মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

জন্ম১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে
মৃত্যু১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর
পিতাহরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়
মাতানীরদাসুন্দরী দেবী
বিখ্যাত উপন্যাসপদ্মানদীর মাঝি, পুতুল নাচের ইতিকথা
পেশা লেখক

Table of Contents

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনী


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মে মঙ্গলবার দুমকায় জন্মগ্রহণ করেন। তখন দুমকা ছিল সাঁওতাল পরগনার রাজধানী শহর।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামাতা

পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় সেটলমেন্ট বিভাগে কানুনগোর চাকরি করতেন। সেই উপলক্ষ্যে তিনি তখন দুমকায় সপরিবারে বাস করছিলেন। মানিকের মা নীরদাসুন্দরী দেবী। ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের মালপাদিয়া গ্রামে মানিকের পৈতৃক নিবাস ছিল।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম

মানিকের ভালো নাম ছিল প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। ডাকনাম ছিল মানিক। বাংলা সাহিত্যে তিনি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে সুপরিচিত। তারা ছিলেন আট ভাই ও ছয় বোন। মানিক ছিলেন পঞ্চম।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নামকরণের ইতিহাস

‘মানিক’ নামের একটি ছোট ইতিহাস আছে। তাঁর গায়ের উজ্জ্বল কালো রং ও সুন্দর মুখশ্রী দেখে আঁতুড় থেকেই তাঁর নামকরণ হয় কালোমানিক – সেই মানিক নামটিই রয়ে যায় আজীবন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিক্ষাজীবন

  • (১) মানিকের শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কারণ পিতাকে চাকরিসূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতে হত। মানিক কলকাতার মিত্র ইন্সটিটিউশনে কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন।
  • (২) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে আইএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হন বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ন কলেজ থেকে। তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভরতি হন অঙ্কে অনার্স নিয়ে।

বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব

প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় বন্ধুদের সঙ্গে বাজি রেখে আকস্মিকভাবে বাংলা সাহিত্যে তাঁর আবির্ভাব। সাহিত্যের নেশাই তাঁর পাঠ্যজীবনে বিপর্যয় আনে, অভিভাবকদের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য হয়ে ওঠে, ফলে জেদি মানিক চরম দুঃখদারিদ্র্যকে বরণ করে সাহিত্যসাধনাকে পেশারূপে গ্রহণ করেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্য সাধনা ও রচনাসম্ভার

মানিকের সাহিত্যসৃষ্টির পরিমাণ সুবিশাল। গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাসের সংখ্যা সাতান্নটি। তাছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ তো আছেই। প্রসঙ্গত বলা যায়, বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ব্যক্তি, যিনি সাহিত্যসাধনাকে পুরোপুরি পেশা করে জীবিকানির্বাহের দুঃসাহসিক ঝুঁকি নিয়েছিলেন।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘দিবারাত্রির কাব্য’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাস তাঁকে জনপ্রিয়তা ও খ্যাতির উচ্চ শিখরে উত্তীর্ণ করলেও ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। তাঁর রচিত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’, ‘শহরতলী’, ‘জননী’, ‘প্রতিবিম্ব’, ‘অহিংসা’, ‘চতুষ্কোণ’ প্রভৃতি।

তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘অতসী মামী’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গল্পগ্রন্থ যথাক্রমে ‘প্রাগৈতিহাসিক’ ও ‘সরীসৃপ। তাছাড়া ‘মাটির মাশুল’, ‘হলুদপোড়া’, ‘আজ-কাল-পরশুর গল্প’, ‘মিহি ও মোটা কাহিনী’, ‘ছোটবকুলপুরের যাত্রী’ প্রভৃতি তাঁর অন্যান্য গল্পগ্রন্থ। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক প্রথম শ্রেণির উৎকৃষ্ট ছোটোগল্প আছে। এই প্রসঙ্গে ‘প্রাগৈতিহাসিক’, ‘সরীসৃপ’, ‘আত্মহত্যার অধিকার’, ‘ছোটবকুলপুরের যাত্রী’, ‘সর্পিল’, ‘নেকী’ প্রভৃতি ছোটোগল্পের নাম উল্লেখ্য।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু

১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনাবসান হয়।

উপসংহার

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকালপ্রয়াণ সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সমালোচক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “অকালমৃত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাগৈতিহাসিক যে শক্তিকে বিশ্বাস করেছিলেন জীবনের সমাপ্তি অধ্যায়ে সেই শক্তির অপরিমিত সম্ভাবনা ও সর্বোত্তম সার্থকতার সন্ধান পেয়েছিলেন। ‘চাষীর মেয়ে’ তারই সোনালী ফসল বয়ে আনছিল, কিন্তু সেই ফসল তোলা শেষ হল না, তার বিচ্ছিন্ন পান্ডুলিপির পত্র সংগ্রহ ও গ্রন্থ বন্ধন অসম্পূর্ণই রইলো। তার আগেই তিনি চলে গেলেন।”


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে জিজ্ঞাস্য (FAQ)

  1. পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসের রচয়িতা কে?

    মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

  2. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কি?

    প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

  3. কোন উপন্যাস রচনা করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন?

    পদ্মানদীর মাঝি

  4. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতার নাম কি?

    হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়




Leave a Comment