উপন্যাস-আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (একাদশ শ্রেণী)
উপন্যাস
১। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত প্রথম উপন্যাস হল –
(ক) গোরা
(খ) করুণা
(গ) চোখের বালি
(ঘ) বৌঠাকুরাণীর হাট
খ
২। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনটি প্রথম স্বীকৃত উপন্যাস ?
(ক) রাজর্ষি
(খ) ঘরে বাইরে
(গ) শেষের কবিতা
(ঘ) বৌঠাকুরাণীর হাট
ঘ
৩। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস হল –
(ক) নৌকাডুবি
(খ) রাজর্ষি
(গ) দুই বোন
(ঘ) মালঞ্চ
খ
৪। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি দ্বন্দ্বমূলক উপন্যাস হল –
(ক) যোগাযোগ
(খ) চতুরঙ্গ
(গ) রাজর্ষি
(ঘ) শেষের কবিতা
ক
৫। ‘চার অধ্যায়’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন্ ধরনের উপন্যাস?
(ক) দ্বন্দ্বমূলক
(খ) রোমান্টিক
(গ) সমাজচেতনামূলক
(ঘ) ঐতিহাসিক
গ
৬। ‘শেষের কবিতা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন ধরনের উপন্যাস?
(ক) দ্বন্দ্বমূলক
(খ) রোমান্টিক
(গ) সমাজচেতনামূলক
(ঘ) ঐতিহাসিক
খ
৭। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৌকাডুবি’ উপন্যাসের নায়ক কে?
(ক) রামকিঙ্কর
(খ) রমেশ
(গ) রমেন
(ঘ) রবীন
খ
৮। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসে কেন্দ্রীয় ভূমিকা কার?
(ক) শর্মিষ্ঠার
(খ) শৈবালিনীর
(গ) বিনোদিনীর
(ঘ) সাধনার
গ
৯। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসটি কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল
(ক) দিগদর্শন
(খ) ভারতী
(গ) সাধনা
(ঘ) সবুজপত্র
ঘ
১০। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘যোগাযোগ’ উপন্যাসটি কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
(ক) সাধনা
(খ) বিচিত্রা
(গ) দিগদর্শন
(ঘ) ভারতী
খ
১১। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস হল –
(ক) সীতারাম
(খ) বিষবৃক্ষ
(গ) ইন্দিরা
(ঘ) Rajmohan’s wife
ঘ
১২। ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) শরৎচন্দ্র
(খ) রবীন্দ্রনাথ
(গ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(ঘ) বিভূতিভূষণ
গ
১৩। বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক উপন্যাস হল –
(ক) রাজসিংহ
(খ) আনন্দমঠ
(গ) রজনী
(ঘ) বিষবৃক্ষ
ক
১৪। বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্ব ও দেশাত্মবোধক উপন্যাস হল –
(ক) দেবী চৌধুরাণী
(খ) ইন্দিরা
(গ) কৃষ্ণকান্তের উইল
(ঘ) রাজসিংহ
ক
১৫। বঙ্কিমচন্দ্রের সমাজ ও গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাস হল –
(ক) রজনী
(খ) আনন্দমঠ
(গ) সীতারাম
(ঘ) চন্দ্রশেখর
ক
১৬। ‘কুন্দনন্দিনী’ চরিত্রটি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে আছে?
(ক) সীতারাম
(খ) দেবীচৌধুরাণী
(গ) ইন্দিরা
(ঘ) বিষবৃক্ষ
ঘ
১৭। বিমলা, আয়েষা, তিলোত্তমা চরিত্রগুলি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে রয়েছে?
(ক) মৃণালিনী
(খ) আনন্দমঠ
(গ) দুর্গেশনন্দিনী
(ঘ) রাজসিংহ
গ
১৮। মতিবিবি, নবকুমার চরিত্র দুটি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে রয়েছে?
(ক) মৃণালিনী
(খ) সীতারাম
(গ) কপালকুণ্ডলা
(ঘ) রাধারানী
গ
১৯। প্রতাপ-শৈবলিনী চরিত্র দুটি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে রয়েছে?
(ক) রজনী
(খ) চন্দ্রশেখর
(গ) সীতারাম
(ঘ) ইন্দিরা
গ
২০। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বাংলা উপন্যাস হল –
(ক) সীতারাম
(খ) দুর্গেশনন্দিনী
(গ) বিষবৃক্ষ
(ঘ) ইন্দিরা
খ
২১। ‘বঙ্গবিজেতা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র
(খ) বিভূতিভূষণ
(গ) রবীন্দ্রনাথ
(ঘ) রমেশচন্দ্র দত্ত
ঘ
২২। ‘রাজপুত জীবনসন্ধ্যা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ
(খ) বঙ্কিমচন্দ্র
(গ) শরৎচন্দ্র
(ঘ) রমেশচন্দ্র দত্ত
ঘ
২৩। ‘সমাজ’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র
(খ) শরৎচন্দ্র
(গ) রবীন্দ্রনাথ
(ঘ) রমেশচন্দ্র দত্ত
ঘ
২৪। ‘স্বর্ণলতা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়
(খ) বঙ্কিমচন্দ্র
(গ) রবীন্দ্রনাথ
(ঘ) শরৎচন্দ্র
ক
২৫। ‘নবীনসন্ন্যাসী’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র
(খ) শরৎচন্দ্র
(গ) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ
গ
২৬। ‘মনের মানুষ’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ
(খ) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
(ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র
(ঘ) শরৎচন্দ্র
খ
২৭। ‘চরিত্রহীন’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) শরৎচন্দ্র
(খ) রবীন্দ্রনাথ
(গ) বঙ্কিমচন্দ্র
(ঘ) বিভূতিভূষণ
ক
২৮। ‘দেবদাস’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ
(খ) শরৎচন্দ্র
(গ) বঙ্কিমচন্দ্র
(ঘ) রমেশচন্দ্র
খ
২৯। শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাসের নাম –
(ক) গৃহদাহ
(খ) পল্লীসমাজ
(গ) অরক্ষণীয়া
(ঘ) পথের দাবী
ঘ
৩০। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র
(খ) শরৎচন্দ্র
(গ) বিভূতিভূষণ
(ঘ) রবীন্দ্রনাথ
গ
৩১। ‘আরণ্যক’ উপন্যাসটি লিখেছেন –
(ক) বঙ্কিমচন্দ্র
(খ) রবীন্দ্রনাথ
(গ) বিভূতিভূষণ
(ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র
গ
৩২। ‘গণদেবতা’ উপন্যাসটি লিখেছিলেন –
(ক) তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) বিভূতিভূষণ
(গ) রবীন্দ্রনাথ
(ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র
ক
৩৩। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) রবীন্দ্রনাথ
(খ) বঙ্কিমচন্দ্র
(গ) তারাশংকর
(ঘ) শরৎচন্দ্র
গ
৩৪। ‘প্রাগৈতিহাসিক’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিভূতিভূষণ
(খ) বঙ্কিমচন্দ্র
(গ) তারাশংকর
(ঘ) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘ
৩৫। বিভূতিভূষণের প্রথম উপন্যাসটি হল –
(ক) দিবারাত্রির কাব্য
(খ) আরণ্যক
(গ) পথের পাঁচালী
(ঘ) চৈতালি ঘূর্ণি
গ
৩৬। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসটি হল –
(ক) চৈতালি ঘূর্ণি
(খ) উত্তরায়ণ
(গ) সপ্তপদী
(ঘ) বিপাশা
ক
৩৭। ‘জঙ্গম’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) তারাশংকর
(গ) বিভূতিভূষণ
(ঘ) বনফুল
ঘ
৩৮। প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত একটি উপন্যাসের নাম লেখ।
(ক) মিছিল
(খ) মানদণ্ড
(গ) পদ্মানদীর মাঝি
(ঘ) উত্তরায়ণ
ক
৩৯। ‘বিবাহের চেয়ে বড়ো’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
(খ) বুদ্ধদেব বসু
(গ) গোকুলচন্দ্র নাগ
(ঘ) মৈত্রেয়ী দেবী
ক
৪০। ‘পাঁক’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) সমরেশ বসু
(খ) বিমল মিত্র
(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
(ঘ) বিমল কর
গ
৪১। ‘সেই সময়’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিমল মিত্র
(খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
(ঘ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
খ
৪২। ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(খ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
(খ) আশাপূর্ণা দেবী
(ঘ) দিব্যেন্দু পালিত
খ
৪৩। ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
(খ) প্রফুল্ল রায়
(গ) মহাশ্বেতা দেবী
(ঘ) বিমল কর
গ
৪৪। ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিমল মিত্র
(খ) বিমল কর
(গ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
(ঘ) দিব্যেন্দু পালিত
ক
৪৫। ‘নীললোহিতের আদি প্রেম’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিমল কর
(খ) আশাপূর্ণা দেবী
(গ) প্রমথ চৌধুরী
(ঘ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
গ
৪৬। ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ উপন্যাসটি কার লেখা?
(ক) বিমল করের
(খ) বিমল মিত্রের
(গ) শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের
(ঘ) তারাশংকরের
ক
৪৭। ‘মহানন্দা’, ‘লালমাটি’, ‘সম্রাট ও শ্রেষ্ঠী’, ‘মন্ত্রমুখর’, ‘স্বর্ণসীতা’ উপন্যাসগুলির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিমল কর
(খ) বিমল মিত্র
(গ) শ্রী নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়
(ঘ) মহাশ্বেতা দেবী
গ
৪৮। কুয়াশা’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন –
(ক) বিমল কর
(খ) বিমল মিত্র
(গ) প্রমথ চৌধুরী
(ঘ) প্রেমেন্দ্র মিত্র
ঘ
১। বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস কোনটি? এটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল?
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ‘দুর্গেশনন্দিনী’ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল।
২। বঙ্কিমচন্দ্রের দুটি সমাজ ও গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাসের নাম লেখো।
বঙ্কিমচন্দ্রের ২টি সমাজ ও গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাস হল ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘বিষবৃক্ষ’।
৩। ‘প্রফুল্ল’ চরিত্রটি বঙ্কিমচন্দ্রের কোন উপন্যাসে রয়েছে?
‘প্রফুল্ল’ চরিত্রটি বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসে রয়েছে।
৪। রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
রমেশচন্দ্র দত্ত রচিত দুটি উপন্যাস হল বঙ্গবিজেতা ও মাধবীকঙ্কণ।
৫। তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
তারকনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের দুটি উপন্যাস হল ‘স্বর্ণলতা’ ও ‘ললিত-সৌদামিনী’।
৬। শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাসের নাম কী?
শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত রাজনৈতিক উপন্যাসের নাম ‘পথের দাবী’।
৭। ‘আরণ্যক’ গ্রন্থটি কার রচনা?
‘আরণ্যক’ গ্রন্থটি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনা।
৮। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসটির নাম লেখো।
তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস হল ‘চৈতালি ঘূর্ণি’ (১৯২৯-৩০)।
৯। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম কী ছিল?
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম ছিল প্রবোধচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।
১০। ‘বনফুল’ কোন লেখকের ছদ্মনাম ?
‘বনফুল’ ছদ্মনামটি কথাসাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের।
১১। বনফুলের দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।
বনফুলের লেখা দুটি উপন্যাস হল ‘মানদণ্ড’ ও ‘জঙ্গম’।
১২। প্রেমেন্দ্র মিত্রের দুটি উপন্যাসের নাম ও প্রকাশকাল উল্লেখ করো।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের দুটি উপন্যাস হল ‘মিছিল’ (১৯২৮), ‘কুয়াশা’ (১৯৩২)।
১৩। সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত একটি উপন্যাস হল ‘অবিশ্বাস্য’।
১৪। আশাপূর্ণা দেবী রচিত একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
আশাপূর্ণা দেবী রচিত একটি উপন্যাসের নাম হল ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’।
১৫। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের নাম লেখো।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘সেইসময়’।
১৬। ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের রচয়িতা কে?
‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাসের রচয়িতা হলেন অদ্বৈত মল্লবর্মন।
১৭। ‘নোনাজল মিঠে মাটি’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে?
‘নোনাজল মিঠে মাটি’ উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন প্রফুল্ল রায়।
১৮। অন্নদাশংকর রায়ের এপিক উপন্যাসের নাম লেখো।
অন্নদাশংকরের এপিক উপন্যাস হল ‘সত্যাসত্য’।
১৯। সবুজপত্র পত্রিকার একজন অন্যতম লেখকের নাম লেখ।
সবুজপত্র পত্রিকার একজন অন্যতম লেখকের নাম হল ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।
২০। ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাসের নাম কী?
ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাস হল ‘অন্তঃশীলা’, ‘আবর্ত’ ও ‘মোহানা’।
২১। গোপাল হালদারের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাসের তিনটি খণ্ডের নাম কী?
গোপাল হালদারের ‘ত্রয়ী’ উপন্যাসের তিনটি খণ্ডের নাম হল ‘একদা’, ‘অন্যদিন’ ও ‘আর একদিন’।
২২। নীললোহিতের আদি প্রেম’ উপন্যাসটির রচয়িতা কে?
‘নীললোহিতের আদি প্রেম’ (১৯৩৪) উপন্যাসটির রচয়িতা হলেন প্রমথ চৌধুরী।
২৩। বিমল মিত্রের দুটি বিখ্যাত উপন্যাসের নাম লেখো।
বিমল মিত্রের দুটি বিখ্যাত উপন্যাস হল ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ও ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’।
১। শরৎচন্দ্রের চারটি উপন্যাসের নাম উল্লেখ করে তাঁর উপন্যাসের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাউন্ডুলে হয়ে দেশে বিদেশে ঘুরে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সেগুলিকে তাঁর সাহিত্যের মধ্যে সন্নিবিষ্ট করেছেন। শরৎচন্দ্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল ‘চন্দ্রনাথ’, ‘অরক্ষণীয়া’ (১৯১৬), ‘চরিত্রহীন’ ‘শ্রীকান্ত’ (১ম পর্ব), ‘দেবদাস’, ‘নিষ্কৃতি’ (১৯১৭), ‘দত্তা’, ‘শ্রীকান্ত’ (২য় পর্ব) (১৯১৮), ‘গৃহদাহ’, ‘বামুনের মেয়ে’ (১৯২০), ‘দেনাপাওনা’ (১৯২৩), ‘পথের দাবী’ (১৯২৬), ‘শ্রীকান্ত’ (৩য় পর্ব) (১৯২৭), ‘শ্রীকান্ত’ (৪র্থ পর্ব) (১৯৩৩), ‘শেষ প্রশ্ন’ (১৯৩১), ‘বিপ্রদাস’ (১৯৩৫), ‘শুভদা’ (১৯৩৮), ‘শেষের পরিচয়’ (১৯৩৯)।
শ্যৎচন্দ্রের ‘বড়দিদি’ (১৯১৩), ‘পল্লীসমাজ’ (১৯১৬), ‘বিরাজ বৌ’ (১৯১৪) প্রভৃতি উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোথাও প্রেমের অকল্পনীয় আকস্মিক জাগরণ, কোথাও সমাজের পুরোনো সংস্কারের প্রতি বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি বা কোথাও দাম্পত্য প্রেমের জটিলতা ফুটে উঠেছে। প্রতিদিনের চলার পথে নিত্য নতুন ঘটনা মানুষের মনে যে ভাবনার সৃষ্টি করে চলেছে, তারই উপাদান নিয়ে শরৎচন্দ্র উপন্যাস রচনা করেছেন, যা আধুনিকতার লক্ষন।
বঙ্কিমধারার সার্থক উত্তরসুরি শরৎচন্দ্র, তবে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর উপন্যাসে সামাজিক আদর্শকেই প্রাণশক্তি এবং মঙ্গলময় প্রভাবের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, শরৎচন্দ্র সেখানে আদর্শের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে না পেরে শেষ সিদ্ধান্তের ভার ব্যক্তিমানুষকেই দিয়ে গিয়েছেন। শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে মধ্যবিত্ত শ্রেণিরই প্রাধান্য, কিছুটা উচ্চমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির কথাও বলেছেন, তবে শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল অবহেলিত, বঞ্চিত নারী জাতির ওপর।
শরৎচন্দ্র বিশেষত পরিবার, সমাজকে ভিত্তি করেই উপন্যাসের ক্ষেত্র তৈরি করেছেন, তাই জীবনের বিস্তৃতি তাঁর লেখায় ধরা না পড়লেও অন্তরকে গভীর উপলব্ধির মধ্য দিয়ে অনুভব করেছিলেন। শুধু ছকবাঁধা জীবনের ছবি নয়, সামাজিক কুসংস্কার, সংকীর্ণতা প্রকাশ করতেও তিনি দ্বিধা করেন নি। তাঁর ‘পথের দাবী’ উপন্যাসটিতে দেশাত্মবোধের প্রকাশ ঘটেছে। মানবজীবনের সুখ-দুঃখ, হতাশা, অন্তর্বেদনা ও সমাজের বাস্তব চিত্র যেভাবে শরৎচন্দ্র এঁকেছেন তাতে, তাকে বলা যায় সর্বোপরি আর্টিস্ট, শিল্পী।
২। রবীন্দ্রনাথের সমাজচেতনামূলক উপন্যাস ও রোমান্টিক উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
রবীন্দ্রনাথের সমাজসচেতনমূলক উপন্যাসের মধ্যে ‘গোরা’ স্বতন্ত্র এবং এটি শুধু বাংলা সাহিত্যে না, ভারতীয় সাহিত্যের একটি যুগান্তকারী উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ এই উপন্যাসটিতে বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে সামাজিক বৈষম্য, জাতিভেদের সংকীর্ণ মনোভাব, অসহায় মানুষের দারিদ্র্য ও মূঢ়তা সম্পর্কে অবগত হয়ে তারই সমাধানের পথনির্দেশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ স্বাদেশিকতা বোধের স্বচ্ছ পরিচয়ের দৃষ্টান্ত রেখেছেন ‘গোরা’ উপন্যাসে।
রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই আন্দোলনকে সামনে রেখে কিছু উগ্র সন্ত্রাসবাদী জাতীয়তাবাদের মুখোশ পরে লোভের বশবর্তী হয়ে শুভ প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করার জন্য উন্মত্ত হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ গভীর আঘাত পেয়ে ‘ঘরে বাইরে’ উপন্যাসে তারই প্রতিধ্বনি করেছেন। অভিজাত পরিবারের সুশিক্ষিত শান্ত সংযত জীবনাদর্শে পরিশীলিত নিখিলেশ ও তার স্ত্রী বিমলার ঘরে উপস্থিত হয় উগ্র অবিনয়ী তীক্ষ্ণধীসম্পন্ন ছদ্মবেশী দেশসেবক সন্দীপ। বাকচাতুরিতে বিমলার মন জয় করে স্বার্থলোলুপ সন্দীপ এবং নারীর প্রতি গভীর লালসার আসল রূপ প্রকাশ পায়। মহানুভব নিখিলেশ বিমলাকে পঙ্কিল আবর্ত থেকে তুলে মহান আদর্শের পাদপীঠে প্রতিষ্ঠিত করে।
‘চার অধ্যায়’ উপন্যাসে দেখা যায় বাংলার বুকে স্বদেশি আন্দোলনের নামে কিছু মানুষ হিংসাত্মক বিপ্লবের সূচনা করেছিল। তারই ফলশ্রুতিতে নরনারীর জীবন ভয়ংকর দুর্দশায় পতিত হয়েছিল, তারই কথা এখানে চিত্রিত হয়েছে। কাল্পনিক বর্ণনা বেশি হওয়ায় উপন্যাসের গতি ধীরভাবে প্রবাহিত হয়েছে, কাহিনি অসংগঠিত ও গৌণ চরিত্রগুলির অভাব বেশ চোখে পড়ে।
রবীন্দ্রনাথের ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসের গঠন-রীতি সম্পূর্ণ আলাদা। ‘সবুজপত্র’ নামক সাময়িকপত্রে ‘জ্যাঠামশায়” ‘শচীশ’, “দামিনী’ ও ‘শ্রীবিলাস’ নামে যে চারটি গল্প প্রকাশিত হয়েছিল, তারই চারটি গল্প একত্রে ‘চতুরঙ্গ’ নামকরণ। শচীশ গুরুবাদে বিশ্বাসী কিন্তু দামিনী পার্থিব রূপ-রস কামনা পেতে আগ্রহী হয়েছিল, তারই দুয়ের টানাপোড়েনে কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
জীবনের পড়ন্ত বেলায় বসে রবীন্দ্রনাথ রোমান্সকে আশ্রয় করে কাব্যধর্ম সমন্বয়ে ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসটি রচনা করেন। অমিত রায়ের সঙ্গে কেতকী মিত্রের স্বল্প আলাপে মনের কাছাকাছি না এলেও আবেগের তাড়নায় একটি আংটি পরিয়ে দেয়। শোভনলাল লাবণ্যকে প্রেম বিতরণ করতে এলেও লাবণ্য তা ফিরিয়ে দেয়। ঘটনার প্রবাহে একদিন অমিত এবং লাবণ্য মনের কাছাকাছি আসে এবং লাবণ্যকে আংটি পরাতে গেলে হঠাৎই সেখানে কেতকী মিত্র উপস্থিত হয় এবং অমিতকে স্বামিত্বে বরণ করতে চায়। বাধ্য হয়ে অমিত জীবনে কী পেল বা লাবণ্য কী পাবে তা বলা খুবই কঠিন। রবীন্দ্রনাথ এখানে কাব্য সুষমামণ্ডিত এক জগৎ সৃষ্টি করেছেন। রোমান্সের উচ্ছ্বাসে অপার্থিব সৌন্দর্যদৃষ্টিতে নিপুণতা দেখিয়েছেন।
৩। বঙ্কিমচন্দ্রের ঐতিহাসিক রোমান্সধর্মী ও সামাজিক উপন্যাসগুলির পরিচয় দাও।
বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্র শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। তিনি ঐতিহাসিক পটভূমিকায় যে সমস্ত উপন্যাস রচনা করেছেন সেখানে ঐতিহাসিক চরিত্র গ্রহণ না করে কল্পনাশ্রিত চরিত্র সৃষ্টি করে তারই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং তাতে রোমান্স মিশিয়ে চরিত্রগুলিকে রূপায়িত করার মধ্য দিয়ে সাহিত্য রসও বর্ধিত হয়েছে। এই ধরনের উপন্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৮৬৯), ‘মৃণালিনী’ (১৮৬৯), ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ (১৮৭৩), ‘চন্দ্রশেখর’ (১৮৭৫), ‘রাজসিংহ’ (১৮৮২), ‘সীতারাম’ (১৮৮৭)।
‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্রের তেমন কুশলতার ছাপ পাওয়া যায় না। দ্বন্দ্ব-সংঘাতের উপস্থিতি কম বরং কাহিনির পরিধি ও গুরুত্ব অনেক বেশি। ‘কপালকুণ্ডলা’ উপন্যাসে রোমান্সলক্ষণ প্রবল, কিন্তু আছে চরিত্রের সমস্যা। ‘মৃণালিনী’ উপন্যাসে ইতিহাসের ছোঁয়া কম, দুটি রোমান্টিক কাহিনি রয়েছে, তবে মৃণালিনীর প্রেমাভিসার বৈষ্ণব পাবলিকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র কিছুটা নীতি ও সংযমের দ্বারা পরিচালিত। রাজসিংহই বঙ্গিমচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। ‘সীতারাম’ উপন্যাসটিতে লেখক ধর্মতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। ঐতিহাসিক তথ্য সব সময়ে গ্রহণ না করলেও ঐতিহাসিক রসসৃষ্টিতে বঙ্কিমচন্দ্রের সমকক্ষ ঔপন্যাসিক বাংলাদেশে দ্বিতীয় কেউ নেই।
বঙ্কিমচন্দ্র পরিবার ও সমাজের দিকে তাকিয়ে যে জীবনবোধের সন্ধান পেয়েছিলেন দায়িত্ববোধহেতু তিনি সেই সমস্ত চিত্র তাঁর উপন্যাসে বিবৃত করেছেন। তিনি যে সমস্ত সামাজিক, গার্হস্থ্যধর্মী উপন্যাস রচনা করেছেন তার মধ্যে রয়েছে ‘বিষবৃক্ষ’ (১৯৭৩), ‘রজনী’ (১৮৭৭), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ (১৮৭৮), ‘ইন্দিরা’ (১৮৭৩), ‘রাধারাণী’ (১৮৬৬) প্রভৃতি। ‘বিষবৃক্ষ’ উপন্যাসে নিষিদ্ধ কামনার উদ্দামতা আছে, চরিত্রদ্বন্দ্বও আছে, কিন্তু বিশুদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক উপন্যাস হিসাবে এটি প্রথম হলেও উৎকৃষ্ট নয়। ‘রজনী’ উপন্যাসকে একটি মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণমূলক উপন্যাস বলা যায়। গঠনরীতি ও শিল্পকর্ম উপন্যাসটিতে সার্থক রূপ নিয়েছে। ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ উপন্যাসে একদিকে পারিবারিক চিত্র আর একদিকে ক্রাইম, এরই মাঝে বঙ্কিমচন্দ্র নীতি, আদর্শ বজায় রেখেছেন।
বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন একজন গভীর সহানুভূতিশীল ও সমাজসচেতক লেখক। মানুষের হৃদয়ের কথা অনুভব করতে পারতেন বলেই উপন্যাসগুলিতে পুরুষ ও নারীর শাশ্বত আকর্ষণ গোপন থাকে নি। সমস্ত রকম সামাজিক বাধা-সংস্কার লজ্জা-সংকোচ দূরে সরিয়ে অবৈধ প্রেমও প্রকাশ পেয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্বমূলক ও দেশাত্মবোধক উপন্যাসগুলির পরিচয় দাও।
৪। বঙ্কিমচন্দ্রের তত্ত্বমূলক ও দেশাত্মবোধক উপন্যাস গুলির পরিচয় দাও।
বঙ্কিমচন্দ্র ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে উপন্যাস রচনার যাত্রা শুরু করেছিলেন, তাতে তাঁর প্রজ্ঞায় ও মননশীলতায় গুঢ়তত্ত্ব প্রকাশেও নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্য তাঁর কাছ থেকে তত্ত্বমূলক ও দেশাত্মবোধক দুটি উপন্যাস পেয়েছে – ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২) ও ‘দেবী চৌধুরাণী’ (১৮৮৫)।
বঙ্কিমচন্দ্র উত্তরবঙ্গের সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কথা উপন্যাসে উপজীব্য করে আনন্দমঠের ঘটনা সাজিয়েছেন। কাহিনি বিন্যাসে দেখা যায়, স্বামী সত্যানন্দ কল্যাণব্রতী সন্ন্যাসীদলকে পরিচালিত করেছেন, ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। উপন্যাসের প্রধান নায়ক জীবানন্দ এবং নায়িকা তাঁর পত্নী শান্তির চরিত্র খুবই সুগঠিত। এ ছাড়া মহেন্দ্র-কল্যাণীর ভূমিকা যা বঙ্কিমচন্দ্র যুক্ত করেছেন, তা কাহিনিকে সুগঠিত করতে পারে নি। জীবানন্দের ভগিনী নিমাই-এর চরিত্র বেশ প্রাণবন্ত, তবে বঙ্গিমচন্দ্রের লক্ষ্য তত্ত্ব পরিবেশনা, তাই চরিত্রগুলি কখনোই বিকাশোন্মুখ ও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠতে পারে নি। ‘বন্দেমাতরম্’ জাতীয় সংগীতরূপে যা গৃহীত হয়েছিল, তা এই উপন্যাসেই বিধৃত।
‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসের বিশিষ্টতা লক্ষ্য করা যায় কাহিনি পরিকল্পনায় এবং ব্রজেশ্বর, রঙ্গলাল, সাগর বৌ প্রভৃতি চরিত্রসৃষ্টির অভিনবত্বে। উপন্যাসের পাতায় প্রফুল্লের যে মূর্তি দেখা যায় তা পরিচিত ও স্বাভাবিক। পরে ভবানী পাঠকের হাতে পড়ে তার রূপান্তর ঘটে গেল। রূপান্তরের ইতিহাস না থাকায় শিল্পহানি ঘটেছে। বক্তিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসটি তৎকালীন সামাজিক জীবনযাত্রা, মানুষের আচার-আচরণ এবং বাস্তবরূপ প্রকাশের দর্পণ। তাই বুঝি সেই সময় তাঁর উপন্যাসগুলির মধ্যে সবচেয়ে সমাদৃত উপন্যাসটি ছিল ‘দেবী চৌধুরাণী’।
৫। প্রধান প্রধান উপন্যাসের নাম উল্লেখ করে বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশিষ্টতা নির্দেশ করো।
রবীন্দ্রনাথ ছাড়া সাহিত্যসাধনায় যিনি মনপ্রাণ একাত্ম করে সৃষ্টির আনন্দে ডুবে ছিলেন এবং বঙ্কিম-শরৎ ধারাকে বজায় রেখে নবসৃষ্টির সম্ভার বাংলাদেশ তথা ভিন্ন প্রদেশের পাঠকসমাজের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি শ্রেষ্ঠ কথাসাহিত্যিকদের অন্যতম তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালি ঘূর্ণি’ (১৯৩০)। এছাড়া উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ‘রাইকমল’ (১৯৩৩), ‘আগুন’ (১৯৩৭), ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৪০), ‘গণদেবতা’ (১৯৪২), ‘পদ্মগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৭), ‘উত্তরায়ণ (১৯৫০), ‘চাপাডাঙার বউ’ (১৯৫৫), সপ্তপদী (১৯৫৭), ‘বিপাশা’ (১৯৫৮), ‘ডাকহরকরা’ (১৯৫৮) প্রভৃতি।
তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় সুদীর্ঘ চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় সাহিত্যরচনায় ব্যাপৃত থেকে পাঠকসমাজকে নানা সাহিত্য উপহার দিয়েছেন। তাঁর ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাসটি প্রকাশিত হওয়ার পর ঔপন্যাসিক হিসাবে স্বীকৃতি আসে। তবে ‘গণদেবতা’ এবং ‘পদ্মগ্রাম’ উপন্যাস প্রকাশের পর আঞ্চলিক উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে তিনি যে একজন পথিকৃৎ তার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা লাভ করেন। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসটি তারাশংকরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার। তারাশংকর সারাজীবন হিমালয়ের মতো মৌনী হয়ে মানুষের জীবনের কথা, কালের ইতিহাসের কথা, মানুষ ছাড়া অতীন্দ্রিয় অধ্যাত্মবাদের কথা অনুভূতির নিরিখে ব্যস্ত করে গিয়েছেন।
তারাশংকর ‘কল্লোল’ ও ‘কালিকলম’ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত থেকে কাজ করেছিলেন, কিন্তু নিজের প্রতি গভীর প্রত্যয় ছিল বলে তিনি ‘কল্লোল’ গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রের বিশাল প্রান্তরে নিজেকে যুক্ত করতে পেরেছিলেন। তারাশংকর যখন কলম ধরেছিলেন তখন সামাজিক প্রেক্ষাপটের এবং গ্রাম-শহরের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে পরিবর্তনের ঢেউ লেগেছিল। জমিদারি প্রথার অবসান হচ্ছে, গড়ে উঠছে দিকে দিকে কলকারখানার সারি সারি চিমনি। তারাশংকরের গল্প উপন্যাসে মানবজীবনের চিত্র বলিষ্ঠতায় সামাজিক বিন্যাসের মূলতত্ত্ব, যা উপস্থাপিত হয়েছে, তা সাহিত্যের ইতিহাসে শাশ্বত সম্পদ।
৬। বাংলা উপন্যাসের বিচিত্র পটভূমিকা রচনায় ঔপন্যাসিক তারাশংকর বিশিষ্ট হয়ে আছেন। ‘বিচিত্র পটভূমিকা’য় উল্লেখ করে তারাশংকরের এই ধরনের উপন্যাসগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
নশ্বর জীবনের তটরেখায় দাঁড়িয়ে যিনি দার্শনিকের প্রজ্ঞায়, শিল্পীর ধ্যানমগ্নতায়, অনুভবের গভীরতায় এবং নিরলংকার আন্তরিকতায় চিরন্তন মানবমনের কথা ব্যক্ত করেছেন তিনি কথাশিল্পী তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে সাহিত্যসাধনায় একান্তভাবে নিজেকে যুক্ত রেখে তিনি তাঁর মূল্যায়নের চাবিকাঠি পাঠকসমাজের হাতেই তুলে দিয়েছেন।
তারাশংকর তাঁর জন্মভূমি লাভপুর ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলেই কালের লীলা, কালান্তরের রূপমহিমা এত সুস্পষ্টভাবে অনুভব করেছিলেন যে তাতে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। দিগন্তবিস্তৃত বীরভূমের গেরুয়া মাটির রহস্যময় ছায়া-ছায়া আহ্বান, শুকনো শুকনো গাছ, উঁচুনীচু জমি, প্রকৃতির রুক্ষ ধুসর রুদ্ররূপ, এদের তিনি কোনোভাবেই ভুলতে পারেন নি। তাঁর উপন্যাসে মুমূর্ষু সামন্ততান্ত্রিক ব্যক্তি, জীবন ও সমাজের ছবিটি অপূর্ব করুণায় মমতায় বর্ণিত হয়েছে এবং এক যুগের অবসানে অন্য একটি যুগের আগমনে ও পুরোনো জমিদারি প্রথার অবসানে গ্রাম-জনপদে গড়ে উঠেছে শিল্প, সেই সামাজিক পরিবর্তন ও বৈচিত্র্যকেই উপন্যাসে দক্ষতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
তারাশংকরের প্রথম উপন্যাস ‘চৈতালি ঘূর্ণি’ থেকে ‘আগুন’ এই প্রথম পর্বে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ক্রমিক ক্ষয়িষ্ণুতা ও অবক্ষয়ের চিত্র, শিল্পজগতের যান্ত্রিকতা প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয় পর্বে ‘ধাত্রীদেবতা’ থেকে ‘উত্তরায়ণ’ পর্যন্ত উপন্যাসগুলি প্রকাশের পর লেখকের আঞ্চলিক উপন্যাস রচনায় যে দক্ষতা অপরিসীম তার প্রমাণ মেলে। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসটি তারাশংকরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপহার যার মধ্যে একটা সমগ্ৰ গোষ্ঠীর মর্মকথা, সমাজবিন্যাসের মূলতত্ত্ব, প্রেরণা দর্পণের মতো প্রতিবিম্বিত হয়েছে।
এরপর ‘ডাকহরকরা’ পর্যন্ত তৃতীয় পর্বের উপন্যাসগুলির মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক জীবনের রূপকার হয়ে উঠেছেন তিনি। চতুর্থ পর্বের ‘মহাশ্বেতা’, ‘নিশিপদ্ম’ থেকে ‘কীর্তি হাটের কড়চা’ পর্যন্ত উপন্যাসগুলির মধ্য দিয়ে মাটি মানুষ অপেক্ষা আধ্যাত্মবাদের দর্শন ফুটে উঠেছে। শেষ পর্বের ‘মণি বৌদি’, ‘অভিনেত্রী’, ‘ফরিয়াদ’, ‘নব দিগন্ত’ প্রভৃতি উপন্যাসে নতুন আঙ্গিক নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন।
৭। বাংলা উপন্যাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা কর।
বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। চিরাচরিত সমাজ, জীবন ও সাহিত্যের লক্ষ্যকে আঘাত হেনে স্বপ্রতিভায় তীক্ষ্ণ দীপ্তিতে জীবনবোধকে প্রাধান্য দিয়ে বাস্তবের চোখে সমাজকে দেখেছেন। তৎকালীন বাংলা সাহিত্যে কল্লোলের প্রভাব থাকলেও তিনি সেই মানসিকতার প্রভাব থেকে অনেকটা মুক্ত থেকে পূর্ববঙ্গের সাধারণ চাষি মজুর-মাঝি- হাড়ি-বাগদিদের বিচিত্র জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হয়েছিলেন।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ (১৯৩৫), ‘পদ্মানদীর মাঝি’ (১৯৩৬), ‘অমৃতস্য পুত্রাঃ’ (১৯৩৮), ‘শহরতলী’ (১৯৪০), ‘অহিংসা’ (১৯৪১), ‘চতুষ্কোণ’ (১৯৪৮), ‘সোনার চেয়ে দামী’ (১৯৫১), ‘আরোগ্য’ (১৯৫৩) প্রভৃতি।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ফ্রয়েডীয় মনস্তত্ত্বের প্রতি গভীর আস্থা স্থাপন করেছিলেন এবং তার ওপর আস্থা রেখেই জীবনদর্শন খুঁজে বেড়িয়েছেন। ফলে গল্পে-উপন্যাসে মানুষের জৈবপ্রবৃত্তির ছাপ প্রকট রূপেই পড়েছে। ‘দিবারাত্রির কাব্য’ উপন্যাসটি তারই উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটি তাঁর সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস। পূর্ববাংলার পদ্মার তীরবর্তী জেলেদের জীবনবেদ রচনা করেছেন। এই সমস্ত নীচুশ্রেণির মানুষ আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে জীবনযন্ত্রণার করুণ পরিস্থিতির মাঝে পড়ে যে দুর্বিষহ কষ্ট অনুভব করেছে তাদের কথা সহৃদয়তার সঙ্গে উপস্থাপিত করেছেন।
‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসটি সাহিত্যের শিল্পনৈপুণ্যের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়বাহী। এখানে শশী, গোপাল, বিন্দু, কুসুম, কুমুদ, মতি প্রত্যেকটি চরিত্র নবরূপে প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।
৮। ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা কথাসাহিত্যের জগতে মানুষ, মাটি এবং ঈশ্বরীয় ভাবনার কথকরূপে এক বিস্ময়কর প্রতিভাধর মানুষ। বিভূতিভূষণ শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের দেখেছেন; নায়েব, তহশিলদার ভূমিকা হয়ে অরণ্যের পথে পথে ঘুরে প্রকৃতির বুকে বেড়ে ওঠা কিছু অরণ্যচারীদের জীবনযন্ত্রণা অনুভব করেছেন এবং প্রকৃতি যে ঈশ্বরের দান তাঁর মহিমা উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন। সেই সমস্ত অভিজ্ঞতা থেকেই উপাদান সংগ্রহ করে উপন্যাসের সৃষ্টিসম্ভারকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, বাঙালি হৃদয়ের মণিকোঠায় চিরঠাই করে নেওয়া ‘পথের পাঁচালী’ (১৯২৯) উপন্যাসেই তিনি বাংলা সাহিত্যাকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্ররূপে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বিভূতিভূষণের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল ‘পথের পাঁচালী’ (১৯২৯), ‘অপরাজিত’ (১৯৩২), ‘দৃষ্টি প্রদীপ’, ‘চাঁদের পাহাড়’ (১৯৩৭), ‘আরণ্যক’ (১৯৩৯), ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ (১৯৪০), ‘বিপিনের সংসার’ (১৯৪১), দুই বাড়ী’ (১৯৪১), ‘অনুবর্তন’ (১৯৪২), ‘দেবযান’ (১৯৪৪), ‘কেনার রাজা’ (১৯৪৫), ‘অথৈ জল’ (১৯৪৭), ইচ্ছামতী’ (১৯৫০) এবং ‘অশনি সংকেত’ (১৯৫১)।
বিভূতিভূষণ রহস্যময় অরণ্যপ্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এক নিবিড় যোগসূত্রতা বিদ্যমান, তা বুঝেছিলেন। তারই ছবি পাই ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে। আর-একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে তাঁর রচনায় তা হল তার ‘আধ্যাত্মচেতনা’। সেখানে তিনি অরূপলোকের সন্ধান পেয়েছেন, যার সাক্ষ্য বহন করছে ‘দেবযান’ উপন্যাসটি।
বিভূতিভূষণ বাংলা সাহিত্যের জগতে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। চিরাচরিত ঔপন্যাসিক কৌশল ত্যাগ করে আপন মনে রূপকথার রাজ্যে মহাবিশ্বের রহস্যময়তাকে শুধুমাত্র কৌতূহলী শিশুর চোখে দেখতে চেয়েছেন। তাইতো তাঁর উপন্যাসে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, চরিত্রের জটিলতা বা অন্তর্দ্বন্দ্বের স্থান কম। রয়েছে বিশ্বজনীন আকর্ষণ ও ভাবনা, মানবিক চিত্তের সহজ ও স্বতোৎসারিত প্রকাশ।