নুন: একাদশ শ্রেণী বাংলা কবিতা

নুন একাদশ শ্রেণী বাংলা সাহিত্য চর্চার কবিতা। নুনের রচয়িতা হলেন জয় গোস্বামী। নুন কবিতা হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর নিম্নে দেওয়া হল। Bengali Class xi / Eleven  NUN Question Answer. কবিতা নুন হতে 5 নং প্রশ্ন ও উত্তরগুলি দেওয়া হল।

বিষয়বাংলা
শ্রেণীএকাদশ শ্রেণী বাংলা কবিতা
গল্পনুন
রচনাজয় গোস্বামী
নুন

Table of Contents

নুন কবিতা হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর

নুন – জয় গোস্বামী


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-১: “আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক” – কে বলেছে ? এই দাবি কার কাছে? কেন? ১+১+৩ (২০১৪, ২০১৯)

আলোচ্য উক্তিটি ‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী স্বয়ং ব্যক্ত করেছেন নিম্নবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে।

দরিদ্র, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মুখপাত্র হিসেবে কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘নুন’ কবিতায় শাসকশ্রেণি তথা সমগ্র সমাজের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন। 

কবি জানিয়েছেন দুঃখ করে লাভ নেই বলেই দরিদ্র মানুষেরা অল্পেতেই খুশি থাকার মন্ত্র শিখে নেয়। সাধারণ ভাতকাপড়েই তাদের দিন কেটে যায়। কঠোর পরিশ্রম তারা দু-বেলা অন্নবস্ত্রের প্রয়োজন মেটায়। তাদের কোনো সঞ্চয় নেই, নেই কোনো শখ মেটানোর ক্ষমতা। রোজগার কম বলে অসুখ হলে মহাজনের কাছ থেকে ধার করে কোনোক্রমে তারা সংসার চালায়। 

প্রতিদিনের জীবনে এই সামান্য আয়োজনটুকুও যখন তাদের জোটে না তখনই তাদের মাথার ঠিক থাকে না। বাড়িতে অশান্তি করে, সারা পাড়ায় পৌঁছে যায় তাদের ক্ষোভের খবর। এই চরম অভাব আর অসহায়তাই একসময় তাদেরকে উচ্চকণ্ঠ করে তোলে। তারা নিজেদের অধিকারের দাবির ঘোষণা করে –

“আমরা তো সামান্য লোক 

আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।” 

শাসক শ্রেণি তথা সমগ্র সমাজের কাছে তাই গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কবির একান্ত আবেদন, এই গরিব নিম্নবিত্ত মানুষদের অন্তত প্রতিদিনের শুকনো ভাতে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় লবণের ব্যবস্থাটুকু যেন করা হয়।


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-২: ‘আমি তার মাথায় চড়ি’ – কে, কার মাথায় চড়ে? পংক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। ১+১+৩ (২০১৫) 

কবি জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতার আলোচ্য অংশে ক্ষুধার্ত হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষটি তার রাগের মাথায় চড়ে। 

‘আমি’ মানুষটি একজন হতদরিদ্র শ্রমজীবী লােক। ‘দিন খাটে দিন খায়’ এমনি আর্থিক অবস্থা সংসারের। সংসারের এই দুঃখকষ্ট, অভাব-অনটন ফলাও করে বলে না, প্রতিবাদে সােচ্চার হয় না। কারণ, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে তার ধারণা হয়েছে এই ভাবে দুঃখকষ্টের কথা বলে দুঃখের প্রতিকার হয় না। সাধারণ ভাতকাপড়ে দিন চললেই তারা সন্তুষ্ট। অসুখ-বিসুখে ধারদেনা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। অবশ্য রাত্রিতে গঞ্জিকার কলকেতে টান দেয়। মাঝে মাঝে বাড়ি ফেরে মাঝরাতে। তখন ব্যঞ্জনহীন ঠান্ডা ভাতে নুনের জোগান না থাকায় ভাত বিস্বাদ হয়। একদিকে ভয়াবহ দারিদ্র্য অন্যদিকে ক্ষুধার্ত পেটে বিস্বাদ ভাত গলা দিয়ে না নামায় রাগ মাথায় চড়ে।

রাগ যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায়, তখন দিকবিদিক জ্ঞান থাকে না। তখন মানুষের জ্ঞান, বােধবুদ্ধি, ন্যায়-অন্যায়, বিচার-বিবেচনা সব লােপ পায়। মনুষ্যত্ব লােপ পেয়ে পশুত্ব প্রাধান্য পায়। হিতাহিত বােধের অস্তিত্ব পর্যন্ত থাকে না। তখন রাগের থেকে বড়াে হয়ে দাঁড়ায় ক্রোধােন্মত্ত মানুষের মনুষ্যত্বহীন পশুত্ব। হিতাহিত জ্ঞানহীন অন্ধ ক্রোধােন্মত্ততা যেন রাগের মাথার ওপর ক্রোধােন্মত্ত মানুষের চড়ে বসা। তার ফলও হাতেহাতে পাওয়া যায় – বাপ-ব্যাটায় তর্ক হয়, ভাইয়ে ভাইয়ে কলহ বাধে। ফলে পাড়ার লােকের ঘুম ছুটিয়ে সারা পাড়া যেন মাথায় করে।


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-৩: “আমরা তো অল্পে খুশি” – অল্পে খুশি মানুষদের জীবনমাত্রার যে ছবি ‘নুন’ কবিতায় ফুটে উঠেছে তার পরিচয় দাও। ৫ (২০১৬, ২০২২)

কবি সাহিত্যিকগনের সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা পড়ে সমাজের চিত্র, চিন্তনে, মননে প্রকাশ পায় সমাজের পথ। কবি জয় গোস্বামী বর্তমানকালের অন্যতম বলিষ্ঠ কবি, তার কাব্যে সমাজের চিত্রগুলি অত্যন্ত বঞ্জনাবাহী ও আন্তরিক। তাঁর নুন করিতাটি ‘ভূতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।

আলোচ্য কবিতাটিতে সাধারণ মানুষের যন্ত্রনাময় জীবন কাহিনীর ছবি ধরা পড়েছে। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সাধারণ মানুষ তাও পাচ্ছে না। দৈনন্দিন আর্থিক অনটনে থাকতে থাকতে সেই সানুষরাই হয়ে উঠছে বেহিসাবি, ঘটছে জীবনের ছন্দপতন। যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে তারা হাতে তুল নিচ্ছে নেশার দ্রব্য। 

আসলে যারা সমাজের চালক তারা এই লোক সাধারণকে গুরুত্ব দেয় না। তাদের অভাব- অভিযোগকে প্রশ্রয় দেয় না, ববং উপেক্ষাই করে। উপক্ষিত থেকে যায় বলেই এই সাধারণ মানুষ সাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে সংসার সমাজকে বিব্রত করে তোলে। আর তার ফল ভোগ করে সমাজের সবাই।

কবিতাটিতে সাধারণ মানুষের প্রতি শুভ চেতনা সম্পন্ন মানুষের উদাসীনতা, সমাজ সচেতন ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা বোধ প্রকাশ পেয়েছে। গরম ভাত ব্যাঞ্জন ছাড়া, নুন ছাড়া খাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে গরীব শেণীর ঠাণ্ডা ভাতে সামান্য নুন পাওয়া যারে না – তা কখনোই কাম্য নয়। সমাজ ব্যবস্থার এই নির্মম চিত্রটিই কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘নুন’ কবিতায় উপস্থাপিত করেছেন।


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-৪: “আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক” – কারা, কাদের কাছে এই দাবী করেছে? এই দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত? ১+১+৩ (২০১৭, ২০২২)

আলোচ্য উক্তিটি ‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী স্বয়ং ব্যক্ত করেছেন নিম্নবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে।

দরিদ্র, নিম্নবিত্ত শ্রেণির মুখপাত্র হিসেবে কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘নুন’ কবিতায় শাসকশ্রেণি তথা সমগ্র সমাজের কাছে এই দাবি জানিয়েছেন। 

কবি জানিয়েছেন দুঃখ করে লাভ নেই বলেই দরিদ্র মানুষেরা অল্পেতেই খুশি থাকার মন্ত্র শিখে নেয়। সাধারণ ভাতকাপড়েই তাদের দিন কেটে যায়। কঠোর পরিশ্রম তারা দু-বেলা অন্নবস্ত্রের প্রয়োজন মেটায়। তাদের কোনো সঞ্চয় নেই, নেই কোনো শখ মেটানোর ক্ষমতা। রোজগার কম বলে অসুখ হলে মহাজনের কাছ থেকে ধার করে কোনোক্রমে তারা সংসার চালায়। 

প্রতিদিনের জীবনে এই সামান্য আয়োজনটুকুও যখন তাদের জোটে না তখনই তাদের মাথার ঠিক থাকে না। বাড়িতে অশান্তি করে, সারা পাড়ায় পৌঁছে যায় তাদের ক্ষোভের খবর। এই চরম অভাব আর অসহায়তাই একসময় তাদেরকে উচ্চকণ্ঠ করে তোলে। তারা নিজেদের অধিকারের দাবির ঘোষণা করে –

“আমরা তো সামান্য লোক 

আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।” 

শাসক শ্রেণি তথা সমগ্র সমাজের কাছে তাই গরিব-দুঃখী মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কবির একান্ত আবেদন, এই গরিব নিম্নবিত্ত মানুষদের অন্তত প্রতিদিনের শুকনো ভাতে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনীয় লবণের ব্যবস্থাটুকু যেন করা হয়।


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-৫: ‘আমরা তো সামান্য লোক’ – কে, কোন প্রসঙ্গে একথা বলেছে? ‘সামান্য লোক’ শব্দের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। ২+৩  (২০১৮, ২০২৩)

কবি জয় গােস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় হতদরিদ্র শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কথক এই উক্তি করেছেন। 

হতদরিদ্র শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ অল্পে খুশি। তারা জানে দুঃখ প্রকাশ করে দুঃখের সুরাহা হয় না। সাধারণ ভাত-কাপড়ে তাদের জীবন চলে। অসুখে ধারদেনা করে তারা সামাল দেয়। মাঝে মাঝে তাদের সংসার অচল হয়ে পড়ে, বাড়ি ফিরতে দুপুররাত হয়। খেতে বসে ঠান্ডা ভাতে নুনটুকুও জুটে না। তখনই মাথায় রাগ চড়ে। এই প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তির অবতারণা।

দীনদুঃখী সামান্য শ্রমজীবী মানুষের চাওয়াপাওয়া সামান্য, প্রত্যাশাও যৎকিঞ্চিৎ। তাদের কামনা শুকনাে ভাতে সামান্য নুনের ব্যবস্থা থাক। দরিদ্র নিম্নবিত্ত মানুষেরা সারাদিনের পরিশ্রমের পরে যখন বাড়ি ফেরে তখন ক্ষুধায় কাতর। এরপর খেতে বসে পাতে পরিবেশিত হয় সকালের রান্না করা ঠান্ডা ও শুকনাে ভাত। শুধুই ভাত, ব্যঞ্জনের ব্যবস্থাদি নেই। 

তাদের কেনাকাটার টাকাকড়ির সংস্থান নেই। এই একই কারণে সামান্য নুনটুকুও সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি তাদের। নুনবিহীন সবকিছু বিস্বাদ। ঠান্ডা শুকনাে ভাত তাে খাওয়া সম্ভবই নয়। তাই দুঃখে-বেদনায় তাদের বিনীত আবেদন তাদের শুকনাে ভাতে লবণের ব্যবস্থা হােক। 


নুন কবিতা হতে প্রশ্ন-৬: “মাঝে মাঝে চলেও না দিন,” – কার মাঝে মাঝে দিন চলে না? দিন না চলার কারণ কি? এর মাধ্যমে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রার যে ছবি পাওয়া যায় তা লেখ। ১+২+২ (২০২০)

আধুনিক যুগযন্ত্রণার নব রূপকার জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে।

বাপ-ব্যাটার অভাবী সংসারের প্রতিনিধি হিসাবে আলোচ্য কবিতার কথকের মাঝে মাঝে দিন চলে না।

‘দিন না চলার’ কারণ অভাব, স্বভাব ও সমাজ। কবিতায় বাপ-ব্যাটার সংসারে বড়োই অভাব। অসুখ-বিসুখে ধার দেনা তাদের নিত্যসঙ্গী। ‘দিন আনে দিন খাই’ সমাজের প্রতিনিধি তারা। অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও রাতে গঞ্জিকা সেবনের নেশায় মত্ত হয়ে তারা অর্থের অপচয় করেছে। আমাদের সমাজে শ্রেণি বৈষম্যই হয়তো তাদের ভাতের পাত থেকে নুনের অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছে। এই কারণেই নিম্নবিত্ত পরিবারের দিন চলে না।

আলোচ্য কবিতাটিতে সাধারণ মানুষের যন্ত্রনাময় জীবন কাহিনীর ছবি ধরা পড়েছে। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন সাধারণ মানুষ তাও পাচ্ছে না। দৈনন্দিন আর্থিক অনটনে থাকতে থাকতে সেই সানুষরাই হয়ে উঠছে বেহিসাবি, ঘটছে জীবনের ছন্দপতন। যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে তারা হাতে তুল নিচ্ছে নেশার দ্রব্য। 

আসলে যারা সমাজের চালক তারা এই লোক সাধারণকে গুরুত্ব দেয় না। তাদের অভাব- অভিযোগকে প্রশ্রয় দেয় না, ববং উপেক্ষাই করে। উপক্ষিত থেকে যায় বলেই এই সাধারণ মানুষ সাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে সংসার সমাজকে বিব্রত করে তোলে। আর তার ফল ভোগ করে সমাজের সবাই।

কবিতাটিতে সাধারণ মানুষের প্রতি শুভ চেতনা সম্পন্ন মানুষের উদাসীনতা, সমাজ সচেতন ব্যক্তির দায়িত্বহীনতা বোধ প্রকাশ পেয়েছে। গরম ভাত ব্যাঞ্জন ছাড়া, নুন ছাড়া খাওয়া যায়। কিন্তু তাই বলে গরীব শেণীর ঠাণ্ডা ভাতে সামান্য নুন পাওয়া যারে না – তা কখনোই কাম্য নয়। সমাজ ব্যবস্থার এই নির্মম চিত্রটিই কবি জয় গোস্বামী তাঁর ‘নুন’ কবিতায় উপস্থাপিত করেছেন।


Leave a Comment