তেলেনাপােতা আবিষ্কার একাদশ শ্রেণী বাংলা সাহিত্য চর্চার গল্প। তেলেনাপােতা আবিষ্কারের রচয়িতা হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর নিম্নে দেওয়া হল। Bengali Class xi / Eleven TELENAPOTA ABISHKAR Question Answer. গল্প তেলেনাপােতা আবিষ্কার হতে 5 নং প্রশ্ন ও উত্তরগুলি দেওয়া হল।
বিষয় | বাংলা |
শ্রেণী | একাদশ শ্রেণী বাংলা গল্প |
গল্প | তেলেনাপােতা আবিষ্কার |
রচনা | প্রেমেন্দ্র মিত্র |
তেলেনাপােতা আবিষ্কার গল্প হতে বড় প্রশ্ন ও উত্তর
তেলেনাপােতা আবিষ্কার – প্রেমেন্দ্র মিত্র
১. ‘মনে হবে তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্যি নেই’ – একথা কার, কেন মনে হবে ? এই মনে হওয়ার কারণ কী? (২০১৪, ২০১৮, ২০২২)
উদ্ধৃতিটি কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের অন্যতম ছোটোগল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য গল্পে গল্পকথকের এই কথা মনে হয়েছিল। যে কোনো পাঠকেরই এরকম অনুভূতি হবে বলে মনে হয়।
তেলেনাপোতা থেকে ফিরে এসে ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে নাগরিক যুবক যামিনীর মাকে দেওয়া সমস্ত প্রতিশ্রুতি ভুলে যান। তাই এমনও মনে হবে যে, তেলেনাপোতা বলে সত্যিই কিছু নেই।
গল্পে উল্লেখিত তেলেনাপোতা এমন এক গ্রাম যেখানে মাছ শিকারের জন্য অনেকেই আসে। তারা অনেক স্বপ্ন দেখে অথবা দেখায়। কিন্তু মহানগরীতে পুনরায় ফিরে এলে সেই সব স্বপ্ন বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যায়।
বাস্তবে তেলেনাপোতা নামে স্মৃতি কোনো গ্রাম নেই। আসলে এই বাংলার গ্রামের প্রতীক। তেলেনাপোতা গ্ৰামের ধ্বংসাবশেষ, রোগ-ব্যাধি, দারিদ্র, অসহায়তা, বিপন্নতা বাংলার যে কোনো গ্রামেরই প্রতিচ্ছবি। শহুরে মানুষ যারা গ্রামের জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত নয় – সেই ভাবুক নাগরিক যুবকেরা যামিনী বা যামিনীর মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি মনে রাখতে পারে না। কারণ,
‘তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন মনে হবে’।
আর সেই অপেক্ষারত যামিনীকে মনে হয় “অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা”।
২. ‘কে নিরঞ্জন এলি‘ – নিরঞ্জন কে ? কোন পরিস্থিতিতে গল্পকথক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন ? (২০১৬)
উদ্ধৃতিটি কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের অন্যতম ছোটোগল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ গল্পের প্রধান নারী চরিত্র যামিনী। এই যামিনীর সাথে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল তার নাম নিরঞ্জন। সে যামিনীর মায়ের দূর সম্পর্কের বোনপো।
তেলেনাপােতা আবিষ্কারে গিয়ে গল্পকথকের দৃষ্টি ও হৃদয় আকর্ষণ করেছিল যামিনী। সে ছিল কথকের পানরসিক বন্ধু মণির জ্ঞাতিস্থানীয়া ছিল যামিনী। তাদের বাড়িতেই গল্পকথক ও তার বন্ধুদের মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন হয়েছিল। খাওয়ার পর যখন সবাই বিশ্রাম করছিল তখন যামিনী এসে মণিদাকে ডাকে এবং নিচু স্বরে কিছু কথা বলে যায়।
এরপরই গল্পকথক মণিদার মুখে নিরঞ্জন-বৃত্তান্ত শোনেন। চার বছর আগে এসে যামিনীর মাকে নিরঞ্জন কথা দিয়েছিল বিদেশ থেকে ফিরেই সে যামিনীকে বিয়ে করবে। কিন্তু সে আর ফিরে আসে নি। গল্পকথক ও তার বন্ধুদের মধ্যে কাউকে নিরঞ্জন ভেবে যামিনীর মা যামিনীকে জোর করছিল তাকে ডাকার জন্য। তাই মাকে শান্ত করার জন্যই যামিনী মণিদাকে ডাকতে এসেছিল।
সমস্ত বৃত্তান্ত শুনে কথক যামিনীর মায়ের সাথে দেখা করার আগ্ৰহ প্রকাশ করেন এবং মণিদার সাথে যামিনীর মায়ের কাছে উপস্থিত হন। এই সময় দৃষ্টিশক্তি হীন বৃদ্ধা কথককে নিরঞ্জন বলে সম্বোধন করে। এইভাবেই গল্প কথককে নিরঞ্জন সাজতে হয়েছিল।
৩. তেলেনাপােতা যাওয়ার কারণ কী ? একে লেখক ‘আবিষ্কার’ বলেছেন কেন ? (২০১৯)
উদ্ধৃতিটি কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের অন্যতম ছোটোগল্প ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপােতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপােতা এমন একটি জায়গার নাম যে জায়গাটি জনস্রোতে ভরা রাজধানী শহর থেকে খুব একটা দূরে নয়। ঠাসাঠাসি বাসে চেপে শহর থেকে মাত্র দুঘণ্টার যাত্রাপথে এমন একটি প্রত্যন্ত গ্রাম রয়েছে, যেখানে জীবন যেন থেমে গেছে বলে বােধ হয়। অবসর সময় কাটাতে এবং মৎস্য শিকারের ইচ্ছা চরিতার্থ করবার জন্যই দুই বন্ধুর সঙ্গে কথক তেলেনাপােতায় পাড়ি দেন।
এই তেলেনাপােতায় যাওয়ার ব্যাপারটিকে লেখক আবিষ্কার বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ, সভ্যজগতের এত কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে এমন একটি দমবন্ধ করা পরিবেশে স্থির জীবন প্রবাহের সন্ধান পাওয়া শহরের ব্যস্ত মানুষের কাছে এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। তেলেনাপোতা এমন একটি জায়গা, যেখানকার এক আশ্চর্য সরােবরে পৃথিবীর সবচেয়ে সরল মাছেরা প্রথম বড়শি-বিদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় উৎসুক হয়ে আছে।
এক-দেড়শাে বছর আগে ম্যালেরিয়ার প্রকোপে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এই অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে একটি শ্মশানের দেশ। এখানে দশটা বাড়ি খুঁজলেও একটি পুরুষের দেখা পাওয়া যায় না। এই তেলেনাপােতাতেই কথক আবিষ্কার করেছিলেন তার মাছ ধরার ব্যর্থতার জন্য মাছরাঙার নীরব উপহাস। বেশিরভাগ মানুষের কাছে এই অঞ্চলটি অজ্ঞাত বলে তেলেনাপােতায় যাওয়াকে লেখক আবিষ্কার বলে উল্লেখ করেছেন।
৪ .’তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটির নামকরণের সার্থকতা লেখ।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নামকরণ অভিনব। এই গল্প প্রচলিত সমস্ত টেকনিককে ভেঙে দিয়েছে। মধ্যমপুরুষের বয়ানে রচিত এই গল্পটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য গল্প। এর বিষয়বস্তু অসাধারণ। এই গল্পের বিন্যাস কৌশল চমৎকার। আধা-বাস্তব ও স্বপ্নের সম্মিলনে ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ নামকরণ অসীম ব্যঞ্জনা প্রদান করে।
‘আবিষ্কার’ শব্দটি লেখক ক্রমান্বয়ে বহুবার ব্যবহার করেছেন। এমন এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ, বহু প্রাচীন ভাঙা বাড়ি, আর রহস্যময় সেই বাড়িতে পৌঁছানোর এক কুয়াশা ঘেরা অন্তরীপের মতো পথ বলে দেয় সত্যি সেখানে যেন মিশে আছে আবিষ্কারের অন্য আর এক অনুভূতি, যা আমাদের কাছে একেবারে নতুন। যা আমরা অন্বেষণ করেছি এবং অবশেষে খুঁজে পেয়েছি তাই হল আবিষ্কার। ইংরেজিতে বলা হয় ‘Discovery’। আবার এক্ষেত্রে আরেকটি শব্দও আসে, তা হল ‘Invention’.
গল্পকথক আলোচ্য গল্পে এমন একটি গ্রামের আবিষ্কার করেছেন, যা তার কাছে তৃতীয় ভুবনের মতো। তাই সেই গ্রামে যাওয়াটা রোমাঞ্চকর। লেখক ধ্রুব পদের মতো বারবার বলে গিয়েছেন ‘আবিষ্কার’-এর কথা। যেমন— ক) তেলেনাপোতা আপনারাও একদিন আবিষ্কার করতে পারেন। খ) হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন। গ) তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে হলে একদিন বিকেল বেলার পড়ন্ত রোদে জিনিসে মানুষে ঠাসাঠাসি একটা বাসে গিয়ে আপনাকে উঠতে হবে। ঘ) তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য আরো দু-জন বন্ধু ও সঙ্গী আপনার সঙ্গে থাকা উচিত।
এভাবে ক্রমান্বয়ে ‘আবিষ্কার’ শব্দটি ব্যবহার করে প্রেমেন্দ্র মিত্র এই গল্পের নামকরণকে ব্যঞ্জনাধর্মী করেছেন। গল্পের শেষে আমরা লক্ষ্য করি কথকের আবিষ্কারের গ্রাম তেলেনাপোতা তাঁর স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে। ব্যস্ত শহুরে জীবনে একটুখানি নিরিবিলি শান্তির জায়গা এভাবেই একঝলক সামনে এসেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এই গল্পের নামকরণে প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রতীকের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন। এজন্য আলোচ্য গল্পের নামকরণ হয়েছে সার্থক ও সংগতিপূর্ণ।
৫. যামিনী চরিত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি বিশ্লেষণ কর।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের মূল নারী চরিত্র হল যামিনী। সে শান্ত, ধীর, স্থির। তার মুখে বেদনার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। যামিনীর চরিত্র আলোচনায় যে বিশেষ দিকগুলি সবিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে সেগুলি হল –
সংকোচহীন ব্যবহার :-
যামিনীর ব্যবহারে কোনো আড়ষ্টতা ছিল না। তার মধ্যে কোনো সংকোচবোধও দেখা যায় নি। সে সহজ-সরল ও আন্তরিক। মণিদার কাছে মায়ের কথা সে আন্তরিকভাবেই জানিয়েছিল।
শান্ত-করুণ প্রতিচ্ছবি :–
গল্পের প্রথমেই লেখক বলেছেন যামিনীর মধ্যে অদ্ভুত এক শান্ত করুণ প্রতিছবি রয়েছে। তার অপুষ্ট শরীর চিন্তায় যেন থমকে গিয়েছে। লেখকের বর্ণনায় –
“দীর্ঘ, অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন স্থগিত হয়ে আছে”।
নিঃসঙ্গ যামিনী :-
যামিনী একেবারেই নিঃসঙ্গ। যামিনী ভালো করেই জানতো, শহুরে নিরঞ্জন ফিরে আসে না গ্রামবাংলার যামিনীর কাছে। আলোচ্য গল্পের শেষেও নিঃসঙ্গ একাকী যামিনীর কথা পাঠকের মনে পড়বে।
সেবাপরায়নতা :-
অসুস্থ মাকে সেবা যত্নে ভরিয়ে রেখেছে যামিনী। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তার উপর। যামিনীর মায়ের মুখেই মেয়ের গুণের কথা পাঠক সমাজ জানতে পারে।
বুদ্ধিমত্তা ও বিচারক্ষমতা :-
গ্রামের মেয়ে হলেও যামিনী বুদ্ধিমতী। নিরঞ্জনের কথায় যামিনী মোটেই উচ্ছ্বসিত ছিল না। তাই গল্প কথক যামিনীর মাকে ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও যামিনী জানতো গল্প কথক আর ফিরে আসবে না।
বিষাদ করুণ এক ছায়ামূর্তি :-
‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে যামিনী চরিত্রটি যেন নম্র, বিষাদ এক ছায়ামূর্তি। এককথায় যামিনী চরিত্র উল্লেখযোগ্য ও ব্যতিক্রমী চরিত্র।
৬. ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পের নায়ক চরিত্রটির বৈশিষ্ট্যগুলি নির্দেশ করো। অথবা, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নিরঞ্জনের ভূমিকায় আসা শহুরে মধ্যবিত্ত নায়ক চরিত্রটির সংবেদনশীলতার পরিচয় দাও।
বাংলা সাহিত্যে অভিনব গল্প প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’। এই গল্পে লেখক মধ্যবিত্ত মন-মানসিকতাকে তীব্রভাবে আঘাত করেছেন। গল্পের কথকই হলেন গল্পের নায়ক। তাঁর চরিত্রের আলোচনায় যে লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য গুলি ধরা পড়ে সেগুলি হল –
শহুরে মানুষের প্রতিনিধি :-
এই গল্প আসলে স্বপ্ন দেখার গল্প, স্বপ্ন পূরণের গল্প নয়। আর যাকে অবলম্বন করে এই গল্প কেন্দ্রস্থ হয়েছে সেই নায়ক শহুরে মানুষের একমাত্র প্রতিনিধি।
সংবেদনশীল মন :-
তিনজন বন্ধুর মধ্যে গল্পকথক অপেক্ষাকৃত সংবেদনশীল। দুই বন্ধু নিজেদের মতো পানাসক্ত ও নিদ্রায় আচ্ছন্ন হলেও কথকের চোখে ঘুম আসে না। কোনোরকমে রাত কাটিয়ে যখন সকাল হয় তখন তিনি নির্জন স্থানের একটি পুকুরে মাছ ধরতে যান।
নায়কের প্রতিশ্রুতি :-
যামিনী বলেছিল তার মা বারবার জানতে চেয়েছে, নিরঞ্জন এসেছে কিনা। তখন গল্পের কথক জানতে পারে নিরঞ্জন নামের যুবকটি কথা দিয়েও কথা রাখে নি। কথকের মনে হয় নিরঞ্জন যামিনীকে ঠকিয়েছে। কিন্তু গল্পের কথক বলেছেন তিনি যামিনীকে ঠকাবেন না।
উদার মানসিকতা :-
কিন্তু কথকের এই কথা বাস্তবায়িত হয় না। অবশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করি নায়কের মন উদার, তার দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে অনেকখানি প্রসারিত। তাই বৃদ্ধা যখন যামিনীর কথা শোনান এবং বলেন এই মেয়েটির জন্যই তিনি মরতে পারছেন না, তখন নায়কের মনের অবস্থা নির্দেশে গল্পকার লিখেছেন –
“একান্ত ইচ্ছে সত্ত্বেও চোখ তুলে একটিবার তাকাতে আপনার সাহস হবে না। আপনার নিজের চোখের জল বুঝি আর গোপন রাখা যাবে না”।
পলায়নবাদী মানসিকতা :-
তেলেনাপোতা গ্রাম থেকে কথক চলে আসেন শহরে এবং অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রতিশ্রুতিদাতা কথক আর কোনোভাবেই ফিরতে পারেন না তেলেনাপোতা গ্রামে। ফলে গল্পের কথক হয়ে ওঠেন পলায়নপর মধ্যবিত্তের আর এক রূপ।
৭. গোরুর গাড়িতে করে যাওয়ার অভিনব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কথাকার প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে কাল্পনিক গ্রাম তেলেনাপোতায় যাবার প্রসঙ্গ আছে। আর সেখানে যাবার প্রসঙ্গে এসেছে গোরুর গাড়ির কথা।
গ্রাম-বাংলার প্রান্তবর্তী অঞ্চলে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে গোরুর গাড়ির ব্যবহার প্রায়শ দেখা যায়। আলোচ্য গল্পে নগর জীবনে অভ্যস্ত গল্পকথক ও তার দুই বন্ধু একটি শুনশান স্থানে নেমে পড়েন। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা আবছা অন্ধকারে একটি ক্ষীণ আলো দেখতে পান এবং সেখান থেকেই একটি গোরুর গাড়ি আসতে দেখে নিশ্চিন্ত হন।
গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্র জঙ্গলের ভিতর থেকে ‘ধীর মন্থর দোদুল্যমান গতিতে’ আসা গোরুর গাড়িটির বিবরণ দিয়ে চলচ্চিত্রের মতো দৃশ্যমান জগতের ছবি অঙ্কন করেছেন। তিনি লিখেছেন –
‘যেমন গাড়িটি তেমনি গোরুগুলি। মনে হবে পাতালের কোনো বামনের দেশ থেকে গোরুর গাড়ির এই ক্ষুদ্র সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি বেরিয়ে এসেছে।’
বৃথা বাক্য-ব্যয় না করে গল্পকথক ও তার বন্ধুরা গাড়িতে চেপে বসেন। এরপর গাড়িটি তাদের নির্দেশিত তেলেনাপোতা অভিমুখে যাত্রা করে। জায়গার অভাবের কারণে তারা অত্যন্ত কষ্টে বসেছিলেন। ঘন অন্ধকার জঙ্গলের বুক চিরে গাড়িটি যখন চলতে থাকে তখন প্রতি মুহূর্তে মনে হয় ‘কালো অন্ধকারের দেওয়াল বুঝি অভেদ্য’। গল্পকথকের মতে, তারা যেন পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন এক অন্ধকার দ্বীপে অবস্থান করছে। গল্পকার লিখেছেন –
‘অনুভূতিহীন কুয়াশাময় এক জগৎ শুধু আপনার চারিধারে।’
গল্পকথকদের পথ চলার সময় আকাশে কৃষ্ণপক্ষের ম্লান আলোর চাঁদ দেখা যাচ্ছিল। সেই অনুজ্জ্বল আলোয় প্রাচীন মন্দির, প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, শিহরণ জাগানো নানা দৃশ্য দেখা যাচ্ছিল। একাধিকবার বাঁক ঘুরে অবশেষে গাড়িটি একটি জীর্ণ, ভগ্নপ্রায়, প্রাচীন অট্টালিকার সামনে কথকদের নামিয়ে দিয়েছিল।
৮. যে ঘরে চরিত্রেরা রাতের জন্য আশ্রয় নিয়েছিল, সেই ঘরটির বর্ণনা দাও।
কথাকার প্রেমেন্দ্র মিত্র ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে নগরজীবন থেকে অখ্যাত, অজ্ঞাত গ্রামে আসা এক যুবকের উপলব্ধির কথা শুনিয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন গ্রামেরই একটি ভগ্নপ্রায় অট্টালিকায়।
শহুরে মধ্যবিত্ত জীবনে ব্যস্ততার ফাঁকে দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কথক এসেছেন তেলেনাপোতায়। সেখানে যে ঘরে তারা রাত কাটানোর ছাড়পত্র পেয়েছিলেন সেই ঘর ছিল বসবাসের পক্ষে অনুপযুক্ত৷ গল্পকথকের বর্ণনায় দেখা যায় ঘরের ঝুল, জঞ্জাল, ধুলো পরিষ্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। অস্পষ্ট ভ্যাপসা গন্ধ ঘরটিকে আমোদিত করেছে। ঘরটির ছাদ ও দেওয়াল থেকে জীর্ণ পলস্তারা খসে পড়েছে। দু-তিনটি চামচিকা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অতি সচেতন হয়ে রীতিমতো বিবাদ শুরু করেছে।
রাতের অন্ধকার যখন গভীর থেকে গভীরতর হয় ঠিক সেই সময় মশা নবাগতদের অভিনন্দন জানাচ্ছিল। এই মশারা ছিল ‘ম্যালেরিয়া দেবীর অদ্বিতীয় বাহন অ্যানোফিলিস।’ নিদ্রাহীন গল্পকথক যখন ছাদে ওঠেন তখন তার চোখে ধরা পড়ে ভাঙনের নানা চকিত দৃশ্যাবলি। অধিকাংশ জায়গাতে আলিসা ভেঙে ধুলিসাৎ হয়েছে, ফাটলে ফাটলে অরণ্যের পঞ্চম বাহিনী ষড়যন্ত্রের শিকড় চালিয়ে ভিতর থেকে এই অট্টালিকার ধ্বংসের কাজ অনেকখানি এগিয়ে রেখেছে। কৃষ্ণপক্ষের মৃতপ্রায় জ্যোৎস্নার ম্লান আলোতে চারিদিক মোহময় হয়ে উঠেছিল।
৯. ‘আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথার নড়চড় হবে না’ – কে, কাকে একথা বলেছে? সত্যই কি তাঁর কথার নড়চড় হবে না?
আলোচ্য অংশটির উৎস প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প।
যামিনীর মা-কে উদ্দেশ্য করে গল্পকথক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
মধ্যবিত্ত নাগরিক মন কথা দিলেও কথা রাখতে পারে না। তাদের স্বপ্ন আছে কিন্তু সামর্থ্য নেই। তারা যেন শুধু স্বপ্ন দেখতেই ভালোবাসে, কিন্তু দায়িত্ব নিতে ভয় পায়। বন্ধু মণির কাছ থেকে গল্পের নায়ক যামিনী সম্পর্কে অনেক কথাই শুনে নেয়। তার বেদনা অনুভব করেই তিনি নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।
গল্প-শেষে দেখা যায়, নায়ক তার প্রতিশ্রুতি পালন করতে পারে নি। যামিনীকে গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়। শহর কলকাতার এই নায়কের কাছে তেলেনাপোতার স্মৃতি একসময় ঝাপসা হয়ে যায়। কারণ, ম্যালেরিয়া তার স্মৃতিকে ঝাপসা করে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নিরঞ্জনেরা কখনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে না। এই কারণে কথকের কথার নড়চড় হয়ই।
১০. ‘একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন’ – বক্তা কে? আপনি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? কিভাবে তেলেনাপোতা আবিষ্কার সম্ভব বলে লেখক মনে করেন?
আলোচ্য অংশটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্প থেকে গৃহীত হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন গল্পকথক, এখানে লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্র।
বাংলা সাহিত্যে আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এই গল্পটি অভিনব। লেখক গল্পে অদ্ভুত এক স্বপ্নময় জগতের সন্ধান দিয়েছেন। শনি বা মঙ্গলবারে কর্মক্লান্ত তিন মধ্যবিত্ত যুবককে বেরিয়ে পড়তে হয়। যেতে হয় সমস্তরকম সুবিধা বঞ্চিত অজ পাড়াগাঁয়ে। এখানে কয়েকটি প্রতিকূলতা সামনে আসতে পারে। যেমন, গ্রামের আলোহীন পথঘাট, প্রবল মশার উৎপাত বা পানাপুকুরের পচা দুর্গন্ন্ধ। এই সব উপেক্ষা করেই গল্পকথক দুই বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে যান রূপকথার তেলেনাপোতা গ্রামে।
তেলেনাপোতা পৌঁছে দেখা যায় প্রতীক্ষারতা দুই রমনীকে – একজন যামিনী অন্যজন যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মা। মৃত্যু পথযাত্রী এই বৃদ্ধার সঙ্গে প্রতারণা করেছে নিরঞ্জন; তাই গল্পের নায়ক নিজেই নিরঞ্জন হয়ে যামিনীর মাকে প্রতিশ্রুতি দেয়।
যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিলেও ম্যালেরিয়া কথককে শহর কলকাতায় আটকে দেয়। তিনি তেলেনাপোতায় আর ফেরেন নি। এইভাবে তেলেনাপোতার স্মৃতি কথকের মন থেকে ঝাপসা হয়ে যায়। তাই গল্পকার পাঠকদের উদ্দেশ্য করে জানিয়েছেন –
‘হঠাৎ একদিন আপনিও তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে পারেন’।
হয়তো পাঠকও এই ধরণের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবেন। আর তখনই আবিষ্কৃত হবে পাঠকের মনে আর এক তেলেনাপোতা।
১১. মাছ ধরার সময় পুকুরঘাটের দৃশ্যের বর্ণনা দাও।
সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পটি যেন রূপকথার স্বপ্নপুরীর মতো। এই গল্পে বাস্তব ও রোমান্সের অদ্ভুত মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়।
গল্পকথক সুদূর শহর কলকাতা থেকে এসেছিলেন মাছ শিকার করতে। মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে কথক যে ঘাটে এসে বসেন সেই ঘাট ছিল শ্যাওলায় আবৃত। পুকুরের জল ছিল সবুজ রঙের। কথক টোপ সমেত বড়শি জলে নামিয়ে বসেছিলেন।
সেই সময় তারই মতো শিকারি কয়েকটি প্রাণী সেখানে উপস্থিত ছিল। একটি মাছরাঙা পাখি কথকের ব্যর্থতাকে পরিহাস করেছিল। একটি সাপ ঘাটের ফাটল থেকে বেরিয়ে পুকুর সাঁতরে ওপারে উঠেছিল। দুটি ফড়িং পাল্লা দিয়ে ফাতনাটার উপর বসবার চেষ্টা করছিল। ঘুঘুপাখির ডাকে মাছধরার মনোযোগ নষ্ট হচ্ছিল।
এই সব ঘটনার মাঝেই হঠাৎ জলের শব্দে গল্পকথক চমকে ওঠেন। পুকুর ঘাটে উপস্থিত যামিনী গল্পকথকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল – “বসে আছেন কেন? টান দিন”। এরপর যামিনী চলে গেলে গল্প কথক লক্ষ্য করেন বড়শিতে টোপ আর নেই।
ঘটনার এই শেষ অংশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই অংশ প্রমাণ করে যে, গল্প কথকের মাছ শিকারই শুধু ব্যর্থ নয়; যামিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কের সূত্রটিও ছিন্ন হতে চলেছে।
১২. ‘আপনার আসল উদ্দেশ্য আপনি নিশ্চয় বিস্মৃত হবেন না’। – আসল উদ্দেশ্য কোনটি? সেই উদ্দেশ্য সাধনে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী করলেন?
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে আসল উদ্দেশ্য বলতে মৎস্য শিকারের কথা বলা হয়েছে।
তেলেনাপোতা গ্রামের নির্জন পুকুরে গল্প কথকের মাছ শিকারের অসাধারণ একটি বর্ণনা আছে। পানাপুকুরে বঁড়শি ফেলে একাকী বসেছিলেন গল্পকথক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি দেখেন, ‘একটা মাছরাঙা পাখি ক্ষণে ক্ষণে’ উপহাস করবার জন্য পুকুরের জলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং ঠোঁটে মাছ নিয়ে সে প্রমাণ করছে কীভাবে শিকার করতে হয়। একটি সাপ ভাঙা ঘাটের ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীর গতিতে পুকুরের এধার থেকে ওধারে ওঠে। দুটি ফড়িং পাতলা কাচের মতো পাখা নেড়ে ফাতনার উপর বসে। ঘুঘু পাখি উদাসী সুরে ডাকতে থাকে।
গল্পকথক জলের শব্দে চমকে ওঠেন। আর দেখেন ফাতনা দুলছে এবং পুকুরের পানা সরিয়ে একটি মেয়ে জল ভরছে। মেয়েটি কথকের দিকে তাকায়। তারপর ফাতনা লক্ষ্য করে। মুখ ফিরিয়ে কলসিটা কোমরে তুলে নেয়। ডুবে যাওয়া ফাতনা জলের উপরে ভেসে ওঠে। দেখা যায় ‘বঁড়শিতে টোপ আর নেই’।
পুকুরের ঘাটের নির্জনতা আর ভঙ্গ হয় না। গল্পকথকের পক্ষে মৎস্য শিকার করা সম্ভব হয় না। এরপর ‘এক সময় হতাশ হয়ে আপনাকে সাজসরঞ্জাম নিয়ে উঠে পড়তে হবে।’ বন্ধুরা মৎস্য শিকারের ব্যর্থতা নিয়ে রীতিমতো কৌতুক করতে থাকে।
১৩. একবার ক্ষণিকের জন্য আবিষ্কৃত হয়ে তেলেনাপোতা আবার চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে।’—কোন প্রসঙ্গে এই মন্তব্য? তেলেনাপোতা কীভাবে ‘চিরন্তন রাত্রির অতলতায় নিমগ্ন হয়ে যাবে বলে লেখক মনে করেন?
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে ব্যস্ত নায়ক শহর কলকাতা থেকে মাছ ধরার নেশায় তেলেনাপোতা গ্রামে উপস্থিত হন। যামিনীর বৃদ্ধা মাকে তিনি কথা দেন যামিনীকে বিবাহ করবেন। কিন্তু গল্প-কথক কথা দিয়েও আর ফিরে আসতে পারেন নি তেলেনাপোতা গ্রামে। সেই প্রসঙ্গেই এই উক্তি।
ব্যস্ত জীবন থেকে তিন বন্ধু নিজেদের ইচ্ছাসুখে একদিন ‘শনি ও মঙ্গলের, মঙ্গলই হবে বোধহয়’ উপস্থিত হন তেলেনাপোতা গ্রামে। গল্পকার লিখেছেন –
“কাজে কর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁফিয়ে ওঠার পর যদি হঠাৎ দু-দিনের জন্য ছুটি পাওয়া যায়—আর যদি কেউ এসে ফুসলানি দেয় যে কোনো এক আশ্চর্য সরোবরে ….”।
তিনবন্ধু মানচিত্রহীন এক অজ্ঞাত গ্রামে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। লেখক দেখিয়েছেন অদ্ভুত সেই ভগ্ন গৃহ, চারিদিকে রোমাঞ্চকর পরিবেশ।
কথক মাছ ধরার নেশায় পুকুরে ছিপ ফেলেছিলেন। তারপর একসময় তার চোখে ধরা পড়ে এই গল্পের নায়িকা যামিনী। এই ‘যামিনী’ নামের মধ্যে রয়েছে রাত্রির মায়া, না পাওয়ার শূন্যতা।
গল্পের নায়ক শহুরে মানুষ হলেও তার মধ্যে স্বপ্ন রয়েছে। তার মনে হয়েছে, নিরঞ্জনের মতো তিনি মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধাকে আর কষ্ট দেবেন না। তাই কঙ্কালসার বৃদ্ধার সামনে দাঁড়িয়ে কথা দিয়েছিলেন তিনি যামিনীকে বিয়ে করবেন।
শহুরে এই নায়ক শেষপর্যন্ত যামিনীর কাছে ফিরে আসেন নি। ফলে তিনিও এক অর্থে নিরঞ্জনসত্তায় পরিণত হন। মধ্যবিত্ত পলায়নী মনকে গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্র চিনতেন। তাই গল্পের পরিসমাপ্তিতে এসে প্রেমেন্দ্র মিত্র জানান, কলকাতায় ফিরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত নায়ক আর কখনোই তেলেনাপোতা গ্রামে ফিরে যাবে না। কারণ, ততদিনে নায়কের মনেরও পরিবর্তন ঘটেছে –
“অস্ত যাওয়া তারার মতো তেলেনাপোতার স্মৃতি আপনার কাছে ঝাপসা একটা স্বপ্ন ব’লে মনে হবে। মনে হবে তেলেনাপোতা ব’লে কোথাও কিছু সত্যি নেই”।
গল্পের শেষে তেলেনাপোতা কীভাবে চিরন্তন রাত্রির অতলতায় হারিয়ে যায় সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন লেখক। এই উক্তির মধ্যে শহুরে মধ্যবিত্ত নায়কের প্রতি তির্যক ব্যঙ্গ উচ্চারিত হয়েছে।