fbpx

বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার: একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (দ্বিতীয় পর্ব প্রথম অধ্যায়)

একাদশ শ্রেণী বাংলার বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি হতে বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার দ্বিতীয় পর্ব: ভাষা (প্রথম পর্যায়) প্রথম অধ্যায় বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার হতে ছোটো প্রশ্ন ও বড় প্রশ্নের উত্তর নিম্নে দেওয়া হল।

বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার দ্বিতীয় পর্ব প্রথম অধ্যায় একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি।

শ্রেণী একাদশ
বিষয় বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি
পর্ব দ্বিতীয় পর্ব: ভাষা (প্রথম পর্যায়)
অধ্যায়প্রথম অধ্যায় বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার

Table of Contents

একাদশ শ্রেণী বাংলার বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি হতে বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার

দ্বিতীয় পর্ব: ভাষা (প্রথম পর্যায়) প্রথম অধ্যায় বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার হতে ছোটো প্রশ্ন ও বড় প্রশ্নের উত্তর


ভাষা (প্রথম পর্যায়) প্রথম অধ্যায় বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার হতে ছোটো প্রশ্ন

১। বিশ্বভাষা বা কৃত্রিম সর্বজনীন ভাষার কথা প্রথম কে চিন্তা করেছিলেন?

দার্শনিক দেকার্ত বিশ্বভাষা বা কৃত্রিম সর্বজনীন ভাষার কথা প্রথম চিন্তা করেছিলেন।

২। দেকার্ত কোন সময়ের লোক ছিলেন? 

দার্শনিক দেকার্ত ছিলেন খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধের লোক।

৩। দেকার্ত ছাড়া আর কে আন্তর্জাতিক ভাষার পরিকল্পনা করেছিলেন?

দার্শনিক দেকার্ত ছাড়া জার্মান মনীষী শ্লেয়ের আন্তর্জাতিক ভাষার পরিকল্পনা করেছিলেন। 

৪। ফোলাপ্যুক্ বা ভোলাপ্যুক কী?

একটি আন্তর্জাতিক সর্বজনীন ভাষা হল ফোলাপ্যুক্ বা ভোলাপ্যুক।

৫। কয়েকটি আন্তর্জাতিক ভাষা পরিকল্পনার নাম লেখো।

কয়েকটি আন্তর্জাতিক ভাষা পরিকল্পনার নাম হল Idiom neutral, Ido Latino, Sine flexione, Antido, Occidental; Novial ইত্যাদি।

৬। বিশ্বভাষা বা কৃত্রিম আন্তর্জাতিক ভাষার মধ্যে কোন ভাষা প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল?

বিশ্বভাষা বা কৃত্রিম আন্তর্জাতিক ভাষার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত ভাষাটি হল এসপেরান্তো’ (Esperanto)।

৭। এসপেরান্তো ভাষার সহজতম দিক কোনগুলি 

এসপেরান্তো ভাষার বানান খুব বিধিবদ্ধ, উচ্চারণ অনুসারী এবং ব্যাকরণ অত্যন্ত সহজ।

৮। পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাবংশ কাকে বলে?

পৃথিবীর ভাষাসমূহ কয়েকটি আদি উৎস থেকে জন্মলাভ করেছে। এই আদি উৎসগুলিকে পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাবংশ বলা হয়।

৯। প্রাচীনতম ভাষাবংশের উৎস কীভাবে নির্ণয় করা হয়েছে?

তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের পদ্ধতির সাহায্যে পৃথিবীর ভাষাগুলির উৎস নির্ণয় করা হয়েছে।

১০ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশকে আর কোন নামে অভিহিত করা হয় ?

ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশকে ইন্দো-জার্মানিক বা আর্য ভাষাবংশ বলেও অভিহিত করা হয়।

১১। পৃথিবীতে কোন বংশের ভাষা-ভাষীর জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি ঘটেছে?

পৃথিবীতে ইন্দো-ইউরোপীয় বংশের ভাষা-ভাষীর জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিপত্তি ঘটেছে।

১২। আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল?

আর্যদের আদি বাসস্থান ছিল এক মতে মধ্য-ইউরোপ এবং অন্য মতে দক্ষিণ রাশিয়ার উরাল পর্বতের পাদদেশে।

১৩। সেমীয়-হামীয় বংশের প্রধান দুটি উপশাখার নাম কী ? 

সেমীয়-হামীয় বংশের প্রধান দুটি উপশাখা হল সেমীয় এবং হামীয়।

১৪। মিশরে প্রথম কোন ভাষা প্রচলিত ছিল?

মিশরে প্রথম প্রাচীন মিশরীয় ভাষা প্রচলিত ছিল।

১৫. প্রাচীন মিশরের ভাষা থেকে কোন ভাষার উদ্ভব ঘটে?

প্রাচীন মিশরের ভাষা থেকে কপটিক ভাষা উদ্ভূত হয়েছিল।

১৬ মিশর থেকে কপটিক ভাষা কোন সময়ে বিলুপ্ত হয়ে যায় ?

মিশর থেকে কপটিক ভাষা সপ্তদশ শতাব্দীতে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

১৭। মিশরে এখন কোন কথ্য ভাষা প্রচলিত?  

মিশরে এখন ‘আরবি’ কথ্য ভাষা প্রচলিত।

১৮‌ ’বান্টু’ বংশের ভাষা কোন জায়গায় প্রচলিত রয়েছে?

‘বান্টু’ বংশের ভাষা মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় প্রচলিত রয়েছে।

১৯। ‘বান্টু’ বংশের অন্তর্গত দুটি ভাষার নাম লেখো। 

‘বান্টু’ বংশের অন্তর্গত দুটি ভাষা হল সোয়াহিলি ও কাফির।

২০। দ্ৰাবিড় বংশের কয়েকটি ভাষার উল্লেখ করো।

দ্রাবিড় বংশের ভাষার মধ্যে রয়েছে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড় ইত্যাদি।

২১। অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখার কটি উপশাখা ও কী কী?

অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখার দুটি উপশাখা – মোন-খমের এবং কোল। 

২২। মোন-খমের ভাষা কোথায় প্রচলিত?

মোন-খমের ভাষা বার্মা-মালয়ের স্থানে স্থানে এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে প্রচলিত হয়ে থাকে।

২৩। ‘কোল’ উপশাখার ভাষাগুলি কোথায় প্রচলিত?

‘কোল’ উপশাখার ভাষাগুলি পশ্চিমবঙ্গে, ওড়িশায়, বিহারে, মধ্যপ্রদেশে ও অন্ধ্রপ্রদেশের পূর্ব-উত্তর অঞ্চলে প্রচলিত।

২৪। অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখার প্রধান ভাষাগুলি কী? 

অস্ট্রো-এশিয়াটিক শাখার প্রধান ভাষা হল শবর, সাঁওতালি, খাসি, মুন্ডারি ও নিকোবরী।

২৫। ভোট-চিনীয় বংশের কটি শাখা ও কী কী? 

ভোট-চিনীয় বংশের তিনটি শাখা – চিনীয়, থাই ও ভোটবর্মী।

২৬। ভোট-বর্মী’ শাখার কয়টি উপশাখা এবং কী কী?

‘ভোট-বর্মী’ শাখার তিনটি উপশাখা – ভোট বা তিব্বতী, বর্মী এবং বোড়ো বা ভোট।


ভাষা (প্রথম পর্যায়) প্রথম অধ্যায় বিশ্বের ভাষা ও ভাষা পরিবার হতে বড় প্রশ্ন

১। ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণীবিভাগ করার পদ্ধতিগত সুবিধা কি? এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর। ২+৩  (২০১৪) 

ভাষাবিদগণ পৃথিবীতে প্রচলিত ভাষাগুলিকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে শ্রেণীবদ্ধ করার প্রয়াস করেছেন। সেইরকম একটি পদ্ধতি হল রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী ভাষার শ্রেণীবিভাগ। এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা এই যে, ভাষার সাংগঠনিক অবয়বটি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তাই এই পদ্ধতির ফলে নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে পৃথিবীর সকল ভাষাকে বর্গীভূত করা সম্ভব হয়। ভাষার রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত।

রূপতত্ত্ব অনুযায়ী ভাষার শ্রেণীবিভাগ :- রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী ভাষাগুলিকে দুইটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যথা –

(১) অসমবায়ী ভাষা :- যে সকল ভাষায় বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতির আলাদা কোনো অস্তিত্ব থাকে না, বাক্যের মধ্যে শব্দের অবস্থান দেখে তার ভূমিকা নির্ণয় করা হয়, সেই সব ভাষাকে অসমবায়ী ভাষা বলে। যেমন – চিনা ভাষা

(২) সমবায়ী ভাষা :- যে সব ভাষাগুলিতে পদগঠনে বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, সেই সব ভাষাকে সমবায়ী বলে। এই ধরনের ভাষা মূলত তিন প্রকার –

(ক) মুক্তান্বয়ী :- যে সমস্ত ভাষায় বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতির আলাদা অস্তিত্ব বজায় থাকে সেগুলিকে মুক্তান্বয়ী ভাষা বলা হয়। যেমন – তুর্কি ভাষা।

(খ) অত্যান্বয়ী :- যে সমস্ত ভাষায় বাক্যের বাইরে শব্দের কোনো স্বাধীন অস্তিত্ব থাকে না, বাক্যই ভাষার ক্ষুদ্রতম একক তাদের অত্যান্বয়ী ভাষা বলা হয়। যেমন – এস্কিমোদের ভাষা।

(গ) সমন্বয়ী :- যে সমস্ত ভাষায় বিভক্তি, প্রত্যয়, উপসর্গ প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে এমনভাবে মিশে যায় যে তাদের স্বতন্ত্র করার উপায় থাকে না, তাদেরকে সমম্বয়ী ভাষা বলে। যেমন – বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি প্রভৃতি।

২। মিশ্র ভাষা কাকে বলে? এই ভাষার চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর।  ১+৪  (২০১৬, ২০২২)

মিশ্র ভাষা :- নানা করনে একাধিক ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ যদি কোনো এক বিশেষ অঞ্চলে সমবেত হয় তখন সেই দুই বা ততোধিক ভাষার মধ্যে মিশ্রন ঘটে এবং এক মিশ্র ভাষার জন্ম হয়। 

উদাহরণ :- প্রাচীন মিশ্র ভামাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিজিন-ইংরেজি, বিচ-লা-মার, মরিশাস-ক্রেওল এবং চিনুক।

বৈশিষ্ট্য :- (১) এই মিশ্র ভাষায় একাধিক ভাষার ভাষিক উপাদান পাশাপাশি বজায় থাকে। তবে উন্নত ভাষার প্রাধান্য দেখা দিতে পারে।

(২) এই ধরনের ভাষায় ব্যাকরনের কোনো সুষ্ঠু নিয়ম বজায় থাকে না। কোনো একটি ভাষার নিয়ম সরাসরি ব্যবহৃত হয়।

(৩) মিশ ভাষার শব্দভাণ্ডার সীমিত। এই ভাষা মূলত প্রয়ােজনভিত্তিক তাই এর স্থায়ীত্ব কম।

(৪) এই ভাষাগুলি সাধারণত কথ্য রূপেই বেশি ব্যবহৃত হয়, লিখিত সাহিত্যের বিকাশের সম্ভাবনা নামমাত্র থাকে।

৩। অবর্গীভূত ভাষা কাকে বলে? পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার পরিচয় দাও। ২+৩ (২০১৭) 

অবর্গীভূত ভাষা :- পৃথিবীর যে সমস্ত ভাষার এমন কোনো ভাষাতাত্বিক প্রমাণ বা সূত্র পাওয়া যায় নি, যার দ্বারা তাকে অন্য একাধিক ভাষার সঙ্গে একই বংশজাত বা কোনো একটি নির্দিষ্ট ভাষাবর্গের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা যায়, তাদের অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা বলে। 

উদাহরণ :- জাপানি ও কোরীয়, বাস্ক, বুরুশাসকি এবং আন্দামনি ভাষা শাখার অন্তর্গত ভাষাগুলি এই শ্রেণির অন্তর্গত।

জাপানি ও কোরীয় :- কোরীয় ভাষা এবং উপভাষা-সহ জাপানি ভাষার সঙ্গে আলতাইক ভাষাবংশের ভাষাগুলির সামান্য মিল আছে। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কোরীয় ভাষা এবং জাপান ও রিয়ুকিয়ু দ্বীপে জাপানি ভাষা প্রচলিত। প্রত্যয়, বিভক্তি এবং পদক্রমের দিক দিয়ে এই দুই ভাষার মধ্যে মিল থাকলেও দুই ভাষায় কারকবোধক অনুসর্গের প্রয়োগবিধি সম্পূর্ণ পৃথক। জাপানি ভাষার উপর চিনা ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতির প্রভাব যেমন আছে, তেমনি কোরীয় ভাষাতেও একই প্রভাব আছে।

বাস্ক :- এই ভাষা ফ্রান্সের পশ্চিমে এবং স্পেনের পূর্বদিকে পিরেনিজ পর্বতমালার চারপাশে প্রচলিত। উত্তর স্পেনের দুই শতাংশ এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু মানুষের মাতৃভাষা বাস্ক। ফিনো-উগ্ৰীয় অর্থাৎ ইরানীয় ভাষা-পরিবারের ভাষাগুলির সঙ্গে এই ভাষার সামান্য মিল আছে।

বুরুশাসকি :- ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে বুরুশাসকি ভাষা নামে এক বিচ্ছিন্ন ভাষা প্রচলিত রয়েছে।

আন্দামানি :- আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে প্রচলিত শারি, কোরা, ইয়ারভা প্রভৃতি ভাষা এই বিচ্ছিন্ন ভাষাশাখার অন্তর্গত। কম্বোডিয়ার খমের ভাষাও অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা

৪। বিশ্বভাষা সম্পর্কে ভাষাবিদদের চিন্তা ও প্রকাশ যা ঘটেছে তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 

ভাষা হল মানুষের ভাবপ্রকাশ এবং ভাব অনুভবের মাধ্যম। ভাষা প্রত্যেকটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতির বাহক এবং তার স্বাতন্ত্রের দ্যোতক। ভাষা সৃষ্টির মূলে রয়েছে ব্যক্তিমানুষের মন ও চিন্তা, আর সমাজবদ্ধ মানুষের ভাববিনিময়ের ইচ্ছা। মানবসভ্যতার অনাদিকাল থেকে গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ কণ্ঠধ্বনির সাহায্যে পরস্পরের কাছে মনোভাব জানানোর চেষ্টা করেছে। সভ্যতার প্রথম যুগে ভাষা ছিল অস্ফুট এবং অপরিণত। সুদীর্ঘকাল ধরে এক-একটি নির্দিষ্ট জনসমষ্টির মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ভাষা বর্তমান রূপ পেয়েছে।

ভাষা জাতিগত নিজস্ব সংস্কৃতির ও স্বাতন্ত্র্যের দ্যোতক হওয়ায় ভাষাগত ভেদাভেদ খুবই প্রকট। মাতৃভাষার প্রতি টান, আকর্ষণ ও আকুতির মধ্যে রয়েছে এক চিরকালীন আবেদন। ভাবপ্রকাশের এই মাধ্যম প্রত্যেকেরই অর্জিত অধিকারের মতো। আবার মাতৃভাষা ও একটি-দুটি ভাষা আয়ত্ত করে সব জাতির সব দেশের মানুষের সঙ্গে ভাব-বিনিময় করা যায় না। সাধারণ মানুষের জ্ঞান, প্রজ্ঞাও তো সীমিত। সে ক্ষেত্রে এমন কোনো একটি ভাষা যদি থাকত যা শিখে সব দেশের সব জাতির মানুষের সঙ্গে ভাব-বিনিময় করা যেত, তাহলে আমাদের পরিশ্রম ও সময় অনেক বেঁচে যেত। 

এক সময় ফরাসি ভাষা প্রায় আন্তর্জাতিক ভাষার স্বীকৃতি লাভ করেছিল, পরে আবার ইংরেজি ভাষা আন্তর্জাতিক প্রসার লাভ করে। কিন্তু পরবর্তীকালে ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রও অনেকটা সংকুচিত হয়ে পড়ে। অথচ পৃথিবীর অনেক মনীষী, দার্শনিকদের চিন্তায় বিশ্ব-ঐক্য এবং এক বিশ্বের কথা মাথায় দানা বেঁধেছিল। তবে এই ভাবনা কিন্তু ভাষা জিজ্ঞাসুদের মনে অনেক আগে থেকেই দানা বেঁধে উঠেছিল। তাঁরা জাতির মধ্যে ভাষাগত ব্যবধান দূর করার জন্য আন্তর্জাতিক ভাষা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

খ্রিস্টীয় সতেরো শতকের প্রথমার্ধে দার্শনিক দেকার্ত প্রথম কৃত্রিম আন্তর্জাতিক ভাষার পরিকল্পনা করেছিলেন। এরপর জার্মান মনীষী শ্লেয়ের (Schleyer) একটি আন্তর্জাতিক ভাষার পরিকল্পনা করেছিলেন, যার নাম ফোলাপ্যুক বা ভোলাপ্যুক। এরপর আরও কিছু আন্তর্জাতিক ভাষার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তেমন – Idiom neutral, I do Latino sine flexione, Antido Occidental, Movial ইত্যাদি।

যে কৃত্রিম আন্তর্জাতিক ভাষাটি সমর্থন লাভ করেছিল সেটি হল এসপেরান্তো (Esperanto)। এটি একটি সহজ ভাষা, বানান খুব বিধিবদ্ধ ও উচ্চারণ অনুসারী। এখানে বানানে ও উচ্চারণে কোনো বৈষম্য রাখা হয় নি, ব্যাকরণও খুব সোজা ও সংক্ষিপ্ত; কেবল ১৬টি নিয়মেই বেঁধে রাখা হয়েছে। এর একটি নিয়ম হল পুরুষ ও বচন অনুযায়ী ক্রিয়ার রূপের কোনো পরিবর্তন হবে না। যেমন –

Mi dormas nokte = আমি রাত্রে ঘুমাই। 

Li dormas nokte = সে রাত্রে ঘুমায়।

দেখা যায় বাংলায় পুরুষানুযায়ী ক্রিয়াপদের পরিবর্তন হলেও এসপেরান্তো ভাষায় domas একই রয়েছে। এই ভাষার শব্দভাণ্ডারও কম। ভাষাটি প্রচারের জন্য Esperanto Associations গড়ে তোলা হয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা এই ভাষা শেখেন কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে এই ভাষা বিশেষ প্রচার লাভ করে নি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে এই ভাষাকে ভাব-বিনিময়ের মাধ্যমরূপে গ্রহণ না করলে এই ভাষার ব্যাপক স্বীকৃতি সম্ভব নয়। অবশ্য এই কথাও মনে রাখতে হবে যে, শুধু একটি ভাষার সাহায্যে আন্তর্জাতিক ভাব-বিনিময় বর্ধিত করা যায় না।

Leave a Comment