fbpx

বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়: একাদশ শ্রেণী – বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব প্রথম অধ্যায়)

বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়: একাদশ শ্রেণী – বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব প্রথম অধ্যায়)

বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় একাদশ শ্রেণী – বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি

বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব প্রথম অধ্যায়) বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় একাদশ শ্রেণী হতে MCQ প্রশ্ন ও উত্তর 👆


বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব প্রথম অধ্যায়) বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় একাদশ শ্রেণী হতে ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

  • ১। বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বা নরতত্ত্বের পরিচয় কাকে বলে? 
    • বাংলাদেশের আচণ্ডাল সমস্ত বর্ণের এবং সমস্ত শ্রেণির জনসাধারণের রক্ত ও দেহগঠনের বিজ্ঞানসম্মত বিশ্লেষণকে নৃতাত্ত্বিক পরিচয় বলে।
  • ২। দেহগঠনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয় দেখা হয় ?
    • দেহগঠনের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মানুষের মাথা, নাকের পরিমিতি ও পরস্পর অনুপাত, চুল, চোখ, চামড়ার রং দেখা হয়। 
  • ৩। দু-জন নৃতত্ত্ববিদের নাম লেখো।
    • দু-জন নৃতত্ত্ববিদের নাম হল রিজলি সাহেব ও ফন আইকস্টেডট।
  • ৪। ভাষার ওপর নির্ভর করে কি জনতত্ত্ব বিশ্লেষণ করা উচিত?
    • ভাষার ওপর নির্ভর করে জনতত্ত্ব বিশ্লেষণ অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক।
  • ৫। বাঙালির জনতত্ত্ব নিরূপণের অন্যতম সহায়ক কি? 
    • বাঙালির জনতত্ত্ব নিরুপণে অন্যতম সহায়ক হল প্রাচীন ও বর্তমান বাস্তব সভ্যতা ও মানসিক সংস্কৃতির বিশ্লেষণ।
  • ৬। সাধারণভাবে বাঙালিদের আকৃতি কী রূপ? 
    • সাধারণভাবে বাঙালিদের আকৃতি হল চুল কালো, চোখের মণি পাতলা, ঘন বাদামি বা কালো, গায়ের রং ঘন বাদামি থেকে ঘন কালো, দেহ মধ্যম আকৃতির, মাথা দীর্ঘ, নাক মধ্যম।
  • ৭। বাঙালি জাতির দেহগঠনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাবার্ট রিজলির মত কী?
    • হার্বাট রিজলি বলেছেন যে, বাঙালি জাতির দেহগঠন প্রধানত মঙ্গোলীয় ও দ্রাবিড় নরগোষ্ঠীর সংমিশ্রণের ফল।
  • ৮। নৃতত্ত্ববিদদের মতে বাঙালিদের মধ্যে কোন আদিম অধিবাসীদের প্রভাব বর্তমান ?
    • নৃতত্ত্ববিদদের মতে বাঙালিদের মধ্যে যে আদিম অধিবাসীদের প্রভাব বেশি, তারা হল আদি-অষ্ট্রেলিয়।
  • ৯। আদি নর্ডিক নরগোষ্ঠীর ভূমিকা কী?
    • আদি-নর্ডিক নরগোষ্ঠীই বৈদিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির সৃষ্টিকর্তা এবং এরাই পূর্বের ভারতীয় সংস্কৃতি রূপান্তরসাধন করে নব কলেবর দান করেছিল।
  • ১০। ‘ইন্ডিড’ কাদের বলা হয়?
    • বলিষ্ঠ ও দুর্জয় আদি-নর্ডিক নরগোষ্ঠীকে ফন আইকস্টেডট্ ‘ইন্ডিড’ নামকরণ করেছেন।
  • ১১। প্রাচ্য বা Oriental কাদের বলা হয়?
    • খর্বদেহী দীর্ঘমাথাযুক্ত জাতির অস্তিত্ব কল্পনা করে নরতত্ত্ববিদ ফিশার সাহেব তাদের প্রাচ্য বা Oriental হিসেবে নামকরণ করেছিলেন।
  • ১২। ইন্ডিড নরগোষ্ঠীর কয়টি শাখা ও কি কি? 
    • ইন্ডিড নরগোষ্ঠীর তিনটি শাখা – যথার্থ ইন্ডিড, উত্তর ইন্ডিড ও ব্র্যাকিড।
  • ১৩। ইন্ডিড নরগোষ্ঠীর কোন শাখা বাঙলা ও ওড়িশায় রয়েছে?
    • ইন্ডিড নরগোষ্ঠীর ‘পূর্ব ব্রাকিড’ শাখা বাঙলা ও ওড়িশায় রয়েছে।
  • ১৪। ভারতবর্ষে সবচেয়ে বলিষ্ঠ নরগোষ্ঠী কোনটি?
    • সংখ্যায় ও বিস্তৃতিতে ভারতবর্ষে সবচেয়ে বলিষ্ঠ নরগোষ্ঠী হল ‘ইন্ডিড্’।
  • ১৫। ‘ইণ্ডিড’ নরগোষ্ঠী সম্পর্কে আইকস্টেডটের মতামত কী? 
    • ‘ইন্ডিড’ নরগোষ্ঠীই প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার উত্তরাধিকারী এবং দ্রাবিড় ও বিশিষ্ট ‘ভারতীয়’ আত্মিক সাধনার যথার্থ প্রতিনিধি।
  • ১৬। বাঙলার জনসমষ্টি কাদের সমন্বয়ে গঠিত?
    • বাঙলার জনসমষ্টি আদি-অস্ট্রেলীয়, মেলানিড এবং পূর্ব ব্র্যাকিড় – এই তিন গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত। 
  • ১৭। বাঙলার জনসৌধে কি নিগ্রোবটুদের প্রভাব রয়েছে? 
    • বাঙালি সমাজের অত্যন্ত নিম্নস্তরে এবং সংকীর্ণ স্থানের মধ্যে এই নিগ্রোবটুদের প্রভাব রয়েছে।
  • ১৮। বাঙলাদেশের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কাদের মিল পাওয়া যায় ?
    • বাঙলাদেশের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে পাঞ্জাবের ব্রাহ্মণদের এবং উত্তর ভারতের উচ্চবর্ণের সঙ্গে মিল আছে।
  • ১৯। বাঙালি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে কাদের নরতাত্ত্বিক আত্মীয়তা রয়েছে?
    • বাঙালি ব্রাহ্মণদের সঙ্গে বাঙালি বৈদ্য ও কায়স্থদের নরতাত্ত্বিক আত্মীয়তা রয়েছে। 
  • ২০। বাঙালি ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থরা একই গোষ্ঠীর লোক?
    • নৃতত্ত্বের দিক থেকে বাঙালি ব্রাহ্মণ, বৈদ্য, কায়স্থদের একই গোষ্ঠীর লোক বলা যায়।
  • ২১। কোন জায বঙ্গজন-প্রতিনিধি ?
    • প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ-এর মতে, কায়স্থ, সদগোপ ও কৈবর্তরাই যথার্থ বঙ্গজন-প্রতিনিধি।
  • ২২। নৃতাত্ত্বিক ফন আইকস্টেডট্ ভারতের মানুষকে কয়টি নরবংশগত বর্গে ভাগ করেছেন?
    • ফন্ আইস্টেড ভারতের মানুষকে তিনটি নরবংশগত বর্গে ভাগ করেছেন।

১। সংক্ষেপে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দাও। 

বাংলায় বসবাসকারী বিভিন্ন বর্ণের ও শ্রেণির মানুষদের দৈহিক গঠন, চুলের বৈশিষ্ট্য, চোখ, চামড়া, রং, নাক, কপাল ও মাথার আকৃতির পরিমিতি গ্রহণ করে নৃতাত্ত্বিক গবেষকগণ যতটুকু পরিচয় বাঙালিদের পেয়েছেন তা সংক্ষেপে বিবৃত করা যেতে পারে। 

আনুমানিক খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে রচিত বৃহদ্ধর্মপুরাণে ব্রাহ্মণ বাদ দিয়ে সমসাময়িক বাংলার মানুষের মধ্যে জাতগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করে দেখানো হয়েছে – উত্তম-সংকর, যার মধ্যে রয়েছে সৎশূদ্র, বৈদ্য, বণিক, কুম্ভকার, তন্তুবায়, কর্মকার, গোপ-নাপিত, মালাকার, তৌলিক প্রভৃতি; মধ্যম-সংকর, যার মধ্যে রয়েছে রজক, স্বর্ণকার, স্বর্ণবণিক, তৈলকারক, ধীবর, নট, শেখর, জালিক প্রভৃতি; অন্ত্যজ বা অধম-সংকর, যার মধ্যে রয়েছে চণ্ডাল, চর্মকার, কুড়ব, বরুড়, মল্ল, ডোলাবাহী, ঘটজীবী, তক্ষ প্রভৃতি।

বাঙালি-নৃতত্ত্বের দিকটি বিশ্লেষণের প্রথম অবস্থায় বলা হয়েছিল যে, বাঙালি ব্রাহ্মণদের দেহ মধ্যম আকৃতির, মাথার আকৃতি সম্পূর্ণ গোল ও দীর্ঘ নয়, নাক তীক্ষ্ণ ও উন্নত। এই মতটি রাঢ়িশ্রেণির ব্রাহ্মণদের পরিমিতি গ্রহণ করে বিরজাশংকর গুহ মহাশয় ব্যক্ত করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালের গবেষণায় নৃতাত্ত্বিকগণ দেখেছেন যে, বাঙালি ব্রাহ্মণ, রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ এবং বারেন্দ্র বা বৈদিক ব্রাহ্মণদের মধ্যম আকৃতির গোল মাথা, উন্নত সুগঠিত নাকই দেখা যায়, যা নৃতত্ত্ববিশ্লেষণ কায়স্থদের মধ্যেও বর্তমান। আর একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, হিন্দুসমাজে নমঃশূদ্রদের নীচে রাখা হয়েছে অথচ নরতত্ত্বের পরিমিতি গণনার বৈশিষ্ট্যানুযায়ী এদের দেহগঠনও ব্রাহ্মণ, কায়স্থ ও বৈদ্যদের মতোই। 

উত্তম ও মধ্যম সংকর শ্রেণির বাঙালিরা মধ্যমাকৃতির এবং একটু খর্বও। অন্ত্যজ শ্রেণির বাঙালিরা প্রধানত একটু খর্বাকৃতির। নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাঙালির দেহ মধ্যমাকৃতির, চুল কালো, চোখের মণি কালো, গায়ের রং ঘন বাদামি থেকে নিম্নশ্রেণিতে ঘন কালো, নাকের আকৃতি তীক্ষ্ণ ও উন্নত।

এই সমস্ত বাঙালি সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে যারা একের পর এক ভারতবর্ষে এসেছিল, তাদের মধ্যে নানাভাবে রক্তের সংমিশ্রণ ঘটেছে বা মৈত্রী-বিরোধের মধ্যেও পরস্পর কাছাকাছি আসায় এই বৈশিষ্ট্যগুলি তৈরি হয়েছে। আরও একটু সূক্ষ্মভাবে বলা যায় যে, বাঙালি জাতির এই বৈশিষ্ট্যগুলি এসেছে প্রধানত আদি নিগ্রোবটু ও যাদের মাথা দীর্ঘ-উচ্চ, নাক তীক্ষ্ণ ও উচ্চ এবং আদি অস্ট্রেলীয় যাদের মাথা দীর্ঘ ও অনুচ্চ, নাক মধ্যম, তাদের সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে। 

তবে অনেকে আবার বলেন, আর্যদের ভারতবর্ষে আগমনের পূর্বে নিষাদ জাতি, কোল, ভীল, সাঁওতাল, মুন্ডা প্রভৃতি অস্ট্রিক মানবগোষ্ঠী বাস করত, এদের সঙ্গে পরবর্তীকালে সভ্য দ্রাবিড় গোষ্ঠী এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মঙ্গোলীয় গোষ্ঠীর নরনারীর আগমন ঘটে বাংলাদেশে। ফলে অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও মঙ্গোলীয়দের সঙ্গে পরিশেষে মিশ্রণ ঘটে আর্যদের। নৃতত্ত্বের দিক থেকে বাঙালিরা হল নিগ্রোবটু, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মঙ্গোলীয় ও আর্যজাতির সংমিশ্রণে সৃষ্ট একটি মিশ্র জাতি।

Leave a Comment