শিক্ষার সার্কাস: একাদশ শ্রেণী বাংলার ভারতীয় কবিতা

শিক্ষার সার্কাস একাদশ শ্রেণী বাংলা সাহিত্য চর্চার ভারতীয় কবিতা। শিক্ষার সার্কাসের রচয়িতা হলেন আইয়াপ্পা পানিকর। শিক্ষার সার্কাস ভারতীয় কবিতা হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর নিম্নে দেওয়া হল। Bengali Class xi / Eleven SHIKSHAR CIRCUS Question Answer. ভারতীয় কবিতা শিক্ষার সার্কাস হতে 5 নং প্রশ্ন ও উত্তরগুলি দেওয়া হল।

বিষয়বাংলা
শ্রেণীএকাদশ শ্রেণী বাংলা ভারতীয় কবিতা
গল্পশিক্ষার সার্কাস
রচনাআইয়াপ্পা পানিকর
শিক্ষার সার্কাস

Table of Contents

শিক্ষার সার্কাস ভারতীয় কবিতা হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর

শিক্ষার সার্কাস – আইয়াপ্পা পানিকর


শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন-১: “যদি সব শ্রেণী শেষ হয়ে যায় আমি তবু পরের শ্রেণীতে যাব।” – পংক্তি দুটির ব্যঞ্জনার্থ ব্যাখ্যা কর। ৫ (২০১৪) 

‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতায় কবি আইয়াপ্পা পানিকর শিক্ষার অন্তঃসার শূন্যতার দিকটি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। 

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী পর্যায়ক্রমে এক শ্রেণী থেকে আর এক শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু প্রকৃত শিক্ষার অধিকারী সে হতে পারে না।। আত্মসুখী মানুষ নিজের বাসনা পূরন করার মাধ্যমে সাফল্য খুঁজে নিতে চান। তাই শিক্ষা বহির্ভূত জীবনেও সর্বদায় একটা প্রতিযোগীতার মধ্যে দিয়ে চলে। কাঙ্খিত সাফল্য মানবজীবনে কখনও আসে নি। আর তাই সারা জীবন সে সাফল্যের পথ অনুসন্ধান করতে থাকে।

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষাকে আমরা বাহন করিনা, বহন করে চলি। ফলে প্রকৃত শিক্ষা লাভ, শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ এমনকি ব্যক্তিত্বের বিকাশও হয় না। শিক্ষা কেবল বাহ্যিক অলঙ্কার রূপেই থেকে যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনের পর বৃহত্তর জীবনে প্রবেশ করলেও সেখানেও সেই নিরন্তর প্রতিযোগীতা লেগেই থাকে। তাই মানব জীবনে এক শ্রেণী থেকে আর এক শ্রেণীতে উঠার তাগিদ লেগেই থাকে।


শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন-২: আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কবির অনাস্থার কারণ কি? ৫ (২০১৫) অথবা, “সব শিক্ষা একটি সার্কাস” – ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতা অবলম্বনে শিক্ষা সার্কাসের সঙ্গে কিভাবে তুলনীয় আলোচনা কর। ৫ (২০১৬, ২০১৯)

মালয়ালাম সাহিত্যের অগ্ৰপুরুষ কবি আইয়াপ্পা পানিকর ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতায় ভারতীয় সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ভারতবর্ষীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথাগত অন্তঃসারশূন্যতাকে তীব্র শ্লেষে ব্যঙ্গ করেছেন। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে চতুর ইংরেজ শক্তি কেরানি তৈরি করার যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করেছিল বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাও সেই অসার, আত্মবিকাশহীন জ্ঞানহীন শিক্ষা ব্যবস্থারই রূপান্তর। 

পরীক্ষাকেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থা এক শ্রেনি থেকে পরের শ্রেনিতে উত্তরনের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পায়। প্রাতিষ্ঠানিক এই শিক্ষার মধ্যে প্রাকৃতিক শিক্ষার লেশমাত্র নেই। তাই শিক্ষার্থীর বুদ্ধির বিকাশ, তার মন, মনন, জ্ঞান ও চেতনার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে না। এই শিক্ষা ব্যবসাস্থায় অন্তরের অমৃত স্পর্শ নেই।

কবির মনে হয়েছে বর্তমান শিক্ষা একটি সার্কাস মাত্র। সার্কাসে যেমন খেলোয়াড়েরা ট্রাপিজের খেলা দেখাতে গিয়ে নানারকমের কসরত দেখিয়ে শূন্যে দোল খায়, এই শিক্ষাও তেমনি শিক্ষার্থীকে নানা কৌশল ও সামাজিকভাবে উচ্চতর স্তরে প্রতিষ্ঠা লভের মন্ত্রটিই শেখায়। গতানুগতিক পুঁথিকীট তৈরি করা ছাড়া এই শিক্ষায় মৌলিকতা বা উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটে না। ফলে ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী তথা একটি সমগ্ৰ জাতির মানসিক অপমৃত্যু। জ্ঞানের চর্চা থেকে এই শিক্ষা নির্বাসিত বলে কবির কাছে তা ধোঁকা বলে মনে হয়েছে। তাই কবির পর্যবেক্ষণী নিরীক্ষণ –

“সব শিক্ষা একটি সার্কাস যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই।

জ্ঞান কোথায় গেল ? 

সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা!”


শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন-৩: ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার কর। ৫ (২০১৭, ২০২০)

সাহিত্যে নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশক। কোনো রচনার নামকরণ দেখেই পাঠকের মনে রচনাটি সম্পর্কে ধারনা জন্মায়। কখনো বা নামকরণই পাঠক চিত্তকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। নামকরণের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে রচয়িতার মূল বক্তব্য।

মালয়ালম কবি আইয়াপ্পা পানিকরের শিক্ষার সার্কাস কবিতার পরিসর অল্প। তবে স্বল্প পরিসর এই কবিতায় কবি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্তঃসার শূন্যতাকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। তার মতে শিক্ষা লাভ শুরু হয় শৈশবের পথ চলা থেকেই। প্রথম শ্রেণী, দ্বিতীয় শ্রেণী পড়ে ধাপে ধাপে শিক্ষার্থীরা উপাধির মালায় নিজেকে সাজিয়ে তোলে।

বাহ্যিকভাবে শিক্ষার্থী এক শ্রেণী থেকে আর এক শ্রেণীতে উঠে যায়, কিন্তু জ্ঞানের ভাণ্ডার পূর্ণ হয় না। এই এক শ্রেণী থেকে আর এক শ্রেণীতে উঠে যাওয়ার ভাবনাকে কবি সার্কাসের সাথে তুলনা করেছেন। সার্কাসে যেভাবে দক্ষ খেলোয়াড় ট্রাপিজের খেলায় একটা দড়ি ছেড়ে আর একটা দড়ি ধরে, ঠিক সেই ভাবেই শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও একটার পর একটা শ্রেণী শিক্ষার্থী পার করে যায়।

শিক্ষা যদি প্রকৃত জ্ঞানের প্রসারন না ঘটায় তাহলে সেই শিক্ষা সার্কাসের মতো শুধু কৌশল আয়ত্তের পর্যায়ে থেকে যাবে। মানুষের জীবনের, মননের, চিন্তনের সহায়ক তো হবে না, আর তা না হলে শিক্ষা ব্যর্থই। তাই কবির এই ‘শিক্ষার সার্কাস’ নামকরণ যে যথাযথ তা বলাই বাহুল্য।


শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন-৪: ‘জ্ঞান কোথায় গেল?’ – জ্ঞানের অভাব ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় কিভাবে ব্যঞ্জিত হয়েছে? ৫ (২০১৮)

কবি আইয়াপ্পা পানিকর তার ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতার উদ্ধৃতাংশে শিক্ষার একটি বিশেষ দিক তুলে ধরতে চেয়েছেন বলেই আমাদের ধারণা। কারণ, তিনি উদ্ধৃতাংশে একটি প্রশ্ন রেখেছেন – “জ্ঞান কোথায় গেল?” আমরা বলব শিক্ষালাভ করার অর্থই তো জ্ঞানলাভ করা। কিন্তু শিক্ষা শুধু পুঁথিগত বিদ্যার ভাণ্ডার বর্ধিত করার জন্য নয়, বরং শিক্ষার একটি অন্যতম দিক হল অমৃতত্ত্ব লাভের পথে মানুষকে উজ্জীবিত করা। 

শিক্ষা হল প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু। জ্ঞান মানুষের বাধাকে ধ্বংস করে প্রকৃত সত্যের পথ দেখায়। জ্ঞান বর্ধিত হলে চেতনাশক্তি, মননশক্তির প্রকাশ ঘটে। আর জ্ঞান দিয়ে আমরা মানবজীবনের অহংভাব, হিংসা, দ্বেষ, প্রতিযোগিতার মনোভাব থেকে মনকে সরিয়ে উদার, বিস্তৃত, সহনশীল ও পারস্পরিক সহমর্মী হয়ে উঠতে পারি। সর্বোপরি মনের অন্ধকার বা অজ্ঞানতা দূর করে জ্ঞানালোকের পথে অগ্রসর হতে পারি। আর সেটাই মানবজীবনের প্রকৃত সাধনা। তার জন্যই শিক্ষাগ্রহণ। 

তাই কবি বলেন, ‘জ্ঞান কোথায় গেল? সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা।’ তাই ঘটে থাকে, আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে এত ব্যস্ত থাকি, পরস্পরকে উপেক্ষা করে যেভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি, তাতে প্রকৃত জ্ঞানলাভ উপেক্ষিতই থেকে যায়। তাই আমাদের জ্ঞানের জায়গাটাতে ধোঁকা বা ফাঁকি থেকে যায়। কবি চেয়েছেন প্রকৃত জ্ঞানলাভ করে মানবিক হয়ে উঠুক মানুষ, পারস্পরিক প্রতিযোগিতা করে মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নয়, বরং বিস্তৃত হৃদয়ে তাকে গ্রহণ করা, আর তাতেই শিক্ষা সার্কাসে পরিণত না হয়ে জ্ঞানের আধার হয়ে উঠবে।


শিক্ষার সার্কাস প্রশ্ন-৫: বর্তমান জীবনে প্রকৃত শিক্ষার দৈন্য কীভাবে ‘শিক্ষার সার্কাস’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে তা লেখো। ৫ (২০২৩)

মালয়ালাম সাহিত্যের অগ্ৰপুরুষ কবি আইয়াপ্পা পানিকর ‘শিক্ষার সাকাস’ কবিতায় ভারতীয় সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ভারতবর্ষীয় শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথাগত অন্তঃসারশূন্যতাকে তীব্র শ্লেষে ব্যঙ্গ করেছেন। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে চতুর ইংরেজ শক্তি কেরানি তৈরি করার যে শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন করেছিল বর্তমান ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাও সেই অসার, আত্মবিকাশহীন জ্ঞানহীন শিক্ষা ব্যবস্থারই রূপান্তর। 

পরীক্ষাকেন্দ্রিক এই শিক্ষাব্যবস্থা এক শ্রেনি থেকে পরের শ্রেনিতে উত্তরনের মধ্যেই সার্থকতা খুঁজে পায়। প্রাতিষ্ঠানিক এই শিক্ষার মধ্যে প্রাকৃতিক শিক্ষার লেশমাত্র নেই। তাই শিক্ষার্থীর বুদ্ধির বিকাশ, তার মন, মনন, জ্ঞান ও চেতনার পূর্ণাঙ্গ বিকাশ ঘটে না। এই শিক্ষা ব্যবসাস্থায় অন্তরের অমৃত স্পর্শ নেই।

কবির মনে হয়েছে বর্তমান শিক্ষা একটি সার্কাস মাত্র। সার্কাসে যেমন খেলোয়াড়েরা ট্রাপিজের খেলা দেখাতে গিয়ে নানারকমের কসরত দেখিয়ে শূন্যে দোল খায়, এই শিক্ষাও তেমনি শিক্ষার্থীকে নানা কৌশল ও সামাজিকভাবে উচ্চতর স্তরে প্রতিষ্ঠা লভের মন্ত্রটিই শেখায়। গতানুগতিক পুঁথিকীট তৈরি করা ছাড়া এই শিক্ষায় মৌলিকতা বা উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটে না। ফলে ক্রমশ অনিবার্য হয়ে ওঠে শিক্ষার্থী তথা একটি সমগ্ৰ জাতির মানসিক অপমৃত্যু। জ্ঞানের চর্চা থেকে এই শিক্ষা নির্বাসিত বলে কবির কাছে তা ধোঁকা বলে মনে হয়েছে। তাই কবির পর্যবেক্ষণী নিরীক্ষণ –

“সব শিক্ষা একটি সার্কাস

যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই।

জ্ঞান কোথায় গেল ? 

সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা!”


Leave a Comment