fbpx

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা: একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি (প্রথম পর্ব চতুর্থ অধ্যায়)

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা একাদশ শ্রেণীর বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতির প্রথম পর্ব চতুর্থ অধ্যায়ের অন্তর্গত ।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারা একাদশ শ্রেণী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতি প্রথম পর্ব চতুর্থ অধ্যায়

1কাব্য কবিতার ধারা 
2গদ্য সাহিত্যের বিকাশ 👈Long & Shortগদ্য সাহিত্যের বিকাশ MCQ QUESTION ANSWER 👈
3নাটক
4গল্প
5প্রবন্ধ
6উপন্যাস
7যাত্রা 
8বাংলা নাট্যমঞ্চের ইতিহাস
9ঔপনিবেশিক বাংলার সামাজিক, ধর্মীয় আন্দোলন, শিক্ষা-সংস্কার

ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বাংলার সমাজজীবনে ও সাহিত্যে নবজাগরণের সূচনা ও বিকাশ ঘটে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের পদাবলি-পাঁচালি, দেব-দেবীর লীলাকীর্তন ছেড়ে বাঙালি সাহিত্যিক মাটির বুকে নেমে মাটির মানুষের জীবনের বিস্ময় উপলব্ধি করে মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে উদ্যোগী হলেন। যুগযুগ ধরে প্রচলিত সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কারগুলি যুক্তিবাদী চিন্তা ও মননে, মানবিকতা বোধের জাগরণে দূরীভূত হতে শুরু করে। ইউরোপীয় ভাবধারার সংস্পর্শে প্রাচ্য ভাবধারার পুনরুজ্জীবন ঘটে বাংলার বুকে। যার জন্য উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন রামমোহন, বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন, বঙ্কিমচন্দ্র, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

বিংশ শতাব্দী ভারত তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়। শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাজনৈতিক আন্দোলন, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, পঞ্চাশের মন্বন্তর ও দেশবিভাগ বাংলার সমাজজীবন ও বাংলা সাহিত্যকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। সংক্ষেপে বলা যায়, ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাইতে অনুষ্ঠিত হয় শিবাজি উৎসব ও গণপতি মেলা, যার মাধ্যমে পশ্চিমভারতে ইংরেজ বিরোধী মনোভাব প্রবল হয়ে ওঠে এবং বাংলার বুকেও উগ্র ইংরেজবিদ্বেষ আত্মপ্রকাশ করে।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ফরোয়ার্ড ব্লক দল গঠন এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই বাঙালি তথা ভারতের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় জীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের গান্ধিজির ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও নেতাজির কণ্ঠে ‘দিল্লি চলো’ ধ্বনি ভারতের আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। এরপর ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার বুকে নেমে আসে, চরম দুর্দিন, যেটি পঞ্চাশের (১৩৫০) মন্বন্তর বলে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে, তার বিষাদঘন দিনগুলির কথা বাংলা সাহিত্যের নাটক, উপন্যাস কবিতায় বিধৃত হয়ে রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত রবীন্দ্রভাবনায় ভাবিত বাঙালিসমাজ তাঁর ‘খেয়া’ তরিতে ভেসে গীতাগুলির সুরে নগ্ন হয়ে ভেসে চলেছিল। রবীন্দ্রনাথের কাব্যপ্রতিভার সূচনা থেকে অন্তিমকাল পর্যন্ত রয়েছে সুদীর্ঘ পথ। তাঁর কাব্যপ্রবাহকে মোটামুটি সাতটি পর্বে ভাগ করা যায়। – (১) সূচনা পর্ব, (২) উন্মেষ পর্ব, (৩) ঐশ্বর্য পর্ব, (৪) অন্তবর্তী পর্ব, (৫) গীতাগুলি পর্ব (৬) বলাকা পর্ব ও (৭) অন্ত্যপর্ব। তারপরই নজরুল, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত নিয়ে এলেন নতুন সুরের ছোঁয়া, সেখানে রয়েছে নজরুলের বিদ্রোহী মনের উচ্ছ্বাস ও যতীন্দ্রনাথের নৈরাশ্যবাদ। কেউ কেউ সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে সমাজকে দেখতে চেয়ে তাদের স্বাস্থ্য প্রকাশ করলেন, যার দৃষ্টান্ত রয়েছে ‘সবুজপত্র’, ‘কল্লোল’, ‘কালিকলম’ ‘প্রগতি’, ‘পরিচয়’ প্রভৃতি পত্রিকার লেখকগোষ্ঠীর রচনায়।

আধুনিককালে বাংলা সাহিত্যের অপর একটি ভিত্তি হল গদ্যসাহিত্য। এই গদ্যসাহিত্যের মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস ও বিচিত্র বিষয়ে রচিত প্রবন্ধসাহিত্য। ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রবন্ধসাহিত্যে যাঁরা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রামমোহন, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকার, বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র, প্রমথ চৌধুরী প্রমুখ। আর যাঁর কথা বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিচিত্র বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রবন্ধের সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ। তার মধ্যে কয়েকটি হল পঞ্চভূত, বিচিত্র প্রবন্ধ, স্বদেশ, শিক্ষা, জীবনস্মৃতি, জাপানযাত্রী প্রভৃতি।

কাব্যসাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মহাকাব্য, আখ্যানকাব্য বা গীতিকাব্যের কথা বলা হয় নি। প্রথমেই মহাকাব্যের কথা বলা যেতে পারে। পৃথিবীতে মোট চারটি সুপ্রাচীন মহাকাব্য লেখা হয়েছে, – বাল্মীকির ‘রামায়ণ’ বেদব্যাসের ‘মহাভারত’ হোমারের ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডিসি’। এরপর রচিত হয়েছে অলংকার শাস্ত্রসম্মত মহাকাব্য। যেমন, কালিদাসের রঘুবংশ ভার্জিলের ইনিড’ দান্তের ‘দিভিনা কোম্মেদিয়া’ আর এ কালে রয়েছে মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্য।

আবার এমন কিছু কিছু কাব্য রয়েছে যা মহাকাব্যের মতো কাহিনি কেন্দ্রিক। এতে পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, বাস্তব, ক্লাসিক, রূপের প্রতীক যে-কোনো আকার গ্রহণ করতে পারে। এর আখ্যানের পরিসর স্বপ্ন। এতে কাহিনির ব্যাপ্তি ও রসের গভীরতা বেশি থাকে না। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’, বলদেব পালিতের ‘কর্ণার্জুন কাব্য’, দীননাথ ধরের ‘কংসবিনাশ’ প্রভৃতি আখ্যানকাব্য। 

এবার গীতিকবিতার কথা আলোচনা করা যাক। কবিতা যেখানে গীতিমুখর হয়ে ওঠে তাই ‘গীতিকবিতা’। কবির আন্তরিক ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে যে কবিতার জন্ম হয়, তাই ‘গীতিকবিতা’। আধুনিক যুগে যাঁদের কাব্যে এই গীতিকবিতায় ফল্গুধারা প্রবাহিত হতে দেখা যায় সেগুলি হল মধুসুদন দত্তের ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’, হেমচন্দ্রের ‘কবিতাবলি’, নবীনচন্দ্রের ‘অবকাশরঞ্জিনী’ প্রভৃতি। তবে গীতিকবিতার ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তী অনন্য রূপকার। কবির ‘বঙ্গসুন্দরী’, ‘বন্ধুবিয়োগ’, ‘সারদামঙ্গল’, ‘সাধের আসন’ প্রভৃতি রচনাসম্ভার রয়েছে। তার মধ্যে ‘সারদামঙ্গাল’ এক অপরুপ কাব্য। এ ছাড়া রয়েছেন সুরেন্দ্রনাথ মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, দেবেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ কবিগণ। 

এবার কথাসাহিত্যের আলোচনায় দু-একটা কথা বলা যায়। মূলত উপন্যাস এবং ছোটোগল্প নিয়ে কথাসাহিত্যের জগৎ। উপন্যাসে ফুটে ওঠে মানুষের অন্তর্জীবনের স্বরূপ, আর ছোটোগল্পের মধ্য দিয়ে একটি ক্ষুদ্র আধ্যানখন্ডে সমগ্র জীবন তাৎপর্য প্রতিবিম্বিত হয়। সাহিত্যের এই জগতের নক্ষত্র সমাবেশে কয়েকটি নাম বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, তারাশংকর, মানিক ও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বনফুল, রাজশেখর বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী, বিমল মিত্র, বিমল কর প্রমুখ সাহিত্যিকগণ। 

সবশেষে নাটকের কথা বলে আলোচনা শেষ করব। বিশেষত ইউরোপীয় থিয়েটার থেকে বাংলা নাটকের সূচনা। কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তারা হলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, রবীন্দ্রনাটক, মধুসুদন এবং গণনাটা ও নবনাট্যের মধ্যে রয়েছেন বিজন ভট্টাচার্য, মন্মথ রায়, বিধায়ক ভট্টাচার্য, উৎপল দত্ত, শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্ব।

Leave a Comment