি দেবে’ এই খন্ড বাক্যটি হল উপবাক্যীয় কর্তার উদাহরণ। সে আসবে না এটা হয় না। বাক্যটিতে সে আসবে না এই খন্ড বাক্যটি হলো উপবাক্যীয় কর্তার উদাহরণ।

নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

কোন বাক্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার বিভিন্ন কর্তা থাকলে অসমাপিকা ক্রিয়ার নিয়ন্ত্রক কর্তাটিকে নিরপেক্ষ কর্তা বলা হয়।

উদাহরণ ‘দাঁত’ থাকতে মানুষ দাঁতের মর্যাদা বোঝে না। এখানে দাঁত হলো নিরপেক্ষ কর্তার উদাহরণ।

সহযোগী কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

বাক্যে যদি দুটি কর্তা থাকে এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার ভাব থাকে অর্থাৎ দুই বা ততোধিক কর্তার মধ্যে সহযোগিতা থাকলে তাকে সহযোগী কর্তা বলে।

উদাহরণ ‘তুমি আমি’ মিলে পৌঁছে যাব। এখানে তুমি আমি কর্তা দুটির মধ্যে সহযোগিতার ভাব থাকায় এটি সহযোগী কর্তার উদাহরণ। শাশুড়ি – বউয়ে বসে রুটি করছে। এখানে শাশুড়ি ও বউ কথা দুটির মধ্যে সহযোগিতার ভাব থাকায় এটি সহযোগী কর্তা উদাহরণ।

অনুক্ত কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যের কর্তাকে অনুক্ত কর্তা বলে। এই দুই বাচ্যে প্রকৃত কর্তাটি বাক্যের উদ্দেশ্য হতে পারে না। তাই আপাতদৃষ্টিতে তাকে কর্তা বলে মনে হয় না। কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে কর্তা প্রধানরূপে উক্ত হয় না ।

উদাহরণ রাম কর্তৃক রাবণ নিহত হন। এখানে কর্তা ‘রাম’ বাক্যটির উদ্দেশ্য নয়। তাই এটি অনুক্ত কর্তার উদাহরণ।

সাধন কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

করণ বা উপকরণ যখন কর্তা রূপে কাজ করে তখন তাকে উপকরণ কর্তা বা সাধন কর্তা বলে।

উদাহরণ – ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। এই বাক্যে ‘ঢেঁকি’ একটি উপকরণ কর্তার উদাহরণ।

কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

বাক্যে যদি ক্রিয়ার কর্তার উল্লেখ না থাকে এবং কর্ম যদি কর্তার মতো আচরণ করে তবে তাকে কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা বলা হয়।

উদাহরণশাঁখ বাজে। প্রদত্ত বাক্যটিতে ক্রিয়ার কর্তার উল্লেখ নেই এবং কর্ম এখানে কর্তার মতো আচরণ করায় বাক্যটিতে কর্ম কর্তৃবাচ্যের কর্তা হল এখানে ‘শাঁখ’।

ঊহ্য কর্তা বাক্যের মধ্যে কর্তা না থাকলে, তাকে ঊহ্য কর্তা বলে।

উদাহরণ – “বাড়ি ফিরে পড়তে বসবো।”- এই বাক্যের কর্তা ‘আমি’ ঊহ্য আছে। এটিই ঊহ্য কর্তা।

Leave a Comment