যাত্রা -আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (একাদশ শ্রেণী)

যাত্রা -আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা (একাদশ শ্রেণী)

                            যাত্রা 

১। আর্যদের ভারতে আগমনের চার-পাঁচ হাজার বছর আগে যাত্রাগান প্রচলিত ছিল কোন ভাষায়? 

(ক) দ্রাবিড় প্রাকৃত

(খ) সংস্কৃত

(গ) মৈথিলি

(ঘ) বাংলা

২। ব্যাপকতর অর্থে কাকে পৃথিবীর সমস্ত যাত্রা নাম দিতে হয়?

(ক) লোকসাহিত্যকে

(খ) লোকগানকে

(ঘ) লোকসংস্কৃতিকে

(গ) লোকনাট্যকে

৩। কিথ সাহেব জয়দেবের কোন রচনাটিকে একধরনের যাত্রা বলে অভিহিত করেছেন?

(ক) নাটককে

(খ) রচনাকে

(গ) গীতগোবিন্দকে

(ঘ) গানকে

৪। প্রথম সম্ভাব্য বাংলা যাত্রা হল –

(ক) কৃষ্ণযাত্রা 

(খ) কুশানে

(গ) চণ্ডীযাত্রা

(ঘ) বিষহরা

৫। ‘পুরোনো যাত্রা’ এবং ‘নতুন যাত্রা’ কথা দুটি চালু হয় কত শতকে?

(ক) সতেরো

(খ) ষোলো

(গ) উনিশ

(ঘ) আঠারো

৬। পুরোনো যাত্রাপালাগুলি ছিল মূলত –

(ক) সামাজিক সমস্যা নিয়ে 

(খ) রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে

(গ) ভক্তিমূলক বিষয়বস্তু নিয়ে

(ঘ) জীবনসমস্যা নিয়ে

৭। নতুন যাত্রার উদ্ভবের কাল আনুমানিক কত সালে ?

(ক) ১৮২০

(খ) ১৮২৫

(গ) ১৮৩০

(ঘ) ১৮৪০

৮। নতুন যাত্রা ছিল মূলত –

(ক) ধর্মনিরপেক্ষ 

(খ) দেবমাহাত্ম্যনির্ভর

(গ) ধর্মকেন্দ্রিক

(ঘ) সমাজবিষয়ক

৯। শখের যাত্রা করতেন –

(ক) সাধারণ লোকেরা

(খ) নাট্যপ্রেমীরা

(গ) ইংরেজরা

(ঘ) ধনাঢ্য ভদ্রসন্তানেরা

১০। নতুন যাত্রায় প্রাধান্য ছিল –

(ক) গান ও সুরের

(খ) নাচের

(গ) কীর্তনের 

(ঘ) সংলাপের

১১। নতুন যাত্রাপালায় একটি জনপ্রিয় পালা হল –

(ক) নল-দময়ন্তী 

(খ) নন্দবিদায়

(গ) রাজা বিক্রমাদিত্য

(ঘ) বিদ্যাসুন্দরের পালা

ঘ 

১২। চণ্ডীযাত্রার সবচেয়ে খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন ফরাসডাঙার

(ক) গুরুপ্রসাদ বল্লভ

(খ) লাউসেন বড়াল

(গ) আনন্দ অধিকারী

(ঘ) জয়চন্দ্র অধিকারী 

১৩। ভাসান যাত্রার খ্যাতিমান পুরুষ ছিলেন বর্ধমানের –

(ক) প্ৰেমচাঁদ অধিকারী

(খ) হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য

(গ) বদন অধিকারী

(ঘ) লাউসেন বড়াল

১৪। রামযাত্রায় জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন পাতাইহাটার

(ক) প্রেমচাঁদ অধিকারী

(খ) গুরুপ্রসাদ বল্লভ

(গ) লাউসেন বড়াল

(ঘ) বদন অধিকারী

১৫। বামন ভিক্ষা গীতাভিনয় নামে পালাটিতে গান ছিল –

(ক) দশটি

(খ) আটচল্লিশটি

(গ) বত্রিশটি

(ঘ) চল্লিশটি

১৬। তিরিশ পঁয়তিরিশ বছর আগে যাত্রার সময় ছিল প্রায় –

(ক) দশ ঘণ্টা 

(খ) ছয় ঘণ্টা

(গ) বারো ঘণ্টা

(ঘ) আট ঘণ্টা

১৭। উনিশ শতকের একটি জনপ্রিয় যাত্রাপালার নাম হল –

(ক) নল-দময়ন্তী যাত্রা

(খ) কৃষ্ণযাত্রা

(গ) ছেঁড়া তার

(ঘ) একটি পয়সা

১৮। নতুন যাত্রাপালায় একটি প্রধান অংশ অধিকার করেছিল –

(ক) সংলাপ

(খ) গান

(গ) নৃত্য

(ঘ) পৌরাণিক পালা

১৯। উনিশ শতকে রামায়ণের কাহিনি নিয়ে লোকনাট্য তৈরি হয়েছিল তার নাম – 

(ক) হনুমান যাত্রা

(খ) রামায়ণ

(গ) রাবণবধ যাত্রা

(ঘ) রামযাত্রা

২০। উনিশ শতকে দেশপ্রেমমূলক কাহিনি নিয়ে রচিত পালাকে বলে –

(ক) আধুনিক যাত্রা

(খ) রাজনৈতিক পালা

(গ) স্বদেশি যাত্রা 

(ঘ) সামাজিক যাত্রা

২১। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি অঞ্চলে প্রচলিত রামযাত্রাকে বলে –

(ক) রাবণবধ যাত্রা 

(খ) কৃষ্ণযাত্রা

(খ) কুশানে

(খ) লবকুশ যাত্রা

২২। কুশানের সময় যে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হয় তার নাম –

(ক) তারযন্ত্র

(খ) মন্দিরা

(গ) মৃদঙ্গ

(ঘ) বেণু কুশানে

২৩। মধ্যযুগে প্রচলিত চণ্ডীযাত্রা হল –

(ক) দুর্গার কাহিনি

(খ) কমলে কামিনী চণ্ডী

(গ) কাশী

(ঘ) কোনোটাই নয়

২৪। ভাসান যাত্রা বলতে বোঝায় –

(ক) দেবীমনসার কাহিনি

(খ) চণ্ডীর কাহিনি

(গ) দুর্গার কাহিনি

(ঘ) অন্নপূর্ণার কাহিনি

২৫। ভাসান যাত্রার কাহিনি কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতে কী নামে পরিচিত?

(ক) মনসা কাহিনি

(খ) বিষহরা

(গ) বণিকশ্রেষ্ঠ চাঁদসদাগর

(ঘ) বেহুলা-লখিন্দর

২৬। পূর্বে যাত্রা পরিচিত হত — নামে।

(ক) প্রসিদ্ধ লোকের

(খ) দেবতার

(গ) দেবীর

(ঘ) মানুষের

২৭। পুরোনো যাত্রার ভাব ছিল –

(ক) দেবকেন্দ্রিক

(খ) ধর্মকেন্দ্রিক

(গ) নীতিশিক্ষাকেন্দ্রিক

(ঘ) সমাজকেন্দ্রিক

২৮। নতুন যাত্রার বিশেষত্বের মধ্যে একটি ছিল –

(ক) নৃত্য

(খ) সংলাপ

(গ) যুদ্ধ

(ঘ) কোনোটাই নয়

২৯। ‘বিদ্যাসুন্দর পালা’টি হল — জনপ্রিয় পালা।

(ক) ভাসান যাত্রা

(খ) কুশানে

(গ) নতুন যাত্রা

(ঘ) কোনোটি নয়

৩০। যাত্রায় রঙিন আলোর প্রথম ব্যবহার করেন –

(ক) তাপস রায় 

(খ) তাপস সেন

(গ) তাপস দত্ত

(ঘ) তাপস পাল

৩১। নতুন যাত্রার ভাবটি ছিল –

(ক) দেবমহিমা নির্ভর 

(খ) ধর্মনিরপেক্ষ

(গ) ধর্মপ্রচারক

(ঘ) কোনোটি নয়।

৩২। কৃষ্ণযাত্রার মূল বিশেষত্ব ছিল তাতে — থাকবে না।

(ক) গদ্য সংলাপ

(খ) গান 

(গ) সুর

(ঘ) কোনোটি নয়।

৩৩। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কাহিনিকে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রদর্শন করাকে কি বলে? 

(ক) থিয়েটার

(খ) উৎসব

(গ) মিত্ররা

(ঘ) গীতাভিনয়

৩৪। মধ্যযুগে আখ্যানমূলক রচনাকে বলা হত –

(ক) পাঁচালি

(খ) উৎসব

(গ) যাত্রা

(ঘ) কোনোটি নয়

৩৫। মধ্যযুগে বাংলায় যাত্রা বলতে কি বোঝাত?

(ক) পাঁচালি

(খ) উৎসব 

(গ) দেবোৎসব

(ঘ) কোনোটি নয়

৩৬। দেবোৎসব ঊষা লক্ষ্যে যে নৃত্যগীত হত তাকে বলে –

(ক) নাটগীত

(খ) অভিনয়

(গ) যাত্রা

(ঘ) পাঁচালি

৩৭। মধ্যযুগে ‘নাট্যগীত’ বলা হত –

(ক) বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্মকীর্তনকে

(খ) ভাগবতকে

(গ) মহাভারতে

(ঘ) কোনোটি নয়।

৩৮। মধ্যযুগে যাত্রার অবলম্বন ছিল — বিষয়বস্তু।

(ক) সমাজের

(খ) ধর্মের

(গ) ধর্মনিরপেক্ষ 

(ঘ) কোনোটি নয়।

৩৯। মধ্যযুগে খোলামঞ্চে যাত্রার মতো অভিনয় করতেন কে? 

(ক) চৈতন্যদের

(খ) জীব গোস্বামী

(গ) গোপাল ভট্ট

(ঘ) এঁদের কেউ নয়

৪০। অষ্টাদশ শতকের মানুষের রুচিহীন কদর্যতায় কৃষ্ণযাত্রা ও ভক্তিরস হারিয়ে হয়েছিল –

(ক) ভাঁড়

(খ) কালীয়দমন যাত্রা

(গ) খিস্তি-খেউড়

(ঘ) কোনোটি নয়

৪১। উনিশ শতকের প্রথমে যাত্রাকে সংস্কৃত ও মর্যাদায় উন্নীত করতে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন কে?

(ক) পরমানন্দ অধিকারী

(খ) কৃষ্ণকমল গোস্বামী

(গ) নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়

(ঘ) এঁদের কেউ নন

৪২। উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে কলকাতায় কাদের বাড়িতে যাত্রানুষ্ঠান হত?

(ক) জমিদার 

(খ) ধনী বাঙালির

(গ) মুখুজ্জে

(ঘ) চাটুজ্জে

৪৩। কলকাতার কোন ধনী বাঙালির বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘কামরূপ যাত্রা’?

(ক) মনি সরকার

(খ) দীপক সরকার 

(গ) শ্যামসুন্দর সরকার

(ঘ) কোনোটি নয়।

৪৪। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে — নামে একধরনের যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হত।

(ক) নতুন যাত্রা

(খ) পুরোনো যাত্রা

(গ) মজাদার যাত্রা

(ঘ) খেউড় যাত্রা

৪৫। নতুন যাত্রা-য় কি দেখানো শুরু হয়েছিল?

(ক) মণিপুরী নাচ 

(খ) ভারতনাট্যম 

(গ) খেউড় নাচ

(ঘ) খেমটা নাচ

৪৬। নতুন যাত্রায় খেমটা নাচ-এর ব্যবহারে অগ্রগণ্য ছিলেন – 

(ক) মাধব উড়ে

(খ) গোপাল উড়ে 

(গ) যাদব উড়ে

(ঘ) শ্যাম উড়ে

৪৭। গোপাল উড়ের কোন যাত্রাপালা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল?

 (ক) ভাসান যাত্রা।

(খ) নন্দবিদায় যাত্রা

(গ) বিদ্যাসুন্দর পালা।

(ঘ) কামরূপ পালা

৪৮। বিদ্যাসুন্দর পালা হয়েছিল শ্যামবাজারের কার বাড়িতে?

(ক) নবীন বসুর 

(খ) শ্যাম বসুর 

(গ) যদু বসুর

(ঘ) মধু বসুর

৪৯। গোপাল উড়ের যাত্রার প্রভাব থেকেই তৈরি হয়েছিল –

(ক) নাট্যশালা

(খ) রঙ্গমঞ্চ

(গ) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির নাট্যশালা

(ঘ) কোনোটি নয়

৫০। উনিশ শতকের কোন সম্প্রদায় যাত্রার প্রতি অনীহা স্থাপন করেছিল?

(ক) নব্য শিক্ষিত 

(খ) ধনী শিক্ষিত 

(গ) ইংরেজি শিক্ষিত

(ঘ) এদের কেউ নয়

৫১। উনিশ শতকে বাঙালি ধনী সম্প্রদায়ের প্রাসাদমঞ্চে চালু হয়েছিল –

(ক) মিত্ররা

(খ) ইংরেজি ধরনের থিয়েটার

(গ) নাটক

(ঘ) থিয়েটার

৫২। উনিশ শতকের মধ্যভাগে কৃষ্ণযাত্রাকে নতুন করে সংস্কার করেছিলেন –

(ক) কৃষ্ণকমল গোস্বামী

(খ) কৃষ্ণ গোস্বামী

(গ) কানু গোস্বামী

(ঘ) এঁদের কেউ নন

৫৩। বাংলা নাটকের প্রভাবে প্রাচীন ও নতুন যাত্রার ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছিল –

(ক) মিশ্রিত যাত্রা 

(খ) গীতাভিনয় 

(গ) বাংলা যাত্রা

(ঘ) কোনোটি নয়

৫৪। কৃষ্ণযাত্রার গীত, নতুন যাত্রার নৃত্য, নাটকের সংলাপ ও সংঘাত নিয়েই তৈরি হয় –

(ক) যাত্রা 

(খ) বাংলা মিত্ররা

(গ) গীতাভিনয়

(ঘ) কোনোটিই নয়

৫৫। শহর, শহরতলি ও গ্রামাঞ্চলে গীতাভিনয় যাত্রাকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন –

(ক) মতিলাল রায় 

(খ) অহীন্দ্র চৌধুরী 

(গ) মনোমোহন বসু

(ঘ) এঁদের কেউ নন

৫৬। উনিশ শতকের শেষার্ধে সবচেয়ে খ্যাতিমান পালাকার ও অভিনেতা হলেন –

(ক) মনোমোহন বসু

(খ) মতিলাল রায়

(গ) অহিভূষণ ভট্টাচার্য 

(ঘ) ব্রজমোহন রায়

৫৭। সখের যাত্রার দল দেখা যায় উনিশ শতকের –

(ক) পঞ্চাশের দশকে

(খ) চল্লিশের দশকে 

(গ) সত্তর-আশির দশকে

(ঘ) তিরিশের দশকে

৫৮। উনিশ শতকের সত্তর-আশির দশক থেকেই তৈরি হয় –

(ক) পেশাদারি যাত্রার দল

(খ) নতুন যাত্রার দল

(গ) সখের মাত্রার দল

(ঘ) থিয়েটার দল

৫৯। বিশ শতকে যাত্রায় সংযোজন ও পরিমার্জন হয় এবং নাম হয় –

(ক) নব যাত্রা

(খ) থিয়েট্রিকাল যাত্রা

(গ) সখের যাত্রা

(ঘ) কোনোটি নয়।

৬০। বঙ্গভঙ্গের যুগে স্বদেশি যাত্রার শ্রেষ্ঠ পালাকার ছিলেন –

(ক) কুঞ্জবিহারী গঙ্গোপাধ্যায়

(খ) মধুর সাহা

(গ) ভূষণ দাস

(ঘ) চারণ কবি মুকুন্দ দাস

৬১। বিশ শতকের মাঝামাঝি যিনি যাত্রাপালাকে রুচি-শিল্পবোধে উন্নীত করেছিলেন তিনি হলেন –

(ক) কানাই শীল

(খ) ব্রজেন্দ্রকুমার দে

(গ) জিতেন্দ্রনাথ বসাক

(ঘ) বিনয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়

৬২। যাত্রাপালায় দেবদেবী থেকে মহাপুরুষ চরিত্র ঐতিহাসিক চরিত্র, পরে সাধারণ মনুষ্য চরিত্র যাত্রাপালা প্রতিষ্ঠালাভ করে কোন সময় থেকে?

(ক) বিশ শতাকের মাঝামাঝি

(খ) উনিশ শতকের মাঝামাঝি 

(গ) উনিশ শতকের শেষ

(ঘ) বিশ শতকের গোড়া

১। যাত্রাকে কি লোকনাট্যের অন্তর্ভুক্ত করা যায়?

যাত্রাকে বিশুদ্ধ লোকনাট্য না বললেও বাংলার প্রথাগত নাট্যরীতি হিসাবে গ্রহণ করা যায়।

২। প্রথম সম্ভাব্য বাংলা যাত্রা কোনটি? 

প্রথম সম্ভাব্য বাংলা যাত্রা হল কৃষ্ণযাত্রা বা কালিয়দমন যাত্রা।

৩। পূর্বে যাত্রা কী নামে পরিচিত হত?

পূর্বে প্রসিদ্ধ লোকের নামেই যাত্রার দলগুলি পরিচিত হত। 

৪। পূর্বে প্রচলিত দলের একটি নাম উল্লেখ করো।

পূর্বে প্রচলিত একটি দল হল পরমানন্দ অধিকারীর দল। এ ছাড়াও রয়েছে কৃষ্ণকমল অধিকারীর (গোস্বামীর) দল, গোপাল উড়ের দল ইত্যাদি।

৫। বর্তমানে যাত্রা দল কীভাবে পরিচিত হয়?

বর্তমানে কোনো ব্যক্তিগত নামে হয় না; এখন বলা হয় সত্যম্বর অপেরা, নট্ট কোম্পানী, আর্য অপেরা, মঞ্জুরী অপেরা ইত্যাদি।

৬। পুরানো যাত্রার ভাব কেমন ছিল? 

পুরানো যাত্রা ছিল ধর্মকেন্দ্রিক ও দেবমাহাত্ম্যা নির্ভর।

৭। নতুন যাত্রার ভাব কীরূপ? 

নতুন যাত্রার ভাব হল ধর্মনিরপেক্ষ।

৮। শখের যাত্রা কারা করতেন?

শখের যাত্রা করতেন ধনাঢ্য ভদ্র সন্তানেরাই। এখানে জনগণের মনোরঞ্জনের জন্য নানারকমের সং দেখানো হত।

৯। শখের যাত্রার দল গড়েছিলেন এমন একজনের নাম লেখো।

শখের যাত্রার দল গড়েছিলেন জোড়াসাঁকোর রামচাঁদ মুখোপাধ্যায়।

১০। নতুন যাত্রার বিশেষত্ব কী ছিল?

নতুন যাত্রায় গান, সুর এবং নৃত্যের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি।

১১। নতুন যাত্রায় নতুনত্বের কী কী চিহ্ন পাওয়া যায়?

নতুন যাত্রায় সুরবৈচিত্র্য, দামি সাজ-পোশাক, পয়ারে কথা-কাটাকাটি, থিয়েটারি ধরনের সংলাপ প্রভৃতি ছিল নতুনত্বের চিহ্ন।

১২। নতুন যাত্রার একটি জনপ্রিয় পালার নাম লেখো।

নতুন যাত্রার একটি জনপ্রিয় পালার নাম হল ‘বিদ্যাসুন্দর পালা’।

১৩। যাত্রায় স্পট লাইটের ব্যবহার কে, কোন নাটকে প্রথম করেছিলেন? 

অপরেশ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘কর্ণার্জুন’ নাটকে স্পটলাইট ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তার আগে আবেগের প্রধান বাহন ছিল কণ্ঠস্বর।

১৪। কোন যাত্রাপালায় প্রথম টেপ রেকর্ডার ব্যবহার করা হয়? 

১৯৬৭ সালে তরুণ অপেরার ‘হিটলার’ পালাতে প্রথম টেপ রেকর্ডার ব্যবহৃত হয়।

১৫। বাংলা লোকনাট্যের প্রথম অভিনয় কী ছিল ? 

বাংলা লোকনাট্যের প্রথম অভিনয় ছিল কৃষ্ণযাত্রা।

১৬। কৃষ্ণযাত্রার মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল? 

কৃষ্ণযাত্রার মূল বৈশিষ্ট্য ছিল তাতে কোনো নৃত্য কিংবা গদ্যসংলাপ থাকবে না।

১৭। নতুন যাত্রার বিশেষত্ব কী ছিল ?

নতুন যাত্রা ছিল ধর্মনিরপেক্ষ পার্থিব বিষয়বস্তু নিয়ে তৈরি পালা এবং সঙ্গে ছিল নৃত্য।

১৮। রামযাত্রা পরিবেশনের রীতি কীরূপ ছিল?

রামযাত্রায় একজন মূল গায়েন থাকতেন এবং তার সঙ্গে দু-তিনজন দোহার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত গায়েনকে সহায়তা করত।

১৯। ‘কুশানে’ পালাটি কোথায় প্রচলিত?

এক শ্রেণির রামযাত্রাই হল ‘কুশানে’ যা উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে ও জলপাইগুড়ি জেলার গ্রামাঞ্চলে প্রচলিত ছিল।

২০। ‘বেণা কুশানে’ কাকে বলে?

‘বেনা কুশানে’ নামে একটি তারযন্ত্র ‘কুশানে’ অনুষ্ঠানের মূল বাদ্যযন্ত্র হিসাবে বাজানো হত বলে এই অনুষ্ঠানকে ‘বেণা কুশানে’ বলা হয়।

২১। ভাসান যাত্রা কী?

দেবী মনসার কাহিনি অর্থাৎ চাঁদসদাগরের কাহিনি অবলম্বন করে এক শ্রেণির লোকযাত্রা বাংলায় প্রচলিত ছিল তারই নাম ‘ভাসান যাত্রা’।

২২। ‘বিষহরা পালা কী?

উত্তরবঙ্গের কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার অত্যন্ত জনপ্রিয় পালা, যা ভাসান যাত্রারই প্রাচীনতর রূপ তাই বিষহরা পালা ।

২৩। স্বদেশি যাত্রা কাকে বলে?

দেশপ্রেমিকদের আত্মত্যাগের কাহিনি অবলম্বনে তৈরি পালাকে স্বদেশি যাত্রা বলে।

১। লোকনাট্য সম্পর্কে ধারণা দিয়ে কৃষ্ণযাত্রা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

লোকজীবনের ঘটনাকে আশ্রয় করে মুখে মুখে রচনা করে অভিনীত হত নাটক। সাধারণত এরূপ নাটকই হল লোকনাট্য। এক্ষেত্রে কোনো পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক কাহিনিকে গ্রহণ করা সংগত নয়। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে এই ধরনের নাটক খুবই দুর্লভ। কারণ গ্ৰামাঞ্চলের নাটকেও আজকাল রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে বা কখনো প্রাচীন গ্রন্থ থেকে কাহিনি গ্রহণ করা হয়। যদিও গৃহীত চরিত্রগুলোকে যতটা সম্ভব বাঙালি ভাবাপন্ন করে নেওয়া হয় তথাপি চরিত্রগুলো একটা বাঁধা-ধরা ঐতিহ্যের ধারা অনুসরণ করে এবং তারা কখনো নিজেদের কার্যকলাপে স্বাধীন এবং স্বতঃস্ফূর্ত হতে পারে না। গ্রামাঞ্চলে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে এই সবই নাটক ও লোকনাট্য বলে গৃহীত হয়। কারণ, এগুলি যেমন জনপ্রিয়, তাদের প্রসারও তেমনই ব্যাপক। তাদের সাধারণভাবে ‘যাত্রা’ বলে উল্লেখ করা হয়।

গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন শ্রীচেতন্যদেব। বাংলার সমাজজীবনে তার প্রভাব ছিল গভীর। চৈতন্যদেবকে আশ্রয় করে তারই পার্ষদ একটি জীবনী রচনা করেছিলেন। সেখানে পাওয়া যায় যে, চৈতন্যদেব নিজে একদিন এক লোকনাট্যের অভিনয়ে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এই ঘটনা চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণ করার আগে। সেই নাটকে চৈতন্যদেব নিজে রুক্মিনীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, চৈতন্যের অন্যান্য ভক্তগণ তাদের বয়স ও আকৃতি অনুযায়ী তাতে বিভিন্ন স্ত্রী এবং পুরুষের অংশে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এটাই বাংলার লোকনাট্যের অভিনয়ের প্রথম সাহিত্যিক প্রমাণ। এই শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনি ভিত্তিক নাট্যানুষ্ঠানটি ‘কৃষ্ণযাত্রা’ হিসাবে পরিচিত।

বাংলার বুকে কৃষ্ণযাত্রা কিন্তু এখনও বর্তমান রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে উৎসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কৃষ্ণযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। মধ্যযুগে রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ থেকে কাহিনি গ্রহণ করে নৃত্যগীতের মাধ্যমে পরিবেশন করা হত। এটাও ছিল এক ধরনের লোকনাট্য। পরবর্তীকালে এই লোকনাট্যই কৃষ্ণযাত্রার সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে যায়।

২। বাংলায় ‘নতুন যাত্রা’র ভূমিকা কতখানি ছিল তা আলোচনা করো।

ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যাবে আঠারো শতকের গোড়া থেকে বাঙালির সামাজিক জীবনে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব কমতে শুরু করে। স্বাভাবিকভাবে তার প্রভাব পড়ে লোকনাট্যের ওপরেও। আগে যেমন কৃষ্ণযাত্রাই সমাজজীবনকে মুখরিত করত, তেমনই পরবর্তীকালে বৈষ্ণবধর্ম হ্রাস পাওয়ায় জনজীবনে নতুন নতুন ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়বস্তু এবং পৌরাণিক বিষয়ও লোকনাট্যের ওপর যুক্ত হাতে থাকে। যেমন, সেই সময় ‘নল-দময়ন্তী যাত্রা’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বা কলকাতায় বিদ্যাসুন্দর যাত্রাও অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েছিল। এই সময় থেকেই বাংলায় যাত্রার পালা বদল হতে শুরু করে। ধর্মনিরপেক্ষভাবে নতুন নতুন বিষয় যাত্রার বিষয় হয়ে উঠতে শুরু করে। 

উনিশ শতকের মধ্যভাগে বাংলার বুকে হিন্দুজীবনাদর্শের উত্থান ঘটতে থাকে। একদিকে হিন্দুপুরাণ এবং ধর্মগ্রন্থ থেকে কাহিনি নিয়ে যাত্রাপালা রচিত হতে থাকে, অপরদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষাও এদেশে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। শেকসপিয়রের নাটক অনুসরণ করে অনেক নাট্যকার বাংলায় নাটক রচনা করতে থাকেন। আর একটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো তা হল ইংরেজি নাটকে বিয়োগান্ত পরিণতির মতো বাংলা যাত্রাতেও মিলনের পরিবর্তে বিয়োগান্তভাবে যাত্রার সমাপ্তি হতে শুরু করে। দর্শকদের মধ্যেও যাত্রার এই শেষের ভূমিকায় মনের মধ্যে কোনো প্রশ্ন জাগে না। গ্রামাঞ্চলের যাত্রাপালা যেমন হল পরিবর্তন, তেমন কলকাতার রঙ্গমঞ্চেও পৌরাণিক নাটক অভিনীত হতে থাকে।

প্রাচীন কৃষ্ণযাত্রা পালাতে নৃত্য বা গদ্যসংলাপ ছিল না, কিন্তু ‘নতুন যাত্রা’ পালাতে নৃত্য পরিবেশিত হতে থাকে। ‘বিদ্যাসুন্দর যাত্রা’ পালাতেও নৃত্য পরিবেশন শুরু হয়েছিল। তবে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, যে সমস্ত কাহিনি গ্রহণ করে যাত্রাপালা রচিত হত তা জনপ্রিয় কাহিনি ঠিকই কিন্তু যাত্রাপালাতে যে নৃত্য পরিবেশিত হত তার সঙ্গে যাত্রাপালার যোগসূত্রতা ছিল অল্প। কিন্তু যাত্রাপালার সঙ্গে নৃত্য সংযুক্ত হওয়ায় দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। 

এরপর থেকে নতুন নতুন যাত্রাপালাতে তো বটেই, এমনকি পৌরাণিক যাত্রাপালাতেও নৃত্য পরিবেশন একটি অঙ্গ হয়ে ওঠে। কাহিনির মধ্যে পৌরাণিক চরিত্রের সাহায্যে নৃত্য পরিবেশন সম্ভব না হলে, পুরাণের কাহিনি নিরপেক্ষ নতুন নতুন চরিত্র উদ্ভাবন করা হত। বলা যায়, পুরাণের কাহিনি হয়তো সেখানে একটু গুরুভার, তার মাঝে নৃত্য পরিবেশন পরিমণ্ডল তৈরি করে লঘু পরিবেশ সৃষ্টি করা হত।

Leave a Comment